মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০১৫

এপ্রিল ফুল আর ১লা এপ্রিল

✯✯✯ এপ্রিল ফুল আর ১লা এপ্রিল ✯✯✯
***************************************
ইমরান বিন বদরী
এপ্রিল ফুল দিনটি আসলে আনন্দের কারণ আপনি যদি কাওকে বোকা বানাতে পারেন তবে একটু করে হলেও আনন্দিত হবেন।এ দিনটি -ঐতিহাসিকদের মতে, ১৫৬৪ সালে ফ্রান্সে নতুন ক্যালেন্ডার চালু করাকে কেন্দ্র করে এপ্রিল ফুল ডে'র সুচনা হয়। ঐ ক্যালেন্ডারে ১লা এপ্রিলের পরিবর্তে ১লা জানুয়ারীকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে কিছু লোক তার বিরোধিতা করে। যারা পুরনো ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী ১লা এপ্রিলকেই নববর্ষের ১ম দিন ধরে দিন গণনা করে আসছিল, তাদেরকে প্রতি বছর ১লা এপ্রিলে বোকা উপাধি দেয়া হতো।ডাচরাও ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন বা বছরের সবচেয়ে হালকা দিন হিসেবে পালন করা শুরু করে।এটি পরবর্তিতে বিভিন্ন খৃষ্ঠীয় দেশে বোকা (ধোকা) বা কৌতুকের দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।তা নিয়েও কিন্তু ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

❋ বন্ধুরা--ওদের (খৃষ্টানদের)এই আনন্দের দিনটি যে একজন মুসলমানের জন্য কখনো আনন্দের হতে পারেনা।
কারণ এ দিনটি যে মুসলমানদের গৌরবময় শাসনের পরাজয়ের দিন,এই শোকের দিনটি আমাদের আনন্দ উল্লাসের নয়।অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র বেদনাই অনেক মহৎ।

➲ আসুন জেনে নিই সেদিন কি হয়েছিল স্পেনে--দিনটি ছিল ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল৷
ইসলামের সৌন্দর্য ও কল্যাণে আকৃষ্ট হয়ে সাহারা মরুভূমি ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের যে জোয়ার ওঠে সেই ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের মাটিতেও৷৮ম শতাব্দীতে স্পেনে কায়েম হয় মুসলিম শাসন৷মুসলমানদের নিরলস প্রচেষ্টায় স্পেন জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি লাভ করে৷দীর্ঘ সাতশত আশি বা ৮০০বছর মুসলিম শাসন অব্যাহত থাকে স্পেনে৷যে স্পেনকে উমাইয়া শাসকের শেষ সেনাপতি হযরত বীর মুজাহিদ তারিক বিন জিয়াদ ভূমধ্যসাগরের উপকূলে আজকের জিব্রালটারে তার ঐতিহাসিক বক্তব্যের মাধ্যমে মুসলমানদের উজ্জিবীত করে বিজয় করেছিলেন৷তিনি বক্তব্যে বলেছিলেন--
❶ ''হে আমার সহ যোদ্ধারা ! আমরা ইউরোপের বুক থেকে ফিরে যাওয়ার জন্য আসিনি, হয় খ্রিস্টান রাজা রডারিক ও আধুনিক অস্ত্রে সস্ত্রে সুসজ্জিত তার এক লাখেরও অধিক সৈন্য বাহিনীর সাথে জিহাদ করে এই ভূখণ্ডে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করব আর না হয় জিহাদ করতে করতে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে আমাদের পূর্বসূরিদের সাথে গিয়ে মিলিত হব বিকল্প কোন পথ আমাদের সামনে খোলা নেই।

❷ ''হে বাহাদুর যুবক ভাইয়েরা! এখন পিছু হটবার ও পলায়ন করার আর কোন সুযোগ অবশিষ্ট নেই পিছনে অপেক্ষমান ক্ষুধার্ত ও উত্তাল সমুদ্র, সামনে দুর্ধর্ষ শত্রু সৈন্যদল সুতরাং এখন তোমাদেরকে ধৈর্য-হিম্মত ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করে আহকামুল হাকিমিনের রহমতের দিকে তাকিয়ে ইসলামের বিজয় নিশানা উড্ডীন করার লক্ষে বুজদিল পরিত্যাগ করে দুশমনের সাথে মুকাবিলা করতে হবে এবং ইসলামি তাহযীব-তামাদ্দুনকে ইউরোপের বুকে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সম্মুখ পানে এগিয়ে যেতে হবে শাহাদাতের তামান্নায়।

❸ ''হে আল্লাহর রাহের সৈনিকরা! অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখ আমি তোমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছি যে পথে সে পথের যাত্রী সর্বপ্রথম আমিই হব। লড়াইয়ের মাঝে দুশমনের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম আমার তলোয়ারই কোষ মুক্ত হবে। আমি যদি জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়ে যাই তাহলে তোমরা ধীশক্তিসম্পন্ন বুদ্ধিমান অন্য কোন যোগ্য ব্যক্তিকে তোমাদের সিপাহসালার বানিয়ে নেবে কিন্তু আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গে বিমুখ হবে না তবেই বিজয় তোমাদের পদচুম্বন করবে… ।

তার দীর্ঘ এই ভাষন দিয়ে শুরু হল স্পেনের বুকে ইসলামী শাসনের সোনালি অধ্যায়।
সেই স্পেনের মুসলমানেরা পরবর্তিতে ইসলামের আদর্শ থেকে বিমূখ হয়ে পার্থিব লালসায় লিপ্ত হয়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে ভুলে যায় কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা।ফলে তত্কালীন শাসনকর্তারা রাণী ইসাবেলা ও প্রতারক সম্রাট ফার্দিনান্দ তাদের মনের হিংসাত্তক বাসনা পূরণ করতে এই দিনে মুসলমানদের স্পেনের মাটি থেকে উচ্ছেদ করতে আন্দালুসিয়া রাজ্যের করড়োবার মসজিদে 'আজ-জাহরাতে' মিথ্যা সন্দির কথা বলে মসজিদের দরজা বন্ধকরে অসংখ্য আমাদের মুসলিম ভাইদের আগুনে পুড়ে মারে।ফলে মসজিদের ভেতর জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায় আমাদের মুসলিম ভাইরা ।এবং হাজার হাজার নারী ও শিশুকে সাগরে নিক্ষেপ করে নির্মমভাবে হত্যা করে যা মুসলমানের ইতিহাসে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। সেই দিন সমাপ্তি হয়েছিল স্পেনে মুসলমানের স্বর্ণালী যুগের ইতিহাস।

❋--আফসোস--! 
আজ কিন্তু আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা খ্রিষ্টানদের সংস্কৃতিকে এত বেশী ভালোবাসে যার জন্য একজন মুসলমান হয়েও না জেনে ওদের বোকা বানানোর দিনটিতে আনন্দপ্রকাশ করে যাচ্ছি যা খুবই দুঃখের। খৃষ্টান জগতে দিনটি উদ্দীপনাপূর্ণ হলেও মুসলমানদের জন্য বেদনাদায়ক। কেননা মুসলমানদেরই হাতে গড়ে উঠা একটি সভ্যতা সমূলে উৎখাত হয়ে ভেসে যায় মুসলমানদেরই বুকের তাজা রক্ত স্রোতে। দীর্ঘদিনের লালিত একটি সভ্যতার সমাধি ঘটে এই দিনে।
#আসুন আমরা বোকা বানানোর আনন্দপ্রকাশ করতে গিয়ে নিজে যেন আর বোকা না বনি।
(সবাইকে অনুরোধ করছি আমার এই লেখাটিতে ভুল হলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না প্লীজ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন