শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫

গজওয়ায়ে উহুদ বা উহুদের যুদ্ধ

গজওয়ায়ে উহুদ বা উহুদের যুদ্ধ
═❖════❖════❖═
ইমরান বিন বদরী ≪ 
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
উহুদের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘটনা।বদর যুদ্ধে পরাজয়ের পর মক্কার কাফির কুরাইশরা যখন মক্কায় পৌঁছলো এবং আবু সুফিয়ানও তার কাফিলা নিয়ে মক্কায় ফিরে এল, তখন যাদের পিতা,পুত্র কিংবা ভাই বদর যুদ্ধে নিহত হয়েছিল তাদের একটি দল আবু সুফিয়ানের কাছে গেল এবং প্রতিশোধ গ্রহণ করতে বলে।তখন আবু সুফিয়ানরা বললো, হে কুরাইশগণ, মুহাম্মদ তোমাদের বিরাট ক্ষতি সাধন করেছে এবং তোমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের হত্যা করেছে। এবার তোমাদের এই যাবতীয় সম্পদ দিয়ে আমাদেরকে সাহায্য কর, তাহলে আশা করি আমরা আমাদের হারানো লোকদের উপয্ক্তু প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারবো। সবাই সম্মতি দিলে হিজরী তৃতীয় সনে শাওয়াল মাসে কুরাইশ মুশরিকরা বদরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে মদীনার দিকে অগ্রসর হয়। মদিনার তিন মাইল উত্তর-পূর্বে উহুদ পাহাড়। কুরাইশ বাহিনী উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে তাদের ছাউনী ফেলে। তাদের যোদ্ধার একটি বাহিনী উহুদের দিকে রওয়ানা হয় ফলে সেখানেই সংগঠিত হয়েছিল রক্তক্ষয়ী উহুদের যুদ্ধ।যুদ্ধের পথিমধ্যে মুনাফিক সরদার আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার অনুগত তিনশত লোক নিয়ে মুসলিম বাহিনী থেকে সরে পড়লে যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র সাত শত মুজাহিদ নিয়ে তিন হাজার যোদ্ধার সম্মুখীন হয়ে এই অসম যুদ্ধে মুসলিমরা বীর বিক্রমে লড়াই করেন। প্রথমে মুসলমানরা বিজয়ী হলেও পরবর্তীতে কৌশলগন স্হান ত্যাগ করার কারনে সাময়িক বিপর্যয় ঘটে। ফলে যুধ্ধটি অমিমাংশিত থেকে যায়। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষের ফলশ্রুতিতে হজরত হামজা রাদিআল্লাহু আনহু সহ এতে ৭০ জন বীর মুসলমান শহীদ হন এবং ৩৭ জন কাফের নিহত হয়।এ যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ হজরত আবুবকর রাদিআল্লাহু আনহু ও হজরত উমর রাদিআল্লাহু আনহুও আহত হন। হজরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহুর বর্ণনা মতে উতবা ইবনে আবি ওয়াক্কাসের বর্শার আঘাতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডান দিকের নিচের দাঁত ভেঙে যায় এবং তাঁর নীচের ঠোঁট আহত হয়।

═❖
উহুদের যুদ্ধের পর মুমিনদের প্রশিক্ষণের জন্যে আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَلاَ تَهِنُوا وَلاَ تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।
إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهُ وَتِلْكَ الأيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاء وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ الظَّالِمِينَ
তোমরা যদি আহত হয়ে থাক, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।
وَلِيُمَحِّصَ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ
আর এ কারণে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে পাক-সাফ করতে চান এবং কাফেরদেরকে ধবংস করে দিতে চান।
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُواْ الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللّهُ الَّذِينَ جَاهَدُواْ مِنكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ
তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল। (আলে ইমরান : ১৩৯-১৪২)
এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে তাঁরা আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হয়। তাঁরা বীরত্বের সঙ্গে প্রতিরোধ করায় শত্রুপক্ষ মক্কায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
সেদিন হজরত মুস’য়াব ইবনে উমাইর রাদিআল্লাহু আনহু, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রক্ষার জন্য বীরোচিতভাবে যুদ্ধ করে শহীদ হলেন। তাঁকে হত্যা করেছিলো ইবনে কিময়া লাইসী। সে মনে করেছিরো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই হত্যা করেছে। তাই সে কুরাইশদের কাছে ফিরে গিয়ে বললো, “মুহাম্মাদকে হত্যা করেছি।” মুসয়াব নিহত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী ইবনে আবু তালিব রাদিআল্লাহু আনহুর হাতে পতাকা অর্পন করলেন অতঃপর আলী রাদিআল্লাহু আনহু ও অন্যান্য মুসলিম বীর শার্দুলেরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
উহুদের যুদ্ধ ভয়ংকর রূপ ধারণ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের পতাকাতলে বসলেন। তিনি আলী রাদিআল্লাহু আনহু কে দূত মারফত নির্দেশ দিলেন যে,“পতাকা নিয়ে এগিয়ে যাও।
যুদ্ধে মুশরিক বাহিনী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এমন কে আছ, যে আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য জীবন কুরবানী করতে প্রস্তুত? এ কথা শুনে যিয়াদ ইবনে সাকান সহ পাঁচজন আনসার সাহাবী উঠে দাঁড়ালেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিফাজতের জন্য এক একজন করে লড়াই করে শহীদ হতে লাগলেন। সর্বশেষ ব্যক্তি ছিলেন যিয়াদ ইবনে সাকান কিংবা আম্মারা ইবনে ইয়াযীদ ইবনুস সাকান। তিনিও বীর বিক্রমে লড়াই করে গুরুতরভাবে আহত হলেন। ইতিমধ্যে মুসলমানদের একটি দল সেখানে ফিরে এলো এবং উক্ত আহত সাহাবীর পক্ষে লড়াই করে শত্রুপক্ষকে পর্যুদস্ত করে হটিয়ে দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহত সাহাবীকে দেখিয়ে বললেন, “ওকে আমার কাছে আনো।” মুসলমানগণ তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে এলো। তিনি নিজের জানুর ওপর তার মাথা রেখে শোয়ালেন। এই অবস্থাতেই উক্ত সাহাবী শহীদ হলেন।
আরেক বীর বিক্রম হজরত আবু দুজানা রাদিআল্লাহু আনহু নিজের দেহকে ঢাল বানিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রক্ষা করতে লাগলেন। তাঁর পিঠে তীর বিদ্ধ হচ্ছিলো আর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আড়াল করে তাঁর ওপর ঝুঁকে দাঁড়িয়েছিলেন। এভাবে তাঁর গায়ে বিদ্ধ তীরের সংখ্যা প্রচুর। আ সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিরক্ষার চেষ্টায় তীর নিক্ষেপ করতে লাগলেন। সা’দ বললেন, “আবু দুজানাকে দেখলাম, আমাকে একটার পর একটা তীর দিয়েই চলছেন আর বলছেন, ‘তোমার জন্য আমার পিতামাতা কুরবান হোক। তুমি তীর নিক্ষেপ করতে থাক।’ এমনকি সময় সময় তিনি ফলকবিহীন তীরও দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘নিক্ষেপ কর।”
যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাহাদাত লাভের গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বপ্রথম চিনতে পারেন কা’ব ইবনে মালিক। কা’ব সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বলেন “হে মুসলমানগণ, সুসংবাদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেঁচে আছেন। তিনি এখানে।
এ দিনটি ছিলো মুসলমানদের জন্য এক কঠিন অগ্নিপরীক্ষা ও পরিশুদ্ধির দিন।

মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০১৫

রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইলমে গায়েব


══◉রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইলমে গায়েব◉══
ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
সৃষ্টির আদিকাল থেকে যুগে যুগে একত্ববাদের প্রচারে সত্য ও রিসালতের বাণী নিয়ে প্রেরিত হয়েছে অগনিত নবী ও রাসুল।একজন ঈমানদারের জন্য যেমনিভাবে আল্লাহর একত্ববাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয, তেমনিভাবে তাঁর প্রিয় রাসূল বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন,নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমানের সহিত শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও আনুগত্য করা সমভাবে আবশ্যক।একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের ঈমানের মূলে থাকতে হবে হুব্বে রাসুল বা নবী প্রেম।কারণ নবী প্রেম না থাকলে মুমিন হওয়া যায়না।
═✼রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলেন,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের অপেক্ষা অধিক প্রিয়পাত্র হই। (মুসলিম১ /১৬হাঃ৪৪,আহমদ১২৮১৪)
══সম্মানিত বন্ধুরা, লিখার শুরতেই বলে রাখি বিতর্ক নয়,আশাকরি প্রত্যেকে সম্মানের সহিত জানতে এবং জানাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন এটাই কাম্য।আমি ক্ষুদ্র জ্ঞানে লিখার যোগ্যতা না থাকলেও সাহস করে একটু করে লিখতে সতেষ্ট হলাম।


◩ ইলমে গায়েব কি ◩
══ ইলমে গায়েব (عالم الغيب) বিষয়টি বুঝলে খুবই সহজ, আর না বুঝলে পাথরের চেয়েও কঠিন ও জটিল মনে হবে। না বুঝে এ নিয়ে বিতর্ক করতে গিয়ে অজ্ঞতা ও ভ্রান্তির ফলে মারাত্মক ধৃষ্টতা করে বসেন অনেকে। আমাদের ঈমানের মূলে মনে রাখতে হবে জগতের রব মহান আল্লাহ তাআলাই সত্ত্বাগত ভাবে জ্ঞানী। তিনি অবগত না করালে কেউ একটি অক্ষরও জানতে পারে না। ইলমে গায়েবের মূল উৎস হচ্ছেন মহান আল্লাহ সুবহানাহুতা’লা নিজেই। কেননা তিনিই হচ্ছেন অতীন্দ্রিয় পরম সত্তা। তাই তিনিই ইলমে গায়েবের সার্বিক বা পরম ভান্ডার। তাঁর এ জ্ঞান সত্তাগত,অর্থাৎ কোথা থেকে বা কারো কাছ থেকে অর্জিত নয়। কেননা তিনি সমাদ,অর্থাৎ অমুখাপেক্ষী বা স্বয়ংসম্পূর্ণ পরম সত্তা।মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহ তা’আলার জ্ঞান সত্তাগত আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত।
◉═এবার আসা যাক মূল আলোচনায়- ইলম গায়েবের (عالم الغيب) বাংলা অর্থ অদৃশ্য জ্ঞান হলেও সকল অদৃশ্য জ্ঞান গায়েব নয়। যেমন- আত্মা,আওয়াজ,গন্ধ,বাতাস,সুখ,দুঃখ,ঘৃণা, জ্ঞান, উদ্দেশ্য ইত্যাদি সবই অদৃশ্য,কিন্তু ইলমে গায়েবের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইলমে গায়েব অর্থ হচ্ছে,অতীন্দ্রিয় জ্ঞান; অর্থাৎ যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা ইন্দ্রিয়ের গোচরীভূত নয় তা-ই ইলমে গায়েব। যেমন-আল্লাহুতা’লার পরিচিতি, আরশ, কুরসি, লওহ, কলম, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ, হুর, ফেরেশতা ও জ্বীনের পরিচিতি, হাশর-নশর, মিজান, মাকামে মাহমুদা, সিদরাতুল মুন্তাহা, আলমে আরওয়াহ্ বা আত্মার জগতের বিবরণ,আলমে বারঝাখ বা কবরের জগতের বর্ণনা, আখেরাতের জীবনের বিবরণ,বায়তুল মা’মুর, পুনরুত্থান,পুলসিরাত,ভবিষ্যতের বর্ণনা ইত্যাদি সংক্রান্ত সকল জ্ঞানই ইলমে গায়েব বা অতীন্দ্রিয় জ্ঞান। নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গায়েব দর্শনের পরম উৎস পবিত্র মীরাজের রাত।এরপরেও কি তাঁর আর কোন গায়েব জানা বাকি থাকতে পারে?

◩ পবিত্র কুরআনে করিমের আলোকে ইলমে গায়েব ◩
══ আল্লাহ তায়ালা বলেন- عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا
তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। পরন্ত তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। (ক্ষমতাবান করেন না) 
(সূরা জীন,আয়াত২৬)
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন এ আয়াত দ্বারা অদৃশ্যের জ্ঞান নিজ দায়িত্বে নিয়ে পরবর্তী আয়াতে বলেন তবে হাঁ -
◩ إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِن رَّسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا
কিন্তু তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রে ও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন। (সূরা জীন,আয়াত ২৭)
অত্র আয়াতে যে মনোনীত রসুলের কথা বলা হয়ছে তাতে কী বুজা যায়না রাহমাতুল্লিল আলামিন নবীই সেই গায়েবের খবর জানা রসুল,যাকে প্রকাশ করা হয়েছে ইলমে গায়েব!

◉═গায়েব জানার আরেক উদাহরন ইন্দ্রিয়ের ভাইরে অবলোকন করা যেমন সুরা তাকবিরে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেছেন- وَلَقَدْ رَآهُ بِالْأُفُقِ الْمُبِينِ  তিনি সেই ফেরেশতাকে প্রকাশ্য দিগন্তে দেখেছেন। (আয়াত ২৩)
শুধু তাই নয় হাদিসে জিব্রাইলে এই প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লামের উছিলায় সেই বৈঠকে অবস্থানরত অনান্য সাহাবীরাও হজরত জিব্রীল আমিনকে মানবীয় আকৃতিতে দেখেছেন।
◩ আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াতে আরো বলেন, وَمَا هُوَ عَلَى الْغَيْبِ بِضَنِينٍ
তিনি অদৃশ্য বিষয় বর্ণনা করার ব্যাপারে কৃপণ নন। (সূরা তাকভীর,আয়াত ২৪)
অত্র আয়াতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ পাক বলেন غيب বা অদৃশ্য প্রকাশে তিনি কৃপণ নন।প্রশ্ন হচ্ছে গায়েব তথা অদৃশ্য বিষয় জানা না থাকলে প্রকাশ করেন কী করে? আল্লাহ পাক তার হাবীবকে জানান বলেই তো প্রকাশের কথা গুপন রাখেননি।

◩═ আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন
مَّا كَانَ اللّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى مَآ أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّىَ يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللّهَ يَجْتَبِي مِن رُّسُلِهِ مَن يَشَاء فَآمِنُواْ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ وَإِن تُؤْمِنُواْ وَتَتَّقُواْ فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ
আল্লাহ মুসলমানদের এ অবস্থায় ছাড়াবার নন যে অবস্থায় তোমরা রয়েছ যে পর্যন্ত না পৃথক করবেন অপবিত্রকে পবিত্র থেকে। আল্লাহর শান এ নয় যে, হে সর্বসাধারণ! তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দিবেন। তবে আল্লাহ নির্বাচিত করেন তাঁর রাসূলগণের মধ্য থেকে যাকে চান। সুতরাং ঈমান আনয়ন কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর; এবং যদি তোমরা ঈমান আনয়ন কর এবং পরহেজগারী অবলম্বন করো তবে তোমাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান আয়াত১৭৯)

◩═আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন
وَلَوْلاَ فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهُ لَهَمَّت طَّآئِفَةٌ مُّنْهُمْ أَن يُضِلُّوكَ وَمَا يُضِلُّونَ إِلاُّ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَضُرُّونَكَ مِن شَيْءٍ وَأَنزَلَ اللّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া আপনার উপর না থাকত তবে তাদের মধ্যকার কিছু লোক এটা চাচ্ছে যে, আপনাকে ধোকা দিবে, এবং তারা নিজেরা নিজেদেরকেই পথভ্রষ্ট করেছে। এবং আপনার কোন কিছুই ক্ষতি করবে না আর আল্লাহ আপনার উপর কিতাব ও হিকমত অবর্তীন করেছেন। এবং আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনি জানতেন না এবং আপনার উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।
(সূরা নিসা আয়াত ১১৩)
এ আয়াত وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ প্রসঙ্গে তাফসীরে জালালাইনে রয়েছে : اى من الاحكام والغيب
অর্থ :শরীয়তের বিধান ও ইলমে গায়েব শিক্ষা দিয়েছেন।

◩═আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি জগতের সাক্ষী রূপে আরো বলেন
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِي كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا عَلَيْهِم مِّنْ أَنفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيدًا عَلَى هَـؤُلاء وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ
সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ।
(সূরা নাহ্‌ল আয়াত ৮৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। (সূরা আহযাব-৪৫)
◉═➲ উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে شَاهِدًا শব্দটি নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন যে, কেও যদি প্রশ্ন করে সাক্ষী কি না দেখে দেওয়া যায়? উত্তর একটাই আসবে কখনো না। মিথ্যা--- কখনো সাক্ষী হতে পারেনা।
এবার আসুন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন.يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ হে নবী আমি আপনাকে সাক্ষী হিসেবে প্রেরণ করেছি।প্রশ্ন জাগে কীসের সাক্ষী ? শুধু কি ১৪০০ বছর আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই ৬৩ বছর হায়াতের সাক্ষী নাকি সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমস্ত কিছুর সাক্ষী। নিশ্চয় সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমস্ত কিছুর সাক্ষী।যদি তাই না হয় فِي كُلِّ أُمَّةٍ পূর্ববর্তী পরবর্তীদের প্রত্যেক উম্মতের সাক্ষী হবেন কীভাবে? এতেই বুঝা যায় সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সবকিছু আমার নবীর নখদর্পনে। তাছাড়া أَرْسَلْنَاكَ আপনাকে প্রেরণ করেছি মানে দুনিয়া ও আখিরাতের সবকিছু দেখিয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির গুপন রহস্য অবলোকনকারী কেবল আপনি। এছাড়াও আলেমুল গায়বের (عَالِمُ الْغَيْبِ)অধিকারীর গায়েব প্রকাশ কেবল,আমার নবীর মাদ্যমেই হয়েছে ।আল্লাহ যা প্রকাশ করতে বলেছেন তাই প্রকাশ করেছেন আর যা প্রকাশ করতে বলেননি তিনি তা প্রকাশ করেননি যেমন- কুরআনে পাকের হরুফে মুকাত্তেয়াত গুলো তারই জলন্ত প্রমাণ যেমন:আলিফ.লাম. মীম,হা মীম,তোয়া হা.ইত্যাদি।

◩═ আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلاَّ يَعْلَمُهَا وَلاَ حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الأَرْضِ وَلاَ رَطْبٍ وَلاَ يَابِسٍ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।  (সূরাঃ আল-আন'আম ৫৯)
উপরোক্ত আয়াতের মর্মটা গভীরভাবে খেয়াল করে দেখুন যে আল্লাহ পাকের হুকুম ছাড়া কিছুই পরিবর্তন হয়না কারণ স্রষ্টাই জানে সৃষ্টির গুপন রহস্য যা আমি আগেই বলেছি।এই আয়াতের শেষে
আল্লাহ পাক বলেন -إِلاَّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।
এখন জানতে হবে প্রকাশ্য গ্রন্থ কোনটা যাতে রয়েছে দৃশ্য অদৃশ্য সবকিছুর বর্ণনা।তা হচ্ছে পবিত্র কুরআনে করিম যা শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহ পাক তার প্রিয় হাবিবকে। যেমন,
আল্লাহ পাক বলেন- الرَّحْمَنُ করুনাময় আল্লাহ। عَلَّمَ الْقُرْآنَ শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন (সূরা আর রহমান ১-২)আর এটি এমন এক কিতাব (كِتَابٍ) যাতে কোনো সন্দেহ নেই।যেমন আল্লাহ পাক বলেন. ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। (সূরা বাক্বারাহ ২)
একবার ভেবে দেখুন যে কিতাব আজ আমাদের পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করছেন তা কিন্তু এই নবীর (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লাম) মাদ্যমেই পেয়েছি।নবী সল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লাম যা সরাসরি বলেছেন তাই হাদিস শরীফ আর যা আল্লাহ পাক বলেছে বলেছেন তাই কালামুল্লাহ।সুতরাং এই পবিত্র কালামুল্লায় এমন কোনো জ্ঞান নেই যা আমার রাসুলের(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লাম) অজানা রয়েছে। ইলমে গায়েব যদি কোনো ইলেম হয়ে থাকে সে ইলম অবশ্যই আমার রাসুলের জানা আছে।
*******************
◩ হাদীস শরীফের আলোকে ইলমে গায়েব ◩
══ হাদিস শরীফটিতে দেখবেন সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুরা দরজা দিয়ে প্রবেশ করার পূর্বেই আল্লাহর নবী জানেন যে কে আছেন বাইরে এবং এও জানেন উনাদের ভবিষ্যত কি হবে। সুবহানাল্লাহ !!
উনারা সবাই পৃথিবীতে যে ১০ জন সাহাবা জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন তাদের অন্যতম এবং খলিফাতুল মুসলেমিন।
عَنْ أَبِي مُوسَى، أَنَّهُ كَانَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي حَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ الْمَدِينَةِ، وَفِي يَدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عُودٌ يَضْرِبُ بِهِ بَيْنَ الْمَاءِ وَالطِّينِ، فَجَاءَ رَجُلٌ يَسْتَفْتِحُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " افْتَحْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ ". فَذَهَبْتُ فَإِذَا أَبُو بَكْرٍ، فَفَتَحْتُ لَهُ وَبَشَّرْتُهُ بِالْجَنَّةِ، ثُمَّ اسْتَفْتَحَ رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ " افْتَحْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ ". فَإِذَا عُمَرُ، فَفَتَحْتُ لَهُ وَبَشَّرْتُهُ بِالْجَنَّةِ، ثُمَّ اسْتَفْتَحَ رَجُلٌ آخَرُ، وَكَانَ مُتَّكِئًا فَجَلَسَ فَقَالَ " افْتَحْ {لَهُ} وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ، عَلَى بَلْوَى تُصِيبُهُ أَوْ تَكُونُ ". فَذَهَبْتُ فَإِذَا عُثْمَانُ، فَفَتَحْتُ لَهُ، وَبَشَّرْتُهُ بِالْجَنَّةِ، فَأَخْبَرْتُهُ بِالَّذِي قَالَ. قَالَ اللَّهُ الْمُسْتَعَانُ.
═✼মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হজরত আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
একবার তিনি মদিনার কোন এক বাগানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে একটা লাঠি ছিল। তিনি তা দিয়ে পানি ও কাদার মাঝে ঠোকা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যাক্তি এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তার জন্য খূলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সংবাদ দাও।  তখন আমি গিয়ে দেখলাম ষে,তিনি আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু।আমি তার জন্য দরজা খূলে দিলাম এবং জান্নাতের সংবাদ দিলাম।
তারপর আরেক ব্যাক্তি দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন।তিনি বললেন,খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।
তখন দেখলাম, তিনি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু। আমি তাকে দরজা খুলে দিলাম এবং জান্নাতের সুসংবাদ জানালাম ।
আবার আরেক ব্যাক্তি দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। তখন তিনি হেলান দিয়েছিলেন।
তিনি সোজা হয়ে বসে বললেনঃ খুলে দাও এবং তাকে (দুনিয়াতে) একটি কঠিন বিপদের সন্মুখিন হওয়ার মাধ্যমে জান্নাতবাসী হওয়া সুসংবাদ দাও।
আমি গিয়ে দেখি,তিনি উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু আমি তাকেও দরজা খুলে দিলাম এবং জান্নাতের শুভ সংবাদ দিলাম। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা ভবিষ্যৎ বানী, করেন, আমি তাও বর্ণনা করলাম।
তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা আমার সহায়ক ।(ইমাম ইসমাইল বুখারী (রঃ)উনার বিখ্যাত সহীহ বুখারীতে হাদিস শরীফটি উল্লেখ করেছেন/ইফাঃ৫৭৮৩/৫৬৭০)।
قَامَ فِيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا فَاَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ لْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ اَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِ لَهُمْ وَ اَهْلُ النَّارِ مَنَازِ لَهُمْ حَفِظَ ذلِكَ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ
-(رواه البخارى)-
═✼হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দাঁড়িয়া ছিলেন তিনি (স:) আমাদেরকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কে কে জান্নাতে যাবে, তাদের স্থানসমূহ বলে দিলেন। এবং কে কে জাহান্নামে যাবে তাদের স্থানসমূহ বলে দিলেন। তাদের মধ্যে যারা স্মরণ রাখার স্মরণ রেখেছে যারা ভুলার ভুল গেছে।(মিশকাত ৫০৬পৃষ্ঠা /সহীহ বুখারী)
سَمِعْتُ حَارِثَةَ بْنَ وَهْبٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ تَصَدَّقُوا فَسَيَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَمْشِي الرَّجُلُ بِصَدَقَتِهِ فَلاَ يَجِدُ مَنْ يَقْبَلُهَا
═✼হযরত হারিসা ইবনু ওয়াহব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা সাদাকা কর। কেননা, শীঘ্রই এমন এক সময় আসবে যে মানুষ সদাকাহ নিয়ে ঘোরাফেরা করবে কিন্তু সদাকাহ গ্রহণ করে।এমন কাউকে পাবে না। (সহীহ বুখারী ই:ফা৬৬৩৫)
(আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‘র এ ভবিষ্যৎবাণী ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র যামানায় পূর্ণ হতে দেখা গিয়েছিল।)
وعن انس رضى الله تعلى عنه: قال نعى النبى صلى الله عليه و سلم زيدا وجعفرا وابن روحة للناس قبل ان ياتيهم خبرهم فقال اخذ الراية زيد فاصيب ثم اخذ جعفر فاصيب ثم اخذ ابن رواحة فاصيب وعيناه تذر فان حتى اخذ الراية سيف من سيوف الله يعنى خالد بن الوليد عليه فتح الله عليهم -(رواه البخارى)
═✼হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,যায়েদ ইবনে হারেসা,জাফর ইবনে আবু তালিব ও আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার মৃত্যু সংবাদ যুদ্ধের ময়দান থেকে আসার পূর্বেই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন রণক্ষেত্রের বিবরণ। তিনি এভাবে দিয়েছেন, যায়েদ পতাকা হাতে নিয়েছে, সেও শহীদ হয়েছে। অতপর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা পতাকা ধরেছে, সেও শহীদ হয়েছে। (রাবি বলেন) এই সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর তরবারি সমূহের এক তরবারি (অর্থাৎ খালিদ ইবনে ওয়ালীদ) ঝান্ডা হাতে তুলে নিয়েছেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের উপর মুসলমানদেরকে বিজয় দান করেছেন। (মিশকাত পৃষ্ঠা ৫৩৩/সহীহ বুখারী)
وعن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه: ان رسول الله صلى الله عليه و سلم قال: ان رجلا يأتيكم من اليمن يقال له اويس لايدع باليمن غير ام له قد كان به بياض فدعا الله فاذهبه الاموضع الدنيا راو الدهم فمن لقيه منكم فليستغفر لكم و فى رواية قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم: يقول ان خير التابعين رجل يقال له اويس وله والدة وكان به بياض فمروه فليستغفرلكم- (رواه مسلم)
═✼হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়ামান দেশ থেকে এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। তাঁর নাম হবে “ওয়াইস”।একজন মাতা ছাড়া ইয়ামান দেশে তাঁর আর কোন নিকটতম আত্নীয়-স্বজন থাকবে না। তাঁর দেহে ছিল শ্বেত-ব্যাধি। এজন্য তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। ফলে এক দিরহাম অথবা এক দীনার পরিমান জায়গা ছাড়া আল্লাহ তায়ালা তাঁর সেই রোগটি দূর করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যে কেউ তাঁর সাক্ষাত পাবে, সে যেন নিজের মাগফিরাতের জন্য তাঁর কাছে দোয়া প্রার্থনা করবে। অপর এক বর্ণনায় আছে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তাবেয়ীদের মধ্যে সর্বোত্তম এক ব্যক্তি তাঁর নাম ওয়াইসা, তাঁর শুধু একজন মা রয়েছে, এবং তাঁর শরীরে শ্বেত দাগ থাকবে। সুতরাং তোমরা নিজেদের মাগফিরাতের দোয়ার জন্য তাঁর কাছে অনুরোধ করবে।(সহীহ মুসলিম/মিশকাত পৃষ্ঠা ৫৮১)
وعن جابر رضى الله عنه قال رايت النبى صلى الله عليه و سلم يرمى على راحلته يوم النحر و يقول لتاخذ وامنا سككم فانى لاادرى بعلى لا احج بعد حجتى هذه-(رواه المسلم)
═✼হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, আমি রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখেছি কোরবানী দিন তিনি আরোহণে থেকে কাকর মারছেন এবং বললেন তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের হজ্জ্বের আহকাম শিখে নাও। আমি জানি না সম্ভবত আমার এ হজ্জ্বের পর আর আমি হজ্জ্ব করতে পারব না। 
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম/মিশকাত পৃষ্ঠা ২৩০)।

◉═➲ পরিশেষে বিশ্ববিখ্যাত কসিদায়ে বুর্দার প্রণেতা ইমাম শরফুদ্দিন বু'চিরীর (র:) নবী প্রেমে সিক্ত কয়েকটি লাইন দিয়ে শেষ করবো,
فَاِنَّ مِنْ جُوْدِكَ الدُّنْيَا وَضَرَّتَهَا – وَمِنْ عُلُوْمِكَ عِلْمُ اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ
অর্থাৎ হে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আপনার বদান্যতায় দুনিয়া ও আখিরাতের অস্তিত্ব। লওহে মাহফুজ ও ‘কলমের’ জ্ঞান আপনার জ্ঞান ভাণ্ডারের কিয়দাংশ মাত্র।
وَسِعَ الْعَالَمِيْنَ عِلْمًا وَّ حِكْمًا-فَهُوَ بَحْرٌ لَّمْ تَعِيْهَا الْاَعْبَاءُ
অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান-বিজ্ঞান সমগ্র জগতকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। তিনি হচ্ছেন এমন এক সাগর যাকে অন্যান্য পরিবেষ্টনকারীরাও পরিবেষ্টন করতে পারেননি।
وَكُلُّهُمْ مِنْ رَّسُوْلِ اللهِ مُلْتَمِسٌ-
غَرْفًا مِّنَ الْبَحْرِ اَوْ رَشْفًا مِنَ الدِّيْمِ
অর্থাৎ সবাই হুযুর আলাইহিস সালামের নিকট থেকে জ্ঞান আহরণ করে থাকেন, যেমন কেউ সমুদ্র থেকে কলসি ভরে বা প্রবল বৃষ্টি ধারার ছিটে ফোঁটা থেকে পানি সংগ্রহ করে।

◉ইলমে গায়েবের দালিলিক চিন্তা না করে আকলিক চিন্তা করলেই যতেষ্ট। যেমন:কেও যদি প্রশ্ন করে- আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে কেও কি দেখছেন? উত্তর আসবে না দেখেনি।(মুসা (আ:) দেখতে চেয়েও পারেনি)
প্রশ্ন.সেই মহান গায়েবের (আল্লাহ রাব্বুল আলামিন) খবর কে দিয়েছেন?
উত্তর আসবে তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন।
এভাবে বেহেস্ত,দুযখ,ফেরেস্তা,কিয়ামত,ওহি,কুরআন(আল্লাহর বাণী) সবকিছুই গায়েব ছিলো।
যার প্রকাশ কেবল এই নবীই (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) করেছেন। আজ সেই মহান গায়েবের খবর দেওয়া নবীর কাছে ইলমে গায়েব আছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলছি তারই উম্মত হয়ে আমরা।
কী হতভাগ্য উম্মর আমরা! যাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেছেন সেই রাহমাতুল্লিল আলামিনের জ্ঞানকে সীমিত করতে চেস্টায় আছি।যা নেই অন্য কোনো নবীর উম্মত তথা ইহুদি ক্রিস্টানদের মাঝে। এবার আসুন যদি কোনো বিধর্মী আপনাকে প্রশ্ন করে তোমাদের নবী যা বলেছে সব মিথ্যে এর প্রমান কী আছে সত্যতার? তখন আপনি বলবেন কুরআনে আছে সত্যতার প্রমান। তখন সে যদি আপনার কুরআনকে অস্বীকার করে তখন কি করবেন? যা আজ থেকে ১৪০০বছর আগেও অস্বীকার করেছিলো।যারা তখন (১৪০০বছর আগে)এই গায়েবের খবর দেওয়া নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা বিশ্বাস করেছেন তারাই মুসলমান হয়ে হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হয়েছিলো আর যারা করেনি তারাই কাফের হয়ে আবু জেহেল হয়েছিলো।আমাদের সল্প জ্ঞানে নবীর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)ইলমকে পরিমাপ করা একজন মুসলমান হিসেবে আদৌ ঠিক নয়।
➲ হে আল্লাহ আমাদের সেই সব নবী প্রেমিকদের দলে পরিনত করো,যারা হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর মত নবী প্রেমে সিক্ত হয়ে তোমার হাবিবকে ভালোবাসতে পারে।
(বন্ধুরা আমরা কেও ভুলের ঊর্ধে নই,আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে।আমি চেষ্ঠাকরি সত্যটাকে উপলব্দি করতে আর তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

ঈমানের দাবি মসজিদুল আকসা রক্ষা করা

ঈমানের দাবি মসজিদুল আকসা রক্ষা করা
═════════════════════
✏ ইমরান বিন বদরী ≪ 
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
আবার কবে জন্মনিবে সেই বীরসিপাহী খালীদ বিন ওয়ালীদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর অনুসারী সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর মত বীর সেনাপতি ?যার হাত ধরে মুসলমানরা ফিরে পেয়েছিলো আজকের এই হারানো বাইতুল মুকাদ্দাস।
অলৌকিক ঘটনা,নির্মাণ,পুনর্নির্মাণ,যুদ্ধ,দখল,পাল্টা দখল,অগি্নসংযোগ এর মতো ঘটন-অঘটনের নীরব সাক্ষী হয়ে পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছে 'মসজিদ আল আকসা'।
(আরবিঃالمسجد الاقصى) 'আকসা' শব্দটি দিয়ে দূরবর্তী কিছুকে বুঝানো হয়। মসজিদটির অপর নাম 'বায়তুল মুকাদ্দাস।' মসজিদটি প্রকৃতপক্ষে আল কুদস্ নামক স্থানে অবস্থিত, যা বর্তমানে জেরুজালেম নামে অধিক পরিচিত।১৫০ কোটি মুসলমানের প্রথম কিবলা জেরুজালেমের মসজিদ আল আকসা এখন আগ্রাসী ইহুদিদের হাতে অবরুদ্ধ। মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস রক্ষা আজ মুসলমানের ঈমানের দাবি।ইহুদীদের বর্বরতায় আজ এই পবিত্র মসজিদে হামলা করা হচ্ছে।
মুসলিম ওয়াকফ এর পরিচালক আজাম আল-খতিব বলেন,প্রায় ৩০০ সৈন্য আল-আকসা মসজিদের ভেতর প্রবেশ করে তান্ডবলীলা চালায়।
মুসলমানদের প্রথম কেবলা এই মসজিদের ভিতর সেনাদের একটি অংশ সরাসরি তাদের বুট দিয়ে মিহরাব এবং মিম্বরকে পদদলিত করে।এখন কোন মুসলমানকে মসজিদ এরিয়াতেও প্রবেশ করতে দিচ্ছেনা।


❖ বন্ধুরা══
আল-আকসা মসজিদ রক্ষার দায়িত্ব কেবলমাত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অর্পিত নয় বরং গোটা মুসলিম জাতিরই এ বিষয়ে দায়িত্ব রয়েছে।শবে মি’রাজের ঐতিহাসিক রাতে হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লাম মক্কা থেকে প্রথমে আল আকসা মসজিদে আসেন। এরপর বিশেষ বাহনে চড়ে হজরত জিব্রাইল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশে ঊধর্্বমুখে উড্ডয়ন করেন।
সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত 0১ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:-
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
''পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল''।
══আল আকসা মসজিদের গুরুত্বের আরও একটি বড় কারণ হলো প্রথম থেকে হিজরত পরবর্তী ১৭ মাস পর্যন্ত মুসলমানরা আল আকসা মসজিদের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে মহান আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানদের কেবলা মক্কার দিকে পরিবর্তিত হয়।
মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লাম নয় শুধু অনেক নবী রাসুলের এই স্মৃতির মসজিদ এখন মহাঝুকিতে রয়েছে।বর্তমানে মসজিদ প্রাঙ্গণটি ১৫,৫০,০০০ স্কয়ার ফুট এলাকার ওপর অবস্থিত। শুধু মসজিদের আয়তন ৩,৮০,০০০ স্কয়ার ফুট। মসজিদটিতে ২টি বড় এবং ১০টি ছোট গম্বুজ রয়েছে। এ মসজিদ নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বর্ণ, সিসা বা লিড এবং মার্বেলসহ বিভিন্ন প্রকার পাথর ব্যবহৃত হয়। এই মসজিদ রক্ষায় বিশ্বের সমস্ত মুসলিম জাতি,সরকার ,সংগঠনের এগিয়ে আসা খুবই জরুরী। ইসলামী এস্টেটের নামে শান্তির ধর্ম ইসলামকে অপব্যবহার করে এক মুসলিম অপর এক মুসলিম ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করছে কিন্তু জিহাদে ফি সাবিলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের কথা ভুলে গিয়ে ক্ষমতার জিহাদে আজ মুসলিম বিশ্বমগ্ন। ইসলামের তৃতীয় পবিত্র এই মসজিদ রক্ষা করা আজ আমাদের ঈমানের দাবি প্রানের দাবি,একজন মুসলমান হিসেবে যে যার অবস্থান থেকে আসুন প্রতিবাদ জানাই।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসাধারণ বৈশিষ্ট্য

══◉রাসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর অসাধারণ বৈশিষ্ট্য◉══

ইমরান বিন বদরী ≪ 
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
সৃষ্টির আদিকাল থেকে যুগে যুগে একত্ববাদের প্রচারে সত্য ও রিসালতের বাণী নিয়ে প্রেরিত হয়েছে অগনিত নবী ও রাসুল। জগতের মহান রব, রাব্বুল আলামীনের প্রেরিত প্রতিনিধি বা খলীফা হয়ে বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য এসেছেন আমার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। একজন ঈমানদারের জন্য যেমনিভাবে আল্লাহর একত্ববাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয, তেমনিভাবে তাঁর প্রিয় রাসূল দোজাহানের সরদার বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীন,খাতামুন নাবিইয়ীন,হাবীবুল্লাহ নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমানের সহিত শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও আনুগত্য করা সমভাবে আবশ্যক।একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের ঈমানের মূলে থাকতে হবে হুব্বে রাসুল বা নবী প্রেম।কারণ নবী প্রেম না থাকলে মুমিন হওয়া যায়না।
◩ রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলেন, عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের অপেক্ষা অধিক প্রিয়পাত্র হই। (মুসলিম১/১৬হাঃ৪৪,আহমদ১২৮১৪)


✼ আমাদের অনেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অতি সাধারণভাবে বলেদেন যে তিনি আমাদের মতই। আয়াত قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় (সূরা কাহাফ-১১০)।
আসলেই কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মতই! হতে পারে সেটি শারীরিক ভাবে দেখতে।শুধু এতটুকু মিল রয়েছে যে,তিনিও সাধারণ মানুষের মতই পারিবারিক ও সামাজিক জীবন যাপন করেছেন।তারমানে এই নয় যে তিনি আমাদের মত সাধারণ।মূলত মানুষ গোনাহ করে কিন্তু আমাদের পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই গোনাহ করেননি। করারতো কোন প্রশ্নই উঠেনা,সৃষ্টির মাঝে সবচে’সেরা নবী তিনি ত্রুটিমুক্ত নিষ্পাপ ছিলেন।মানবিক কোন দুর্বলতাও ছিল না। মানুষের মাঝে যেসব দোষণীয় বিষয় আছে এমন কোন দোষের আঁচড়ও ছিল না আমাদের পেয়ারা নবীর মাঝে। অনেক পার্থক্য আছে আমাদের ও আমাদের পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে। মানবজাতীর কাছে রিসালাতের অমিও বাণী প্রচারে মানবীয় গুনাবলী থাকতেই হবে।আরবের কাফেররা যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিভিন্ন মুজেজা দেখলেন তখন অনেকি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভয় পেতে লাগলেন। কেও কেও মনে করে তিনি হয়তো জাদুকর। ফলে ইসলাম প্রচারের যে মহান দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রেরিত হন তার পরিপুর্ণতায় তাদেরকে অর্থাৎ তত্কালীন কাফেরদের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংস্পর্শে আসা চাই চাই।অন্যথায় তাদেরকে কিভাবে ইসলামের দাওয়াত দিবেন? তাই তিনি বলেছিলেন 'আমি তোমাদের মত,কিন্তু আমার কাছে ওহী আসে'। এই (يُوحَى) ওহী'ই যা সাধারণ আর অসাধারণ এর মাঝে অনেক বড় পার্থক্য করে দিয়েছেন। তাছাড়া আয়াতের প্রথমে আল্লাহপাক তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হুকুম দিয়ে বলেছেন রাসুল (قُلْ)'কুল' আপনি বলুন,না বললে যে তারা আপনার কাছে আসবেনা।তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'আমি তোমাদের মত' বলাতে সাধারণ মানুষ যারা ভয়পেত তারা অতি সহজে দয়াল নবীর দর্শনে এসে ইসলামের ছায়া তলে আশ্রয় নিতে লাগলো।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ ছিলেন তবে আমাদের মত সাধারণ নয়। সৃষ্টির রহস্য কেবল স্রষ্টাই ভালো অবগত এসব নিয়ে তর্কের প্রয়োজন নেই। তবে এটুকু জেনে রাখুন সৃষ্টির মূল উৎস রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমস্ত জগতের প্রতিপালক আর আমার পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি প্রেরিত হয়েছেন সমস্ত জগতে রহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে।
◩ প্রিয়তম বন্ধুকে সৃষ্টি জগতের রহমত হিসেবে আল্লাহ তাআলা বলেন- وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
“হে মুহাম্মদ !আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।” (আম্বিয়া-১০৭)
◩ সৃষ্টি জগতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীবকে মর্যাদা প্রদান করে আরো বলেন- وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
অর্থাৎ:এবং আমি আপনার জন্য আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি। (সূরা আল ইনশিরাহ ৪)
◩ আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি জগতে সাক্ষী ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে আরো বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا
হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। (সূরা আহযাব-৪৫-৪৬)
➲ অত্র আয়াতে شَاهِدًا শব্দটি নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন যে, কেও যদি প্রশ্ন করে সাক্ষী কি না দেখে দেওয়া যায়? উত্তর একটাই আসবে না।মিথ্যা--- সাক্ষী হতে পারেনা।এখন আসুন আল্লাহ তায়ালা বলেন হে নবী আমি আপনাকে সাক্ষী হিসেবে প্রেরণ করেছি।প্রশ্ন জাগে কীসের সাক্ষী ? শুধু কি ১৪০০ বছর আগের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই ৬৩ বছর হায়াতের সাক্ষী নাকি সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমস্ত কিছুর সাক্ষী।নিশ্চয় সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমস্ত কিছুর সাক্ষী। তাছাড়া أَرْسَلْنَاكَ আপনাকে প্রেরণ করেছি মানে দুনিয়া ও আখিরাতের সবকিছু দেখিয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির গুপন রহস্য অবলোকনকারী কেবল আপনি।
◩ সূরা আন্‌ আম ১৬২-১৬৩ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلْ اِنَّ صَلٰوتِیْ وَنُسُکِیْ وَمَحْیَاءِیْ وَمَمَاتِیْ لِلّٰہِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ لَاشَرِیْکَ لَہٗ وَبِذَالِکَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ
অর্থাৎ হে নবী! আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামায, হজ্ব, কোরবানী, আমার জীবন ও ওফাত বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই; যার কোন শরীক নেই এবং এ বিষয়ে আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলমান (আল্লাহর দরবারে আত্মনিবেদনকারী)।
➲ অত্র আয়াতে اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ দ্বারা স্পষ্ট যে আল্লাহর নবী সল্লালাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম সৃষ্টির প্রথমে সৃষ্টি।আল্লাহপাকের ওয়াহদানীয়তের অর্থাৎ একত্ববাদের দলিল হচ্ছেন আমার নবী সল্লালাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম।আদম আলাইহে ওয়াছাল্লাম থেকে সমস্ত নবীদের সৃষ্টির পূর্বেই আমার নবীর সৃষ্টি। যদি তা নাই হয় তবে 'আমিই প্রথম মুসলমান' বলার কারণ কী।কাজেই সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বপ্রথম আত্মসমর্পণকারী হলেন হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।এ রহস্য কেবল স্রষ্টাই ভালো অবগত এসব নিয়ে তর্কের প্রয়োজন নেই।আসলে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুণাবলীর বর্ণনা,বৈশিষ্ট্য এবং প্রশংসা কারো কলমই সুবিচার করতে পারবেন না।একমাত্র আল্লাহর দ্বারাই শেষ হতে পারে,মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়।
✼এবার আসুন,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য যা আমাদের মত সাধারণ নয়।
◉═হজরত আবদূল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে এ হাদীস শোনান হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“বসে কারো সালাত অর্ধেক সালাত।” আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তখন তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে বসে সালাত আদায় করতে পেলাম। তখন তার মাথায় হাত রাখলাম।
তিনি বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু আমর ! কি ব্যাপার?
আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে হাদীস শোনানো হয়েছে যে, আপনি বলেছেন যে, উপবিষ্ট অবস্হায় কারও সালাত আদায় করা সালাতের অর্ধেকের সমান।অথচ আপনি বসে সালাত আদায় করছেন? তিনি বললেন, হাঁ (আমি তাই বলেছি)
কিন্তু #আমি_তো_তোমাদের_কারো_মত_ন। (সহীহ মুসলিম)
◉═হযরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটানা সাওম (রোজা)পালন করতে থাকলে লোকেরাও একটানা সাওম পালন করতে শুরু করে। এ কাজ তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাড়াল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিষেধ করলেন।
তাঁরা বলল,--আপনি যে এক নাগাড়ে সাওম পালন করেছেন?
তিনি বললেনঃ- #আমি_তো_তোমাদের_মত_নই
আমাকে খাওয়ানও হয় ও পান করানো হয়। (সহীহ বুখারী)
◉═রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘ্রাণ মুবারক তাও আমাদের মত সাধারণ নয়।
হজরত মুহাম্মদ (রহঃ) বর্ণিত ,তিনি বলেন,আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নফল সাওম (রোজা) র ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন,যে কোন মাসে আমি তাঁকে সাওম পালনরত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি,তাঁকে সে অবস্থায় দেখেছি,আবার তাঁকে সাওম পালন না করা অবস্থায় দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। রাতে যদি তাঁকে সালাত (নামায) আদায়রত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি,তা প্রত্যক্ষ করেছি।আবার ঘুমন্ত দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি।আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাত মুবারক হতে নরম কোন পশমী বা রেশমী কাপড় স্পর্শ করি নাই।আর আমি তাঁর (শরীরের) ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধযুক্ত কোন মিশক বা আম্বর পাইনি। (সহীহ বুখারী)
◉═সুবহানাল্লাহ ওয়াবিহামদী !!═◉
✼ পবিত্র কুরআনের আয়াত এবং অগনিত সহিহ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত মিরাজ শরিফ যদি সত্যি হয় তাইলে নবী কে আমাদের মত বলাটা বোকামি ছাড়া আর কী হতে পারে!। জিব্রাইল (আ:) দ্বারা জমজমের পানি দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্ষ পরিস্কার করাটাও কখনো সাধারণ হতে পারেনা।এই অসাধারণ বক্ষ পরিস্কার অনেকবার করা হয়েছে যা মানবীয় দৃষ্টিতে আদৌ সম্ভব নয়।
➲ হে আল্লাহ আমাদের সেই সব নবী প্রেমিকদের দলে পরিনত করো,যারা হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর মত নবী প্রেমে সিক্ত হয়ে তোমার হাবিবকে ভালোবাসতে পারে।এবং তোমার আর তোমার হাবিবের হুকুমমেনে এই ক্ষনস্থায়ী জীবনকে পরিচালনা করতে পারি।রাব্বুল আলামীন তুমি আমাদের সেই তওফিক দান কর।
(বন্ধুরা আমরা কেও ভুলের ঊর্ধে নই,আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে।আমি চেষ্ঠাকরি সত্যটাকে উপলব্দি করতে আর তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

রওজা পাক জিয়ারত

রওজা পাক জিয়ারত
════════════➲ 
ইমরান বিন বদরী
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তালা এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ﷺ উপর দরূদ পড়তেছেন । অতএব হে ঈমানদারগণ ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ কর ।(সূরা আল আহযাব ৫৬)
সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
কার না মন চায় বন্ধুরা- হৃদয় উজাড় করে হৃদয়ের মণিকোঠায় লুকিয়ে থাকা ভালবাসা দিয়ে মানবতার মুক্তির দিশারী সায়্যাদুল মুরসালীন হাবিবুল্লাহ কমলীওয়ালা নবীﷺকে সালাম জানাতে এবং নবীর ﷺ প্রতি দরূদ পাঠ করতে !!


প্রিয় বন্ধুরা══➲ কতইনা সৌভাগ্যবান ঐ সব ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবের রওজায় নিয়ে যান এবং দুরূদ ও সালাম পেশ করার তৌফিক দান করেন। দুনিয়ার বুকে এমন কে আছে যার জন্য হাশরের মাঠের মহা সংকটের দিনে আমাদের প্রিয় নবী ﷺ এর সুপারিশ প্রয়োজন হবে না ? আর কত বড় সৌভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি, যার জন্য নবীজী ﷺ শাফায়াতের জিন্মাদারী নিবেন। আলোক প্রত্যাশী প্রতিটি মুমিন মুসলমানদের অন্তর আজন্ম উন্মুখ হয়ে থাকে নবী পাক ﷺ এর রওজা মোবারক জিয়ারত ও পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারা দর্শনের জন্য। যা দর্শনে প্রশান্তিতে ভরে ওঠে মুমিনদের হৃদয়।
➲ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-- وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
“যদি কখনও তারা নিজেদের আত্নার প্রতি জুলুম করে রসূল আপনার দরবারে হাজির হয়। অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর রাসুল ﷺ তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও মেহেরবানরূপে পাবে।” (সূরা আন নিসা,৬৪)
এখানে (আয়াতে) রাসুল ﷺ এর জীবদ্দশার কথা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই। আর এখানে وَلَوْ শব্দের অর্থ: যদি কখনও, আর جآءُوْكَ শব্দের অর্থ: যদি হাজির হত অর্থাৎ আপনার (দরবারে)কাছে আসত”।
➲ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلى اللّهِ وَكَانَ اللّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
এবং যে ব্যক্তি আপন ঘর থেকে আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি হিজরতকারী হয়ে বের হয়েছে অতপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসেছে। তাঁর পুরস্কার আল্লাহর দায়িত্বে এসে গেছে।আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সুরা নিসা :আয়াত ১০০)
➮বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের ঈমানী চেতনার প্রতীক।যার সাথে পৃথিবীর দেড়শ’ কোটি মুসলমানের গভীর ধর্মীয় আবেগ জড়িত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারত করার মধ্য দিয়ে দ্বীনে ইসলামের প্রতি মুসলমানদের ভালোবাসাই প্রকাশ পায়।
➲ পবিত্র কুরআনে অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَابْتَغُواْ إِلَيهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُواْ فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর,তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্নেষণ কর এবং তাঁর পথে সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফল কাম হতে পারবে? (সূরা মায়িদা আয়াত-৩৫)।
উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য উপায় বা অসিলা (الْوَسِيلَةَ) প্রয়োজন। আর আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য সর্ব প্রধান মাধ্যমই হচ্ছে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এর চেয়ে উত্তম উপায় আর নেই।
➲ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি 
ওয়া সাল্লাম 
ইরশাদ করেছেন : مَنْ زَارَ قَبْرىْ وَجَبَتْ لَه شَفَاعَتىْ
“যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) ওয়াজিব হয়ে গেল”।(বায়হাকী ৪১৫৯,জামে ছগীর ১৭১)
➲ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু বর্ণিত অন্য একটি হাদীসে আছে নবী ﷺ বলেছেন যে ব্যক্তি আমার ওফাতের পর হজ করবে অতঃপর আমার কবর জিয়ারত করবে, সে যেন জীবিতাবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল। (মেশকাত)।
➲ হযরত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত।
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন- তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়।

(মুসলিম ৯৭৬নাসায়ী২০৩৪আবূ দাউদ৩২৩৪)
➲ রাসূলুল্লাহﷺ আহলে বাকি’র কবর (জান্নাতুল বাকি)জিয়ারতকালে বলতেন।

السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُوْنَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيْعِ الغَرْقَدِ.
‘আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, মুমিন সম্প্রদায়ের আবাস স্থল। আমরা আপনাদের সাথে যুক্ত হব ইনশাআল্লাহ। হে আল্লাহ আপনি আহলে বাকিদেরকে মাফ করে দিন।’
➲ উম্মুল মু’মিনীন হজরত আয়িশাহ্ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহা থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ কবর জিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
➲ ইবনে নোমান রাদ্বি আল্লাহু তালা আনহু হতে বর্ণিত , নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যাক্তি প্রত্যেক জুমুয়ার দিন নিজ পিতা-মাতা অথবা তাদের মধ্যে একজনের কবর যিয়ারত করবে তাকে মাফ করে দেয়া হবে |(মিশকাত ১৬৭৬)
➲ হযরত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তাঁর মায়ের কবর জিয়ারত করেন। তিনি কান্নাকাটি করেন এবং তাঁর সাথের লোকেদেরও কাঁদান। অতঃপর তিনি বলেন : আমি আমার রবের নিকট তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। আমি আমার রবের নিকট তার কবর জিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেন। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের মৃত্যু স্মরণ করিয়ে দেয়। (মুসলিম ৯৭৬,ইবনে মাজাহ)
মা আমিনার কবর যে মদীনা শরীফ হতে অনেক দূরে তাতে কোন সন্দেহ নাই। দীর্ঘপথ তিনি একমাত্র তাঁর আম্মার কবর জিয়ারত করার নিয়তে গমন করেছিলেন অন্য কোন কারণে নয়।
➲ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু সফর থেকে ফিরে এলে রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাথি-দ্বয়ের কবরে এসে সালাম পেশ করতেন। 

الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ
➮ অতএব এরকম মহান রওজা পাকের জিয়ারতের মাধ্যমে ইহা উভয় জগতে কামিয়াবী অর্জন করার একটি সুবর্ণ সুযোগ। তাছাড়া মসজিদে নববীতে রয়েছে একটি জান্নাতের অংশ যেখানে নামাজ আদায়ে পূণ্য অর্জন করা সওয়াব প্রত্যাশা কর্তব্য
➲ রাসুল ﷺ বলেছেন :- আমার ঘর মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি জান্নাতের একটি টুকরা (রিয়াজুল জান্নাহ) এবং আমার মিম্বরটি আমার হাউজের উপর স্থাপিত”। (সহীহ বুখারী-১১৩৮)
আর যারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারত করার সফর জায়েজ নেই বলে তারা নিজেদের মতের পক্ষে নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলির পেশ করে থাকে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( لا تشد الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد المسجد الحرام ومسجد الرسول صلى الله عليه و سلم ومسجد الأقصى

➲ হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন- তিন মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসা ব্যতীত সফর করা যাবে না”। (মুত্তাফাক আলাইহি)
উক্ত হাদীসটির ক্ষেত্রে- সওয়াবের উদ্দেশ্যে, নামায আদায়,ও অতিরিক্ত কোন ফায়দার উদ্দেশ্যে এ তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে সফর করা যাবে না, কেননা এ তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করার মাঝে অতিরিক্ত কোন ফায়দা ও সওয়াব নেই। কিন্তু এ তিন মসজিদে সওয়াব বেশি হওয়ায় এ মসজিদের উদ্দেশ্যে সফরের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারতের সফর করা যাবে না। উদ্দেশ্য অনুযায়ী সফরের বিভিন্ন হুকুম হতে পারে। হারাম কাজের জন্য সফর করা হারাম। জায়েজ কাজের জন্য জায়েজ। ফরজ কাজের জন্য ফরজ- যেমন, ফরজ হজের জন্য সফর করা ফরজ।
➮ ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন॥
এ হুকুমের উদ্দেশ্য হলো শুধু মসজিদের সাথে সস্পৃক্ত। এ মসজিদত্রয় ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে নামাজের জন্য সফর করা নিষিদ্ধ। তবে যদি মসজিদ ব্যতীত জিয়ারত, জীবিত-গণের সাথে সাক্ষাৎ, ইলম অর্জন, ব্যবসায় ও ভ্রমনের জন্য সফর করে তা এ হাদীসের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না।(ফতহুল বারী ৩য় খন্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)
ঐ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য সব মসজিদে শুধু নামাজ পড়ার জন্য নিষেধ করার কারণ হলো বাকী মসজিদগুলো সওয়াবের দিক দিয়ে সমান।
বন্ধুরা══➲ প্রতিটি মোমিনের প্রাণের মানুষটি যে শুয়ে আছেন সোনার মদিনায়।
➲ সূরা আহযাবে:৬ আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ
''নবী মুমিনদের নিকট তাদের প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়তম।''
এ থেকেই অনুমান করা যায়, নবীজি প্রতিটি মুমিনের কত কাছের, শ্রদ্ধার ও প্রাণের আপনজন।
➲ হাদিস শরিফে বর্ণিত, قَالَ النَّبِيُّ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ আমি (রাসূল) তাঁর কাছে তার পিতামাতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে অধিক ভালোবাসার পাত্র না হব। (মুত্তাফাক আলাইহি,আহমাদ ১২৮১৪)
বস্তুত, সেই পরম ভালোবাসার পাত্র আল্লাহর প্রিয়তম রাসূল যে শহরে শায়িত, তাঁর মর্যাদার আসন মুমিনদের হৃদয়-সিংহাসনে কত উচ্চে তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।
পরিশেষে, মদীনা আল মুনাওয়রায় বারবার গিয়ে মসজিদে নববী এবং রওজায়ে আতহার জিয়ারত করার তৌফিক আল্লাহ রব্বুল আলামিন এর দরবারে প্রার্থনা করি। আমিন! (সবাইকে অনুরোধ করছি লেখাতে ভুল হলে আমাকে জানাবেন প্লীজ)

ইফতার একটি নিখুঁত ইবাদত


══◉ইফতার একটি নিখুঁত ইবাদত◉══
ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
ইফতার (আরবি: إفطار ) এটি আরবি ‘ফুতুর’ শব্দ থেকে।ইফতার শব্দের অর্থ বিরতি, ভঙ্গ করা বা দিন ও রাতের মধ্যবর্তী সময়ের হালকা খাবার গ্রহণ। শরিয়তের পরিভাষায় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর রোজা সমাপ্তির জন্য পানাহার করাকে ইফতার বলা হয়। রোজা পালনে ইফতারের ফজিলত অপরিসীম এবং সময়মতো ইফতার করার মধ্যে রয়েছে অশেষ সওয়াব ও কল্যাণ। মাহে রমজান ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহানুভূতির শিক্ষা দিয়ে থাকে। এ মাসের কারণে মানুষ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার জ্বালা বুঝতে পারে। এ জন্য এক মুমিনের হৃদয় ধাবিত হয় অন্য মুমিনের সুখ-দুঃখের খবর সন্ধানে। যার বাস্তব রূপ প্রকাশ পায় ইফতারের মাধ্যমে।

রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। সে দোজখ থেকে মুক্তি পাবে আর সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, কিন্তু এতে রোজাদারের সওয়াব থেকে কিছুই ঘাটতি হবে না অর্থাত্ রোজাদারের সওয়াব কমবে না।এরূপ সওয়াব আল্লাহতায়ালা এমন ব্যক্তিকে দেবেন, যে শুধু এক পেয়ালা দুধ অথবা একটি খেজুর বা সামান্য পরিমাণ পানি দ্বারাও কাউকে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তি মিটিয়ে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে হাউজে কাওসার থেকে এমন শরবত পান করাবেন যাতে সে কখনও তৃষিত হবে না। এভাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বায়হাকি)
তবে যে ইফতার মাহফিলে ইফতারের পর মাগরিবের নামাজের স্থলে এশার নামাজের সময় চলে আসে সে ইফতার মাহফিল জানিনা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট কতটুকু গ্রহণযোগ্য। রাজকীয়ভাবে ইফতার না করে ইফতারের পরপর মাগরিবের নামাজের দিকে মনযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।সুন্নাতের পর ফরজ আদায় করা বেশি জরুরী। সম্প্রতি ইফতারকে কেন্দ্র করে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান ও ভোজনবিলাসিতা লক্ষ করা যায়। ইফতার শুধু খাওয়ার নাম নয়, বরং একটি নিখুঁত ইবাদত।
এ ইবাদতগুলোকে রাজনৈতিক কর্মসূচির মতো পালন করা মুসলমানদের জন্য খুবই দুঃখজনক। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সঙ্গে তিনি সেহরি ও ইফতার গ্রহণ করতেন। সময় হওয়া মাত্রই তিনি ইফতার করতেন।
✼ নাসায়ি শরিফের এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে,
#হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘হে আনাস, আমি রোজা রাখতে আগ্রহী, আমাকে আহার করাও।’ আমি তাঁর সামনে কিছু শুকনো খেজুর ও পাত্রে পানি রাখলাম। বেলালের প্রথম আজানের পর তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন।” কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার সেরে নিতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে সাধারণ শুকনো খেজুরই গ্রহণ করতেন।
এই ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইফতার।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইবাদত হিসেবে ইফতার করার তাওফিক দান করুন।

শবে বরাত

✯❖ শবে বরাত ❖✯
════❖════➲
ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
বর্তমান সমাজ এমন এক পরিস্হিতির সৃষ্টি যার ফলে আমাদের মত সাধারন মানুষ দিশেহারা হয়েই পড়ছি। ভেবে পাইনা কার কথা শুনবো! কার কথাকে প্রাধান্য দেব।মানুষ এমন এক গোলাটে পরিস্থিতিতে পড়ে ধর্মবিমূখ হয়ে পড়ছেন।ইসলামে এটা নাই ওটা নাই এটা করলে বিদায়াত এমন একের পর এক ফতোয়ার দরুন সরলমনা মানুষ পথহারা পথিকেরমত ধর্মীয় রিতিনীতিতে নিরুত্সাহিত হয়ে পড়ছেন। আজ আমার এই লেখা তাদেরই জন্য যারা সরল মনে নেগেটিভ চিন্তাভাবনার বাইরে এসে স্বজ্ঞানে জানতে বা জানানোর জন্য পড়বে। আশাকরি প্রত্যেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। বিতর্ক নয় সম্মানের সহিত ক্ষুদ্র জ্ঞানে লেখার যোগ্যতা না থাকলেও সাহস করে একটু করে লেখতে সতেষ্ট হলাম।


শব এবং বরাত (شب برات ) শব্দদ্বয় পবিত্র কুরআন এবং হাদীস শরীফে নেই কারণ এগুলো ফার্সি শব্দ। যেমন নামায, রোযা, খোদা,ফেরেশতা, ইত্যাদি ব্যবহৃত শব্দ।ফার্সী শব অর্থ রাত্রি এবং বরাত অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি। সুতরাং শবে বরাত মানে হল ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত। আর হাদীছ শরীফ এ শবে বরাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শা’বান মাসের মধ্য রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।সিয়াহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয়খানা হাদিস গ্রন্থের কোনো কোনো হাদিস গ্রন্থে এই রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও এই রাতের বিশেষত্বের উল্লেখ পাওয়া যায়।সিহাহ সিত্তারই দুটি কিতাব - তিরমিযী শরীফ ও সুনানে ইবনে মাজাহতে শুধু যে শবে বরাত এর ফজীলত সম্পর্কিত হাদীস বর্ণিত আছে তা নয়, বরং ইমাম তিরমিযী (রহঃ) তাঁর তিরমিযী শরীফে এবং ইমাম নাসাঈ (রহঃ) তাঁর সুনানে পনের শাবানের ফজীলত নিয়ে আলাদা বাব বা অধ্যায়ই লিখেছেন।শাবান মাসটি রমজানের পূর্ববর্তী মাস হওয়ার কারণে বরকত ও পুণ্যময় একটি মাস, এ জন্য রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশ্যে রাসুল সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এ মাসে অধিক হারে রোজা রাখতেন। মূলতঃ শা’বান একটা প্রজ্ঞাপূর্ণ বরকতময় মাস।

❖ হাদীস শরীফে উম্মুল মুমীনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত,
مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلَّا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে রমজান মাসের পর শাবান ব্যতীত অন্য কোন মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি।
১.কিতাবুস সওম-১৯৬৯/১৮৬৮সহিহ বুখারী
২.কিতাবুস সিয়াম-১১৫৭ সহিহ মুসলিম
শাবান মাসের মধ্য রাত্রির ফযীলত সম্পর্কে কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
فقدت النبي صلى الله عليه وسلم فخرجت فإذا هو بالبقيع رافع رأسه إلى السماء, فقال: أكنت تخافين أن يحيف الله عليك و رسوله؟ فقلت : يا رسول الله, ظننت أنك أتيت بعض نسائك. فقال إن الله تبارك و تعالى ينزل ليلة النصف من شعبان إلى سماء الدنيا فيغفر لأكثر من عدد شعر غنم كلب)
❖.উম্মুল মুমীনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: এক রাতে আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে খুঁজে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানে(জান্নাতুল বাক্বী) পেলাম। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন: ‘তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তাঁর রসূল তোমার উপর জুলুম করবেন?’ আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোন স্ত্রীর নিকট চলে গিয়েছেন। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘মহান আল্লাহ তা’লা শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন।
১.হাদীস শরীফটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বর্ণনা করেন (৬/২৩৮),
২.ইমাম তিরমিযি তার সুনানে (২/১২১,১২২)
ইমাম তিরমিযী উল্লেখ করেন,"হযরত আবু বকরও রাদিয়াল্লাহু আনহু এরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন বলে জানা যায়।
৩.অনুরূপভাবে হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে(১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৯)।

❖.হযরত আবু মূসা আল আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘আল্লাহ তা‘আলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে আগমণ করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে দেন।
১.হাদীস শরীফটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৫৫, হাদীস নং ১৩৯০) বর্ণনা করেছেন।

, عن معاذ بن جبل, عن النبى (, قال : يطلع الله الى خلقه فى ليلة النصف من شعبان, فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن ]رواه ابن حبان وغيره, ورجاله ثقات, وإسناده متصل غلى مذهب مسلم الذى هو مذهب الحمهورفى المعنعن, ولم يحزم الذهبى بأن مكحولالم يلق مالك بن يخامر كما زعم, وإنما قاله على سبيل الحسان, راجع ,سبر أعلام النبلاء
❖ হযরত মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবি করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
১.সহিহ ইবনে হিব্বান(৫৬৬৫ নং হাদিস)।
২.ইমাম বাইহাকী (রহঃ)শুআবুল ঈমান এ (৩/৩৮২, হাদিস ৩৮৩৩)।
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বারা ব্যপকভাবে উন্মুক্ত হয়।
নাসিরুদ্দিন আলবানী সিলসিলাতুল আহাদসিস্ সাহিহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদিস সমর্থন করার পর লেখেন,
وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلاريب. والصحة تثبت بأقل منها عددا، مادامت سالمة من الضعف الشديد، كماهو الشأن فى هذاالحديث .
এ সব রেওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভাবে এই হাদিসটি নিঃসন্দেহে সহিহ প্রমাণিত হয়।

❖.হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যখন শা‘বানের মধ্যরাত্রি আসবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর নামায পড়বে, আর সে দিনের রোযা রাখবে; কেননা সে দিন সুর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: ক্ষমা চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করব। রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি রিযিক দেব। সমস্যাগ্রস্ত কেউ কি আছে যে আমার কাছে পরিত্রাণ কামনা করবে আর আমি তাকে উদ্ধার করব। এমন এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কি আছে? ফজর পর্যন্ত তিনি এভাবে বলতে থাকেন”।
১.হাদীস শরীফটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) বর্ণনা করেছেন।

অনেকে উল্লেখিত কিছু হাদীস শরীফকে দ্বয়ীফ (দুর্বল) বলে থাকেন। হাদীস দুর্বল হয় রাবীর দুর্বলতার (কম গ্রহণযোগ্য) কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন কথাই দ্বয়ীফ বা দুর্বল নয়। মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,সকলেই একমত যে দুর্বল হাদীস ফজিলত হাসিল করার জন্য আমল করা জায়েজ আছে। (মওজুআতুল কবীর, ১০৮ পৃষ্ঠা) দুর্বল হাদীসের মূল বক্তব্য কুর'আন শরীফ অন্য কোন সহীহ হাদীসের (পরিপন্থী) বিরোধীতা না করলে আমল করা যাবে।
**ইবনে তাইমিয়া তার (ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীমে ২/৬২৬)
**নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী (ছিলছিলাতুল আহাদীস আস্‌সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯)
আরো অনেকে এ রাত্রিকে ফযীলতের রাত বলে মত প্রকাশ করেছেন।
এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফজিলতের ব্যাপারে যত হাদিস এসেছে, তার সবগুলোকে মওযু বা যয়ীফ মনে করা ভুল যেমন,অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফজিলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।
মোট কথাঃ এ রাত্রিতে ফযীলত রয়েছে।

❖ এ ছাড়াও সুস্পষ্ট হাদীস শরীফে এসেছে যে,
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :“আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের শেষাংশে – শেষ তৃতীয়াংশে- নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে আহবান জানাতে থাকেন ‘এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?”
১.সহীহ বুখারী, ১১৪৫
২.সহীহ মুসলিম ৭৫৮

❖অন্যান্য দেশীয় এর নাম :
ইরান ও আফগানিস্তানে---- নিম শা'বান।
আরবী ভাষাভাষীর বলে--- নিসফ্ শা'বান।
মালয় ভাষাভাষীর বলে ----নিসফু শা'বান।
তুর্কি ভাষাভাষীর বলে -----বিরাত কান্দিলি।
ভারতীয় উপমহাদেশে বলা হয় ---শবে বরাত।
আরেকটি কথা না বল্লে নয়,তা হচ্ছে সূরা দুখানের ৩ এবং ৪ এর আয়াতের তাফছির নিয়ে বিখ্যাত তাফছিরকারকগন একেক ধরনের তাফছির করেছেন। অধিকাংশরা লাইলাতুল ক্বদরকে উল্লেখ করলেও কিছু কিছু তাফছিরকারকগন লাইলাতুল মুবারাকা মানে শাবানের মধ্য রজনীকে উল্লেখ করেছেন। তার একটাই কারণ পবিত্র ''কালামুল্লাহ' ক্বদর রাতে যে নাজিল হয়েছে তার প্রমাণ সূরা ক্বদরেই বর্ণনা রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ – سورةالقدر
আমি এ কোরআনকে ক্বদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা ক্বদরঃ১)।
এ ছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন সূরা বাকারায়- شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ- سورة البقرة
রমযান এমন একটি মাস যাতে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা আলবাকারাহঃ১৮৫)।
পবিত্র কুরআন নাজিলের জন্য রমজান মাসকে নির্ধারীত করে দিয়েছেন আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন। আমি এর তাফছির নিয়ে মন্তব্য করতে চাইনা,তবে হাদিস শরীফের বর্ণনার উপর শরীয়তের হুকুম না হলেও মহান আল্লার দরবারে নিজেকে অর্পন করার জন্য এমন একটি মহতি কাজে নিরুত্সাহিত করার সেই দুঃসাহস আমার নেই। মুসলিম সমাজে সাধারণ মানুষ আজ ধর্ম বিমুখ হয়ে পড়ছেন। যে কোনো ভালো কাজে এখন বিদায়াত ফতোয়া দিয়ে ধর্মিয় অনুরাগ ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। যে কাজ ইসলামের মূলে পরিবর্তন নিয়ে আসে মানুষ কে আল্লাহ এবং তার রাসুলের (স:) দেখানো পথ থেকে দূরে নিয়ে যায়,মূল চেড়ে দিয়ে নকল নিয়ে জীবনটা ভিন্ন পথে পরিচালনা করে তারাই বিদায়াত কারী।
কিন্তু শবে বরাত পালন কেন বিদায়াত হবে- এটাতো যারা করে তাদের আরো উত্সাহিত করা দরকার।যাতে তারা অন্তত একটি রাতে হলেও বেনামাজিরা নামাজি হয়। প্রত্যেক ভালো কাজের পাশে খারাপ করার জন্য শয়তান কে আল্লাহ জীবিত রেখেছেন।তাই হয়ত কিছু লোক অজ্ঞতার কারণে অনেক অপচন্দনীয় কাজ করে, তাই বলে যারা সারা রাত নির্গুমে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করে সব কিছু কী বিদায়াত হবে?
সুতরাং ভালো কাজে যারা নিরুত্সাহিত করে তাদের কথায় নিজেকে পরিচালনা না করে নিজের মেধা যা আল্লাহপাক আপনাকে দিয়েছেন তা দিয়ে বিচার করুন।সৎ কাজের আদেশ আর মনধ কাজে নিষেধ করাই যেন হয় আমাদের কাম্য।
➲ আমি চেষ্টা করেছি মাত্র আর সেই চেষ্টা সার্থক হবে তখনি যখন আপনার লেখাটি বুঝতে সহজ হবে। (সবাইকে অনুরোধ করছি ভুল হলে আমাকে জানাবেন প্লীজ)

জিয়ারতে মদিনা এ মুনাওয়ারা

জিয়ারতে মদিনা এ মুনাওয়ারা ═
❖❖❖❖❖❖❖❖❖➲
ইমরান বিন বদরী
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।


“ভেসে যায় হৃদয় আমার মদীনার পানে
হিজরত করে আসিলেন নবী প্রথম যেখানে।

------- কাজী নজরুল ইসলাম

মদিনা (আরবি: المدينة )শব্দের অর্থ:শহর বা নগরী হলেও এই মদিনা কিন্তু অন্যান্য মদিনা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।আর (لمدينة المنورة) মদিনা-আল মুনাওয়ারা অর্থ আলোকিত নগরী। মক্কা শরীফের ন্যায় মদিনা শরীফেও পবিত্র নগরী। বিশ্বের সকল মুসলমানদের নিকট পবিত্র কাবা শরীফের পরই দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে মহানবীর মদিনা। রাসুল ﷺ মক্কা শরিফকে অত্যধিক ভালোবাসলেও মদিনা শরিফের ভালোবাসাও ছিল তাঁর হৃদয়ের মণিকোঠায়। ইয়াসরিব/ইয়াস্রাব নামের এই জায়গাটি মদিনায় (مدينة رسول الله) পরিণত হয় দোজাহানের সর্দার বিশ্বনবী সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লামমের আগমনের ফলে। মক্কা থেকে আল্লার নবী ﷺ মক্কায় ইসলাম প্রচার যখন অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে, মুসলমানদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন সীমা অতিক্রম করে,তখন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আপন প্রিয় সহচর হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু-কে নিয়ে ৬২২ খ্রীস্টাব্দে এই মদিনাতেই হিজরত করেছিলেন।প্রভাতে সূর্যের উদয় হলে যেমন রাতের অাঁধার বিদায় নিতে বাধ্য হয়, তেমনি নূরের নবী আল্লাহর পেয়ারা হাবিবের শুভ পদার্পণে ইয়াসরিব আলোকিত হয়ে যায়। নতুন নাম ধারণ করে মদিনাতুন্নবী বা নবীজির শহর।সংক্ষেপে মদিনা।৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৮ হিজরিতে ১০ সহস্রাধিক সেনা নিয়ে ফতেহ মক্কার পরে বিদায় হজ্জের ভাসনের পরে অনেকে মনে করেছিলেন আল্লার নবী ﷺমক্কাতেই থেকে যাবেন,কিন্তু না তিনি মদিনাকেই বেশী ভালোবেসে সঙ্গীসাথিদের নিয়ে সেখানেই ফিরে গিয়েছিলেন। জাহেলিয়াতের অন্ধকারের জায়গাটি পরিনত হয় মানব ইতিহাসের ভ্রাত্তিত্বের মডেল।পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারাহ হচ্ছে উম্মতে মোহাম্মদীর আত্মিক প্রশান্তির কেন্দ্রস্থল। আর সেই মদিনার মাঠিতে শুয়ে আছেন রাহমাতুল্লিল আলামিন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হাবিবে রাসুল ﷺযা মুসলিম মিল্লাতের কাছে পবিত্র কাবা ঘরের পরেই মর্যাদার স্থান। যেখানে আছে 'রিয়াজুল জান্নাহ' নামের বেহেস্তি টুকরা। রসূলﷺ এর অনেক স্মৃতি বিজড়িত, ইসলাম ও মুসলমানের পুণ্যভূমি এ মদিনা।

➲ মদিনার পবিত্রতা রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং ঘোষণা করেছেন। হাদিস শরীফে এসেছে, হে আল্লাহ ! ইব্রাহীম মক্কাকে পবিত্র হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, আর আমি এই দুই পাহাড়ের মাঝখানের জায়গা (মদিনা) পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।
মদিনা শরীফ হল ইসলামের আশ্রয়ের স্থল, রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবাদের হিজরতের পবিত্র জায়গা। রাসূলুল্লাহ ﷺও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের ত্যাগ ও কোরবানির ইতিহাস মিশে আছে মদিনা শরীফের ধুলো-কণায়। পবিত্র কুরআন শরীফের অর্ধেক নাযিল হয়েছে মদিনা শরীফে। মক্কাবাসী ইসলামকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার অপপ্রয়াসে প্রবৃত্ত হলেও মদিনাবাসী অনুক্ষণ নিবিষ্ট ছিল এই প্রদীপকে আরো অধিকতর প্রোজ্জ্বল করার প্রচেষ্টায়। এখানেই মক্কাবাসীর ওপর মদিনাবাসীর শ্রেষ্ঠত্ব। ইসলামি আইনকানুন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ''মদিনা সনদে''র আলোকে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় নবী ﷺ মদিনা শরিফকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।এরপর থেকেই ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্মের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে।কাজেই কোনো মুসলমান পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য মক্কায় যাবে আর মদিনা না গিয়ে ফিরে আসবে তা হয় না। মদিনায় গমন যদিও হজ্বের ফরজ বা ওয়াজিব তথা হজ্ব সম্পাদনের কোনো অংশ নয়। কিন্তু নবীপ্রেম আর ভালোবাসার টানে হৃদয়ের এক আকর্ষণে সবাই ছুটে যায় মদিনায়। রাসূল ﷺ এর রওজা মোবারক জিয়ারত ও মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় ছাড়া মনে হয় যেন তৃপ্তিই আসে না। কারণ প্রথমত মদিনা শহর পুরো পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত নগরী। রাসূল ﷺ নিজে এ শহরকে ভালোবেসেছেন, পছন্দ করেছেন এবং এর জন্য দোয়া করেছেন।তিনি মদিনাকে এতটাই বেশি ভালোবাসতেন যে, কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে উটের গতি বাড়িয়ে দিতেন। মদিনায় ফিরে আসতে তিনি ব্যাকুল হয়ে যেতেন।
➲ একদা রাসূল ﷺ মিম্বরে উঠে দাজ্জাল সংক্রান্ত আলোচনা শেষে আপন লাঠি দ্বারা মিম্বরে টোকা দিয়ে বললেন, এটা তাইবা, এটা তাইবা, এটা তাইবা, অর্থাৎ পবিত্র মদিনা। (মুসলিম)।

➲ হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলﷺ বলেছেন:- মক্কা শরীফে নামাজ আদায়ের সওয়াব এক রাকাতে ১ লক্ষ আর মদীনা শরীফে ৫০ হাজার। (ইবনে মাজাহ)
➮মদিনার সাথে রাসুল ﷺ-এর নাড়ির সম্পর্ক:═ প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা ইবনে হিশাম বর্ণনা করেন, রাসুল ﷺ-এর প্রপিতামহ হাশিম তৎকালীন ইয়াসরিব, অর্থাৎ মদিনার প্রসিদ্ধ গোত্র বনু নাজ্জারের সালমা নামের এক গুণবতী মহিলাকে বিয়ে করেন। তাঁর ঔরসেই জন্মগ্রহণ করেন রাসুল ﷺ-এর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব। মক্কা শরিফ থেকে মদিনা শরিফ হিজরত করার প্রাক্কালে রাসুল ﷺ যখন বনু নাজ্জারের মহল্লা দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন মহল্লার ছোট শিশু ও কিশোরীরা নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল, আমরা নাজ্জার গোত্রের মেয়ে, কী সৌভাগ্য আমাদের, মুহাম্মদ আমাদের প্রতিবেশী। (বায়হাকি, ইবনে কাছির)

➲ হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু তখন স্বল্পবয়সী বালক ছিলেন। তিনি বলেন, যেদিন রাসুল ﷺ মদিনা শরিফে তাশরিফ আনেন, সেদিনের চেয়ে আলোকোজ্জ্বল এবং অনিন্দ্য সুন্দর দিন আমি আর দেখিনি।

❖═➮ মদিনায় (المدينة المنورة) আপনি আরো যা দেখবেন,বাদশাহ আব্দুল আজিজ এর পরিকল্পনায় ১৯৫৩-১৯৫৫ সাল নাগাদ সম্পূর্ণ নতুন নকশার ভিত্তিতে মসজিদ আধুনিকায়ন করা বর্তমান মসজিদে নববীর (المسجد النبوي) মনকাড়া দৃশ্য । প্রথমে এই মসজিদ নির্মাণের জন্য নবী ﷺ নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামক দুই জন এতিম বালকের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় করেন। এর ক্ষুদ্র একটি অংশে বাসস্থান নির্মাণ করতঃ বাকী অংশে মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন যা নির্মাণ করতে ৭ মাস সময় লেগেছিল।নির্মাণ কাজ রাসূল ﷺ সবার সঙ্গে মিলে করেছিলেন। নিজ হস্তে তিনি ইট-পাথর বয়ে এনেছিলেন।মুহাজির ও আনসারী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছিলেন ফলে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক গভীর ও সুদৃঢ় হয়েছিল উম্মতে মোহাম্মদীর।

➲ হযরত আবদুল্লাহ ইবনুূু উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় এর সময়ে মসজিদ তৈরী হয় কাঁচা ইট দিয়ে, তার ছাদ ছিল খেজুরের ডালের, খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু এতে কিছু বাড়ান নি। অবশ্য উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু বাড়িয়েছেন। আর তার ভিত্তি তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যে ভিত্তি ছিল তার উপর কাঁচা ইট ও খেজুরের ডাল দিয়ে নির্মাণ করেন এবং তিনি খুঁটিগুলো পরিবর্তন করে কাঠের (খুঁটি) লাগান। তারপর উসমান রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু তাতে পরিবর্তন সাধন করেন এবং অনেক বৃদ্ধি করেন। তিনি দেয়াল তৈরী করেন নকশী পাথর ও চুন-সুরকি দিয়ে। খুঁটিও দেন নকশা করা পাথরের, ছাদ বানান সেগুন কাঠ দিয়ে। (সহীহ বুখারী)
দোজাহানের সরদার বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সায়্যাদুল মুরসালীন হাবিবুল্লাহ প্রিয় নবী ﷺ রওজা পাক, সাথে খোলাফায়ে রাসুল হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু ও হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহুর কবর,জান্নাতুল বাকী, মসজিদে কুবা। এছাড়াও শুহাদায়ের ওহুদ প্রান্ত, দুই কেবলাওয়ালা মসজিদ, জাবালে নূর ইত্যাদি।

➮ মদীনা না দেখা তো কুচ্ভী না দেখা--মুহাম্মদ ﷺ কা রওজা হে জান্নাত কা নকশা।
পরিশেষে, মদীনা আল মুনাওয়রায় বারবার গিয়ে মসজিদে নববী এবং রওজায়ে আতহার জিয়ারত করার তৌফিক আল্লাহ রব্বুল আলামিন এর দরবারে প্রার্থনা করি। আমিন!
(সবাইকে অনুরোধ করছি আমার লেখাতে ভুল হলে আমাকে জানাবেন প্লীজ)

অধ্যক্ষ আল্লামা জাফর আহমদ বদরী

অধ্যক্ষ আল্লামা জাফর আহমদ বদরী
ইমরান বিন বদরী
✏ ইসলামের বিশুদ্ধ দাওয়াত ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গাজীয়ে দীনে মিল্লাত অধ্যক্ষ আল্লামা জাফর আহমদ বদরীর (ম:জি:আ:) অবদান অসামান্য। এ দেশে সুন্নি আন্দোলনের অন্যতম আলেমেদ্বীন আল্লামা বদরী সুন্নিয়ত ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে তিনি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, ইসলামবিরোধী আক্বীদা নয়,মানবরচিত যাবতীয় মতবাদ পরিত্যাগ করে পবিত্র কুরআন ও হাদীছের প্রতি নি:শর্ত আত্মসমর্পণের মধ্যেই মানুষের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তি নিহিত। তিনি প্রত্যাশা করেন সুন্নিয়ত ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মানুষের আক্বীদা-আমলের সংস্কারের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধনেই সুন্নিয়তের সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

✽ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ✽✏
বিশিষ্ঠ আলেমেদ্বীন গাজীয়ে দীনে মিল্লাত ওস্তাজুল ওলামা অধ্যক্ষ আল্লামা জাফর আহমদ বদরী (ম:জি:আ:)।
◉পিতা মরহুম আলহাজ বদিউর রহমান।
◉মাতা মরহুমা আলহাজ আমেনা বিবি
◉জন্ম ১৯৪৩ সালে কক্সবাজারের চকোরিয়াতে দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম সমবায় সমিতির বদরখালী নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।

✽ শিক্ষাগত যোগ্যতা ✽✏
শৈশবে মক্তবে পড়ার পর উক্ত গ্রামে প্রতিষ্ঠিত বদরখালী মজহারুস সুন্নাহ মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন।
পরে পূর্ব পাকিস্তান মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চকোরিয়ার সাহারবিল আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে ১৯৫৯ সালে দাখিল এবং১৯৬৩ সালে আলিম পাশ করেন।
পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের সনামধন্য প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৬৫ সালে মেধাতালিকায় ৯ম স্থান অধিকার করে ফাজিল পাশ করেন এবং ১৯৬৭ সালে একই মাদ্রাসা থেকে স্বগৌরভে কামিল পাশ করেন।

✽ অভিজ্ঞতার খাতা ✽✏
◩১৯৬৭ সালে ১সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নাজিরহাট আহমদিয়া মাদ্রাসায়।
◩কক্সবাজার চকোরিয়া আম্জাদিয়া রফিকুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা।
◩মহেশখালী মইনুল ইসলাম মাদ্রাসার প্রধানের দায়িত্বে।
◩নিজ এলাকায় কক্সবাজারের বদরখালী মজহারুস সুন্নাহ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৭০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে গৌরভের সাথে
কর্মরত ছিলেন।
◩পরবর্তীতে চট্টগ্রামের দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল আমীন বারীয়া মডেল (ফাজিল) মাদ্রাসায় ১৯৯০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে সু-দীর্ঘ কর্ম
জীবনের সমাপ্ত করেন।

✽ তিনি চট্টগ্রাম পতেঙ্গা স্টীলমিল জামে মসজিদের প্রাত্তন খতীব ছাড়াও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এবং মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। উনার প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় আজ অনেক মাদ্রাসা, এতিম খানা ও হিফজ খানা প্রতিষ্ঠিত। মানুষ গড়ার এই শ্রদ্ধাভাজন কারিগরের আজ হাজার হাজার ছাত্র সমাজের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্টিত হয়ে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে বিনম্র ফরিয়াদ জানাই তিনি যেন তার এই বান্দাকে তার প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ বাস্তবায়নে আরো তাওফিক দান করেন। আমীন

এপ্রিল ফুল আর ১লা এপ্রিল

✯✯✯ এপ্রিল ফুল আর ১লা এপ্রিল ✯✯✯
***************************************
ইমরান বিন বদরী
এপ্রিল ফুল দিনটি আসলে আনন্দের কারণ আপনি যদি কাওকে বোকা বানাতে পারেন তবে একটু করে হলেও আনন্দিত হবেন।এ দিনটি -ঐতিহাসিকদের মতে, ১৫৬৪ সালে ফ্রান্সে নতুন ক্যালেন্ডার চালু করাকে কেন্দ্র করে এপ্রিল ফুল ডে'র সুচনা হয়। ঐ ক্যালেন্ডারে ১লা এপ্রিলের পরিবর্তে ১লা জানুয়ারীকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে কিছু লোক তার বিরোধিতা করে। যারা পুরনো ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী ১লা এপ্রিলকেই নববর্ষের ১ম দিন ধরে দিন গণনা করে আসছিল, তাদেরকে প্রতি বছর ১লা এপ্রিলে বোকা উপাধি দেয়া হতো।ডাচরাও ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন বা বছরের সবচেয়ে হালকা দিন হিসেবে পালন করা শুরু করে।এটি পরবর্তিতে বিভিন্ন খৃষ্ঠীয় দেশে বোকা (ধোকা) বা কৌতুকের দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।তা নিয়েও কিন্তু ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

❋ বন্ধুরা--ওদের (খৃষ্টানদের)এই আনন্দের দিনটি যে একজন মুসলমানের জন্য কখনো আনন্দের হতে পারেনা।
কারণ এ দিনটি যে মুসলমানদের গৌরবময় শাসনের পরাজয়ের দিন,এই শোকের দিনটি আমাদের আনন্দ উল্লাসের নয়।অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র বেদনাই অনেক মহৎ।

➲ আসুন জেনে নিই সেদিন কি হয়েছিল স্পেনে--দিনটি ছিল ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল৷
ইসলামের সৌন্দর্য ও কল্যাণে আকৃষ্ট হয়ে সাহারা মরুভূমি ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের যে জোয়ার ওঠে সেই ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের মাটিতেও৷৮ম শতাব্দীতে স্পেনে কায়েম হয় মুসলিম শাসন৷মুসলমানদের নিরলস প্রচেষ্টায় স্পেন জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি লাভ করে৷দীর্ঘ সাতশত আশি বা ৮০০বছর মুসলিম শাসন অব্যাহত থাকে স্পেনে৷যে স্পেনকে উমাইয়া শাসকের শেষ সেনাপতি হযরত বীর মুজাহিদ তারিক বিন জিয়াদ ভূমধ্যসাগরের উপকূলে আজকের জিব্রালটারে তার ঐতিহাসিক বক্তব্যের মাধ্যমে মুসলমানদের উজ্জিবীত করে বিজয় করেছিলেন৷তিনি বক্তব্যে বলেছিলেন--
❶ ''হে আমার সহ যোদ্ধারা ! আমরা ইউরোপের বুক থেকে ফিরে যাওয়ার জন্য আসিনি, হয় খ্রিস্টান রাজা রডারিক ও আধুনিক অস্ত্রে সস্ত্রে সুসজ্জিত তার এক লাখেরও অধিক সৈন্য বাহিনীর সাথে জিহাদ করে এই ভূখণ্ডে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করব আর না হয় জিহাদ করতে করতে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে আমাদের পূর্বসূরিদের সাথে গিয়ে মিলিত হব বিকল্প কোন পথ আমাদের সামনে খোলা নেই।

❷ ''হে বাহাদুর যুবক ভাইয়েরা! এখন পিছু হটবার ও পলায়ন করার আর কোন সুযোগ অবশিষ্ট নেই পিছনে অপেক্ষমান ক্ষুধার্ত ও উত্তাল সমুদ্র, সামনে দুর্ধর্ষ শত্রু সৈন্যদল সুতরাং এখন তোমাদেরকে ধৈর্য-হিম্মত ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করে আহকামুল হাকিমিনের রহমতের দিকে তাকিয়ে ইসলামের বিজয় নিশানা উড্ডীন করার লক্ষে বুজদিল পরিত্যাগ করে দুশমনের সাথে মুকাবিলা করতে হবে এবং ইসলামি তাহযীব-তামাদ্দুনকে ইউরোপের বুকে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সম্মুখ পানে এগিয়ে যেতে হবে শাহাদাতের তামান্নায়।

❸ ''হে আল্লাহর রাহের সৈনিকরা! অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখ আমি তোমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছি যে পথে সে পথের যাত্রী সর্বপ্রথম আমিই হব। লড়াইয়ের মাঝে দুশমনের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম আমার তলোয়ারই কোষ মুক্ত হবে। আমি যদি জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়ে যাই তাহলে তোমরা ধীশক্তিসম্পন্ন বুদ্ধিমান অন্য কোন যোগ্য ব্যক্তিকে তোমাদের সিপাহসালার বানিয়ে নেবে কিন্তু আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গে বিমুখ হবে না তবেই বিজয় তোমাদের পদচুম্বন করবে… ।

তার দীর্ঘ এই ভাষন দিয়ে শুরু হল স্পেনের বুকে ইসলামী শাসনের সোনালি অধ্যায়।
সেই স্পেনের মুসলমানেরা পরবর্তিতে ইসলামের আদর্শ থেকে বিমূখ হয়ে পার্থিব লালসায় লিপ্ত হয়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে ভুলে যায় কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা।ফলে তত্কালীন শাসনকর্তারা রাণী ইসাবেলা ও প্রতারক সম্রাট ফার্দিনান্দ তাদের মনের হিংসাত্তক বাসনা পূরণ করতে এই দিনে মুসলমানদের স্পেনের মাটি থেকে উচ্ছেদ করতে আন্দালুসিয়া রাজ্যের করড়োবার মসজিদে 'আজ-জাহরাতে' মিথ্যা সন্দির কথা বলে মসজিদের দরজা বন্ধকরে অসংখ্য আমাদের মুসলিম ভাইদের আগুনে পুড়ে মারে।ফলে মসজিদের ভেতর জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায় আমাদের মুসলিম ভাইরা ।এবং হাজার হাজার নারী ও শিশুকে সাগরে নিক্ষেপ করে নির্মমভাবে হত্যা করে যা মুসলমানের ইতিহাসে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। সেই দিন সমাপ্তি হয়েছিল স্পেনে মুসলমানের স্বর্ণালী যুগের ইতিহাস।

❋--আফসোস--! 
আজ কিন্তু আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা খ্রিষ্টানদের সংস্কৃতিকে এত বেশী ভালোবাসে যার জন্য একজন মুসলমান হয়েও না জেনে ওদের বোকা বানানোর দিনটিতে আনন্দপ্রকাশ করে যাচ্ছি যা খুবই দুঃখের। খৃষ্টান জগতে দিনটি উদ্দীপনাপূর্ণ হলেও মুসলমানদের জন্য বেদনাদায়ক। কেননা মুসলমানদেরই হাতে গড়ে উঠা একটি সভ্যতা সমূলে উৎখাত হয়ে ভেসে যায় মুসলমানদেরই বুকের তাজা রক্ত স্রোতে। দীর্ঘদিনের লালিত একটি সভ্যতার সমাধি ঘটে এই দিনে।
#আসুন আমরা বোকা বানানোর আনন্দপ্রকাশ করতে গিয়ে নিজে যেন আর বোকা না বনি।
(সবাইকে অনুরোধ করছি আমার এই লেখাটিতে ভুল হলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না প্লীজ)

ইমামে আজম হযরত আবু হানীফা (রহ.) এর জীবনী

ইমামে আজম হযরত আবু হানীফা (রহ.) এর জীবনী 
ইমরান বিন বদরী
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিজগতের রব রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য;আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী দোজাহানের সরদার বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
যুগে যুগে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা নিয়ে যেসব মনীষী পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন,যারা অন্যায় ও অসত্যের কাছে কোনোদিন মাথানত করেননি, ইসলাম ও মানুষের কল্যাণে সারা জীবন যারা পরিশ্রম করে গেছেন, সত্যকে অাঁকড়ে থাকার কারণে যারা নির্যাতিত; এমনকি কারাগারে নির্মমভাবে প্রহৃত হয়েছেন ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাদের মধ্যে অন্যতম।ইমামুল মুহাদ্দিসীন, ওয়াল ফুকাহা, হানাফী মাযহাবের প্রবর্তক, কোটি মানুষের স্মরণীয়-বরণীয় মহান ব্যক্তিত্ব ইমাম আজম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেমনি ছিলেন সর্বসম্মত ফকীহ,তেমনি ছিলেন সর্বজন স্বীকৃত মুহাদ্দিস। কুরআন সুন্নার দিক-নির্দেশনায় তাঁর অসামান্য অবদানের কথা মুসলিম উম্মাহ স্মরণ করবে অনন্তকাল পর্যন্ত। তাঁরআধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা ও কুরআন-সুন্নার গবেষণায় সুনিপূন কৃতিত্ব আদর্শ হয়ে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত।



**✽পরিচয় ✽**
নোমান ইবনে সাবিত ইবনে যুতা ইবনে মারযুবান (আরবি نعمان بن ثابت بن زوطا بن مرزبان)
৭০০সালে ৮০ হিজরীতে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের রাজত্বকালে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইরাকের কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সাবিত বিন যুতা ছিলেন আফগানিস্তানের কাবুলে একজন সৎ আমানতদার ব্যবসায়ী।বাল্যকালেই তিনি পিতার থেকে ব্যবসা শিক্ষা করেছিলেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি যুগের বড় বড় মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ এর দরসে উপস্থিত হতে থাকেন।

►একদা ইমাম শা’বী রহমাতুল্লাহি আলাইহির দরসে উপস্থিত হলে তিনি তাঁকে লক্ষ করে বলেছিলেন, “তোমার ভিতরে আমি অপূর্ব মেধা ও বেনযীর প্রতিভার নিদর্শন দেখতে পাচ্ছি।” ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তাঁর এ কথা আমার উপর প্রভাব বিস্তার করলো। তখন থেকে আমি হাঁটে-বাজারে গমন ছেড়ে দিয়ে ইলমের গবেষণায় আত্মনিয়োগ করলাম। এরপর থেকে তিনি ইলম অন্বষণে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেন। বিশেষ করে ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিক্হে গভীর মনোনিবেশ করেন। তিনি যখন হাদীস চর্চায় ব্রতী হন তখন সারা দুনিয়ায় ইলমে হাদীসের ব্যাপক চর্চা চলছিল, যে কারণে তিনি তখনকার সকল বড় বড় হাদীস বিশারদ ও ফকীহদের থেকে উপকৃত হতে পেরেছিলেন।তিনি ‘কূফা’ শহরেই ‘ইলমে ক্বালাম’ শিক্ষা করেন। অতঃপর কূফার শীর্ষস্থানীয় ফিকাহ শাস্ত্রবিদ ‘হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট জ্ঞান আহরণ করতে থাকেন। অতঃপর ১২০ হিজরীতে ‘হযরত হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহির স্থলাভিষিক্ত হন এবং কুফার ‘মাদ্রাসাতুর রায়’ এর কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন।সেই সাথে ইরাকের অনন্য ইমাম বলে বিবেচিত হন এবং অসাধারণ খ্যাতি লাভ করেন। ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির শাইখ ও উস্তাদের সংখ্যা চার হাজারের মতো। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইমাম শা’বী, আ’মাশ, সিমাক ইবনে হারব, হাসান বসরী, শু’বা, কাতাদা, আতা ইবনে আবী রাবাহ, ইকরামা ও হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ।তিনি হাদীস বর্ণনা এবং উসূলে হাদীস ও উসূলে ফিকহ ক্ষেত্রেও নির্ভরযোগ্য ছিলেন।
►উপনাম ** ইমাম আবু হানিফা নামেই তিনি অত্যাধিক পরিচিত।

**✽এখানে একটি ঘটনা বলি যে,মুয়াফফাক আলমক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি(৫৬৪ হি.) ‘মানাকিবু আবী হানীফা’’ গ্রন্থে (খন্ড ২, পৃষ্ঠা : ১৫১-১৫২) আবু ইসমা সা’দ ইবনে মুয়ায রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন। তিনি আবু সুলায়মান জুযাজানী থেকে, তিনি ইমাম মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে,আর তিনি ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন।
►ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
كنا نكلم أبا حنيفة في باب من أبواب العلم، فإذا قال بقول واتفق عليه أصحابه درت على مشايخ الكوفة هل أجد في تقوية قوله حديثا أو أثرا؟ فربما وجدت الحديثين أو الثلاثة فآتيه بها، فمنها ما يقبله ومنها ما يرده، فيقول : هذا ليس بصحيح أوليس بمعروف، وهو موافق لقوله! فأقول له : وما علمك بذلك؟ فيقول : أنا عالم بعلم الكوفة.
‘আমরা আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির সাথে একটি অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করতাম। এরপর যখন তিনি সিদ্ধান্ত দিতেন এবং তার সঙ্গীরাও একমত হতেন তখন আমি কুফার শায়েখগণের কাছে যেতাম তার সিদ্ধান্তের সমর্থনে আরো কোনো হাদীস বা আছর পাই কিনা। কখনো দুইটি বা তিনটি হাদীস পেতাম। তাঁর কাছে পেশ করার পর তিনি কোনোটি গ্রহণ করতেন আবার কোনোটি এই বলে বর্জন করতেন যে, এটি সহীহ নয় বা মারুফ নয়। অথচ তা তার সিদ্ধান্তের অনুকূলে। আমি বলতাম, এ সম্পর্কে আপনার ইলম কীরূপ। তিনি বলতেন, আমি কূফা নগরীর ইলমের ধারক।সত্যি তিনি ছিলেন কুফার মনীষীগণের কাছে সংরক্ষিত ইলমের ধারক।
ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১২ লাখ ৯০ হাজার মাসআলা ইস্তিম্বাত করেছেন।
► হযরত আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ
ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – « ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺻَﺎﺏَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব।
{সহীহ বুখারী,৬৯১৯, সুনানে আবু দাউদ৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম ৪৫৮৪}
ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনিই সর্বপ্রথম ফিকহের তারতীবে ইলমে হাদীস সংকলন করেন এবং অমূল্য গ্রন্থ ‘কিতাবুল আছার’ লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর অনুসরণে মুয়াত্তা কিতাব প্রণয়ন করেন।

✽ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ছিলেন সাহাবায়ে-কেরামগণ আর সাহাবীদের পরবর্তী মর্তবা হচ্ছে তাবেয়ীগণের।ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন তাবেয়ী। তাঁর এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাঝে মাত্র দুইজন বা তিনজন বর্ণনাকারী থাকতেন। এতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সবচেয়ে সহীহ বলে বিবেচিত হত।
✽ ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেসব সাহাবীদের সাক্ষাত লাভ করেছেন।
এঁরা হচ্ছেন-
১) হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ৯৩ হিজরী)
২) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ৮৭ হিজরী)
৩) হযরত সহল ইবনে সাআদ রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ৮৮ হিজরী)
৪) হযরত আবু তোফায়ল রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ১১০ হিজরী)
৫) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়দী রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ৯৯ হিজরী)
৬) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ৯৪ হিজরী)

**✽একটি স্মরণীয় ঘটনা✽**
জনৈক ব্যক্তি একবার হযরত সাইয়্যিদুনা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে হাজির হয়ে আরজ করল, হুজুর ! এক জায়াগায় আমি কিছু টাকা হিফাজতের জন্য রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন শত চেষ্টা সত্ত্বেও সে জায়গার কথা স্মরন করতে পারছি না।
অথচ টাকার খুবই দরকার। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন,হে ব্যক্তি এটাতো কোন ফিক্বহী মাসায়ালা নয়।আমি কি সমাধান দিব ?
আগন্তক ব্যক্তি বড় অনুনয় বিনয় করে বলল, হুজুর ! একটা সমাধান বলে দিন। হযরত সাইয়্যিদুনা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যাও ওযু করে সারা রাত নামাজ পড়তে থাক।
উক্ত ব্যক্তি বাড়ি গিয়ে ওযু করে নামাজ শুরু করে দিল। দু চার রাকাত পড়তে না পড়তেই টাকার কথা মনে পড়ে গেলো।সে দৌড়ে এসে সাইয়্যিদুনা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সংবাদ দিলো যে,হুজুর আপনার নছীহত মুবারক কাজে লেগেছে।হারানো টাকা পেয়ে গেছি। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হে ব্যক্তি !শয়তান কিভাবে এটা বরদাশত করবে যে, তুমি সারারাত নামাজ পড়তে থাক। তাই দু চার রাকায়াত পড়তে না পড়তেই মনে করিয়ে দিয়েছে। তবে তোমার উচিত ছিলো শুকরিয়া স্বরূপ বাকি রাত নামাজের মধ্যে কাটানো।”
সুবহানাল্লাহ্ !!(তাযকিরাতুন নু’মান ৩৫৬ পৃষ্ঠা)।

**✽ ফিকহ ✽**
ফিকহ (আরবি ভাষায়: الفقه) একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো উপলব্ধি করা, গভীরভাবে কিছু বুঝতে পারা, অনুধাবন করা, সূক্ষ্মদর্শিতা ইত্যাদি।
►প্রখ্যাত অভিধান বিশারদ আল্লামা আবুল ফযল জামালুদ্দীন মুহাম্মদ আল মিসরী (রহ) বলেন,
العلم بالشيء والفهمُ له
“ফিকহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, কোন কিছু সম্বন্ধে জানা ও বুঝা।” [লিসানুল আরব]
ইসলামি আইনশাস্ত্র, যা অধ্যয়নের মাধমে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সকল বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের বিধান জানা যায়।
কুরআন ও হাদীসের মৌলিক বিধানগুলোর যে প্রায়োগিক রূপ হলো ফিকহ শাস্ত্র।সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ফিক্বহী মাসায়ালার ইমাম।
(একজন ফকীহ শয়তানের জন্য হাজার (মূর্খ) আবেদ অপেক্ষা ভয়ংকর” (তিরমিযি)।

**✽ মাযহাব ✽**
মাযহাব (আরবি: مذهب )ইসলামী ফিকহ বা ব্যবহারশাস্ত্রের অন্তর্ভূক্ত এক একটি চর্চাকেন্দ্র। মোট চারটি প্রধান মাজহাবকে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক সার্বিকভাবে গড় হিসাব অনুযায়ী পালনযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে| শরীয়তের বিষয়গুলোতে চার মযহাবকে অনুসরণ করার ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানদের মাঝে এজমা তথা ঐকমত্য হয়েছে।২০০৪ সালের ৯ই নভেম্বর জর্দানের আম্মানে অনুষ্ঠিত আম্মান বার্তা সম্মেলনে বিশ্বের ৫০ টি দেশের ২০০ জন মুসলিম আলেমের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত মাজহাবকে বর্তমান সময়ের জন্য পালনীয় হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়।
❶হানাফি (সুন্নি)
❷মালিকি (সুন্নি)ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহির অনুগামীদের মালিকি বলা হয়।
❸শাফিয়ি (সুন্নি)ইমাম শাফি রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে এই মাজহাবের উদ্ভব হয়।
❹হাম্বলি (সুন্নি)এই মাযহাবপন্থীরা ইমাম ইবনে হানবল রহমাতুল্লাহি আলাইহির অনুগামী।

✽ হানফির পরিচয় ► হানফি (আরবি: الحنفي) হল সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে সবথেকে বড় মাযহাব। এই মতাবলম্বী মানুষেরা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির অনুগামী। মুলত ইমাম আবু হানীফার দুই ভক্ত ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ আল সায়বানীর অধীনে এই মতবাদ ছড়িয়ে পড়ে।দুনিয়ার বহু মুসলিম দেশে এই মতবাদ প্রচলিত।
সুদান, মিশর, জর্দান, সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, উজবেকিস্তান, আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে এই মতাবলম্বী মানুষ আছেন।ইমাম আবু হানিফার বাস ছিল ইরাকের বাগদাদ শহরে।মুলত সৌদি আরবের উত্তরে যে সব দেশে স্থলপথে ইসলাম প্রবেশ করেছিলসে সব দেশে এই মতবাদ প্রচলিত।ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি চার প্রসিদ্ধ ইমামের মাঝে বড় ইমাম হিসাবেই পরিচিত।

**✽ ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বিজ্ঞজনের উক্তি ✽**
►ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
ফিকাহশাস্ত্রের সকল মানুষ আবু হানিফা রহ.-এর পরিবারভুক্ত।
(আছারুল ফিকহিল ইসলামী,পৃ:২২৩)

►আল্লামা হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
"ইমাম আবু হানীফা রহ.-র মুত্যু সংবাদ শুনে ফিক্বাহ ও হাদীস শাস্ত্রের সুপ্রসিদ্ধ ইমাম,
শাফঈ মাযহাবের প্রধানতম সংকলক হযরত ইবনে জরীহ রহ. গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছিলেন,
"আহ! ইলমের কি এক অফুরন্ত খনি আজ আমাদের হাতছাড়া হলো"।
(তাহযীবুত্তাহযীব খন্ড ১,পৃ: ৪৫০)

►ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ননা করেন-
হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু হানীফার চেয়ে অধিক জ্ঞানী আমার দৃষ্টিতে পড়েনি। সহীহ হাদীস সম্পর্কে তিনি আমার চেয়ে অধিক দুরদর্শী ছিলেন’।

►ইমাম বোখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহির অন্যতম উস্তাদ মক্কী বিন ইব্রাহীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলেন,
“আবু হানীফা তাঁর সময়কালের শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন”(মানাক্বেবে ইমাম আজম রহ.1/95)

►ইমাম তিরমিযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বহু স্হলে কূফাবাসীদের অভিমতের উল্লেখ করেছেন। এই কুফা নগরীতেই ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির জন্ম এবং এই শহরেই তিনি জ্ঞানার্জন করার সুযোগ লাভ করেছিলেন।

►হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে এই মতামত ব্যক্ত করেন- কথিত আছে যে, ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি আধা রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়তেন। একদা তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এমন সময় তাঁর দিকে ইঙ্গিত করে এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে বলে যে, ইনি সেই ব্যক্তি যিনি সারা রাত আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত করেন। ঐ দিনের পর থেকে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি সারা রাত জাগ্রত থাকতেন এবং বলতেন যে, আল্লাহর নিকট আমার এ বিষয়ে লজ্জা হয় যে, লোকে আমার এবাদত সম্পর্কে এ কথা বলে, যা আমার মধ্যে নেই।

**✽ ওফাত ✽**
৭৬৩ আব্বাসীয় বংশের খলিফা আল-মনসুর ইমাম আবু হানিফাকে রাজ্যের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দেন কিন্তু স্বাধীনভাবে থাকার জন্য তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তার পরীবর্তে তার ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফকে প্রধান বিচারপতির দ্বায়িত দেওয়া হয়। প্রস্তাব প্রত্যাখানের ব্যাপারে ইমাম আবু ইউসুফ আল মনসুরকে ব্যাখা দেন তিনি নিজেকে এই পদের জন্য উপযুক্ত মনে করছেন না। আল-মনসুরের এই পদ প্রস্তাব দেওয়ার পেছেনে তার (খলিফার)
নিজস্ব কারণ ছিল, ইমাম আবু হানিফা প্রস্তাব প্রত্যাখান করার পর মনসুর তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। এই অভিযোগের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু হানিফা বলেন, “আমি যদি মিথ্যাবাদী হই তাহলে প্রস্তাব প্রত্যাখান করার ব্যাপারে আমার মতামত সঠিক, কারণ কিভাবে আপনি প্রধান বিচারপতির পদে একজন মিথ্যাবাদিকে বসাবেন।” এই ব্যাখার উত্তরে আল-মনসুর ইমাম আবু হানিফাকে গেফতার করেন ও তাকে নির্যাতন করে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়।
১৫০ হিজরীতে ৭৬৭ সালে ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ৬৭ বছর বয়সে বাগদাদ শহরে কারাগারে খাদ্যের সঙ্গে বিষক্রিয়া বুঝতে পেরে সিজদায় পড়ে যান এবং সিজদা অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার নয়। কেউ কেউ বলেন তাকে জেলখানর ভেতর মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির জানাযায় অনেক অনেক লোকের সমাগম হয়েছিল।
✼ বন্ধুরা-►
মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির ফিক্বহী মাসায়ালা থেকে আমাদের উপকৃত হওয়ার তওফীক দান করুন। আমীন।
(সবাইকে অনুরোধ করছি আমার এই লেখাটিতে ভুল হলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না প্লীজ,আপনার সঠিক মতামতে আমি উপকৃত হব)