মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০১৫

রওজা পাক জিয়ারত

রওজা পাক জিয়ারত
════════════➲ 
ইমরান বিন বদরী
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তালা এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ﷺ উপর দরূদ পড়তেছেন । অতএব হে ঈমানদারগণ ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ কর ।(সূরা আল আহযাব ৫৬)
সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
কার না মন চায় বন্ধুরা- হৃদয় উজাড় করে হৃদয়ের মণিকোঠায় লুকিয়ে থাকা ভালবাসা দিয়ে মানবতার মুক্তির দিশারী সায়্যাদুল মুরসালীন হাবিবুল্লাহ কমলীওয়ালা নবীﷺকে সালাম জানাতে এবং নবীর ﷺ প্রতি দরূদ পাঠ করতে !!


প্রিয় বন্ধুরা══➲ কতইনা সৌভাগ্যবান ঐ সব ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবের রওজায় নিয়ে যান এবং দুরূদ ও সালাম পেশ করার তৌফিক দান করেন। দুনিয়ার বুকে এমন কে আছে যার জন্য হাশরের মাঠের মহা সংকটের দিনে আমাদের প্রিয় নবী ﷺ এর সুপারিশ প্রয়োজন হবে না ? আর কত বড় সৌভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি, যার জন্য নবীজী ﷺ শাফায়াতের জিন্মাদারী নিবেন। আলোক প্রত্যাশী প্রতিটি মুমিন মুসলমানদের অন্তর আজন্ম উন্মুখ হয়ে থাকে নবী পাক ﷺ এর রওজা মোবারক জিয়ারত ও পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারা দর্শনের জন্য। যা দর্শনে প্রশান্তিতে ভরে ওঠে মুমিনদের হৃদয়।
➲ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-- وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
“যদি কখনও তারা নিজেদের আত্নার প্রতি জুলুম করে রসূল আপনার দরবারে হাজির হয়। অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর রাসুল ﷺ তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও মেহেরবানরূপে পাবে।” (সূরা আন নিসা,৬৪)
এখানে (আয়াতে) রাসুল ﷺ এর জীবদ্দশার কথা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই। আর এখানে وَلَوْ শব্দের অর্থ: যদি কখনও, আর جآءُوْكَ শব্দের অর্থ: যদি হাজির হত অর্থাৎ আপনার (দরবারে)কাছে আসত”।
➲ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلى اللّهِ وَكَانَ اللّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
এবং যে ব্যক্তি আপন ঘর থেকে আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি হিজরতকারী হয়ে বের হয়েছে অতপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসেছে। তাঁর পুরস্কার আল্লাহর দায়িত্বে এসে গেছে।আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সুরা নিসা :আয়াত ১০০)
➮বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের ঈমানী চেতনার প্রতীক।যার সাথে পৃথিবীর দেড়শ’ কোটি মুসলমানের গভীর ধর্মীয় আবেগ জড়িত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারত করার মধ্য দিয়ে দ্বীনে ইসলামের প্রতি মুসলমানদের ভালোবাসাই প্রকাশ পায়।
➲ পবিত্র কুরআনে অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَابْتَغُواْ إِلَيهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُواْ فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর,তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্নেষণ কর এবং তাঁর পথে সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফল কাম হতে পারবে? (সূরা মায়িদা আয়াত-৩৫)।
উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য উপায় বা অসিলা (الْوَسِيلَةَ) প্রয়োজন। আর আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য সর্ব প্রধান মাধ্যমই হচ্ছে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এর চেয়ে উত্তম উপায় আর নেই।
➲ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি 
ওয়া সাল্লাম 
ইরশাদ করেছেন : مَنْ زَارَ قَبْرىْ وَجَبَتْ لَه شَفَاعَتىْ
“যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) ওয়াজিব হয়ে গেল”।(বায়হাকী ৪১৫৯,জামে ছগীর ১৭১)
➲ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু বর্ণিত অন্য একটি হাদীসে আছে নবী ﷺ বলেছেন যে ব্যক্তি আমার ওফাতের পর হজ করবে অতঃপর আমার কবর জিয়ারত করবে, সে যেন জীবিতাবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল। (মেশকাত)।
➲ হযরত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত।
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন- তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়।

(মুসলিম ৯৭৬নাসায়ী২০৩৪আবূ দাউদ৩২৩৪)
➲ রাসূলুল্লাহﷺ আহলে বাকি’র কবর (জান্নাতুল বাকি)জিয়ারতকালে বলতেন।

السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُوْنَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيْعِ الغَرْقَدِ.
‘আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, মুমিন সম্প্রদায়ের আবাস স্থল। আমরা আপনাদের সাথে যুক্ত হব ইনশাআল্লাহ। হে আল্লাহ আপনি আহলে বাকিদেরকে মাফ করে দিন।’
➲ উম্মুল মু’মিনীন হজরত আয়িশাহ্ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহা থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ কবর জিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
➲ ইবনে নোমান রাদ্বি আল্লাহু তালা আনহু হতে বর্ণিত , নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যাক্তি প্রত্যেক জুমুয়ার দিন নিজ পিতা-মাতা অথবা তাদের মধ্যে একজনের কবর যিয়ারত করবে তাকে মাফ করে দেয়া হবে |(মিশকাত ১৬৭৬)
➲ হযরত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তাঁর মায়ের কবর জিয়ারত করেন। তিনি কান্নাকাটি করেন এবং তাঁর সাথের লোকেদেরও কাঁদান। অতঃপর তিনি বলেন : আমি আমার রবের নিকট তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। আমি আমার রবের নিকট তার কবর জিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেন। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের মৃত্যু স্মরণ করিয়ে দেয়। (মুসলিম ৯৭৬,ইবনে মাজাহ)
মা আমিনার কবর যে মদীনা শরীফ হতে অনেক দূরে তাতে কোন সন্দেহ নাই। দীর্ঘপথ তিনি একমাত্র তাঁর আম্মার কবর জিয়ারত করার নিয়তে গমন করেছিলেন অন্য কোন কারণে নয়।
➲ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু সফর থেকে ফিরে এলে রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাথি-দ্বয়ের কবরে এসে সালাম পেশ করতেন। 

الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ
➮ অতএব এরকম মহান রওজা পাকের জিয়ারতের মাধ্যমে ইহা উভয় জগতে কামিয়াবী অর্জন করার একটি সুবর্ণ সুযোগ। তাছাড়া মসজিদে নববীতে রয়েছে একটি জান্নাতের অংশ যেখানে নামাজ আদায়ে পূণ্য অর্জন করা সওয়াব প্রত্যাশা কর্তব্য
➲ রাসুল ﷺ বলেছেন :- আমার ঘর মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি জান্নাতের একটি টুকরা (রিয়াজুল জান্নাহ) এবং আমার মিম্বরটি আমার হাউজের উপর স্থাপিত”। (সহীহ বুখারী-১১৩৮)
আর যারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারত করার সফর জায়েজ নেই বলে তারা নিজেদের মতের পক্ষে নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলির পেশ করে থাকে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( لا تشد الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد المسجد الحرام ومسجد الرسول صلى الله عليه و سلم ومسجد الأقصى

➲ হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন- তিন মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসা ব্যতীত সফর করা যাবে না”। (মুত্তাফাক আলাইহি)
উক্ত হাদীসটির ক্ষেত্রে- সওয়াবের উদ্দেশ্যে, নামায আদায়,ও অতিরিক্ত কোন ফায়দার উদ্দেশ্যে এ তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে সফর করা যাবে না, কেননা এ তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করার মাঝে অতিরিক্ত কোন ফায়দা ও সওয়াব নেই। কিন্তু এ তিন মসজিদে সওয়াব বেশি হওয়ায় এ মসজিদের উদ্দেশ্যে সফরের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারতের সফর করা যাবে না। উদ্দেশ্য অনুযায়ী সফরের বিভিন্ন হুকুম হতে পারে। হারাম কাজের জন্য সফর করা হারাম। জায়েজ কাজের জন্য জায়েজ। ফরজ কাজের জন্য ফরজ- যেমন, ফরজ হজের জন্য সফর করা ফরজ।
➮ ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন॥
এ হুকুমের উদ্দেশ্য হলো শুধু মসজিদের সাথে সস্পৃক্ত। এ মসজিদত্রয় ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে নামাজের জন্য সফর করা নিষিদ্ধ। তবে যদি মসজিদ ব্যতীত জিয়ারত, জীবিত-গণের সাথে সাক্ষাৎ, ইলম অর্জন, ব্যবসায় ও ভ্রমনের জন্য সফর করে তা এ হাদীসের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না।(ফতহুল বারী ৩য় খন্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)
ঐ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য সব মসজিদে শুধু নামাজ পড়ার জন্য নিষেধ করার কারণ হলো বাকী মসজিদগুলো সওয়াবের দিক দিয়ে সমান।
বন্ধুরা══➲ প্রতিটি মোমিনের প্রাণের মানুষটি যে শুয়ে আছেন সোনার মদিনায়।
➲ সূরা আহযাবে:৬ আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ
''নবী মুমিনদের নিকট তাদের প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়তম।''
এ থেকেই অনুমান করা যায়, নবীজি প্রতিটি মুমিনের কত কাছের, শ্রদ্ধার ও প্রাণের আপনজন।
➲ হাদিস শরিফে বর্ণিত, قَالَ النَّبِيُّ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ আমি (রাসূল) তাঁর কাছে তার পিতামাতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে অধিক ভালোবাসার পাত্র না হব। (মুত্তাফাক আলাইহি,আহমাদ ১২৮১৪)
বস্তুত, সেই পরম ভালোবাসার পাত্র আল্লাহর প্রিয়তম রাসূল যে শহরে শায়িত, তাঁর মর্যাদার আসন মুমিনদের হৃদয়-সিংহাসনে কত উচ্চে তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।
পরিশেষে, মদীনা আল মুনাওয়রায় বারবার গিয়ে মসজিদে নববী এবং রওজায়ে আতহার জিয়ারত করার তৌফিক আল্লাহ রব্বুল আলামিন এর দরবারে প্রার্থনা করি। আমিন! (সবাইকে অনুরোধ করছি লেখাতে ভুল হলে আমাকে জানাবেন প্লীজ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন