সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫

সদকাতুল ফিতর

সদকাতুল ফিতর

═════❖══════════❖═════
ইমরান বিন বদরী ≪ 
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।

সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব সৃষ্টি করেছেন, তার ইবাদাতের জন্য আর তাই প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে আমাদের এ সূত্রটি সামনে রাখতে হয়। সদকাতুল ফিতর ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার (দৈহিক ইবাদতের) পর বিশেষ আর্থিক ইবাদত হলো, সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা।

সদকাতুল ফিতর কী
ফিতরা(فطرة) আরবী শব্দ,ফিতর বা ফাতুর বলতে খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয় যা দ্বারা রোজাদারগণ রোজা ভঙ্গ করেন। ইসলামে যা সদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) নামে পরিচিত। পরিভাষায় ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় জীবিকা নির্বাহের অত্যাবশকীয় সামগ্রী ছাড়া নিসাব পরিমাণ বা অন্য কোনো পরিমাণ সম্পদের মালিকদের পক্ষ থেকে গরিবদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের দানকে সদকাতুল ফিতর বলা হয়। শরিয়তের হুকুম মোতাবেক এটি একটি ওয়াজিব আমল। যা ঈদের সালাতের (নামাযের) পুর্বে আদায় করা হয়।সদকাতুল ফিতর শুধু মাত্র রমজান মাসে রোজাদারদের ভুল-ত্রটি ইত্যাদি’র কাফ্ফারা হিসেবে দিতে হয়। আর যাকাত অর্জিত সম্পদের বাৎসরিক হিসাবের উপর নির্ধারিত হয়।সদাকাতুল ফিতরের সম্পর্ক দেহের সাথে ও রোজার সাথে। আর জাকাতের সম্পর্ক মালের সাথে

 
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ دَاوُدَ بْنِ قَيْسٍ الْفَرَّاءِ عَنْ عِيَاضِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي سَرْحٍ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ «كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الْفِطْرِ إِذْ كَانَ فِينَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَاعًا مِنْ طَعَامٍ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ صَاعًا مِنْ زَبِيبٍ فَلَمْ نَزَلْ كَذَلِكَ حَتَّى قَدِمَ عَلَيْنَا مُعَاوِيَةُ الْمَدِينَةَ فَكَانَ فِيمَا كَلَّمَ بِهِ النَّاسَ أَنْ قَالَ لَا أُرَى مُدَّيْنِ مِنْ سَمْرَاءِ الشَّامِ إِلَّا تَعْدِلُ صَاعًا مِنْ هَذَا فَأَخَذَ النَّاسُ بِذَلِكَ». قَالَ أَبُو سَعِيدٍ لَا أَزَالُ أُخْرِجُهُ كَمَا كُنْتُ أُخْرِجُهُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَبَدًا مَا عِشْتُ.
হজরত আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় আমরা সাদকাতুল ফিতর বাবদ এক সা‘ খাদ্য (গম) বা এক সা‘ খেজুর বা এক সা‘ যব বা এক সা‘ পনির অথবা এক সা‘ কিসমিস দান করতাম। আমরা অব্যাহতভাবে এ নিয়মই পালন করে আসছিলাম। অবশেষে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু মাদ্বীনায় আমাদের নিকট আসেন এবং লোকেদের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, আমি শাম দেশের উত্তম গমের দু’ মুদ্দ পরিমাণকে এখানকার এক সা‘র সমান মনে করি। তখন থেকে লোকেরা এ কথাটিকেই গ্রহণ করে নিলো। আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি কিন্তু সারা জীবন ঐ হিসাবেই সদকাতুল ফিতর পরিশোধ করে যাবো,যে হিসাবে আমি রসূলুল্লাহ ﷺ -এর যুগে তা পরিশোধ করতাম। 
(সহীহ বুখারী ১৫০৫ মুসলিম ৯৮৫, তিরমিযী ৬৭৩, নাসায়ী ২৫১১আবূ দাউদ ১৬১৬আহমাদ ১০৭৯৮)
সদাকাতুল ফিতর এটা স্বাধীন, পরাধীন, পুরুষ, মহিলা,ছোট বড় সকল মুসলিমের উপর ওয়াজিব।একটি মুসলিম পরিবারের মালিকের নিকট একদিন ও এক রাতের খাদ্যের অতিরিক্ত পরিমাণ সম্পদ থাকলেই তার নিজের এবং পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ হতে ফিতরা আদায় করতে হবে। স্বামী তার স্ত্রীর পক্ষ থেকে আদায় করে দেবে,যদি স্ত্রী নিজের পক্ষ হতে আদায় করতে পারে তাহলে সে নিজেই আদায় করবে। আর সেটাই উত্তম। সদকাতুল ফিতরের এর মধ্যে রয়েছে গরিবদের জন্য দয়া এবং তাদেরকে ঈদের দিনে অন্যের নিকট চাওয়া হতে বিরত রাখা। ঈদের দিনে তারা যেন ধনীদের মত আনন্দ উপভোগ করতে পারে এবং ঈদ যেন সকলের জন্য সমান হয়। আর এর মধ্যে আরো আছে সাম্য ও সহমর্মিতা, সৃষ্টিজীবের জন্য ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ব। আর এর মাধ্যমে রোযাদারদের রোযা পবিত্র হয় এবং রোযার ত্রুটির হয়েছিল ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর রোযার এই ত্রুটি হতে পারে কথার মাধ্যমে অথবা গুনাহের মাধ্যমে।সদকাতুল ফিতর আদায়ে আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া প্রকাশ পায়। কারণ তিনিই রমযান মাসের রোযা পূর্ণভাবে রাখার সামর্থ দিয়েছেন।সদকাতুল ফিতর ঈদের দিন ভোরে আদায় করা উত্তম, এবং বিলম্ব না করা উচিত।

সদকাতুল ফিতর এর পরিমাণ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رُمْحٍ الْمِصْرِيُّ أَنْبَأَنَا اللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم «أَمَرَ بِزَكَاةِ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ قَالَ عَبْدُ اللهِ فَجَعَلَ النَّاسُ عِدْلَهُ مُدَّيْنِ مِنْ حِنْطَةٍ».
হজরত ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ সদকাতুল ফিতর (ফিতরা) বাবদ এক সা খেজুর অথবা এক সা‘ যব দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,পরবর্তীতে লোকেরা দু’ মুদ্দ গমকে এক সা‘র সমান ধরে নিয়েছে।
(সহীহ বুখারী ১৫০৩, ১৫০৪, মুসলিম ৯৮৪, তিরমিযী ৬৭৫, নাসায়ী ২৫০০)
আর সদকাতুল ফিতর এর পরিমাণ হলো এক সা, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের যুগে ছিল। এর ওজন মিসকাল -এ হয়: ৪৮০ মিসকাল ভালো গমের ওজন; আর গ্রামের হিসেবে, ২ কিলোগ্রাম ৪০ গ্রাম ভাল গমের ওজন। কেননা,১ মিসকালের ওজন হচ্ছে ৪১/৪; এ হিসেবে ৪৮০ মিসকাল হয় ২০৪০ গ্রাম।কাজেই আপনি যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এর সা’ জানতে চান, তবে দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম ভাল গম এমন একটি পাত্রে নিন, যাতে তা সম্পপূর্ণরূপে পরিপূর্ণ থাকে। তারপর সেই পাত্র দ্বারা এক সা হিসেব করুন।

ফিতরা কাদের দেয়া যাবে না  
১.যাদেরকে যাকাত দেয়া বৈধ নয় ২.কোনো ধনী ব্যক্তিকে 
৩.ইসলামের দুশমনকে ৪.কাফিরকে 
৫.মুরতাদকে ৬.ফাসিককে 
৭. রোজগার করার ক্ষমতা রাখে এমন ব্যক্তিকে 
৮. কুরাইশ বংশের হাশিম বংশধরদের
৯.জিম্মি ব্যক্তিকে ১০.নিজের স্বামীকে 
১১.নিজের স্ত্রীকে ১২.নিজের পিতাকে এবং সন্তান সন্ততিকে 
১৩.মসজিদ নির্মানে বা জনকল্যান মুলক কাজে ফিতরা দেয়া যাবে না।

✼═ ইমাম আবু হানীফা (রহ) মতে খাদ্যবস্তুর বদলে টাকা পয়সা দিয়েও ফিতরা আদায় বৈধ।এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। দেশের বেশীর ভাগ মানুষ ইমাম আবু হানীফার মত অনুসরণ করে।এ ছাড়াও সদকার ক্ষেত্রে সব ফকিহদের ঐকমত্যে একটি সূত্র আছে, 'যা গরিবদের জন্য বেশি উপকারি হয় সেটাই উত্তম ফিতরা।তবে প্রধান খাদ্যবস্তু দ্বারাও ফিতরা আদায় করা উত্তম। যেমন খেজুর, যব, গম, ভুট্রা বা অন্য যা কিছুই হোক না কেন। সাদাকাতুল ফিতর গরীবদের উপর সমবেদনা স্বরূপ। তারা যা গ্রহণ করে তা দিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করা উচিত। টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে চাইলে ২.৪০ (দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম) মধ্য মানের চাউলের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

✼কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন
কারো আঁখি জলে কারো ঘরে কিরে জ্বলিবে প্রদীপ?
দু’জনার হবে বুলন্দ নসীব, লাখে লাখে হবে বদ নসীব
এ নহে বিধান ইসলামের। 
ঈদুল ফিতর আনিয়াছে তাই নব বিধান,
ওগো সঞ্চয়ী উদ্বৃত্ত যা করবে দান,
ক্ষুধার অন্ন হোক তোমার!
ভোগের পেয়ালা উপচায়ে পড়ে তব হাতে,
তৃষ্ণাতুরের হিস্সা আছে ও পেয়ালাতে
দিয়া ভোগ কর, কর বীর দেদার।

❖মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করার মাধ্যমে তোমার হাবিবের হুকুমমেনে এই ক্ষনস্থায়ী জীবনকে পরিচালনা করতে পারি সেই তাওফীক দিন। আমীন
(বন্ধুরা আমরা কেও ভুলের ঊর্ধে নই,আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে।আমি চেষ্ঠাকরি সত্যটাকে উপলব্দি করতে আর তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন