✏ ইমরান বিন বদরী ≪
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমনাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।সৃষ্টির আদিকাল থেকে যুগে যুগে একত্ববাদের প্রচারে সত্য ও রিসালতের বাণী নিয়ে প্রেরিত হয়েছে অগনিত নবী ও রাসুল।জগতের মহান রব, রাব্বুল আলামীনের যে প্রতিনিধি বা খলীফা হয়ে বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য এসেছেন তারাই নবী তাদেরই আবার অনেকে আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত রাসুল।আল্লাহ ও রাসূল নাম দু’টি তাওহীদ ও রিসালতের একটি অন্যটির পরিপূরক। একজন ঈমানদারের জন্য যেমনিভাবে আল্লাহর একত্ববাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয,তেমনিভাবে তাঁর প্রিয় রাসূল দোজাহানের সরদার বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীন,খাতামুন নাবিইয়ীন,হাবীবুল্লাহ নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমানের সহিত শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও আনুগত্য করা সমভাবে আবশ্যক।
◩ সৃষ্টি জগতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীবকে নিজেই মর্যাদা প্রদান করে বলেন- وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
অর্থাৎ:এবং আমি আপনার জন্য আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি। (সূরা আল ইনশিরাহ ৪)
◩বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্রের উত্তম প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ
অর্থাৎ: নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।(সূরা আল-কালাম ৪)
এই মানবজাতির জন্য তিনি (আল্লাহ) মানুষকে সৎপথে চালানোর জন্য দিক-নির্দেশনায় অতি উত্তম ও সুন্দর চরিত্রের রাসূল হিসেবে পৃথিবীতে যাদের প্রেরণ করেছেন।তাদের মধ্যে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী, তিনিই হলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল ‘মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্’ সাল্লাল্লাহু আলইহিওয়া সাল্লাম।যার প্রশংসায় মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর নাম রেখেছেন আহাম্মদ এবং মুহাম্মদ। আহাম্মদ হল সর্বধিক প্রশংসাকারী এবং মুহাম্মদ হল প্রশংসিত।
➲পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর প্রিয়তম বন্ধুকে(মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর পথে আহবানকারীরূপে, ভয় প্রদর্শনকারী এবং সুসংবাদ দানকারী হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রশংসার সাথে আলোচনা করেছেন।
◩ প্রিয়তম বন্ধুকে সৃষ্টি জগতের রহমত হিসেবে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
“হে মুহাম্মদ! আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।” (আম্বিয়া-১০৭)
◩আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবীবকে রাসূল হিসেবে আরো বলেন- قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا
“হে মুহাম্মদ ঘোষণা করে দাও, ওহে মানবজাতি! আমি তোমাদের সকলের প্রতি মহান আল্লাহর রাসূল।” (সূরা আরাফ-১৫৮)
◩আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবীবকে অনুসরণ করতে আরো বলেন- قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
“হে নবী! লোকদের বলে দাও। তোমরা যদি প্রকৃতই আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুণাহসমূহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা আল-ইমরান-৩১)
➲ মহান রাব্বুল আলামীন, তাঁর নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে যেমন ভাবে প্রশংসা করেছেন, তেমনিভাবে মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রেমিক এবং তাঁর বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমেও তিনি তাঁর নিজের পরিচয় এবং প্রশংসাও গ্রহণ করেছেন, যা সারা পবিত্র কুরআনে বিদ্যমান। এখানে সেইসব প্রশংসার কিছু আয়াত বিবৃত করতে সচেষ্ট হলাম।
◩পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
اللَّهُ الصَّمَدُ
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
“হে নবী! আপনি বলে দিন, আল্লাহ , তিনি এক। আল্লাহ তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তিনিও কারো থেকে জন্ম নেননি। এবং তাঁর সমতুল্যও কেউই নেই।”(সূরা ইখলাস)
◩ আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ
“তিনি আল্লাহ! তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই (ইলাহ নেই)। তিনি চিরজীবী চিরস্থায়ী। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই তাঁর।” (সূরা বাকারা-২৫৫)
◩ আরো ইরশাদ হচ্ছে- وَهُوَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ لَهُ الْحَمْدُ فِي الْأُولَى وَالْآخِرَةِ وَلَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
“তিনি আল্লাহ! তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই (উপাস্য নেই)। তাঁরই জন্যে সমস্ত প্রশংসা দুনিয়াও আখিরাতে। শাসন কতৃêত্ব ও সার্বভৌমত্ব কেবলমাত্র তাঁরই। এবং তোমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাবে।” (সূরা কাছাছ-৭০)
➲আসলে বন্ধুরা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুণাবলীর বর্ণনা একমাত্র আল্লাহর দ্বারাই শেষ হতে পারে, মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। সৃষ্টি জগতে মহান রাব্বুল আলামীনের একত্ববাদের বিকাশ ও পরিচয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমেই হয়েছে। তাই আল্লাহ তায়ালার নামের পাশে তার রাসূলের নামের সংযোজন। আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের সাথে সাথে তাঁর প্রিয় নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম রিসালতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তাই শোভা পাচ্ছে কালিমায়ে তাইয়্যিবায় লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ(لاَ اِلهَ إِلاَّ اللهُ) আর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ)
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ)। অর্থাৎ: আল্লাহ ব্যতিত কোন মাবুদ নাই,মুহাম্মদ (দঃ) আল্লার রাসুল।
এক আল্লাহর একত্ববাদের পূর্ণ পরিচিতি কেবল নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। কালেমা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস সম্বলিত কয়েকটি আরবি পংক্তির নাম। এর মাধ্যমেই ইসলামের প্রথম স্তম্ভ শাহাদাহ্ পূর্ণতা পায়।
لا اله الا الله محمد رسول الله কালেমা শরীফের মূল শিক্ষা হচ্ছে আল্লাহ পাক রব্বুল আ'লামীন উনাকে ইলাহ বা মা'বুদ/ স্রষ্টা হিসাবে মানা এবং উনার উপর ঈমান আনা সেই সাথে নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি যে আল্লাহ পাক উনার রসূল সে বিষয়ে ঈমান আনা।
◩ এ প্রসংঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন - إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ
অর্থ: নিশ্চয়ই প্রকৃত মুমিন তো তারাই; যারা আল্লাহর ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে (সূরা নূর আয়াত ৬২)
এই আয়াত থেকে বোঝা গেল আল্লাহ পাক রব্বুল আ'লামীনের সাথে সাথে তাঁর প্রিয় রসূলের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি ঈমান আনাকে আল্লাহ শর্ত করে দিয়েছেন। আর সে কারনে মু'মিন মুসলমানদের ঈমান ও আক্বীদার মূল কালিমা হচ্ছে - لا اله الا الله محمد رسول الله
কালেমা তাইয়্যেবা হচ্ছে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় রসূলের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)উম্মতগণকে চির সুখময় জান্নাত প্রদানের জন্য যে বেশ কিছু পথ পাথেয় নির্ধারণ করে রেখেছেন এগুলোর অন্যতম।
◩কালেমায়ে তাইয়্যেবার একটা অতুলনীয় উদাহরণ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা যেমন-
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللّهُ مَثَلاً كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاء
তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ তা’আলা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেনঃ পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত। تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا وَيَضْرِبُ اللّهُ الأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
সে পালনকর্তার নির্দেশে অহরহ ফল দান করে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্ত বর্ণণা করেন-যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।
وَمَثلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتُثَّتْ مِن فَوْقِ الأَرْضِ مَا لَهَا مِن قَرَارٍ
এবং নোংরা বাক্যের উদাহরণ হলো নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির উপর থেকে উপড়ে নেয়া হয়েছে। এর কোন স্থিতি নেই।
يُثَبِّتُ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللّهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللّهُ مَا يَشَاء
আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন। (সূরা ইব্রাহীম : ২৪-২৭)
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করে সে অনুযায়ী আমল করা প্রত্যেকের ওপর ফরজ।
◩ প্রসিদ্ধ হাদীসে জিব্রাইলে হজরত জিব্রাইল (আ:)যখন সাহাবীদের মাঝে এসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বসে একের পর এক প্রশ্ন করে সাহাবীদের শিক্ষা দিচ্ছেন তখন জিব্রাইল (আ:) ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইলে আল্লাহর হাবিব বলেন :-
أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
"আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল" এটাইতো কালেমা।
সহীহ মুসলিম শরীফের ইমান অধ্যায়ে হাদিসটি হজরত আবদুল্লাহ ইবনু উমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন,আমাকে আমার পিতা উমর ইবনু খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহু হাদীসটি শুনিয়েছেন। উপরোক্ত হাদীসের মর্মার্থই কালেমা তাইয়্যেবাকে অন্যান্য রোকন নামাজ ,রোজা, হজ্জ, যাকাত, এবং কিয়ামতের শিক্ষা দেয়ার আগেই কালেমা তথা ইসলামের মূল বুনিয়াদের কথা আলোচনা করা হয়েছে।
◩সূরা ফাতহ এর ২৯ নং আয়াত মহান আল্লাহ পাক শুরু করেছেন- مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ "মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ" বলে।
◩ এছাড়াও তাওহীদ ও রিসালাতের ঘোষনায় ইসলামের ৫টি ভিত্তির মধ্যে ১টির অন্তর্ভুক্ত কালেমা :-
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، قَالَ أَخْبَرَنَا حَنْظَلَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ خَالِدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ
হজরত উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা (রাঃ) ইবনু উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।
১। لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ আল্লাহ্র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান।
২। সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা ৩। যাকাত দেওয়া ৪। হাজ্জ (হজ্জ) করা এবং ৫। রামাদান এর সিয়াম পালন করা। (সহীহ বুখারি/ঈমান)
◩ আবূ সালামা ইয়াহইয়া ইবনু খালাফ বাসরী (রহঃ) আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি কোন ইলাহ নেই আল্লাহ্ ছাড়া, আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল। (জামে তিরমিজী /কাফন-দাফন)
◩ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, " যে কোন বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ’ তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।
(সহীহ বুখারি (ইফা) ইলম বা জ্ঞান)
◩ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ”। (সহীহ বুখারি (ইফা)সালাত)
#হযরত ইবনুূু ওমাসা আল মাহরী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,তিনি বলেন,আমরা আমর ইবনুূু আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর মুমুর্ষ অবস্হায় তাকে দেখতে উপস্হিত হলাম। তখন তিনি দেয়ালের দিকে মুখ করে অনেকক্ষণ কাঁদছিলেন। তার পুত্র তাঁকে তাঁর সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত বিভিন্ন সুসংবাদের উল্লেখ পূর্বক প্রবোধ দিচ্ছে যে,আব্বা ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে অমুক সুসংবাদ দেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে অমুক সুসংবাদ দেননি? রাবী বলেন, তখন তিনি পুত্রের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, আমার সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয় হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্
#হজরত মু’আয বিন জাবাল রাদিআল্লাহু আনহুর বর্ণনা - থেকে জানা যায় যে, তাবুক অভিযানের পূর্বে আল্লাহর আল্লাহর রাসূল লোকদেরকে নিয়ে (রাত্রিকালীন সময়ে) বের হন; অতঃপর ভোর হলে তিনি ফজরের সালাত আদায় করেন। (সালাত শেষে) কাফেলার লোকজন আরোহণ করে অগ্রসর হতে থাকে। অতঃপর সূর্য উদিত হওয়ার পর (লোকজন রাত্রি সফরের ক্লান্তিবশত) তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে কিন্তু মু’আয রাদিআল্লাহু আনহুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুসরণ থেকে মুহুর্তের জন্যও বিচ্যুত হননি (বরং তাঁর সংসর্গে একনিষ্ঠভাবে লেগে থাকেন) অথচ (ঐ সময়) লোকজন তাদের পরিবাহী পশুদেরকে নিয়ে সমতল ও মসৃন রাস্তায় ও আশপাশে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন; উদ্দেশ্য পশুদের খাবার খাওয়ান ও ভ্রমণ করা। এদিকে মু’আয রাদিআল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুসরণ অব্যাহত রাখেন। তাঁর (রাসূলের) উষ্ট্রী ঘাস খাচ্ছে এবং (আপনমনে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। মু’আয রাদিআল্লাহু আনহু-এর উষ্ট্রীর (হঠাৎ) পা পিছলে যায়, তিনি লাগাম ধরে টান দেন। এতে তাঁর উষ্ট্রী দ্রুত চলতে থাকে, ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর উষ্ট্রীও (ভয়ে) কিছুটা দূরে সরে যায়। এই পর্যায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাওদার পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকে তাকালেন। তিনি দেখতে পেলেন সৈন্যদের মধ্যে মু’আয রাদিআল্লাহু আনহু এর নিকটতর আর কেউ নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ডাকলেন, হে মু’আয (এদিকে আস), মু’আয বললেন আমি হাজির ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, আরো কাছে আস। মু’আয কাছে এগিয়ে গেলেন এমনকি তাঁদের বাহন দু’টি একটি অপরটির সাথে মিলিত হয়ে যায়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি চিন্তাও করিনি (সেনাবাহিনীর) লোকজন (আমার কাছ থেকে) এত দূরে অবস্থান করছে। মু’আয রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লেকজন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে, এই সুযোগে তাদের তাদের বাহনগুলো তাদেরকে নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং (আপন মনে) ঘাস খেয়ে বেড়াচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। (এবার মু’আয যখন রাসূলের চেহারার ঔজ্জ্বল্য দেখতে পেলেন এবং নির্জনতার সুযোগ পেলেন, তখন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে অনুমতি দিন, আমি আপনাকে এমন একটি প্রশ্ন করবো, যা আমাকে রোগ্ন, ক্লান্ত-শ্রান্ত ও চিন্তামুক্ত করে ফেলেছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যা খুশী প্রশ্ন কর মু’আয রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে - এছাড়া আমি আপনার কাছে অন্য কোন প্রশ্ন করবো না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাহ, বাহ, বাহ, নিশ্চয় তুমি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন করেছ কথাটি তিনি তিনবার বললেন, (জেনেরাখ) এ বিষয়টি আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাঁর জন্য খুবই সহজ। এরপরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যে কথাটই বলেছেন, তা তিনবার করে পুনরাবৃত্তি করেছেন, যেন কথাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করে মু’আয রাদিআল্লাহু আনহু তা মহানবী থেকে আত্মস্ত করে নেন অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর এবং সালাত কায়েম কর; ইবাদত করবে একমাত্র আল্লাহর, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না তোমার মৃত্যু পর্যন্ত তুমি এর উপর অটল থাকবে। মু’আয রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর নবী, আপনি পুনরায় বলুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাগুলো তিনবার বলে দিলেন।এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মু’আয তুমি চাইলে আমি তোমাকে সর্বোৎকৃষ্ট আমলের সা-সংক্ষেপ বলে দিতে পারি। মু’আয রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, অবশ্যই, আপনার তরে আমার মা-বাবা কুরবান হোক আপনি বলুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতঃপর বললেন, সারকথা হচ্ছে-তুমি সাক্ষ্য প্রদান করবে যে আল্লাহ ভিন্ন কোন ইলাহ ন
#আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আবদুল কায়েস (রাঃ)-এর প্রতিনিধিদল যখন মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করে, তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, কোন গোত্রের প্রতিনিধি দল (অথবা কোন সম্প্রদায়ের)? তারা বললেন, রাবীয়া (গোত্রের)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রতিনিধি দলকে স্বাগতম অথবা বললেন, সম্প্রদায়কে যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মান সহকারে স্বাগতম, তাঁরা যেন এতটুকু অপমানিত ও লজ্জিত না হয়। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা অনেক দুরাঞ্চল থেকে আপনার দরবারে হাযির হয়েছি, আপনি এবং আমাদের মাঝে মুদার গোত্রের কাফিরদের বাধার প্রাচীর রয়েছে। তাই আমরা ‘শাহরে হারাম’ বা পবিত্র মাস ব্যতীত(অন্য কোন সময়) আপনার নিকট আসতে সক্ষম নই।
সুতরাং আপনি (মেহেরবানী পূর্বক) আমাদেরকে এমন কিছু বিষয়ের কথা বলুন যাতে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি এবং আমাদের পেছনে যারা আছেন তাঁদের কাছেও সেই সংবাদ পৌঁছে দিতে পারি। প্রসঙ্গত তারা পানিয় (ও পানিয় দ্রব্যের পাত্রাদি) সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে চারটি বিষয়ে আদেশ এবং চারটি বিষয়ে নিষেধ প্রদান করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ‘ঈমান বিল্লাহ’-এর নির্দেশ দান করেন এবং বলেন, তোমরা কি আল্লাহর প্রতি ঈমান এর তাৎপর্য জানো? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তদীয় রাসূল উত্তম জ্ঞাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাক্ষ্য দেয়া এই মর্মে যে, আল্লাহ ভিন্ন কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূ
✪অতএব,এ কালেমা হতে আপনি সর্বপ্রথম জানতে পারেন যে, আপনি আল্লাহর বান্দাহ, আর কারো বান্দাহ আপনি নন। আপনি আরো জানতে পারলেন যে, আপনি যার বান্দাহ দুনিয়ায় তাঁরই মর্জিমত আপনাকে কাজ করতে হবে।এ কালেমা আপনাকে আরো শিক্ষা দেয় যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল । একথা জেনে নেয়ার সাথে সাথে আপনি আরো জানতে পারলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াতে যে মিষ্ট ফুল এবং ফলের বাগান রচনা করার নিয়ম দেখিয়ে দিয়েছেন, আপনাকেও ঠিক সেই নিয়মেই কাজ করতে হবে। আপনি যদি সেই নিয়ম অনুসরণ করেন, তবে পরকালে ঠিকই আপনি ফসলরূপে হবেন। আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁও ওয়া আলা আলিহী ওয়া আস্হাবিহী ওয়া আহ্লিবাইতিহী-আজমাঈন।
বন্ধুরা--➲ আমরা যাতে প্রতিদিন উক্ত কালেমা পাঠ করতে পারি, তার প্রতি মনোযোগ নিবন্ধ করি। পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের সবাইকে কালেমা শরীফ পাঠ করার তাওফীক দান করুন। মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন