═ জিয়ারতে মদিনা এ মুনাওয়ারা ═
❖❖❖❖❖❖❖❖❖➲
✏ ইমরান বিন বদরী ≪
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
“ভেসে যায় হৃদয় আমার মদীনার পানে
হিজরত করে আসিলেন নবী প্রথম যেখানে।
------- কাজী নজরুল ইসলাম
মদিনা (আরবি: المدينة )শব্দের অর্থ:শহর বা নগরী হলেও এই মদিনা কিন্তু অন্যান্য মদিনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।আর (لمدينة المنورة) মদিনা-আল মুনাওয়ারা অর্থ আলোকিত নগরী। মক্কা শরীফের ন্যায় মদিনা শরীফেও পবিত্র নগরী। বিশ্বের সকল মুসলমানদের নিকট পবিত্র কাবা শরীফের পরই দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে মহানবীর মদিনা। রাসুল ﷺ মক্কা শরিফকে অত্যধিক ভালোবাসলেও মদিনা শরিফের ভালোবাসাও ছিল তাঁর হৃদয়ের মণিকোঠায়। ইয়াসরিব/ইয়াস্রাব নামের এই জায়গাটি মদিনায় (مدينة رسول الله) পরিণত হয় দোজাহানের সর্দার বিশ্বনবী সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লামমের আগমনের ফলে। মক্কা থেকে আল্লার নবী ﷺ মক্কায় ইসলাম প্রচার যখন অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে, মুসলমানদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন সীমা অতিক্রম করে,তখন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আপন প্রিয় সহচর হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু-কে নিয়ে ৬২২ খ্রীস্টাব্দে এই মদিনাতেই হিজরত করেছিলেন।প্রভাতে সূর্যের উদয় হলে যেমন রাতের অাঁধার বিদায় নিতে বাধ্য হয়, তেমনি নূরের নবী আল্লাহর পেয়ারা হাবিবের শুভ পদার্পণে ইয়াসরিব আলোকিত হয়ে যায়। নতুন নাম ধারণ করে মদিনাতুন্নবী বা নবীজির শহর।সংক্ষেপে মদিনা।৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৮ হিজরিতে ১০ সহস্রাধিক সেনা নিয়ে ফতেহ মক্কার পরে বিদায় হজ্জের ভাসনের পরে অনেকে মনে করেছিলেন আল্লার নবী ﷺমক্কাতেই থেকে যাবেন,কিন্তু না তিনি মদিনাকেই বেশী ভালোবেসে সঙ্গীসাথিদের নিয়ে সেখানেই ফিরে গিয়েছিলেন। জাহেলিয়াতের অন্ধকারের জায়গাটি পরিনত হয় মানব ইতিহাসের ভ্রাত্তিত্বের মডেল।পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারাহ হচ্ছে উম্মতে মোহাম্মদীর আত্মিক প্রশান্তির কেন্দ্রস্থল। আর সেই মদিনার মাঠিতে শুয়ে আছেন রাহমাতুল্লিল আলামিন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হাবিবে রাসুল ﷺযা মুসলিম মিল্লাতের কাছে পবিত্র কাবা ঘরের পরেই মর্যাদার স্থান। যেখানে আছে 'রিয়াজুল জান্নাহ' নামের বেহেস্তি টুকরা। রসূলﷺ এর অনেক স্মৃতি বিজড়িত, ইসলাম ও মুসলমানের পুণ্যভূমি এ মদিনা।
➲ মদিনার পবিত্রতা রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং ঘোষণা করেছেন। হাদিস শরীফে এসেছে, হে আল্লাহ ! ইব্রাহীম মক্কাকে পবিত্র হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, আর আমি এই দুই পাহাড়ের মাঝখানের জায়গা (মদিনা) পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।
মদিনা শরীফ হল ইসলামের আশ্রয়ের স্থল, রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবাদের হিজরতের পবিত্র জায়গা। রাসূলুল্লাহ ﷺও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের ত্যাগ ও কোরবানির ইতিহাস মিশে আছে মদিনা শরীফের ধুলো-কণায়। পবিত্র কুরআন শরীফের অর্ধেক নাযিল হয়েছে মদিনা শরীফে। মক্কাবাসী ইসলামকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার অপপ্রয়াসে প্রবৃত্ত হলেও মদিনাবাসী অনুক্ষণ নিবিষ্ট ছিল এই প্রদীপকে আরো অধিকতর প্রোজ্জ্বল করার প্রচেষ্টায়। এখানেই মক্কাবাসীর ওপর মদিনাবাসীর শ্রেষ্ঠত্ব। ইসলামি আইনকানুন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ''মদিনা সনদে''র আলোকে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় নবী ﷺ মদিনা শরিফকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।এরপর থেকেই ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্মের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে।কাজেই কোনো মুসলমান পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য মক্কায় যাবে আর মদিনা না গিয়ে ফিরে আসবে তা হয় না। মদিনায় গমন যদিও হজ্বের ফরজ বা ওয়াজিব তথা হজ্ব সম্পাদনের কোনো অংশ নয়। কিন্তু নবীপ্রেম আর ভালোবাসার টানে হৃদয়ের এক আকর্ষণে সবাই ছুটে যায় মদিনায়। রাসূল ﷺ এর রওজা মোবারক জিয়ারত ও মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় ছাড়া মনে হয় যেন তৃপ্তিই আসে না। কারণ প্রথমত মদিনা শহর পুরো পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত নগরী। রাসূল ﷺ নিজে এ শহরকে ভালোবেসেছেন, পছন্দ করেছেন এবং এর জন্য দোয়া করেছেন।তিনি মদিনাকে এতটাই বেশি ভালোবাসতেন যে, কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে উটের গতি বাড়িয়ে দিতেন। মদিনায় ফিরে আসতে তিনি ব্যাকুল হয়ে যেতেন।
➲ একদা রাসূল ﷺ মিম্বরে উঠে দাজ্জাল সংক্রান্ত আলোচনা শেষে আপন লাঠি দ্বারা মিম্বরে টোকা দিয়ে বললেন, এটা তাইবা, এটা তাইবা, এটা তাইবা, অর্থাৎ পবিত্র মদিনা। (মুসলিম)।
➲ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলﷺ বলেছেন:- মক্কা শরীফে নামাজ আদায়ের সওয়াব এক রাকাতে ১ লক্ষ আর মদীনা শরীফে ৫০ হাজার। (ইবনে মাজাহ)
➮মদিনার সাথে রাসুল ﷺ-এর নাড়ির সম্পর্ক:═ প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা ইবনে হিশাম বর্ণনা করেন, রাসুল ﷺ-এর প্রপিতামহ হাশিম তৎকালীন ইয়াসরিব, অর্থাৎ মদিনার প্রসিদ্ধ গোত্র বনু নাজ্জারের সালমা নামের এক গুণবতী মহিলাকে বিয়ে করেন। তাঁর ঔরসেই জন্মগ্রহণ করেন রাসুল ﷺ-এর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব। মক্কা শরিফ থেকে মদিনা শরিফ হিজরত করার প্রাক্কালে রাসুল ﷺ যখন বনু নাজ্জারের মহল্লা দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন মহল্লার ছোট শিশু ও কিশোরীরা নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল, আমরা নাজ্জার গোত্রের মেয়ে, কী সৌভাগ্য আমাদের, মুহাম্মদ আমাদের প্রতিবেশী। (বায়হাকি, ইবনে কাছির)
➲ হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু তখন স্বল্পবয়সী বালক ছিলেন। তিনি বলেন, যেদিন রাসুল ﷺ মদিনা শরিফে তাশরিফ আনেন, সেদিনের চেয়ে আলোকোজ্জ্বল এবং অনিন্দ্য সুন্দর দিন আমি আর দেখিনি।
❖═➮ মদিনায় (المدينة المنورة) আপনি আরো যা দেখবেন,বাদশাহ আব্দুল আজিজ এর পরিকল্পনায় ১৯৫৩-১৯৫৫ সাল নাগাদ সম্পূর্ণ নতুন নকশার ভিত্তিতে মসজিদ আধুনিকায়ন করা বর্তমান মসজিদে নববীর (المسجد النبوي) মনকাড়া দৃশ্য । প্রথমে এই মসজিদ নির্মাণের জন্য নবী ﷺ নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামক দুই জন এতিম বালকের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় করেন। এর ক্ষুদ্র একটি অংশে বাসস্থান নির্মাণ করতঃ বাকী অংশে মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন যা নির্মাণ করতে ৭ মাস সময় লেগেছিল।নির্মাণ কাজ রাসূল ﷺ সবার সঙ্গে মিলে করেছিলেন। নিজ হস্তে তিনি ইট-পাথর বয়ে এনেছিলেন।মুহাজির ও আনসারী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছিলেন ফলে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক গভীর ও সুদৃঢ় হয়েছিল উম্মতে মোহাম্মদীর।
➲ হযরত আবদুল্লাহ ইবনুূু উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় এর সময়ে মসজিদ তৈরী হয় কাঁচা ইট দিয়ে, তার ছাদ ছিল খেজুরের ডালের, খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু এতে কিছু বাড়ান নি। অবশ্য উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু বাড়িয়েছেন। আর তার ভিত্তি তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যে ভিত্তি ছিল তার উপর কাঁচা ইট ও খেজুরের ডাল দিয়ে নির্মাণ করেন এবং তিনি খুঁটিগুলো পরিবর্তন করে কাঠের (খুঁটি) লাগান। তারপর উসমান রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু তাতে পরিবর্তন সাধন করেন এবং অনেক বৃদ্ধি করেন। তিনি দেয়াল তৈরী করেন নকশী পাথর ও চুন-সুরকি দিয়ে। খুঁটিও দেন নকশা করা পাথরের, ছাদ বানান সেগুন কাঠ দিয়ে। (সহীহ বুখারী)
দোজাহানের সরদার বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সায়্যাদুল মুরসালীন হাবিবুল্লাহ প্রিয় নবী ﷺ রওজা পাক, সাথে খোলাফায়ে রাসুল হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু ও হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহুর কবর,জান্নাতুল বাকী, মসজিদে কুবা। এছাড়াও শুহাদায়ের ওহুদ প্রান্ত, দুই কেবলাওয়ালা মসজিদ, জাবালে নূর ইত্যাদি।
➮ মদীনা না দেখা তো কুচ্ভী না দেখা--মুহাম্মদ ﷺ কা রওজা হে জান্নাত কা নকশা।
পরিশেষে, মদীনা আল মুনাওয়রায় বারবার গিয়ে মসজিদে নববী এবং রওজায়ে আতহার জিয়ারত করার তৌফিক আল্লাহ রব্বুল আলামিন এর দরবারে প্রার্থনা করি। আমিন!
(সবাইকে অনুরোধ করছি আমার লেখাতে ভুল হলে আমাকে জানাবেন প্লীজ)
❖❖❖❖❖❖❖❖❖➲
✏ ইমরান বিন বদরী ≪
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
“ভেসে যায় হৃদয় আমার মদীনার পানে
হিজরত করে আসিলেন নবী প্রথম যেখানে।
------- কাজী নজরুল ইসলাম
মদিনা (আরবি: المدينة )শব্দের অর্থ:শহর বা নগরী হলেও এই মদিনা কিন্তু অন্যান্য মদিনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।আর (لمدينة المنورة) মদিনা-আল মুনাওয়ারা অর্থ আলোকিত নগরী। মক্কা শরীফের ন্যায় মদিনা শরীফেও পবিত্র নগরী। বিশ্বের সকল মুসলমানদের নিকট পবিত্র কাবা শরীফের পরই দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে মহানবীর মদিনা। রাসুল ﷺ মক্কা শরিফকে অত্যধিক ভালোবাসলেও মদিনা শরিফের ভালোবাসাও ছিল তাঁর হৃদয়ের মণিকোঠায়। ইয়াসরিব/ইয়াস্রাব নামের এই জায়গাটি মদিনায় (مدينة رسول الله) পরিণত হয় দোজাহানের সর্দার বিশ্বনবী সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লামমের আগমনের ফলে। মক্কা থেকে আল্লার নবী ﷺ মক্কায় ইসলাম প্রচার যখন অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে, মুসলমানদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন সীমা অতিক্রম করে,তখন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আপন প্রিয় সহচর হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু-কে নিয়ে ৬২২ খ্রীস্টাব্দে এই মদিনাতেই হিজরত করেছিলেন।প্রভাতে সূর্যের উদয় হলে যেমন রাতের অাঁধার বিদায় নিতে বাধ্য হয়, তেমনি নূরের নবী আল্লাহর পেয়ারা হাবিবের শুভ পদার্পণে ইয়াসরিব আলোকিত হয়ে যায়। নতুন নাম ধারণ করে মদিনাতুন্নবী বা নবীজির শহর।সংক্ষেপে মদিনা।৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৮ হিজরিতে ১০ সহস্রাধিক সেনা নিয়ে ফতেহ মক্কার পরে বিদায় হজ্জের ভাসনের পরে অনেকে মনে করেছিলেন আল্লার নবী ﷺমক্কাতেই থেকে যাবেন,কিন্তু না তিনি মদিনাকেই বেশী ভালোবেসে সঙ্গীসাথিদের নিয়ে সেখানেই ফিরে গিয়েছিলেন। জাহেলিয়াতের অন্ধকারের জায়গাটি পরিনত হয় মানব ইতিহাসের ভ্রাত্তিত্বের মডেল।পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারাহ হচ্ছে উম্মতে মোহাম্মদীর আত্মিক প্রশান্তির কেন্দ্রস্থল। আর সেই মদিনার মাঠিতে শুয়ে আছেন রাহমাতুল্লিল আলামিন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হাবিবে রাসুল ﷺযা মুসলিম মিল্লাতের কাছে পবিত্র কাবা ঘরের পরেই মর্যাদার স্থান। যেখানে আছে 'রিয়াজুল জান্নাহ' নামের বেহেস্তি টুকরা। রসূলﷺ এর অনেক স্মৃতি বিজড়িত, ইসলাম ও মুসলমানের পুণ্যভূমি এ মদিনা।
➲ মদিনার পবিত্রতা রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং ঘোষণা করেছেন। হাদিস শরীফে এসেছে, হে আল্লাহ ! ইব্রাহীম মক্কাকে পবিত্র হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, আর আমি এই দুই পাহাড়ের মাঝখানের জায়গা (মদিনা) পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।
মদিনা শরীফ হল ইসলামের আশ্রয়ের স্থল, রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবাদের হিজরতের পবিত্র জায়গা। রাসূলুল্লাহ ﷺও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের ত্যাগ ও কোরবানির ইতিহাস মিশে আছে মদিনা শরীফের ধুলো-কণায়। পবিত্র কুরআন শরীফের অর্ধেক নাযিল হয়েছে মদিনা শরীফে। মক্কাবাসী ইসলামকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার অপপ্রয়াসে প্রবৃত্ত হলেও মদিনাবাসী অনুক্ষণ নিবিষ্ট ছিল এই প্রদীপকে আরো অধিকতর প্রোজ্জ্বল করার প্রচেষ্টায়। এখানেই মক্কাবাসীর ওপর মদিনাবাসীর শ্রেষ্ঠত্ব। ইসলামি আইনকানুন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ''মদিনা সনদে''র আলোকে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় নবী ﷺ মদিনা শরিফকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।এরপর থেকেই ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্মের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে।কাজেই কোনো মুসলমান পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য মক্কায় যাবে আর মদিনা না গিয়ে ফিরে আসবে তা হয় না। মদিনায় গমন যদিও হজ্বের ফরজ বা ওয়াজিব তথা হজ্ব সম্পাদনের কোনো অংশ নয়। কিন্তু নবীপ্রেম আর ভালোবাসার টানে হৃদয়ের এক আকর্ষণে সবাই ছুটে যায় মদিনায়। রাসূল ﷺ এর রওজা মোবারক জিয়ারত ও মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় ছাড়া মনে হয় যেন তৃপ্তিই আসে না। কারণ প্রথমত মদিনা শহর পুরো পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত নগরী। রাসূল ﷺ নিজে এ শহরকে ভালোবেসেছেন, পছন্দ করেছেন এবং এর জন্য দোয়া করেছেন।তিনি মদিনাকে এতটাই বেশি ভালোবাসতেন যে, কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে উটের গতি বাড়িয়ে দিতেন। মদিনায় ফিরে আসতে তিনি ব্যাকুল হয়ে যেতেন।
➲ একদা রাসূল ﷺ মিম্বরে উঠে দাজ্জাল সংক্রান্ত আলোচনা শেষে আপন লাঠি দ্বারা মিম্বরে টোকা দিয়ে বললেন, এটা তাইবা, এটা তাইবা, এটা তাইবা, অর্থাৎ পবিত্র মদিনা। (মুসলিম)।
➲ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলﷺ বলেছেন:- মক্কা শরীফে নামাজ আদায়ের সওয়াব এক রাকাতে ১ লক্ষ আর মদীনা শরীফে ৫০ হাজার। (ইবনে মাজাহ)
➮মদিনার সাথে রাসুল ﷺ-এর নাড়ির সম্পর্ক:═ প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা ইবনে হিশাম বর্ণনা করেন, রাসুল ﷺ-এর প্রপিতামহ হাশিম তৎকালীন ইয়াসরিব, অর্থাৎ মদিনার প্রসিদ্ধ গোত্র বনু নাজ্জারের সালমা নামের এক গুণবতী মহিলাকে বিয়ে করেন। তাঁর ঔরসেই জন্মগ্রহণ করেন রাসুল ﷺ-এর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব। মক্কা শরিফ থেকে মদিনা শরিফ হিজরত করার প্রাক্কালে রাসুল ﷺ যখন বনু নাজ্জারের মহল্লা দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন মহল্লার ছোট শিশু ও কিশোরীরা নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল, আমরা নাজ্জার গোত্রের মেয়ে, কী সৌভাগ্য আমাদের, মুহাম্মদ আমাদের প্রতিবেশী। (বায়হাকি, ইবনে কাছির)
➲ হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু তখন স্বল্পবয়সী বালক ছিলেন। তিনি বলেন, যেদিন রাসুল ﷺ মদিনা শরিফে তাশরিফ আনেন, সেদিনের চেয়ে আলোকোজ্জ্বল এবং অনিন্দ্য সুন্দর দিন আমি আর দেখিনি।
❖═➮ মদিনায় (المدينة المنورة) আপনি আরো যা দেখবেন,বাদশাহ আব্দুল আজিজ এর পরিকল্পনায় ১৯৫৩-১৯৫৫ সাল নাগাদ সম্পূর্ণ নতুন নকশার ভিত্তিতে মসজিদ আধুনিকায়ন করা বর্তমান মসজিদে নববীর (المسجد النبوي) মনকাড়া দৃশ্য । প্রথমে এই মসজিদ নির্মাণের জন্য নবী ﷺ নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামক দুই জন এতিম বালকের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় করেন। এর ক্ষুদ্র একটি অংশে বাসস্থান নির্মাণ করতঃ বাকী অংশে মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন যা নির্মাণ করতে ৭ মাস সময় লেগেছিল।নির্মাণ কাজ রাসূল ﷺ সবার সঙ্গে মিলে করেছিলেন। নিজ হস্তে তিনি ইট-পাথর বয়ে এনেছিলেন।মুহাজির ও আনসারী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছিলেন ফলে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক গভীর ও সুদৃঢ় হয়েছিল উম্মতে মোহাম্মদীর।
➲ হযরত আবদুল্লাহ ইবনুূু উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় এর সময়ে মসজিদ তৈরী হয় কাঁচা ইট দিয়ে, তার ছাদ ছিল খেজুরের ডালের, খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু এতে কিছু বাড়ান নি। অবশ্য উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু বাড়িয়েছেন। আর তার ভিত্তি তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যে ভিত্তি ছিল তার উপর কাঁচা ইট ও খেজুরের ডাল দিয়ে নির্মাণ করেন এবং তিনি খুঁটিগুলো পরিবর্তন করে কাঠের (খুঁটি) লাগান। তারপর উসমান রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু তাতে পরিবর্তন সাধন করেন এবং অনেক বৃদ্ধি করেন। তিনি দেয়াল তৈরী করেন নকশী পাথর ও চুন-সুরকি দিয়ে। খুঁটিও দেন নকশা করা পাথরের, ছাদ বানান সেগুন কাঠ দিয়ে। (সহীহ বুখারী)
দোজাহানের সরদার বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সায়্যাদুল মুরসালীন হাবিবুল্লাহ প্রিয় নবী ﷺ রওজা পাক, সাথে খোলাফায়ে রাসুল হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু ও হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহুর কবর,জান্নাতুল বাকী, মসজিদে কুবা। এছাড়াও শুহাদায়ের ওহুদ প্রান্ত, দুই কেবলাওয়ালা মসজিদ, জাবালে নূর ইত্যাদি।
➮ মদীনা না দেখা তো কুচ্ভী না দেখা--মুহাম্মদ ﷺ কা রওজা হে জান্নাত কা নকশা।
পরিশেষে, মদীনা আল মুনাওয়রায় বারবার গিয়ে মসজিদে নববী এবং রওজায়ে আতহার জিয়ারত করার তৌফিক আল্লাহ রব্বুল আলামিন এর দরবারে প্রার্থনা করি। আমিন!
(সবাইকে অনুরোধ করছি আমার লেখাতে ভুল হলে আমাকে জানাবেন প্লীজ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন