মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০১৫

মৃত্যুচিন্তা


✯✯
মৃত্যুচিন্তা
✯✯
════❖════✏
ইমরান বিন বদরী
≪ 
মানবজাতির মানবিয় গুনাবলীর একটি অনন্য গুন হচ্ছে মৃত্যুকে সহজে ভুলে থাকা।আর আমরা ভুলে থাকি বলেই যুগের পর যুগ শোকাহত মানুষ সভ্যতার বিকাশে অবদান রেখে আসছে। কিন্তু এই ছোট্ট শব্দটি (মৃত্যু) নিয়ে কি কখনো ভেবে দেখেছি? আদৌ কি সে সময় ছিল আমাদের।মানুষ মরণশীল। সব মানুষকেই একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। জন্মের পর থেকেই প্রত্যেকের অবধারিত মৃত্যু নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে অপেক্ষমান অনন্তকালে। আসুন বন্ধুরা,আজ একটু ভেবেদেখি চিরাচরিত অপেক্ষমান মৃত্যুকে নিয়ে।
মৃত্যু (Death) বলতে একটি জীবনের সমাপ্তিকে বুঝায়।যা আমাদের নিয়ে যায় অজানা কোন এক রাজ্যে, যার সম্পর্কে আমরা প্রায় কিছুই জানিনা। সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে কত না কষ্ট! যখন মৃত্যুর ডাক এসে যায়,তখন সবচাইতে আপনজন বাবা-মা সহ কেউ তাদের বন্ধন দিয়ে ধরে রাখতে পারেনা আমাদের,পারেনা স্ত্রী/স্বামী এবং আদরের সন্তানেরাও। কত সুন্দর করে আমরা সাজাতে চেয়েছি আমাদের জীবন, কত পরিকল্পনা ছিল; সব শেষ হয়ে যায় মাত্র দুটি অক্ষরের এই ছোট্ট শব্দের দ্বারা। আমরা প্রতিদিন এই মৃত্যুকে কত আপনভাবে নিজের সাথে বয়ে বেড়াই অথচ দিনে একবারও স্মরণ করিনা এই মৃত্যুর কথা ! মৃত্যুর ব্যাপারে একজন মুমিনের অবস্থান হলো- সে মৃত্যুকে স্মরণ করবে, স্মরণে রাখবে। আর যেহেতু সে মৃত্যুর সময় সম্পর্কে জানে না, তাই সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকবে। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক পরিমাণে মৃত্যুকে স্মরণ করার তাগিদ দিয়েছেন। কারণ মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে এবং ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করে।মৃত্যুর স্মরণ আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্যি আর কিছু কী আছে এই পৃথিবীতে ? 
উত্তর কিন্তু সবাই জানি ।
তবুও কিন্তু ব্যাক্তি জীবনের মোহে পড়ে আমরা বেশিরভাগ সময়েই মৃত্যুর মত অবধারিত সত্যি ভুলে গিয়ে নানান স্বার্থের দন্দে জড়িয়ে পড়ি।মৃত্যু, বিনা নোটিশে সব মুছে দিয়ে আপনার আমার নাম হবে শুধু লাশ ! মানুষ একটি নির্দিষ্ট সময় নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করে। সে আল্লাহ প্রদত্ত সময় দ্বারা বেষ্টিত। পৃথিবীতে তার অবস্থানকাল সম্পর্কে জানে না। বরং তা সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছাধীন।আসুন সেই মৃত্যু সম্পর্কে
➲ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার পবিত্র কলামে কি বলে দেখি- الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ
যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।
(সুরা মুলক-২)
অর্থাৎ মানুষ পার্থিব জীবনযাপন করবে এবং এ জীবন থেকে পরের জীবনে পূর্বের জীবনের আমল দেখবেন এবং সে অনুযায়ী মানুষকে মূল্যায়ন করবেন।একজন মুমিন যেমন মৃত্যু কামনা করবে না, তেমনি মৃত্যুকে অপছন্দও করবে না।ইসলামে (আমাদের) একটি দোয়ার প্রবর্তন করেছে। তাহলো, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর নিকটই ফিরে যাবো।


➲ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার পবিত্র কলামে বলেন-
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। (সুরা-আল ইমরান- ১৮৫)
ইহকাল মানবজীবনের শেষ নয়। মৃত্যুর পরও মানুষের জন্য রয়েছে এক অনন্ত জীবন। প্রতিদিন আমাদের চোখের সামনে মানুষ মারা যাচ্ছে। এভাবে একদিন আমাদেরও মরতে হবে এবং দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে।

➲ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার পবিত্র কলামে বলেন- كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتاً فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
"তোমরা কি করে আল্লাহকে অস্বীকার কর? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে প্রাণ দিয়েছেন, আবার তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং পুনরায় জীবন্ত করবেন, পরিণতিতে তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফিরতে হবে। (সূরা বাক্বারাহ-২৮)
মৃত্যু মানবজীবনের একমাত্র পরিসমাপ্তি নয়, প্রত্যাগমন মাত্র।

➲ হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! সবচাইতে বুদ্ধিমান লোক কে ? তিনি বললেন , যে ব্যক্তি অধিকহারে মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণে লেগে থাকে। (ইবন মাজাহ)

➲ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, পার্থিব জীবনের প্রতি অনাসক্তি ও আখেরাতের প্রতি আসক্তি সৃষ্টির জন্যে মৃত্যুর বিশ্বাস যথেষ্ট। (আহমদ)

বন্ধুরা, মৃত্যুর কোনো কাল নাই,কোনো মৃত্যুই অকাল নয়। আমাদের সমাজে প্রচলিত অকাল মৃত্যু শব্দদ্বয় ইসলাম স্বীকৃত নয়। কেননা ইসলামি আকিদার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এ কথা গভীরভাবে বিশ্বাস করা যে, জীবন মৃত্যু সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে।
➲ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার পবিত্র কলামে বলেন- لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ رَبُّكُمْ وَرَبُّ آبَائِكُمُ الْأَوَّلِينَ
তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। তিনি তোমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃ-পুরুষদেরও পালনকর্তা। (সূরা দোখান ৮)
নির্ধারিত সময়ের এক সেকেন্ড পূর্বেও কেউ মারা যাবে না। পূর্ণ জীবনকালটাই সুনির্দিষ্ট। সুতরাং কোনো মৃত্যুই অকাল নয়।
✯অতএব আসুন,মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিই। কালেমা পড়তে পড়তে যেন মৃত্যু হয় আমাদের। 
عَنْ مُعَاذٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ كَانَ آخِرَ كَلامِهِ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ دَخَلَ الجَنَّةَ ». رواه أَبُو داود والحاكم، وَقَالَ: «صحيح الإسناد »
হযরত মুআয রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির শেষ কথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে (অর্থাৎ এই কালেমা পড়তে পড়তে যার মৃত্যু হবে),সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ ৩১১৬, আহমদ ২১৫২৯)
আর সাথে সাথে যেন বলতে পারি মুহাম্মাদুর রালুলুল্লাহ (মুহাম্মদ (দঃ) আল্লার রাসুল)। এটি যেন হয় আমাদের জান্নাতের চাবি। ভয় করুন সেই মহান আল্লাহতা’লাকে যিনি সমস্ত প্রানীর জীবন ও মৃত্যুর মালিক। ক্ষণস্থায়ী জীবনের স্বাদ নিতে গিয়ে অনন্ত জীবনকে ভুলে যাবেননা।এই ভয় আপনাকে আল্লাহতা’লার আনুগত্যের পথে ফিরিয়ে আনবে,এই মৃত্যুভয় আপনার জীবনকে সত্যের পথে পরিচালিত করবে। আমাদের উচিৎ আল্লাহর ইবাদত ও জিকিরে অধিক মনোযোগী হওয়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদের যেন সুন্দর, স্বাভাবিক ও উত্তম মৃত্যু দান করেন। মৃত্যু আসার পূর্বে তার জন্য প্রস্তুত হওয়ার তাওফিক আমাদের দান করুন। আমিন।
আমি চেষ্টা করেছি মাত্র আর সেই চেষ্টা সার্থক হবে তখনি যখন আপনার লেখাটি বুঝতে সহজ হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন