✏ ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
বন্ধুরা➲ প্রস্তুতি কী আছে ফিরে আসা সেই মহান মাসের জন্য ?
যে মাস পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস,যে মাস গুনাহ মাফের মাস,যে মাস দুয়া কবুল করার মাস,যে মাস আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাস। যে মাস প্রতি বছর আসে পাপ-পঙ্কিলতায় জর্জরিত মানব জাতিকে সীমাহীন রহমতের ছায়ায় চির শান্তির আবাস জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিতে। যে মাস আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত ও বরকতের প্লাবনের মাস। যে মাস মাগফিরাতের মাস। আরো রয়েছে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য মহান আল্লাহর রমতের উপহারের রজনী যাকে লাইলাতুল ক্দর বলা হয়।যে রাতে কুরআনুল কারিম নাযিল হয়েছিল।
আল্লাহপাক বলেন-لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। (সূরা কদর ৩)
◉ হজরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত,রসুলুল্লাহ صلی اللہ علیہ و آلہ و سلم বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি লাইলাতুল ক্বাদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর পিছনের সমস্ত গুনাহ মাপ করা হবে। আর যে ব্যাক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করবে, তাঁরও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে। (সহীহ বুখারি)
পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা এমন কোন বিধান মানুষের উপর চাপিয়ে দেননি যা মানুষের সাধ্যের বাহিরে। মানুষের উপযোগী করেই ইসলামের প্রতিটি বিধান তৈরী করা হয়েছে।যা পালন করা তেমন কষ্টকর বিষয় নয়। মহব্বত ও আন্তরিকতা থাকলেই অনায়াসে সমস্থ আদেশ পালন করা যায়। স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে আল্লাহপাক ইসলামের বিধান পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও সংযোজন-বিয়োজন করে ইসলামকে সময়োপযোগী পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করেছেন।
❖রমজান═➲
(رَمَضان) আরবি শব্দ 'রমজ' ধাতু থেকে এসেছে। 'রমজ' ধাতুর দুটি অর্থ আরবি অভিধান ও আরবি সাহিত্যে পাওয়া যায়। এর একটি অর্থ হলো দাহন বা পোড়ানো এবং অপরটি আরব দেশের বছরের প্রথম বৃষ্টি।অন্যদিকে সওম একটি আরবী শব্দ যার অর্থ বিরত থাকা বা আত্মসংযম করা। এটি আরবী সিয়াম শব্দের সমার্থক। এ মাসের নাম রমজান এ জন্য রাখা হয়েছে যে সর্বপ্রথম যখন এ মাসের নাম রাখা হয়েছিল তখন প্রচণ্ড গরম ছিল। এ জন্য এই মাসের নাম রাখা হয়েছে রমজান। এই পবিত্র মাসকে রমজান এ জন্য বলা হয়, এ মাসে আল্লাহপাক নিজ মেহেরবানিতে সব গুনাহ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেন; মানুষ যেন এক নব জীবন লাভ করতে পারে।শরীয়তের দৃষ্টিতে রমজান মাসে দিনের বেলা রোজা রাখার ফলে সারাদিন সকল প্রকার পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার কারণে মানুষের শরীরে এক প্রকার দাহ ও জ্বলনের সৃষ্টি হয়। সে গাত্রদাহ ও অন্তর্দাহকে সম্বল করে মহান আল্লাহ পাক বান্দার পিছনের পাপ রাশি তার গাত্রদাহের আগুনে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেন, ক্ষমা করে দেন। এ হচ্ছে রমজান মাসকে নামকরণের স্বার্থকতা। রমযান (رمضان / Ramaḍan) হল ইসলামিক বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস, যে মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমগণ ইসলামিক উপবাস সওম পালন করে থাকে। রমজান মাসে রোজাপালন ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়তম। রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ত্রিশ দিনে হয়ে থাকে যা নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হিজরী দ্বিতীয় সনের শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে কেবলা পরিবর্তন হওয়ার দশ দিন পর পবিত্র রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে। এ মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির উপর সওম পালন ফরয, কিন্তু অসুস্থ,গর্ভবতী,ঋতুবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে তা শিথিল করা হয়েছে। রোজা বা সাওম হল সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ এবং (স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে) যৌনসংগম থেকে বিরত থাকা। এ মাসে বিশ্বমুসলিমগণ অধিক ইবাদত করে থাকেন। কারণ অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
◉ রমজান,রোজা বা সওম প্রসংগে মহান আল্লাহপাক বলেন ═➲
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সূরা বাক্বারাহ ১৮৫)
◉ মহান আল্লাহপাক রোজা ফরয করা প্রসংগে আরো ইরশাদ করেন➲ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারাহ ১৮৩)
❖হাদিস শরীফে আল্লার প্রিয় হাবীব ইরশাদ করেন➲
হজরত আবদুল্লাহ ইবনুূু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা যখন চাঁদ দেখবে তখন সওম আরম্ভ করবে এবং যখন চাঁদ দেখবে তখন ইফতার করবে। তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ত্রিশ রোযা পূর্ণ করবে। (ইমাম ইসমাইল বুখারী (রঃ)উনার বিখ্যাত সহীহ বুখারীতে এই হাদিস শরীফটি উল্লেখ করেছেন)।
◉ এছাড়াও ইসলামের ৫টি ভিত্তির মধ্যে ১টির অন্তর্ভুক্ত সওম/রোযা :-
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، قَالَ أَخْبَرَنَا حَنْظَلَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ خَالِدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ
হজরত উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা (রাঃ) ইবনু উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।
১।আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ আল্লাহ্র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান।
২। সালাত (নামাজ) কায়েম করা
৩। যাকাত দেওয়া
৪। হাজ্জ (হজ্জ) করা এবং
৫। রামাদান এর সিয়াম পালন করা। (সহীহ বুখারি/ঈমান)
◉ হজরত তালহা ইবনুূু ‘উবাদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত যে,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَهْلِ نَجْدٍ، ثَائِرُ الرَّأْسِ، يُسْمَعُ دَوِيُّ صَوْتِهِ، وَلاَ يُفْقَهُ مَا يَقُولُ حَتَّى دَنَا، فَإِذَا هُوَ يَسْأَلُ عَنِ الإِسْلاَمِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم " خَمْسُ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ ". فَقَالَ هَلْ عَلَىَّ غَيْرُهَا قَالَ " لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَوَّعَ ". قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " وَصِيَامُ رَمَضَانَ ". قَالَ هَلْ عَلَىَّ غَيْرُهُ قَالَ " لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَوَّعَ ". قَالَ وَذَكَرَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الزَّكَاةَ. قَالَ هَلْ عَلَىَّ غَيْرُهَا قَالَ " لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَوَّعَ ". قَالَ فَأَدْبَرَ الرَّجُلُ وَهُوَ يَقُولُ وَاللَّهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلاَ أَنْقُصُ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَفْلَحَ إِنْ صَدَقَ "
এলোমেল চুলসহ একজন গ্রাম্য আরব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট এলেন। তারপর বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে বলুন, আল্লাহ তা’আলা আমার উপর কত সালাত ফরজ করেছেন?
তিনি বলেনঃ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত, তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আমার উপর কত সিয়াম আল্লাহ তা’আলা ফরজ করেছেন? রাসূল صلی اللہ علیہ و آلہ و سلم বললেনঃ রমযান মাসের সওম, তবে তুমি যদি কিছু নফল কর তবে তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ আমার উপর কি পরিমান যাকাত ফরয করেছেন?
রাবী বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন।
এরপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার উপর যা ফরয করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু বাড়াব না এবং কমাবও না। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সেও সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল।ইমাম বুখারী (রঃ)উনার বিখ্যাত সহীহ বুখারীতে এই মুল্যবান হাদিস শরীফটি উল্লেখ করেছেন।
◉ হজরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমযান আরম্ভ হলে রহমতের দরাজাসমুহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমুহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়। (সহীহ মুসলিম)
◉ হজরত সাহল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে। (সহীহ বুখারি)
◉ হজরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রানে, অবশ্যই সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার,পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন।(ইমাম ইসমাইল বুখারী (রঃ)উনার বিখ্যাত সহীহ বুখারীতে এই মুল্যবান হাদিস শরীফটি উল্লেখ করেছেন)।
❖ রোজার উদ্দেশ্য :➲
১.আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়ক। রোযা ইবাদতের সুযোগ ও তাকওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে।
২.রোযা ধৈয্য ও সংযম শেখায়। আত্ম নিয়ন্ত্রন শক্তির উন্নয়ন ঘটায়।
৩. অন্যের সম্পদ বা অধিকার হরণ থেকে বিরত রাখা।এভাবেই তাকওয়া ও আনুগত্যের অনুশীলন হয়ে যায়।
৪.রিয়ামুক্ত ইবাদত করার প্রশিক্ষণ দেয়। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, রোযাদার বান্দা আমার জন্যই খাদ্য-পাণীয ও প্রবৃত্তি বর্জন করেছে। রোজা আমারই জন্য। আমিই এর প্রতিদান দেব বা আমি নিজেই এর প্রতিদান।
❖বিনা ওজরে রোজা না রাখার পরিণাম ➲
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,নবী করিম صلی اللہ علیہ و آلہ و سلم বলেছেন যে ব্যক্তি বিনা ওজরে ইচ্ছাপূর্বক রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করেছে, অন্য সময়ের সারা জীবনের রোজা তার সমকক্ষ হবে না।
❖যাদের ওপর রোজা রাখা ফরজ ➲
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ, মুসাফির নয় এমন সব মুসলমানের ওপর মাহে রমজানের রোজা পালন করা ফরজ।
❖রোজা সহিহ হওয়ার শর্ত হচ্ছে ➲
**নিয়ত করা
**মহিলাদের হায়েজ ও নিফাস থেকে মুক্ত হওয়া
**রোজা বিনষ্টকারী বিষয়াদি থেকে দূরে থাকা।
**সেহরি খাওয়া,শেষরাতে সুবহে সাদিকের আগে রোজা রাখার নিয়তে যে খাবার খাওয়া হয় তাকে সেহরি বলে। সেহরি খাওয়া সুন্নত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা সেহরি খাও। কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে।
***ইফতার করা,পূর্ণদিবস রোজা পালনের পর সূর্যাস্তের পরপর আহার গ্রহণের মাধ্যমে রোজার যে পরিসমাপ্তি করা হয় তাকে ইফতার বলে। খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নত। সূর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে ইফতার করা সুন্নত।
❖যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ এবং পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করতে হয় ➲
১. অসুস্থতার কারণে রোজা রাখার শক্তি না থাকলে কিংবা রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলে অথবা সুস্থতা লাভে বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ।
২. অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্তন্যদানকারিণী নারী যদি রোজা রাখেন, তাহলে তাঁর কিংবা তাঁর সন্তানের প্রাণনাশের অথবা অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে তাঁর জন্য রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ।
৩. মুসাফিরের রোজা না রাখা কিংবা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে।
❖যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় এবং কাজা ও কাফ্ফরা ওয়াজিব হয় ➲
১. স্বেচ্ছায় সঙ্গম করা।
২. স্বেচ্ছায় পানাহার করা, তা কোনো খাবার হোক অথবা কোনো ওষুধ হোক।
৩. স্বেচ্ছায় বৃষ্টির ফোঁটা মুখের ভেতর পড়ার পর তা গিলে ফেলা।
৪. স্বেচ্ছায় ধূমপান করা।
❖যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হয় ➲
১. কোনো দৈহিক ওজরের কারণে পানাহার করা। তেমনিভাবে ভুলক্রমে পানাহার করার পর রোজা নষ্ট হয়েছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু পানাহার করা। ২. নাক ও কানের ভেতর ওষুধ ব্যবহার করা।
৩. মলদ্বার দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করানো।
৪. খাদ্যদ্রব্য নয় এমন কিছু, যেমন খেজুরের আঁটি, তুলা, কাগজ, লোহা, কংকর, মাটি অথবা এর টুকরা ইত্যাদি গিলে ফেলা।
৫. কুলি করার সময় পানি গলার ভেতরে চলে যাওয়া।
৬. কানের ভেতর তেলের ফোঁটা কিংবা পানির ফোঁটা দেওয়া।
৮. রাত শেষ হয়নি মনে করে সুবহে সাদিক হওয়ার পর কোনো কিছু আহার করা অথবা স্ত্রী সহবাস করা।
৯. দাঁতের মধ্য থেকে ছোলা পরিমাণ কিছু বের করে খাওয়া।
➲ রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ, ইনহেলার দ্বারা অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগী শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য মুখ দিয়ে ধোঁয়া টেনে নেয়- যেভাবে মানুষ বিড়ি-সিগারেট পান করে। রোজা অবস্থায় বিড়ি-সিগারেট পান করা নিষেধ। এতে রোজা ভেঙে যায়। তাই ইনহেলার ব্যবহারেও রোজা ভেঙে যায়।
➲ রোজা অবস্থায় যদি কোনো স্ত্রীলোকের ঋতুস্রাব হয় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। যতগুলো রোজা বাদ যাবে বছরের অন্য সময়ে তা কাজা আদায় করে নেবে। সন্তান প্রসব করলেও একই বিধান
➲ যদি কোনো ব্যক্তি সেহরি খাওয়ার পর জানতে পারল যে, যেই সময়ে সেহরি খেয়েছে এর আগেই সময় শেষ হয়ে গেছে। অথবা সূর্যাস্ত হয়ে গেছে ভেবে ইফতার করল। অতঃপর দেখা গেল এখনো সূর্যাস্ত হয়নি। তাহলে সেদিনের অবশিষ্ট সময়টুকু বিরতি পালন করবে এবং অন্য সময়ে তা কাজা আদায় করে নেবে।
❖যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় ➲
১. অপ্রয়োজনে কোনো জিনিসের স্বাদ আস্বাদন করা কিংবা চিবানো।
২. পরনিন্দা করা।
৩. ঝগড়া-ফ্যাসাদ করা।
৪. পূর্ণদিবস নাপাক অবস্থায় থাকা।
৫. টুথপেস্ট, মাজন কিংবা কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা।
৬. মুখে থুথু জমিয়ে রেখে গিলে ফেলা।
বন্ধুরা═➲ আমরা কেও ভুলের ঊর্ধে নই,আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে। তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । আসুন প্রস্তুতি নিই আগত মাসের জন্য ।আমাদের সামর্থের সকল প্রচেষ্টা দিয়ে রমযানের ইবাদতে ব্রতী হওয়া জরুরি। হে আল্লাহ ! আমাদের সবাইকে রমজান মাসে সিয়াম পালন করার তৌফিক দান কর।
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
বন্ধুরা➲ প্রস্তুতি কী আছে ফিরে আসা সেই মহান মাসের জন্য ?
যে মাস পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস,যে মাস গুনাহ মাফের মাস,যে মাস দুয়া কবুল করার মাস,যে মাস আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাস। যে মাস প্রতি বছর আসে পাপ-পঙ্কিলতায় জর্জরিত মানব জাতিকে সীমাহীন রহমতের ছায়ায় চির শান্তির আবাস জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিতে। যে মাস আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত ও বরকতের প্লাবনের মাস। যে মাস মাগফিরাতের মাস। আরো রয়েছে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য মহান আল্লাহর রমতের উপহারের রজনী যাকে লাইলাতুল ক্দর বলা হয়।যে রাতে কুরআনুল কারিম নাযিল হয়েছিল।
আল্লাহপাক বলেন-لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। (সূরা কদর ৩)
◉ হজরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত,রসুলুল্লাহ صلی اللہ علیہ و آلہ و سلم বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি লাইলাতুল ক্বাদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর পিছনের সমস্ত গুনাহ মাপ করা হবে। আর যে ব্যাক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করবে, তাঁরও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে। (সহীহ বুখারি)
পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা এমন কোন বিধান মানুষের উপর চাপিয়ে দেননি যা মানুষের সাধ্যের বাহিরে। মানুষের উপযোগী করেই ইসলামের প্রতিটি বিধান তৈরী করা হয়েছে।যা পালন করা তেমন কষ্টকর বিষয় নয়। মহব্বত ও আন্তরিকতা থাকলেই অনায়াসে সমস্থ আদেশ পালন করা যায়। স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে আল্লাহপাক ইসলামের বিধান পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও সংযোজন-বিয়োজন করে ইসলামকে সময়োপযোগী পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করেছেন।
❖রমজান═➲
(رَمَضان) আরবি শব্দ 'রমজ' ধাতু থেকে এসেছে। 'রমজ' ধাতুর দুটি অর্থ আরবি অভিধান ও আরবি সাহিত্যে পাওয়া যায়। এর একটি অর্থ হলো দাহন বা পোড়ানো এবং অপরটি আরব দেশের বছরের প্রথম বৃষ্টি।অন্যদিকে সওম একটি আরবী শব্দ যার অর্থ বিরত থাকা বা আত্মসংযম করা। এটি আরবী সিয়াম শব্দের সমার্থক। এ মাসের নাম রমজান এ জন্য রাখা হয়েছে যে সর্বপ্রথম যখন এ মাসের নাম রাখা হয়েছিল তখন প্রচণ্ড গরম ছিল। এ জন্য এই মাসের নাম রাখা হয়েছে রমজান। এই পবিত্র মাসকে রমজান এ জন্য বলা হয়, এ মাসে আল্লাহপাক নিজ মেহেরবানিতে সব গুনাহ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেন; মানুষ যেন এক নব জীবন লাভ করতে পারে।শরীয়তের দৃষ্টিতে রমজান মাসে দিনের বেলা রোজা রাখার ফলে সারাদিন সকল প্রকার পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার কারণে মানুষের শরীরে এক প্রকার দাহ ও জ্বলনের সৃষ্টি হয়। সে গাত্রদাহ ও অন্তর্দাহকে সম্বল করে মহান আল্লাহ পাক বান্দার পিছনের পাপ রাশি তার গাত্রদাহের আগুনে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেন, ক্ষমা করে দেন। এ হচ্ছে রমজান মাসকে নামকরণের স্বার্থকতা। রমযান (رمضان / Ramaḍan) হল ইসলামিক বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস, যে মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমগণ ইসলামিক উপবাস সওম পালন করে থাকে। রমজান মাসে রোজাপালন ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়তম। রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ত্রিশ দিনে হয়ে থাকে যা নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হিজরী দ্বিতীয় সনের শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে কেবলা পরিবর্তন হওয়ার দশ দিন পর পবিত্র রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে। এ মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির উপর সওম পালন ফরয, কিন্তু অসুস্থ,গর্ভবতী,ঋতুবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে তা শিথিল করা হয়েছে। রোজা বা সাওম হল সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ এবং (স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে) যৌনসংগম থেকে বিরত থাকা। এ মাসে বিশ্বমুসলিমগণ অধিক ইবাদত করে থাকেন। কারণ অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
◉ রমজান,রোজা বা সওম প্রসংগে মহান আল্লাহপাক বলেন ═➲
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সূরা বাক্বারাহ ১৮৫)
◉ মহান আল্লাহপাক রোজা ফরয করা প্রসংগে আরো ইরশাদ করেন➲ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারাহ ১৮৩)
❖হাদিস শরীফে আল্লার প্রিয় হাবীব ইরশাদ করেন➲
হজরত আবদুল্লাহ ইবনুূু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা যখন চাঁদ দেখবে তখন সওম আরম্ভ করবে এবং যখন চাঁদ দেখবে তখন ইফতার করবে। তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ত্রিশ রোযা পূর্ণ করবে। (ইমাম ইসমাইল বুখারী (রঃ)উনার বিখ্যাত সহীহ বুখারীতে এই হাদিস শরীফটি উল্লেখ করেছেন)।
◉ এছাড়াও ইসলামের ৫টি ভিত্তির মধ্যে ১টির অন্তর্ভুক্ত সওম/রোযা :-
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، قَالَ أَخْبَرَنَا حَنْظَلَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ خَالِدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ
হজরত উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা (রাঃ) ইবনু উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।
১।আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ আল্লাহ্র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান।
২। সালাত (নামাজ) কায়েম করা
৩। যাকাত দেওয়া
৪। হাজ্জ (হজ্জ) করা এবং
৫। রামাদান এর সিয়াম পালন করা। (সহীহ বুখারি/ঈমান)
◉ হজরত তালহা ইবনুূু ‘উবাদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত যে,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَهْلِ نَجْدٍ، ثَائِرُ الرَّأْسِ، يُسْمَعُ دَوِيُّ صَوْتِهِ، وَلاَ يُفْقَهُ مَا يَقُولُ حَتَّى دَنَا، فَإِذَا هُوَ يَسْأَلُ عَنِ الإِسْلاَمِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم " خَمْسُ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ ". فَقَالَ هَلْ عَلَىَّ غَيْرُهَا قَالَ " لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَوَّعَ ". قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " وَصِيَامُ رَمَضَانَ ". قَالَ هَلْ عَلَىَّ غَيْرُهُ قَالَ " لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَوَّعَ ". قَالَ وَذَكَرَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الزَّكَاةَ. قَالَ هَلْ عَلَىَّ غَيْرُهَا قَالَ " لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَوَّعَ ". قَالَ فَأَدْبَرَ الرَّجُلُ وَهُوَ يَقُولُ وَاللَّهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلاَ أَنْقُصُ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَفْلَحَ إِنْ صَدَقَ "
এলোমেল চুলসহ একজন গ্রাম্য আরব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট এলেন। তারপর বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে বলুন, আল্লাহ তা’আলা আমার উপর কত সালাত ফরজ করেছেন?
তিনি বলেনঃ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত, তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আমার উপর কত সিয়াম আল্লাহ তা’আলা ফরজ করেছেন? রাসূল صلی اللہ علیہ و آلہ و سلم বললেনঃ রমযান মাসের সওম, তবে তুমি যদি কিছু নফল কর তবে তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ আমার উপর কি পরিমান যাকাত ফরয করেছেন?
রাবী বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন।
এরপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার উপর যা ফরয করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু বাড়াব না এবং কমাবও না। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সেও সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল।ইমাম বুখারী (রঃ)উনার বিখ্যাত সহীহ বুখারীতে এই মুল্যবান হাদিস শরীফটি উল্লেখ করেছেন।
◉ হজরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমযান আরম্ভ হলে রহমতের দরাজাসমুহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমুহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়। (সহীহ মুসলিম)
◉ হজরত সাহল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে। (সহীহ বুখারি)
◉ হজরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রানে, অবশ্যই সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার,পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন।(ইমাম ইসমাইল বুখারী (রঃ)উনার বিখ্যাত সহীহ বুখারীতে এই মুল্যবান হাদিস শরীফটি উল্লেখ করেছেন)।
❖ রোজার উদ্দেশ্য :➲
১.আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়ক। রোযা ইবাদতের সুযোগ ও তাকওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে।
২.রোযা ধৈয্য ও সংযম শেখায়। আত্ম নিয়ন্ত্রন শক্তির উন্নয়ন ঘটায়।
৩. অন্যের সম্পদ বা অধিকার হরণ থেকে বিরত রাখা।এভাবেই তাকওয়া ও আনুগত্যের অনুশীলন হয়ে যায়।
৪.রিয়ামুক্ত ইবাদত করার প্রশিক্ষণ দেয়। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, রোযাদার বান্দা আমার জন্যই খাদ্য-পাণীয ও প্রবৃত্তি বর্জন করেছে। রোজা আমারই জন্য। আমিই এর প্রতিদান দেব বা আমি নিজেই এর প্রতিদান।
❖বিনা ওজরে রোজা না রাখার পরিণাম ➲
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,নবী করিম صلی اللہ علیہ و آلہ و سلم বলেছেন যে ব্যক্তি বিনা ওজরে ইচ্ছাপূর্বক রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করেছে, অন্য সময়ের সারা জীবনের রোজা তার সমকক্ষ হবে না।
❖যাদের ওপর রোজা রাখা ফরজ ➲
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ, মুসাফির নয় এমন সব মুসলমানের ওপর মাহে রমজানের রোজা পালন করা ফরজ।
❖রোজা সহিহ হওয়ার শর্ত হচ্ছে ➲
**নিয়ত করা
**মহিলাদের হায়েজ ও নিফাস থেকে মুক্ত হওয়া
**রোজা বিনষ্টকারী বিষয়াদি থেকে দূরে থাকা।
**সেহরি খাওয়া,শেষরাতে সুবহে সাদিকের আগে রোজা রাখার নিয়তে যে খাবার খাওয়া হয় তাকে সেহরি বলে। সেহরি খাওয়া সুন্নত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা সেহরি খাও। কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে।
***ইফতার করা,পূর্ণদিবস রোজা পালনের পর সূর্যাস্তের পরপর আহার গ্রহণের মাধ্যমে রোজার যে পরিসমাপ্তি করা হয় তাকে ইফতার বলে। খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নত। সূর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে ইফতার করা সুন্নত।
❖যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ এবং পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করতে হয় ➲
১. অসুস্থতার কারণে রোজা রাখার শক্তি না থাকলে কিংবা রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলে অথবা সুস্থতা লাভে বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ।
২. অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্তন্যদানকারিণী নারী যদি রোজা রাখেন, তাহলে তাঁর কিংবা তাঁর সন্তানের প্রাণনাশের অথবা অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে তাঁর জন্য রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ।
৩. মুসাফিরের রোজা না রাখা কিংবা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে।
❖যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় এবং কাজা ও কাফ্ফরা ওয়াজিব হয় ➲
১. স্বেচ্ছায় সঙ্গম করা।
২. স্বেচ্ছায় পানাহার করা, তা কোনো খাবার হোক অথবা কোনো ওষুধ হোক।
৩. স্বেচ্ছায় বৃষ্টির ফোঁটা মুখের ভেতর পড়ার পর তা গিলে ফেলা।
৪. স্বেচ্ছায় ধূমপান করা।
❖যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হয় ➲
১. কোনো দৈহিক ওজরের কারণে পানাহার করা। তেমনিভাবে ভুলক্রমে পানাহার করার পর রোজা নষ্ট হয়েছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু পানাহার করা। ২. নাক ও কানের ভেতর ওষুধ ব্যবহার করা।
৩. মলদ্বার দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করানো।
৪. খাদ্যদ্রব্য নয় এমন কিছু, যেমন খেজুরের আঁটি, তুলা, কাগজ, লোহা, কংকর, মাটি অথবা এর টুকরা ইত্যাদি গিলে ফেলা।
৫. কুলি করার সময় পানি গলার ভেতরে চলে যাওয়া।
৬. কানের ভেতর তেলের ফোঁটা কিংবা পানির ফোঁটা দেওয়া।
৮. রাত শেষ হয়নি মনে করে সুবহে সাদিক হওয়ার পর কোনো কিছু আহার করা অথবা স্ত্রী সহবাস করা।
৯. দাঁতের মধ্য থেকে ছোলা পরিমাণ কিছু বের করে খাওয়া।
➲ রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ, ইনহেলার দ্বারা অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগী শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য মুখ দিয়ে ধোঁয়া টেনে নেয়- যেভাবে মানুষ বিড়ি-সিগারেট পান করে। রোজা অবস্থায় বিড়ি-সিগারেট পান করা নিষেধ। এতে রোজা ভেঙে যায়। তাই ইনহেলার ব্যবহারেও রোজা ভেঙে যায়।
➲ রোজা অবস্থায় যদি কোনো স্ত্রীলোকের ঋতুস্রাব হয় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। যতগুলো রোজা বাদ যাবে বছরের অন্য সময়ে তা কাজা আদায় করে নেবে। সন্তান প্রসব করলেও একই বিধান
➲ যদি কোনো ব্যক্তি সেহরি খাওয়ার পর জানতে পারল যে, যেই সময়ে সেহরি খেয়েছে এর আগেই সময় শেষ হয়ে গেছে। অথবা সূর্যাস্ত হয়ে গেছে ভেবে ইফতার করল। অতঃপর দেখা গেল এখনো সূর্যাস্ত হয়নি। তাহলে সেদিনের অবশিষ্ট সময়টুকু বিরতি পালন করবে এবং অন্য সময়ে তা কাজা আদায় করে নেবে।
❖যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় ➲
১. অপ্রয়োজনে কোনো জিনিসের স্বাদ আস্বাদন করা কিংবা চিবানো।
২. পরনিন্দা করা।
৩. ঝগড়া-ফ্যাসাদ করা।
৪. পূর্ণদিবস নাপাক অবস্থায় থাকা।
৫. টুথপেস্ট, মাজন কিংবা কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা।
৬. মুখে থুথু জমিয়ে রেখে গিলে ফেলা।
বন্ধুরা═➲ আমরা কেও ভুলের ঊর্ধে নই,আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে। তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । আসুন প্রস্তুতি নিই আগত মাসের জন্য ।আমাদের সামর্থের সকল প্রচেষ্টা দিয়ে রমযানের ইবাদতে ব্রতী হওয়া জরুরি। হে আল্লাহ ! আমাদের সবাইকে রমজান মাসে সিয়াম পালন করার তৌফিক দান কর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন