মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সুদ এক ভয়ানক পরিণতির নাম

সুদ এক ভয়ানক পরিণতির নাম।

✏ ইমরান বিন বদরী ≪ 
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
সুদ বিষয়টি নিয়ে লেখা আসলে অনেকটা কঠিন। কারণ এটি বর্তমান মুসলিম সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে এমনভাবে আক্রান্ত করে রেখেছে যা মরনব্যাধী রোগের মত ভয়ানক ঈমান হরনে পরিনত হয়েছে।মানুষ জেনে না জেনে মনের অজান্তে প্রয়োজনের অপব্যক্ষায় প্রবেশ করে এমন এক সীমানা অতিক্রম করছে যেখান থেকে ফিরে আসা হয়তো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়বে।বন্দুরা,আমি এমন কোন জ্ঞানী নই যে এ ব্যপারে বিস্তারিত লেখতে পারবো। সামান্য যতটুকু সল্পজ্ঞানে বুঝেছি তাই হয়তো দু'কলমে শেষ করবো। গত কিছুদিন পূর্বে এক ব্যক্তির সাথে এ প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সুদ হারাম,তবে আল্লাহপাক ত ব্যবসাকে হালাল করেছেন আমিত টাকা দিয়ে টাকার ব্যবসা করছি ব্যবসার লাভ নিচ্ছি এখানে ক্ষতি কী? চিন্তিত হলাম তার যু্ক্তি আর ব্যবসার ধরন দেখে। পরে অবশ্যই বুঝাতে সক্ষম হলাম যদিও অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয়েছে।

✼এবার আসুন জেনে নিই সুদ কী?
সুদ শব্দটি বাংলায় ব্যবহৃত হলেও এটি বিদেশী শব্দ ফার্সি বা উর্দুতে ব্যবহৃত হয় যা বাংলায় পবিত্র কুরআনে কারীমের رِّبٰوا রিবা শব্দের অর্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয় যা 'রাবউন' শব্দমূল থেকে উদ্ভূত।সুদ শব্দটি অন্যান্য বিদেশী শব্দ যেমন নামাজ,রোজা ইত্যাদির মত। প্রকৃতপক্ষে রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অতিরিক্ত,বৃদ্ধি,প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি। শরীয়াতের দৃষ্টিতে রিবা হল যে সমস্ত অর্থ বা পণ্যের বিনিময়ে প্রদেয় সামগ্রীর মূলধনের সাথে অতিরিক্ত অর্থ বা পণ্য শর্ত সাপেক্ষে গ্রহণ করা হয় তাই সুদ।প্রায় সব মুসলমানেরই কম-বেশি জানা আছে যে কোনো পার্থক্য ছাড়াই সকল রিবা বা সুদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
✼ পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা'আলা বলেন- وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا
অর্থ:অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাকারা ২৭৫)
বর্তমানে রিবা সংক্রান্ত পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদীসকে এড়িয়ে গিয়ে মুসলমানদের মধ্যে সুদের মতো জঘন্যতম হারামের প্রচলনের অবতারণা করা হয়েছে। আসলে পবিত্র কুরআনে কারীমে ন্যূনতম সুদকেও স্পষ্টভাবে হারাম করা হয়েছে। এই আয়াতে তো সুদের অতি বেশি ভয়াবহ একটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। যেমন ✼ আল্লাহ তা'আলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ ۚ وَ اِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْ ۚ لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে অংশই অবশিষ্ট রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও। যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। আর তোমরা যদি তওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। তোমরাও কারো প্রতি যুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও যুলুম করা হবে না। (সূরা বাকারা ২৭৮-২৭৯)
✼সুরা বাকারার ২৭৫আয়াতের প্রথমেই এ ব্যপারে উম্মতে মুহাম্মদীকে আরো সতর্ককরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ
যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি,যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।
✼আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন- يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ
আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।(সূরা বাকারা ২৭৬)
✼পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। (সূরা আল-ইমরান ১৩০)
পবিত্র কুরআনে সামান্য সুদকেও হারাম করেছে এবং এটাকে জুলুম সাব্যস্ত করেছে যদিও তা হয়০.০০১%। আর এ বিষয়টিও স্পষ্ট যে,ঋণের বিপরীতে মূলধনের অতিরিক্ত সামান্য পরিমাণও কুরআনের দৃষ্টিতে রিবা। সুতরাং কম এবং বেশি পরিমাণের সাথে রিবা হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই; বরং ঋণের অতিরিক্ত যাই কিছু হোক সেটি রিবার অন্তর্ভুক্ত। তা যে নামেই ডাকা হোকনা কেন। পবিত্র কুরআনে কারীমে সুদ সম্পর্কে যেসব আয়াত এসেছে সেখানে সুদের কোনো শ্রেণীবিভাগ করা হয়নি। ফলে সব ধরনের সুদই হারাম।যে কোনো মুসলমানের জন্য ওয়াজিব হলো সে আহকামে শরিয়াকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর যে কোনো বিধানের ওপর সন্তুষ্ট থাকবে। সুদকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ কারণেই হারাম করেছেন যে,এর মাধ্যমে অভাবীদের অভাবকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো হয়, একজন গরিব লোকের ওপর অধিকহারে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া না হয়।এছাড়াও সমাজে সুদের প্রচলনের কারণে পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট হয়, বিশৃংখলা,মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি,খুন-খারাবি ব্যাপকহারে সংঘটিত হয়।এ ছাড়াও সুদের রয়েছে আরো অনেক ক্ষতিকারিতা। আমাদের জন্য স্পষ্ট যে,ইসলামে যে জিনিসগুলো হারাম তার মধ্যে সুদ নিকৃষ্টতম।
✼হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম-এর ভাষায় সুদগ্রহীতা, দাতা, এর লেখক ও সাক্ষীগণ সবাই অভিশপ্ত।
(সহীহ মুসলিম ১৫৯৮,তিরমিযী)
✼হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেন,রিবার গুনাহ সত্তর প্রকার,তার মধ্যে সবচেয়ে কম ভয়ংকরটি হলো একজন লোকের তার আপন মায়ের সাথে ব্যভিচারের সমান। (ইবনে মাজাহ,বাইহাকি)
✼বন্দুরা, আমাদের সবাইকে কথার বিভ্রান্তিতে না পড়ে নিজেদের ঈমান,আমলের হেফাজত করাই কর্তব্য।আমি একজন মুসলমান হিসাবে আমাকে বিশ্বাস করতে হবে যে,আমার কবরে আমিই যাব,সাথে যাবে খোদাপ্রদত্ত জ্ঞানদ্বারা যাচাই বাছাই করা আমার আমল।সাথে কোন আলেম বা মুফতিই থাকবে না। যদিও উত্তম বিষয়টি মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনই ভাল জানেন। আর
বর্তমান বিশ্ব যখন সুদের সাগরে নিমজ্জিত তখন একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের নিজেদের সাধ্যমত বেচে থাকার জন্যে ডিংগি নায়ে জীবন নামের পথটি অতিক্রম করাই হোক আমাদের কাম্য।কারণ এখন আর সেই সময় নেই যে কর্জে হাসানা দিয়ে আমাকে আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।
قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا أُمُورٌ مُشْتَبِهَةٌ فَمَنْ تَرَكَ مَا شُبِّهَ عَلَيْهِ مِنْ الإِثْمِ كَانَ لِمَا اسْتَبَانَ أَتْرَكَ وَمَنْ اجْتَرَأَ عَلَى مَا يَشُكُّ فِيهِ مِنْ الإِثْمِ أَوْشَكَ أَنْ يُوَاقِعَ مَا اسْتَبَانَ
✼হযরত নু‘মান ইবনু বাশীর রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।(সহীহ বুখারী ইফা ১৯২৩)
অতএব আমাদের চেস্টা করতে হবে সর্বাবস্থায়ই নিজেকে যতটুকু সম্ভব আল্লাহর নির্দেশে পরিচালনা করা।মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে এখলাসের সাথে চলার তাওফিক যেন দান করেন। আমিন ।(বন্ধুরা আমরা কেও ভুলের ঊর্ধে নই,আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে।তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

মৃতের শেষ ঠিকানা


❖ মৃতের শেষ ঠিকানা ❖
════════════
✏ ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
জন্ম মৃত্যু সম্পূর্ণ আল্লাহ পাকের দেয়া হায়াতের উপর নির্ভর করে। হায়াতের পরিসমাপ্তি কবে হবে তা কারো জানা নেই। জন্মেছি যখন মরণের দরজা দিয়ে পার হতেই হবে। আমাদের জন্য পড়ে আছে অনন্তকাল,যে কালের কোনো পরিসমাপ্তি নেই।
◉═ #আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সূরা আলে ইমরানের আয়াত নং১৮৫ তে বলেন,
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়।

◉═ পার্থিব জীবন ক্ষনস্থায়ী, এই জীবন ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। দুনিয়া হচ্ছে পরকালের প্রস্তুতির পাঠশালা,যারা এখান থেকে প্রস্তুতি নিবে তারাই সফলকাম হবে। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক এবং তার প্রিয় হাবিবের দেখিয়ে দেয়া পথেই নিজেকে পরিচালনা করতে হবে। আজ একটা হাদীস শরীফ দেখুন আশা করি ভালো লাগবে। যে হাদিস শরীফের প্রথম আমলটিই আমাদেরমত গুনাহগার বান্দার কাম্য হতে পারে কারন মৃত ব্যক্তির সমালোচনায় আমাদের কারো কোন উপকার হয়না। আমরা একজন মুসলমান হিসেবে আরেক মুসলমানকে ক্ষমা করে সাহায্যের হাত বাড়াতে পারি। আমাদের প্রশংসাই হতে পারে একজন মৃত মুসলমানের শেষ ঠিকানা জান্নাতে। শফিউল মুজনেবীন আল্লাহর হাবীব সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এ গুনাহগার উম্মতের নাজাতের জন্য ইহ জগতের শেষ মুহূর্তেও -'রাব্বি হাবলী উম্মতি,রাব্বি হাবলী উম্মতি' করে বিদায় নিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনও উম্মতে মুহাম্মদীর মুক্তির জন্য 'লাইলাতুল ক্বদরের' মত রাত্রিও উপহার দিয়েছেন যাতে করে মানুষ ইবাদত করে গুনাহ মাফের মাধ্যমে পরকালের প্রস্তুতি নিতে পারেন। আমাদের গুনাহ মাফের এতো এতো সুযোগ থাকার পরেও উম্মতে মুহাম্মদীকে, আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লাম পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী করে দিলেন। যে সাক্ষীদের সাক্ষীই হতে পারে আমাদেরমত গুনাহগার বান্দার জান্নাত লাভের অন্যতম উপায়। মৃত ব্যক্তির প্রশংসা আর বান্দা যে আল্লাহর সাক্ষী সম্পর্কে হাদীস শরীফটি ইমাম নাসাঈ (রহ.) উনার সুনানে- জানাজা অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন,
◉═ #হজরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি জানাজা যেতে লাগলে তার উত্তম প্রশংসা করা হল। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে গেল। আর একটি জানাজা যাচ্ছিল, যার পাপের আলোচনা করা হচ্ছিল। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য দোযখ সাব্যস্ত হয়ে গেল। তখন উমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, আপনার উপর আমার মাতা-পিতা উৎসর্গ হোক; একটি জানাজা যাচ্ছিল যার ভাল প্রশংসা করা হল, আর আপনি বললেন যে, তার জন্য জানাত সাব্যস্ত হয়ে গেল। অন্য আর একটি জানাজা যাচ্ছিল তার পাপের আলোচনা করা হচ্ছিল আর আপনি বললেন যে, তার জন্য দোযখ সাব্যস্ত হয়ে গেল। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যার ভাল প্রশংসা কর তার জন্য জান্নাত সাব্যস্ত হয়ে যায় আর তোমরা যার পাপের আলোচনা কর তার জন্য দোযখ সাব্যস্ত হয়ে যায়। কারণ, তোমরা জমীনে আল্লাহর সাক্ষী।
◉═প্রিয় বন্ধুরা "আসুন ইসলামের রাহে উম্মতে মুহাম্মদীর মুক্তির কথা বলি "
আললাহ যেন আমাদের সবাইকে কোরআন,হাদিস সঠিকভাবে বুঝার সে তৌফিক দান করুক। আমিন, সুম্মা আমিন।

আসহাবে কাহফের বিস্ময়কর ঘটনা

আসহাবে কাহফের বিস্ময়কর ঘটনা
✏ ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
আল কাহফ الكهف সূরাটি কুরআনে পাকের ১৮তম সূরা৷কাহাফ মানে গুহা। আর আসহাবে কাহাফ মানে গুহাবাসী।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা যে সমস্ত ঘটনা উল্লেখ করেছেন,তার প্রত্যেকটি ঘটনাতেই রয়েছে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয়।সূরাটিতে বিস্ময়কর কিছু কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। যে কাহিনীগুলো আল্লাহ তায়ালা এ জন্য উল্লেখ করেছেন,যেন তার বান্দারা এইগুলো বারবার পড়ে এবং পার্থিব জীবনের বিভিন্ন পরীক্ষাগুলো উপমা ও উদাহরণসহ উপলব্ধি করে পরকালমুখী জীবন যাপন করতে পারে।আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসীর আশ্চর্যজনক ঘটনাও পবিত্র কুরআনের শিক্ষণীয় ঘটনাসমূহের অন্যতম একটি ঘটনা।এ সূরাটিতে কোরাইশদের তিনটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহ হযরত মুসা এবং হযরত খিযির (আঃ) এর ঘটনাটিও বর্ণনা করা হয়েছে।
#হযরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূরা কাহফ সম্পূর্ণটুকু এক সময় নাযিল হয়েছে এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা এর সঙ্গে আগমন করেছেন। (রূহুল-মা'আনী)

◉═ ঘটনার শুরু যেভাবে হয়।নবুওয়তের পর ইসলামের প্রথম দিকে সায়্যাদুল মুরসালীন নবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম যখন জাহেলিয়াতের যুগে মানবজাতীর মুক্তির জন্যে ইসলামের ছায়াতলে আহ্বান করা শুরু করলেন তখন মক্কার কোরাইশদের মাঝে এক অনাকাঙ্খিত ভয় কাজ করতে লাগলো।#ইমাম ইবনে জরীর তাবারী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে,মক্কায় যখন রসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের দাওয়াত শুরু হয় কোরাইশরা তাতে বিব্রত বোধ করতে থাকে,তখন তারা নযর ইবনে হারেস ও ওকবা ইবনে আবী মুয়ী'তকে মদীনার ইহুদী পন্ডিতদের কাছে প্রেরণ করে। রসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তারা কি বলে, জানার জন্যে। ইহুদী পন্ডিতরা তাদেরকে বলে দেয় যে,তোমরা তাঁকে তিনটি প্রশ্ন করো। তিনি এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে বুঝে নেবে যে,তিনি আল্লাহ্‌র রসূল। অন্যথায় বুঝবে, তিনি একজন বাগাড়ম্বরকারী রসূল নন।
(প্রশ্ন-১) তাঁকে ঐসব যুবকের অবস্থা জিজ্ঞাস কর, যারা প্রাচীনকালে শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাদের ঘটনা কি? কেননা, এটা অত্যন্ত বিস্ময়কর ঘটনা।
(প্রশ্ন-২) তাঁকে সে ব্যক্তির অবস্থা জিজ্ঞেস কর,যে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম এবং সারা বিশ্ব সফর করেছিল। তার ঘটনা কি?
(প্রশ্নের উত্তরটি সংক্ষেপে এখানে উল্লেখ করলাম,এ সূরার ৮৩-১০১ অংশে জুলকারনাইন সম্পর্কিত বর্ণনা আছে,জুলকারনইন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতেন নির্যাতীত,বঞ্চিত,শাসকের হাতে শোসিত লোকদের মুক্তি দিতেন। পবিত্র কুরআনের বর্ননা অনুযায়ী অরুণাচলে,যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ,মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারণাইন)
(প্রশ্ন-৩) তাঁকে রূহু সম্পর্কে প্রশ্ন কর যে,এটা কি? (তার উত্তরটি সূরা বনী ইসরাঈলের শেষে বর্ণনা করা হয়েছে)
উভয় কোরাইশী মক্কায় ফিরে এসে ভ্রাতৃসমাজকে বললঃ আমরা একটি চূড়ান্ত ফয়সালার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফিরে এসেছি। অতঃপর তারা তাদেরকে ইহুদী আলেমদের কাহিনী শুনিয়ে দিল। কোরাইশরা রসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ প্রশ্নগুলো নিয়ে হাযির হল। তিনি শুনে বললেনঃ আগামীকাল উত্তর দেব। কিন্তু তিনি ইনশা'আল্লাহ্‌ বলেননি।কোরাইশরা ফিরে গেল। রসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর আলোকে জওয়াব দেবার জন্যে আল্লাহ্‌র তরফ থেকে ওহী আসার অপেহ্মায় রইলেন। কিন্তু ওয়াদা অনুয়াযী পর দিবস পর্যন্ত ওহী আগমন করল না; বরং পনের দিন এ অবস্থায় কেটে গেল। ইতিমধ্যে জিবরাঈল(আঃ)ও এলেন না এবং কোন ওহীও নাযিল হল না। অবস্থাদৃষ্টে কোরাইশরা ঠাট্টা-বিদ্রূপ আরম্ভ করে দিল। এতে রসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই দুঃখিত ও চিন্তিত হলেন।পনের দিন পর জিবরাঈল(আঃ) সূরা কাহফ নিয়ে অবতর করলেন। এতে ওহীর বিলম্বের কারণও বর্ণনা করে দেয়া হল যে, ভবিষ্যতে কোন কাজ করার ওয়াদা করা হলে ইনশাআল্লাহ্‌ বলা উচিত। কোরাইশদের প্রথম প্রশ্নটি ছিল যুবদের সম্পর্কে।সূরা আল-কাহফ এ যুবকদের ঘটনা পুরোপুরি বর্ণনা করা হয়েছে।যাদেরকে "আসহাবে কাহফ" বা গুহাবাসী বলা হয়।
◉═এবার আসুন সংক্ষেপে যুবকদের ঘটনাটি সম্পর্কে জানি।
একদল ধর্মপরায়ণ যুবক যারা এক মূর্তিপূজক অত্যাচারী রোমান সম্রাট যে কিনা ধর্মের ব্যাপারে মানুষের ওপর জোরদারি চালাত। কেউ যদি তখনকার সত্য দ্বীনের অনুসারী হতো, তাকে ডেকে সে দুইটি বিকল্পের একটি গ্রহণের কথা বলত। প্রথম বিকল্প হলো, তার মতো মূর্তিপূজারি হয়ে সত্য ধর্মকে ত্যাগ করা। অথবা দ্বিতীয় বিকল্প হলো, তার জল্লাদের হাতেই প্রাণ দেয়া। আর এ দুইটি বিকল্পের যে কোনো একটিকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করতে হয়। চিন্তাভাবনা করার সময় দেয়া হয় না। এমন অবস্থায় সে রাজ্যের কয়েকজন যুবককে রাজদরবারে ডেকে আনা হলো, তাদের সামনে দুইটি বিকল্প পেশ করা হলো। তবে তাদের বয়সের দিকে খেয়াল করে রাজা তাদের প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হলো। তাদের কয়েক দিন চিন্তাভাবনা করার সুযোগ দেয়া হলো,যা অন্যদের দেয়া হয় না। তারা রাজদরবার থেকে বেরিয়ে গেল। এরপর অনেক চিন্তাভাবনার পর সিদ্ধান্ত করল তারা এ দুই বিকল্পের একটিকেও গ্রহণ করতে চায় না। বরং তারা অন্য কোথাও গিয়ে আত্মগোপন করবে এবং সত্য ধর্মে থেকে আল্লাহর ইবাদত করবে।পরে রাজার উৎপীড়ন থেকে নিজেদের ঈমান ও জীবন রক্ষার জন্য পাহাড়ের একটি গর্তে আশ্রয় নিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে গুহার ভেতর প্রায় ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে রেখেছিলেন। যখন তারা ঘুম থেকে জাগ্রত হল, তাদের একজন সাথীকে একটি মুদ্রা দিয়ে খাবার কিনে আনার জন্য পাঠাল। যখন সে শহরে প্রবেশ করল, দেখতে পেল পুরো শহর সম্পূর্ণরূপে বদলে গেছে। দোকানী এত প্রাচীন মুদ্রা দেখে হতবিহ্বল হয়ে গেল। সে মনে করল, এই যুবক কোনো ধরনের ধনভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছে এবং সে এই মুদ্রার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইল। যুবকটি এমন বিপত্তির মুখে পড়ে আরও অধিক বিস্মিত হল।বিষয়টি শেষ পর্যন্ত রাজ দরবার পর্যন্ত গড়াল। রাজা যুবকটির কাহিনী শুনে বিস্মিত হলেন। অতঃপর তার সভাসদদের সঙ্গে নিয়ে সেই গুহার কাছে গেলেন এবং যুবকদেরকে তাদের জন্য দুআ করতে বললেন। পরবর্তীতে তারা সেই একই গুহার মধ্যেই বসবাস করতে লাগল এবং মৃত্যু বরণকরল।একটি কুকুরও তাদের সাথে ছিল নাম ছিল 'কিতমির'।কুকুরসহ এদেরকে আসহাবে কাহফ বা গুহাবাসী বলা হয়৷
#বন্ধুরা ➲ চলুন কুরআনে পাকের আসহাবে কাহাফের আয়াতগুলি পড়ি:-
أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا
আপনি কি ধারণা করেন যে,গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল?
إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوا رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا
যখন যুবকরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয়গ্রহণ করে তখন দোআ করেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন।
فَضَرَبْنَا عَلَى آذَانِهِمْ فِي الْكَهْفِ سِنِينَ عَدَدًا
তখন আমি কয়েক বছরের জন্যে গুহায় তাদের কানের উপর নিদ্রার পর্দা ফেলে দেই।
ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ أَيُّ الْحِزْبَيْنِ أَحْصَى لِمَا لَبِثُوا أَمَدًا
অতঃপর আমি তাদেরকে পুনরত্থিত করি,একথা জানার জন্যে যে, দুই দলের মধ্যে কোন দল তাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে অধিক নির্ণয় করতে পারে।
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَأَهُم بِالْحَقِّ إِنَّهُمْ فِتْيَةٌ آمَنُوا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى
আপনার কাছে তাদের ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
وَرَبَطْنَا عَلَى قُلُوبِهِمْ إِذْ قَامُوا فَقَالُوا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَن نَّدْعُوَ مِن دُونِهِ إِلَهًا لَقَدْ قُلْنَا إِذًا شَطَطًا
আমি তাদের মন দৃঢ় করেছিলাম, যখন তারা উঠে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর তারা বললঃ আমাদের পালনকর্তা আসমান ও যমীনের পালনকর্তা আমরা কখনও তার পরিবর্তে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করব না। যদি করি, তবে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হবে।
هَؤُلَاء قَوْمُنَا اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ آلِهَةً لَّوْلَا يَأْتُونَ عَلَيْهِم بِسُلْطَانٍ بَيِّنٍ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا
এরা আমাদেরই স্ব-জাতি, এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে। তারা এদের সম্পর্কে প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তার চাইতে অধিক গোনাহগার আর কে?
وَإِذِ اعْتَزَلْتُمُوهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ فَأْوُوا إِلَى الْكَهْفِ يَنشُرْ لَكُمْ رَبُّكُم مِّن رَّحمته ويُهَيِّئْ لَكُم مِّنْ أَمْرِكُم مِّرْفَقًا
তোমরা যখন তাদের থেকে পৃথক হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করে তাদের থেকে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ কর্মকে ফলপ্রসু করার ব্যবস্থা করবেন।
وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَت تَّزَاوَرُ عَن كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَت تَّقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِي فَجْوَةٍ مِّنْهُ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ مَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِي وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُّرْشِدًا
তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।
وَتَحْسَبُهُمْ أَيْقَاظًا وَهُمْ رُقُودٌ وَنُقَلِّبُهُمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَذَاتَ الشِّمَالِ وَكَلْبُهُم بَاسِطٌ ذِرَاعَيْهِ بِالْوَصِيدِ لَوِ اطَّلَعْتَ عَلَيْهِمْ لَوَلَّيْتَ مِنْهُمْ فِرَارًا وَلَمُلِئْتَ مِنْهُمْ رُعْبًا
তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়তে।
وَكَذَلِكَ بَعَثْنَاهُمْ لِيَتَسَاءلُوا بَيْنَهُمْ قَالَ قَائِلٌ مِّنْهُمْ كَمْ لَبِثْتُمْ قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ قَالُوا رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثْتُمْ فَابْعَثُوا أَحَدَكُم بِوَرِقِكُمْ هَذِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ فَلْيَنظُرْ أَيُّهَا أَزْكَى طَعَامًا فَلْيَأْتِكُم بِرِزْقٍ مِّنْهُ وَلْيَتَلَطَّفْ وَلَا يُشْعِرَنَّ بِكُمْ أَحَدًا
আমি এমনি ভাবে তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বললঃ তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ বললঃ একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করছি। কেউ কেউ বললঃ তোমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ। এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ শহরে প্রেরণ কর; সে যেন দেখে কোন খাদ্য পবিত্র। অতঃপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য; সে যেন নম্রতা সহকারে যায় ও কিছুতেই যেন তোমাদের খবর কাউকে না জানায়।
إِنَّهُمْ إِن يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوكُمْ أَوْ يُعِيدُوكُمْ فِي مِلَّتِهِمْ وَلَن تُفْلِحُوا إِذًا أَبَدًا
তারা যদি তোমাদের খবর জানতে পারে, তবে পাথর মেরে তোমাদেরকে হত্যা করবে, অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে। তাহলে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না।
وَكَذَلِكَ أَعْثَرْنَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوا أَنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَأَنَّ السَّاعَةَ لَا رَيْبَ فِيهَا إِذْ يَتَنَازَعُونَ بَيْنَهُمْ أَمْرَهُمْ فَقَالُوا ابْنُوا عَلَيْهِم بُنْيَانًا رَّبُّهُمْ أَعْلَمُ بِهِمْ قَالَ الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَى أَمْرِهِمْ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِم مَّسْجِدًا
এমনিভাবে আমি তাদের খবর প্রকাশ করে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতে কোন সন্দেহ নেই। যখন তারা নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে পরস্পর বিতর্ক করছিল, তখন তারা বললঃ তাদের উপর সৌধ নির্মাণ কর। তাদের পালনকর্তা তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল, তারা বললঃ আমরা অবশ্যই তাদের স্থানে মসজিদ নির্মান করব।
سَيَقُولُونَ ثَلَاثَةٌ رَّابِعُهُمْ كَلْبُهُمْ وَيَقُولُونَ خَمْسَةٌ سَادِسُهُمْ كَلْبُهُمْ رَجْمًا بِالْغَيْبِ وَيَقُولُونَ سَبْعَةٌ وَثَامِنُهُمْ كَلْبُهُمْ قُل رَّبِّي أَعْلَمُ بِعِدَّتِهِم مَّا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا قَلِيلٌ فَلَا تُمَارِ فِيهِمْ إِلَّا مِرَاء ظَاهِرًا وَلَا تَسْتَفْتِ فِيهِم مِّنْهُمْ أَحَدًا
অজ্ঞাত বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এখন তারা বলবেঃ তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি তাদের কুকুর। একথাও বলবে; তারা পাঁচ জন। তাদের ছষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর। আরও বলবেঃ তারা ছিল সাত জন। তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলুনঃ আমার পালনকর্তা তাদের সংখ্যা ভাল জানেন। তাদের খবর অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবেন না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও করবেন না।
وَلَا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا
আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামী কাল করব।
إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ وَاذْكُر رَّبَّكَ إِذَا نَسِيتَ وَقُلْ عَسَى أَن يَهْدِيَنِ رَبِّي لِأَقْرَبَ مِنْ هَذَا رَشَدًا
‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন।
وَلَبِثُوا فِي كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِائَةٍ سِنِينَ وَازْدَادُوا تِسْعًا
তাদের উপর তাদের গুহায় তিনশ বছর, অতিরিক্ত আরও নয় বছর অতিবাহিত হয়েছে।
قُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوا لَهُ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ مَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا
বলুনঃ তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। (সূরা কাহফ- আয়াতঃ ৯-২৬)
➲ এ ঘটনা থেকে কতিপয় শিক্ষা:
১) ভবিষ্যতে কোন কাজ করতে ইচ্ছা করলে আমাদের প্রথমে ইনশা-আল্লাহ্ বলা উচিৎ।
২) একত্ববাদের এবাদত করা এবং তাঁর এবাদতে অন্য কিছুকে শরীক না করা।
৩) যুবকদের সাহসের সাথে আল্লাহর বাণী প্রচার করা জরুরী।
৪) চিন্তা ও গবেষণা করে কুরআন ও কুরআনে বর্ণিত ঘটনাগুলো অধ্যয়ন করা ।
৫) বিপদাপদে আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং তাঁর দয়া কামনা করা জরুরী।
৬)প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সত্যের উপর অবিচল থাকার গুরুত্ব অপরিসীম।
৭) তিন শত নয় বছর পর তাদেরকে জীবিত করা এটাই প্রমাণ করে যে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সত্য, কিয়ামত সত্য। এতে কোন সন্দেহ নেই।রূহ এবং দেহ উভয়েরই পুনরুত্থান হবে। কেননা আসহাবে কাহাফগণ এভাবেই জীবিত হয়েছিলেন।
৮) হেদায়াত আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর বান্দার প্রতি বিরাট একটি নেয়ামত। বান্দার উচিত সর্ব অবস্থায় আল্লাহর কাছে হেদায়াত প্রার্থনা করা।
৯) আসহাবে কাহাফের ঘটনা, পরকাল বিশ্বাসের সত্যতার এক উজ্জ্বল ও অকাট্ট প্রমাণ বিশেষ। আল্লাহ তায়ালা যেভাবে আসহাবে কাহাফকে এক দীর্ঘকাল পর্যন্ত মৃত্যুর মহানিদ্রায় নিমজ্জিত রাখার পরও পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছেন, অনুরূপভাবে মৃত্যুর পরে পুনরায় জীবন দান করাও তাঁর কুদরতে সামান্যতমও অসম্ভব নয়।এছাড়াও আরও অসংখ্য শিক্ষণীয় দিক আছে উক্ত ঘটনায়।
◉═সম্মানিত বন্ধুরা "আসুন ইসলামের রাহে উম্মতে মুহাম্মদীর মুক্তির কথা বলি "
আললাহপাক যেন আমাদের সবাইকে গভীরভাবে পবিত্র কুরআন,হাদিস সঠিকভাবে অধ্যয়ন করার সে তৌফিক দান করুন। আমিন,সুম্মা আমিন।

জুম’আর দিন

জুম’আর দিন
 ✍ ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
‘জুম’আ’ الجُمُعَةِ অর্থ সমাবেশ,মুসুল্লীদের জমায়েত হওয়ার কারণে এ দিনের নাম জুম’আর দিন অর্থাৎ জমা হওয়ার দিন।যখন যোহর শুরু হয় জুম’আও তখনই শুরু হয়।অর্থাৎ ঠিক দুপুরে সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে কিছুটা ঢলে পড়লে জুম’আর সময় শুরু হয় (সহীহ বুখারী)।
═❖ পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক বলেছেন -
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا إِذا نودِىَ لِلصَّلوٰةِ مِن يَومِ الجُمُعَةِ فَاسعَوا إِلىٰ ذِكرِ اللَّهِ وَذَرُوا البَيعَ ۚ ذٰلِكُم خَيرٌ لَكُم إِن كُنتُم تَعلَمونَ
“হে মু’মিনগণ! জুম’আর দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হবে তখন তোমরা আল্লাহর স্মরনে ধাবিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর।”
(সূরা জুম’আঃ ৯)

═❖ হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে,তারপর তার নির্ধারিত সালাত (নামাজ) আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে,তা হলে তার সে জুম্মা থেকে আরেক জুম্মা পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহীহ বুখারী)।

═❖ হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের জন্য জুম্মার দিন গোসল করা কর্তব্য। (সহীহ বুখারী)।

═❖ হযরত আবায়া ইবনুূু রিফা’আ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জুম্মার সালাত যাওয়ার সময় আবূ আবস রাদিয়াল্লাহু আনহু -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন,আমি রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে,যার দু’পা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়,আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (সহীহ বুখারী)।

═❖প্রথম ‘জুম’আ’❖═
হযরত ইবনুূু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন-সর্বপ্রথম জুম্মার সালাত অনুষ্ঠিত হয় বাহরাইনে জুওয়াসা নামক স্থানে অবস্থিত আবূল কায়স গোত্রের মসজিদে। (সহীহ বুখারী)।
(উল্লেখ্য যে,এই বাহরাইন বর্তমান রাষ্ট্র বাহরাইন নয় মদীনার একটি গ্রামের নাম)



═❖জুম’আ ও যোহরের মধ্যে পার্থক্য❖═
(১) যোহর সকল বিবেক সম্পন্ন মুমিন নর-নারীর উপর ফরজ, আর জুম’আ সকলের উপর ফরজ নয়;
(২) যোহর হল মূল সালাত, আর জুম’আ হল যোহরের পরিবর্তে;
(৩) জুম’আর কিরা’আত প্রকাশ্যে আর যোহরের কিরা’আত চুপে চুপে;
(৪) জুম’আর ফরজ দুই রাকা’আত, আর যোহরের ফরজ চার রাকা’আত;
(৫) জুম’আয় খুৎবা আছে কিন্তু যোহরে কোন খুৎবা নেই।

═❖জুম‘আর কতিপয় জ্ঞাতব্য বিষয়❖═
❖বাধ্যগত কারণে জুম‘আ পড়তে অপারগ হ’লে যোহর পড়বে।
❖জুম‘আর ছালাত ইমামের সাথে এক রাক‘আত পেলে বাকী আরেক রাক‘আত যোগ করে পূরা পড়ে নিবে। (মিশকাত হা/১৪১)
❖কিন্তু রুকূ না পেলে এবং শেষ বৈঠকে যোগ দিলে চার রাক‘আত পড়বে’।(বায়হাক্বী )
অর্থাৎ জুম‘আর নিয়তে ছালাতে যোগদান করবে এবং যোহর হিসাবে শেষ করবে।এর মাধ্যমে সে জামা‘আতে যোগদানের পূরা নেকী পাবে’। (বায়হাক্বী)
❖রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,যে ব্যক্তি নিয়মিত দূরে বসবে,সে ব্যক্তি জান্নাতে গেলেও দেরীতে প্রবেশ করবে।(আবুদাঊদ১১০৮ মিশকাত হা/১৪১৪)
❖পিছনে এসে সামনের মুছল্লীদের ডিঙিয়ে যাওয়া উচিত নয়। বরং সেখানেই বসে পড়বে।
(আবুদাঊদ হা/১১১৮)
❖জুম‘আ সহ কোন বৈঠকেই কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসতে আল্লাহর রাসূল ﷺ নিষেধ করেছেন। (মিশকাত হা/১৩৯৫)
❖তবে সকলকে বলবে, إِفْسَحُوْا ‘আপনারা জায়গা ছেড়ে দিন’।(মুসলিম)
═❖ হুঁশ-জ্ঞান সম্পন্ন ও স্বাধীন প্রত্যেক বালেগ মুসলমানদের উপর জুম’আ ফরজ।

═❖মুমিনের খুশির দিন জুমার দিন❖═
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘জুমার দিন হলো সর্বোত্তম দিন,যাতে সূর্য উদিত হয়।এ দিনে আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনে তাকে বেহেশতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনে তাকে বেহেশত থেকে বের করা হয়েছে। আর জুমার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (সহীহ মুসলিম)
↪আসুন আমরা যেন ইচ্ছাকৃত ভাবে জুমা ত্যাগ না করি।এবং এ দিনটির যথাযথ মর্যাদা দিই। আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

কুরবানী

কুরবানী
══❖══ ✏ ইমরান বিন বদরী ≪
اَلْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعاَلَمِيْنَ والصَّلوةُ و السَّلاَمُ عَلى اَشْرَفِ الْاَنْبِياءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ وَعَلى اَلِه وَاَصْحَابِه اَجْمَعِيْنَ
ঈদুল আজহা (عيد الأضحى) ইসলামের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ নামে পরিচিত। ঈদুল আযহা মূলত আরবী বাক্যাংশ।এর অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব কিংবা ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা সাধ্যমত ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, গরু, দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি বা জবাই দেয় পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে।
কুরবানী শব্দটি আরবী কুরবান শব্দ থেকে উদ্ভুত। কুরবানী শব্দের অর্থ উৎসর্গ ও নৈকট্য অর্জন। কিন্তু শরীয়তের পরিভাষায় জিলহজ্ব চাঁদের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট জন্তুকে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জবেহ করে উৎসর্গ করার নাম কুরবানী। এটি ইসলাম ধর্মের অতি মূল্যবান ইবাদত।

ঐতিহাসিক পটভূমি:
-----------------------
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে অনেক পরীক্ষা করেছেন। সকল পরীক্ষায় তিনি ধৈর্য্য ও সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। একরাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, আল্লাহপাক তাকে ইঙ্গিত করেছেন তার সবচাইতে প্রিয় জিনিসটিকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানী করতে। হযরত ইব্রাহীম (আ:) অনেক ভেবেচিন্তে দেখলেন একমাত্র পুত্র ইসমাঈল (আ:) এর চেয়ে তার কাছে প্রিয় আর কোনো কিছু নেই। এমনকি নিজের জীবনের চাইতেও সে পুত্র ইসমাঈল (আ:) কে বেশি ভালোবাসতেন। তারপরও তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানী করার সিদ্ধান্ত নিলেন। অত:পর পুত্র ইসমাঈল (আ:) কে তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে: “হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে আমি জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি?” সে (হযরত ইসমাঈল (আঃ)) বলল, “হে পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহ চাহেতো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন” (সূরা সফফাত আয়াত-১০২)। 
‪#‎কুরবানীর‬ অনুমোদনের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেন।
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।(সূরা হাজ্জ, আয়াত নং-৩৪) 
‪#‎আল্লাহ‬ তা’আলা আরো বলেন। فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ 
অতএব তোমরা রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং নহর কর । (সূরা কাউসার : ২)
‪#‎তিনি‬ আরো বলেন :وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ 
আর কুরবানীর উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি। (সূরা হজ :৩৬)
কুরবানীর তাৎপর্য:
----------------------
ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। প্রচলিত কুরবানী মূলতঃ হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর অপূর্ব আত্ম-ত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিচারণ। যেই আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-ভালবাসা ও ঐকান্তিকতা নিয়ে কুরবানী করেছিলেন ইব্রাহীম (আঃ), সেই আবেগ, অনুভূতি ও ঐকান্তিকতার অবিস্মরণীয় ঘটনাকে জীবন্ত রাখার জন্যই মহান আল্লাহ উম্মাতে মুহাম্মদীর উপর কুরবানী ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তাই কুরবানী কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
#আল্লাহ পাক আরো বলেন, لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ
আল্লাহর নিকট (কুরবানীর পশুর) গোশত, রক্ত পৌঁছে না; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।
(সূরা হাজ্জ, আয়াত নং-৩৭)
কুরবানী মহান একটি ইবাদাত। কোরবানি বলা হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও তার এবাদতের জন্য পশু জবেহ করা।
‪#‎হজরত‬ আনাস ইবনু মালিক রাদিআল্লাহু আনহুর বর্ণনা করেছেন।
أن النبي - صلى الله عليه وسلم - ضحى بكبشين أملحين أقرنين ذبحهما بيده وسمى وكبر.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরতাজা ও শিং ওয়ালা দুটি মেষ নিজ হাতে যবেহ করেছেন এবং তিনি তাতে বিসমিল্লাহ ও তাকবীর বলেছেন।(সহিহ বুখারী ও মুসলিম)
#হজরত জুনদুব ইবনু সুফিয়ান বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি কুরবানীর দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্হিত ছিলাম। তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি সালাত আদায়ের পুর্বে যবাহ করেছে সে যেন এর স্থলে আবার যবাহ করে। আর যে যবাহ করেনি, সে যেন যবাহ করে নেয়।(সহিহ বুখারী)
#হজরত আয়িশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, মদিনায় অবস্থানের সময় আমরা কুররানীর গোশতের মধ্যে লবন মিশ্রিত করে রেখে দিতাম। এরপর তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পেশ করতাম। তিনি বলতেনঃ তোমরা তিন দিনের পর খাবে না। তবে এটি জরুরী নয়। বরং তিনি চেয়েছেন যে,তা থেকে যেন অন্যদের খাওয়ান হয়। আল্লাহ অধিক জ্ঞাত। (সহিহ বুখারী)
কুরবানীর হুকুম:
---------------------
ইমাম আবু হানীফা রহ.ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ.মতে কোরবানি ওয়াজিব। যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া। জ্ঞান সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক, নিসাব পরিমাণ মালিকের উপর শুধু একটি কুরবানীই ওয়াজিব হবে,অবশ্য কেউ যদি একাধিক কুরবানী করে তা নফল হিসেবে সওয়াবের অধিকারী হবে। ভাগে কুরবানী জায়েয।
#হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,একটি গরু সাতজনের পক্ষ কুরবানী করা যাবে। (তিরমিযী)
#হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন,
كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ فِىْ سَفَرٍ فَحَضَرَ الْأَضْحَى فَاشْتَرَكْنَا فِى الْبَقَرَةِ سَبْعَةٌ وَ فِى الْبَعِيْرِ عَشَرَةٌ
‘আমরা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হ’ল।তখন আমরা সাতজনে একটি গরু ও দশজনে একটি উটে শরীক হ’লাম’(তিরমিযী, নাসাঈ,ইবনু মাজাহ)
কুরবানীর ফজিলত:
------------------------
(ক) কোরবানি দাতা নবী ইবরাহিম (আ:)ও রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন।
(খ) পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানি দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। 
(গ) পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান।
#হজরত আয়শা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোন আমল আল্লাহর কাছে নাই। ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জবেহকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর,পশম সমূহ ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। কুরবানীর রক্ত জমিনে পতিত হবার পুর্বেই তা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদায় পৌছে যায়। অতএব, তোমরা কুরবানির দ্বারা নিজেদের নফস কে পবিত্র কর।
কুরবানীর পশু:
------------------
এমন পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া,দুম্বা। এ গুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আনআম।’কুরবানীর পশু ভাল এবং হৃষ্টপুষ্ট হওয়াই উত্তম। শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু'বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের। যদি ছয় মাসের দুম্বা বা ভেড়া এরূপ মোটা-তাজা হয় যে,দেখতে এক বছরের মত মনে হয় তাহলে এর দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে।
কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্র“টি মুক্ত হতে হবে অন্ধ ;যার অন্ধত্ব স্পষ্ট,রোগাক্রান্ত ; যার রোগ স্পষ্ট,পঙ্গু ;যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত;যার কোন অংগ ভেংগে গেছে ইত্যাদি। যে পশুটি কোরবানি করা হবে তার উপর কোরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে।
কুরবানীর করার নিয়মাবলি:
---------------------------------- 
#হজরত মা আয়শা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শিংওয়ালা সুন্দর সাদা-কালো দুম্বা আনতে বললেন.অতঃপর নিম্নোক্ত দো‘আ পড়লেন,
بِسْمِ اللهِ أَللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِن مُّحَمَّدٍ وَّ آلِ مُحَمَّدٍ وَّ مِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ رواه مسلم-
‘আল্লাহ্র নামে (কুরবানী করছি),হে আল্লাহ! তুমি এটি কবুল কর মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে,তার পরিবারের পক্ষ হ’তে ও তার উম্মতের পক্ষ হ’তে’।এরপর উক্ত দুম্বা দ্বারা কুরবানী করলেন’।(মিশকাত১৪৫৪)
নিজের পশু নিজেই কুরবানী করা সর্বোত্তম। নিজে যবেহ করতে অপারগ হলে অন্যের দ্বারা কুরবানী দুরস্ত আছে।কুরবানী দাতা ধারালো ছুরি নিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দো‘আ পড়ে নিজ হাতে খুব জলদি যবহের কাজ সমাধা করবেন, যেন পশুর কষ্ট কম হয়।যবেহ করার সময় কুরবানী পশু কেবলামুখী থাকতে হবে।আর কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং রক্তনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়।যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলতে হবে। ইচ্ছাকৃত ভাবে বিসমিল্লাহ না বললে হালাল হবে না।আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মূখভাগে দু’টি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দু’টি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে।উট দাঁড়ানো অবস্থায় এর ‘হলক্বূম’ বা কণ্ঠনালীর গোড়ায় কুরবানীর নিয়তে ‘বিসমিল্লা-হি আল্লাহু আকবার’ বলে অস্ত্রাঘাতের মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করে ‘নহর’ করতে হয় ।
❖ পরিশেষে, মনে রাখতে হবে কুরবানী হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত ও আল্লাহ রাববুল ‘আলামিনের নৈকট্য লাভের উপায়।কুরবানীর উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়,শুধু মানুষের উপকার করা নয় বা শুধু সদকা (দান) নয়। কুরবানীর উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ রাববুল ‘আলামীনের একটি মহান নিদর্শন তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা।করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা যেন কুরবানী করার সে তাউফিক আমাদের দেন।আমিন।

শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫

গজওয়ায়ে উহুদ বা উহুদের যুদ্ধ

গজওয়ায়ে উহুদ বা উহুদের যুদ্ধ
═❖════❖════❖═
ইমরান বিন বদরী ≪ 
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
উহুদের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘটনা।বদর যুদ্ধে পরাজয়ের পর মক্কার কাফির কুরাইশরা যখন মক্কায় পৌঁছলো এবং আবু সুফিয়ানও তার কাফিলা নিয়ে মক্কায় ফিরে এল, তখন যাদের পিতা,পুত্র কিংবা ভাই বদর যুদ্ধে নিহত হয়েছিল তাদের একটি দল আবু সুফিয়ানের কাছে গেল এবং প্রতিশোধ গ্রহণ করতে বলে।তখন আবু সুফিয়ানরা বললো, হে কুরাইশগণ, মুহাম্মদ তোমাদের বিরাট ক্ষতি সাধন করেছে এবং তোমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের হত্যা করেছে। এবার তোমাদের এই যাবতীয় সম্পদ দিয়ে আমাদেরকে সাহায্য কর, তাহলে আশা করি আমরা আমাদের হারানো লোকদের উপয্ক্তু প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারবো। সবাই সম্মতি দিলে হিজরী তৃতীয় সনে শাওয়াল মাসে কুরাইশ মুশরিকরা বদরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে মদীনার দিকে অগ্রসর হয়। মদিনার তিন মাইল উত্তর-পূর্বে উহুদ পাহাড়। কুরাইশ বাহিনী উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে তাদের ছাউনী ফেলে। তাদের যোদ্ধার একটি বাহিনী উহুদের দিকে রওয়ানা হয় ফলে সেখানেই সংগঠিত হয়েছিল রক্তক্ষয়ী উহুদের যুদ্ধ।যুদ্ধের পথিমধ্যে মুনাফিক সরদার আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার অনুগত তিনশত লোক নিয়ে মুসলিম বাহিনী থেকে সরে পড়লে যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র সাত শত মুজাহিদ নিয়ে তিন হাজার যোদ্ধার সম্মুখীন হয়ে এই অসম যুদ্ধে মুসলিমরা বীর বিক্রমে লড়াই করেন। প্রথমে মুসলমানরা বিজয়ী হলেও পরবর্তীতে কৌশলগন স্হান ত্যাগ করার কারনে সাময়িক বিপর্যয় ঘটে। ফলে যুধ্ধটি অমিমাংশিত থেকে যায়। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষের ফলশ্রুতিতে হজরত হামজা রাদিআল্লাহু আনহু সহ এতে ৭০ জন বীর মুসলমান শহীদ হন এবং ৩৭ জন কাফের নিহত হয়।এ যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ হজরত আবুবকর রাদিআল্লাহু আনহু ও হজরত উমর রাদিআল্লাহু আনহুও আহত হন। হজরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহুর বর্ণনা মতে উতবা ইবনে আবি ওয়াক্কাসের বর্শার আঘাতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডান দিকের নিচের দাঁত ভেঙে যায় এবং তাঁর নীচের ঠোঁট আহত হয়।

═❖
উহুদের যুদ্ধের পর মুমিনদের প্রশিক্ষণের জন্যে আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَلاَ تَهِنُوا وَلاَ تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।
إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهُ وَتِلْكَ الأيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاء وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ الظَّالِمِينَ
তোমরা যদি আহত হয়ে থাক, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।
وَلِيُمَحِّصَ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ
আর এ কারণে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে পাক-সাফ করতে চান এবং কাফেরদেরকে ধবংস করে দিতে চান।
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُواْ الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللّهُ الَّذِينَ جَاهَدُواْ مِنكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ
তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল। (আলে ইমরান : ১৩৯-১৪২)
এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে তাঁরা আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হয়। তাঁরা বীরত্বের সঙ্গে প্রতিরোধ করায় শত্রুপক্ষ মক্কায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
সেদিন হজরত মুস’য়াব ইবনে উমাইর রাদিআল্লাহু আনহু, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রক্ষার জন্য বীরোচিতভাবে যুদ্ধ করে শহীদ হলেন। তাঁকে হত্যা করেছিলো ইবনে কিময়া লাইসী। সে মনে করেছিরো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই হত্যা করেছে। তাই সে কুরাইশদের কাছে ফিরে গিয়ে বললো, “মুহাম্মাদকে হত্যা করেছি।” মুসয়াব নিহত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী ইবনে আবু তালিব রাদিআল্লাহু আনহুর হাতে পতাকা অর্পন করলেন অতঃপর আলী রাদিআল্লাহু আনহু ও অন্যান্য মুসলিম বীর শার্দুলেরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
উহুদের যুদ্ধ ভয়ংকর রূপ ধারণ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের পতাকাতলে বসলেন। তিনি আলী রাদিআল্লাহু আনহু কে দূত মারফত নির্দেশ দিলেন যে,“পতাকা নিয়ে এগিয়ে যাও।
যুদ্ধে মুশরিক বাহিনী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এমন কে আছ, যে আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য জীবন কুরবানী করতে প্রস্তুত? এ কথা শুনে যিয়াদ ইবনে সাকান সহ পাঁচজন আনসার সাহাবী উঠে দাঁড়ালেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিফাজতের জন্য এক একজন করে লড়াই করে শহীদ হতে লাগলেন। সর্বশেষ ব্যক্তি ছিলেন যিয়াদ ইবনে সাকান কিংবা আম্মারা ইবনে ইয়াযীদ ইবনুস সাকান। তিনিও বীর বিক্রমে লড়াই করে গুরুতরভাবে আহত হলেন। ইতিমধ্যে মুসলমানদের একটি দল সেখানে ফিরে এলো এবং উক্ত আহত সাহাবীর পক্ষে লড়াই করে শত্রুপক্ষকে পর্যুদস্ত করে হটিয়ে দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহত সাহাবীকে দেখিয়ে বললেন, “ওকে আমার কাছে আনো।” মুসলমানগণ তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে এলো। তিনি নিজের জানুর ওপর তার মাথা রেখে শোয়ালেন। এই অবস্থাতেই উক্ত সাহাবী শহীদ হলেন।
আরেক বীর বিক্রম হজরত আবু দুজানা রাদিআল্লাহু আনহু নিজের দেহকে ঢাল বানিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রক্ষা করতে লাগলেন। তাঁর পিঠে তীর বিদ্ধ হচ্ছিলো আর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আড়াল করে তাঁর ওপর ঝুঁকে দাঁড়িয়েছিলেন। এভাবে তাঁর গায়ে বিদ্ধ তীরের সংখ্যা প্রচুর। আ সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিরক্ষার চেষ্টায় তীর নিক্ষেপ করতে লাগলেন। সা’দ বললেন, “আবু দুজানাকে দেখলাম, আমাকে একটার পর একটা তীর দিয়েই চলছেন আর বলছেন, ‘তোমার জন্য আমার পিতামাতা কুরবান হোক। তুমি তীর নিক্ষেপ করতে থাক।’ এমনকি সময় সময় তিনি ফলকবিহীন তীরও দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘নিক্ষেপ কর।”
যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাহাদাত লাভের গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বপ্রথম চিনতে পারেন কা’ব ইবনে মালিক। কা’ব সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বলেন “হে মুসলমানগণ, সুসংবাদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেঁচে আছেন। তিনি এখানে।
এ দিনটি ছিলো মুসলমানদের জন্য এক কঠিন অগ্নিপরীক্ষা ও পরিশুদ্ধির দিন।

মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০১৫

রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইলমে গায়েব


══◉রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইলমে গায়েব◉══
ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
সৃষ্টির আদিকাল থেকে যুগে যুগে একত্ববাদের প্রচারে সত্য ও রিসালতের বাণী নিয়ে প্রেরিত হয়েছে অগনিত নবী ও রাসুল।একজন ঈমানদারের জন্য যেমনিভাবে আল্লাহর একত্ববাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয, তেমনিভাবে তাঁর প্রিয় রাসূল বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন,নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমানের সহিত শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও আনুগত্য করা সমভাবে আবশ্যক।একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের ঈমানের মূলে থাকতে হবে হুব্বে রাসুল বা নবী প্রেম।কারণ নবী প্রেম না থাকলে মুমিন হওয়া যায়না।
═✼রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলেন,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের অপেক্ষা অধিক প্রিয়পাত্র হই। (মুসলিম১ /১৬হাঃ৪৪,আহমদ১২৮১৪)
══সম্মানিত বন্ধুরা, লিখার শুরতেই বলে রাখি বিতর্ক নয়,আশাকরি প্রত্যেকে সম্মানের সহিত জানতে এবং জানাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন এটাই কাম্য।আমি ক্ষুদ্র জ্ঞানে লিখার যোগ্যতা না থাকলেও সাহস করে একটু করে লিখতে সতেষ্ট হলাম।


◩ ইলমে গায়েব কি ◩
══ ইলমে গায়েব (عالم الغيب) বিষয়টি বুঝলে খুবই সহজ, আর না বুঝলে পাথরের চেয়েও কঠিন ও জটিল মনে হবে। না বুঝে এ নিয়ে বিতর্ক করতে গিয়ে অজ্ঞতা ও ভ্রান্তির ফলে মারাত্মক ধৃষ্টতা করে বসেন অনেকে। আমাদের ঈমানের মূলে মনে রাখতে হবে জগতের রব মহান আল্লাহ তাআলাই সত্ত্বাগত ভাবে জ্ঞানী। তিনি অবগত না করালে কেউ একটি অক্ষরও জানতে পারে না। ইলমে গায়েবের মূল উৎস হচ্ছেন মহান আল্লাহ সুবহানাহুতা’লা নিজেই। কেননা তিনিই হচ্ছেন অতীন্দ্রিয় পরম সত্তা। তাই তিনিই ইলমে গায়েবের সার্বিক বা পরম ভান্ডার। তাঁর এ জ্ঞান সত্তাগত,অর্থাৎ কোথা থেকে বা কারো কাছ থেকে অর্জিত নয়। কেননা তিনি সমাদ,অর্থাৎ অমুখাপেক্ষী বা স্বয়ংসম্পূর্ণ পরম সত্তা।মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহ তা’আলার জ্ঞান সত্তাগত আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত।
◉═এবার আসা যাক মূল আলোচনায়- ইলম গায়েবের (عالم الغيب) বাংলা অর্থ অদৃশ্য জ্ঞান হলেও সকল অদৃশ্য জ্ঞান গায়েব নয়। যেমন- আত্মা,আওয়াজ,গন্ধ,বাতাস,সুখ,দুঃখ,ঘৃণা, জ্ঞান, উদ্দেশ্য ইত্যাদি সবই অদৃশ্য,কিন্তু ইলমে গায়েবের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইলমে গায়েব অর্থ হচ্ছে,অতীন্দ্রিয় জ্ঞান; অর্থাৎ যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা ইন্দ্রিয়ের গোচরীভূত নয় তা-ই ইলমে গায়েব। যেমন-আল্লাহুতা’লার পরিচিতি, আরশ, কুরসি, লওহ, কলম, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ, হুর, ফেরেশতা ও জ্বীনের পরিচিতি, হাশর-নশর, মিজান, মাকামে মাহমুদা, সিদরাতুল মুন্তাহা, আলমে আরওয়াহ্ বা আত্মার জগতের বিবরণ,আলমে বারঝাখ বা কবরের জগতের বর্ণনা, আখেরাতের জীবনের বিবরণ,বায়তুল মা’মুর, পুনরুত্থান,পুলসিরাত,ভবিষ্যতের বর্ণনা ইত্যাদি সংক্রান্ত সকল জ্ঞানই ইলমে গায়েব বা অতীন্দ্রিয় জ্ঞান। নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গায়েব দর্শনের পরম উৎস পবিত্র মীরাজের রাত।এরপরেও কি তাঁর আর কোন গায়েব জানা বাকি থাকতে পারে?

◩ পবিত্র কুরআনে করিমের আলোকে ইলমে গায়েব ◩
══ আল্লাহ তায়ালা বলেন- عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا
তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। পরন্ত তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। (ক্ষমতাবান করেন না) 
(সূরা জীন,আয়াত২৬)
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন এ আয়াত দ্বারা অদৃশ্যের জ্ঞান নিজ দায়িত্বে নিয়ে পরবর্তী আয়াতে বলেন তবে হাঁ -
◩ إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِن رَّسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا
কিন্তু তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রে ও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন। (সূরা জীন,আয়াত ২৭)
অত্র আয়াতে যে মনোনীত রসুলের কথা বলা হয়ছে তাতে কী বুজা যায়না রাহমাতুল্লিল আলামিন নবীই সেই গায়েবের খবর জানা রসুল,যাকে প্রকাশ করা হয়েছে ইলমে গায়েব!

◉═গায়েব জানার আরেক উদাহরন ইন্দ্রিয়ের ভাইরে অবলোকন করা যেমন সুরা তাকবিরে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেছেন- وَلَقَدْ رَآهُ بِالْأُفُقِ الْمُبِينِ  তিনি সেই ফেরেশতাকে প্রকাশ্য দিগন্তে দেখেছেন। (আয়াত ২৩)
শুধু তাই নয় হাদিসে জিব্রাইলে এই প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লামের উছিলায় সেই বৈঠকে অবস্থানরত অনান্য সাহাবীরাও হজরত জিব্রীল আমিনকে মানবীয় আকৃতিতে দেখেছেন।
◩ আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াতে আরো বলেন, وَمَا هُوَ عَلَى الْغَيْبِ بِضَنِينٍ
তিনি অদৃশ্য বিষয় বর্ণনা করার ব্যাপারে কৃপণ নন। (সূরা তাকভীর,আয়াত ২৪)
অত্র আয়াতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ পাক বলেন غيب বা অদৃশ্য প্রকাশে তিনি কৃপণ নন।প্রশ্ন হচ্ছে গায়েব তথা অদৃশ্য বিষয় জানা না থাকলে প্রকাশ করেন কী করে? আল্লাহ পাক তার হাবীবকে জানান বলেই তো প্রকাশের কথা গুপন রাখেননি।

◩═ আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন
مَّا كَانَ اللّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى مَآ أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّىَ يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللّهَ يَجْتَبِي مِن رُّسُلِهِ مَن يَشَاء فَآمِنُواْ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ وَإِن تُؤْمِنُواْ وَتَتَّقُواْ فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ
আল্লাহ মুসলমানদের এ অবস্থায় ছাড়াবার নন যে অবস্থায় তোমরা রয়েছ যে পর্যন্ত না পৃথক করবেন অপবিত্রকে পবিত্র থেকে। আল্লাহর শান এ নয় যে, হে সর্বসাধারণ! তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দিবেন। তবে আল্লাহ নির্বাচিত করেন তাঁর রাসূলগণের মধ্য থেকে যাকে চান। সুতরাং ঈমান আনয়ন কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর; এবং যদি তোমরা ঈমান আনয়ন কর এবং পরহেজগারী অবলম্বন করো তবে তোমাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান আয়াত১৭৯)

◩═আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন
وَلَوْلاَ فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهُ لَهَمَّت طَّآئِفَةٌ مُّنْهُمْ أَن يُضِلُّوكَ وَمَا يُضِلُّونَ إِلاُّ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَضُرُّونَكَ مِن شَيْءٍ وَأَنزَلَ اللّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া আপনার উপর না থাকত তবে তাদের মধ্যকার কিছু লোক এটা চাচ্ছে যে, আপনাকে ধোকা দিবে, এবং তারা নিজেরা নিজেদেরকেই পথভ্রষ্ট করেছে। এবং আপনার কোন কিছুই ক্ষতি করবে না আর আল্লাহ আপনার উপর কিতাব ও হিকমত অবর্তীন করেছেন। এবং আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনি জানতেন না এবং আপনার উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।
(সূরা নিসা আয়াত ১১৩)
এ আয়াত وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ প্রসঙ্গে তাফসীরে জালালাইনে রয়েছে : اى من الاحكام والغيب
অর্থ :শরীয়তের বিধান ও ইলমে গায়েব শিক্ষা দিয়েছেন।

◩═আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি জগতের সাক্ষী রূপে আরো বলেন
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِي كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا عَلَيْهِم مِّنْ أَنفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيدًا عَلَى هَـؤُلاء وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ
সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ।
(সূরা নাহ্‌ল আয়াত ৮৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। (সূরা আহযাব-৪৫)
◉═➲ উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে شَاهِدًا শব্দটি নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন যে, কেও যদি প্রশ্ন করে সাক্ষী কি না দেখে দেওয়া যায়? উত্তর একটাই আসবে কখনো না। মিথ্যা--- কখনো সাক্ষী হতে পারেনা।
এবার আসুন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন.يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ হে নবী আমি আপনাকে সাক্ষী হিসেবে প্রেরণ করেছি।প্রশ্ন জাগে কীসের সাক্ষী ? শুধু কি ১৪০০ বছর আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই ৬৩ বছর হায়াতের সাক্ষী নাকি সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমস্ত কিছুর সাক্ষী। নিশ্চয় সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমস্ত কিছুর সাক্ষী।যদি তাই না হয় فِي كُلِّ أُمَّةٍ পূর্ববর্তী পরবর্তীদের প্রত্যেক উম্মতের সাক্ষী হবেন কীভাবে? এতেই বুঝা যায় সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সবকিছু আমার নবীর নখদর্পনে। তাছাড়া أَرْسَلْنَاكَ আপনাকে প্রেরণ করেছি মানে দুনিয়া ও আখিরাতের সবকিছু দেখিয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির গুপন রহস্য অবলোকনকারী কেবল আপনি। এছাড়াও আলেমুল গায়বের (عَالِمُ الْغَيْبِ)অধিকারীর গায়েব প্রকাশ কেবল,আমার নবীর মাদ্যমেই হয়েছে ।আল্লাহ যা প্রকাশ করতে বলেছেন তাই প্রকাশ করেছেন আর যা প্রকাশ করতে বলেননি তিনি তা প্রকাশ করেননি যেমন- কুরআনে পাকের হরুফে মুকাত্তেয়াত গুলো তারই জলন্ত প্রমাণ যেমন:আলিফ.লাম. মীম,হা মীম,তোয়া হা.ইত্যাদি।

◩═ আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلاَّ يَعْلَمُهَا وَلاَ حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الأَرْضِ وَلاَ رَطْبٍ وَلاَ يَابِسٍ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।  (সূরাঃ আল-আন'আম ৫৯)
উপরোক্ত আয়াতের মর্মটা গভীরভাবে খেয়াল করে দেখুন যে আল্লাহ পাকের হুকুম ছাড়া কিছুই পরিবর্তন হয়না কারণ স্রষ্টাই জানে সৃষ্টির গুপন রহস্য যা আমি আগেই বলেছি।এই আয়াতের শেষে
আল্লাহ পাক বলেন -إِلاَّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।
এখন জানতে হবে প্রকাশ্য গ্রন্থ কোনটা যাতে রয়েছে দৃশ্য অদৃশ্য সবকিছুর বর্ণনা।তা হচ্ছে পবিত্র কুরআনে করিম যা শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহ পাক তার প্রিয় হাবিবকে। যেমন,
আল্লাহ পাক বলেন- الرَّحْمَنُ করুনাময় আল্লাহ। عَلَّمَ الْقُرْآنَ শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন (সূরা আর রহমান ১-২)আর এটি এমন এক কিতাব (كِتَابٍ) যাতে কোনো সন্দেহ নেই।যেমন আল্লাহ পাক বলেন. ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। (সূরা বাক্বারাহ ২)
একবার ভেবে দেখুন যে কিতাব আজ আমাদের পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করছেন তা কিন্তু এই নবীর (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লাম) মাদ্যমেই পেয়েছি।নবী সল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লাম যা সরাসরি বলেছেন তাই হাদিস শরীফ আর যা আল্লাহ পাক বলেছে বলেছেন তাই কালামুল্লাহ।সুতরাং এই পবিত্র কালামুল্লায় এমন কোনো জ্ঞান নেই যা আমার রাসুলের(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লাম) অজানা রয়েছে। ইলমে গায়েব যদি কোনো ইলেম হয়ে থাকে সে ইলম অবশ্যই আমার রাসুলের জানা আছে।
*******************
◩ হাদীস শরীফের আলোকে ইলমে গায়েব ◩
══ হাদিস শরীফটিতে দেখবেন সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুরা দরজা দিয়ে প্রবেশ করার পূর্বেই আল্লাহর নবী জানেন যে কে আছেন বাইরে এবং এও জানেন উনাদের ভবিষ্যত কি হবে। সুবহানাল্লাহ !!
উনারা সবাই পৃথিবীতে যে ১০ জন সাহাবা জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন তাদের অন্যতম এবং খলিফাতুল মুসলেমিন।
عَنْ أَبِي مُوسَى، أَنَّهُ كَانَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي حَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ الْمَدِينَةِ، وَفِي يَدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عُودٌ يَضْرِبُ بِهِ بَيْنَ الْمَاءِ وَالطِّينِ، فَجَاءَ رَجُلٌ يَسْتَفْتِحُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " افْتَحْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ ". فَذَهَبْتُ فَإِذَا أَبُو بَكْرٍ، فَفَتَحْتُ لَهُ وَبَشَّرْتُهُ بِالْجَنَّةِ، ثُمَّ اسْتَفْتَحَ رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ " افْتَحْ لَهُ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ ". فَإِذَا عُمَرُ، فَفَتَحْتُ لَهُ وَبَشَّرْتُهُ بِالْجَنَّةِ، ثُمَّ اسْتَفْتَحَ رَجُلٌ آخَرُ، وَكَانَ مُتَّكِئًا فَجَلَسَ فَقَالَ " افْتَحْ {لَهُ} وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ، عَلَى بَلْوَى تُصِيبُهُ أَوْ تَكُونُ ". فَذَهَبْتُ فَإِذَا عُثْمَانُ، فَفَتَحْتُ لَهُ، وَبَشَّرْتُهُ بِالْجَنَّةِ، فَأَخْبَرْتُهُ بِالَّذِي قَالَ. قَالَ اللَّهُ الْمُسْتَعَانُ.
═✼মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হজরত আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
একবার তিনি মদিনার কোন এক বাগানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে একটা লাঠি ছিল। তিনি তা দিয়ে পানি ও কাদার মাঝে ঠোকা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যাক্তি এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তার জন্য খূলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সংবাদ দাও।  তখন আমি গিয়ে দেখলাম ষে,তিনি আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু।আমি তার জন্য দরজা খূলে দিলাম এবং জান্নাতের সংবাদ দিলাম।
তারপর আরেক ব্যাক্তি দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন।তিনি বললেন,খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।
তখন দেখলাম, তিনি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু। আমি তাকে দরজা খুলে দিলাম এবং জান্নাতের সুসংবাদ জানালাম ।
আবার আরেক ব্যাক্তি দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। তখন তিনি হেলান দিয়েছিলেন।
তিনি সোজা হয়ে বসে বললেনঃ খুলে দাও এবং তাকে (দুনিয়াতে) একটি কঠিন বিপদের সন্মুখিন হওয়ার মাধ্যমে জান্নাতবাসী হওয়া সুসংবাদ দাও।
আমি গিয়ে দেখি,তিনি উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু আমি তাকেও দরজা খুলে দিলাম এবং জান্নাতের শুভ সংবাদ দিলাম। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা ভবিষ্যৎ বানী, করেন, আমি তাও বর্ণনা করলাম।
তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা আমার সহায়ক ।(ইমাম ইসমাইল বুখারী (রঃ)উনার বিখ্যাত সহীহ বুখারীতে হাদিস শরীফটি উল্লেখ করেছেন/ইফাঃ৫৭৮৩/৫৬৭০)।
قَامَ فِيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا فَاَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ لْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ اَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِ لَهُمْ وَ اَهْلُ النَّارِ مَنَازِ لَهُمْ حَفِظَ ذلِكَ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ
-(رواه البخارى)-
═✼হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দাঁড়িয়া ছিলেন তিনি (স:) আমাদেরকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কে কে জান্নাতে যাবে, তাদের স্থানসমূহ বলে দিলেন। এবং কে কে জাহান্নামে যাবে তাদের স্থানসমূহ বলে দিলেন। তাদের মধ্যে যারা স্মরণ রাখার স্মরণ রেখেছে যারা ভুলার ভুল গেছে।(মিশকাত ৫০৬পৃষ্ঠা /সহীহ বুখারী)
سَمِعْتُ حَارِثَةَ بْنَ وَهْبٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ تَصَدَّقُوا فَسَيَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَمْشِي الرَّجُلُ بِصَدَقَتِهِ فَلاَ يَجِدُ مَنْ يَقْبَلُهَا
═✼হযরত হারিসা ইবনু ওয়াহব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা সাদাকা কর। কেননা, শীঘ্রই এমন এক সময় আসবে যে মানুষ সদাকাহ নিয়ে ঘোরাফেরা করবে কিন্তু সদাকাহ গ্রহণ করে।এমন কাউকে পাবে না। (সহীহ বুখারী ই:ফা৬৬৩৫)
(আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‘র এ ভবিষ্যৎবাণী ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু’র যামানায় পূর্ণ হতে দেখা গিয়েছিল।)
وعن انس رضى الله تعلى عنه: قال نعى النبى صلى الله عليه و سلم زيدا وجعفرا وابن روحة للناس قبل ان ياتيهم خبرهم فقال اخذ الراية زيد فاصيب ثم اخذ جعفر فاصيب ثم اخذ ابن رواحة فاصيب وعيناه تذر فان حتى اخذ الراية سيف من سيوف الله يعنى خالد بن الوليد عليه فتح الله عليهم -(رواه البخارى)
═✼হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,যায়েদ ইবনে হারেসা,জাফর ইবনে আবু তালিব ও আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার মৃত্যু সংবাদ যুদ্ধের ময়দান থেকে আসার পূর্বেই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন রণক্ষেত্রের বিবরণ। তিনি এভাবে দিয়েছেন, যায়েদ পতাকা হাতে নিয়েছে, সেও শহীদ হয়েছে। অতপর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা পতাকা ধরেছে, সেও শহীদ হয়েছে। (রাবি বলেন) এই সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর তরবারি সমূহের এক তরবারি (অর্থাৎ খালিদ ইবনে ওয়ালীদ) ঝান্ডা হাতে তুলে নিয়েছেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের উপর মুসলমানদেরকে বিজয় দান করেছেন। (মিশকাত পৃষ্ঠা ৫৩৩/সহীহ বুখারী)
وعن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه: ان رسول الله صلى الله عليه و سلم قال: ان رجلا يأتيكم من اليمن يقال له اويس لايدع باليمن غير ام له قد كان به بياض فدعا الله فاذهبه الاموضع الدنيا راو الدهم فمن لقيه منكم فليستغفر لكم و فى رواية قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم: يقول ان خير التابعين رجل يقال له اويس وله والدة وكان به بياض فمروه فليستغفرلكم- (رواه مسلم)
═✼হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়ামান দেশ থেকে এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। তাঁর নাম হবে “ওয়াইস”।একজন মাতা ছাড়া ইয়ামান দেশে তাঁর আর কোন নিকটতম আত্নীয়-স্বজন থাকবে না। তাঁর দেহে ছিল শ্বেত-ব্যাধি। এজন্য তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। ফলে এক দিরহাম অথবা এক দীনার পরিমান জায়গা ছাড়া আল্লাহ তায়ালা তাঁর সেই রোগটি দূর করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যে কেউ তাঁর সাক্ষাত পাবে, সে যেন নিজের মাগফিরাতের জন্য তাঁর কাছে দোয়া প্রার্থনা করবে। অপর এক বর্ণনায় আছে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তাবেয়ীদের মধ্যে সর্বোত্তম এক ব্যক্তি তাঁর নাম ওয়াইসা, তাঁর শুধু একজন মা রয়েছে, এবং তাঁর শরীরে শ্বেত দাগ থাকবে। সুতরাং তোমরা নিজেদের মাগফিরাতের দোয়ার জন্য তাঁর কাছে অনুরোধ করবে।(সহীহ মুসলিম/মিশকাত পৃষ্ঠা ৫৮১)
وعن جابر رضى الله عنه قال رايت النبى صلى الله عليه و سلم يرمى على راحلته يوم النحر و يقول لتاخذ وامنا سككم فانى لاادرى بعلى لا احج بعد حجتى هذه-(رواه المسلم)
═✼হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, আমি রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখেছি কোরবানী দিন তিনি আরোহণে থেকে কাকর মারছেন এবং বললেন তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের হজ্জ্বের আহকাম শিখে নাও। আমি জানি না সম্ভবত আমার এ হজ্জ্বের পর আর আমি হজ্জ্ব করতে পারব না। 
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম/মিশকাত পৃষ্ঠা ২৩০)।

◉═➲ পরিশেষে বিশ্ববিখ্যাত কসিদায়ে বুর্দার প্রণেতা ইমাম শরফুদ্দিন বু'চিরীর (র:) নবী প্রেমে সিক্ত কয়েকটি লাইন দিয়ে শেষ করবো,
فَاِنَّ مِنْ جُوْدِكَ الدُّنْيَا وَضَرَّتَهَا – وَمِنْ عُلُوْمِكَ عِلْمُ اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ
অর্থাৎ হে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আপনার বদান্যতায় দুনিয়া ও আখিরাতের অস্তিত্ব। লওহে মাহফুজ ও ‘কলমের’ জ্ঞান আপনার জ্ঞান ভাণ্ডারের কিয়দাংশ মাত্র।
وَسِعَ الْعَالَمِيْنَ عِلْمًا وَّ حِكْمًا-فَهُوَ بَحْرٌ لَّمْ تَعِيْهَا الْاَعْبَاءُ
অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান-বিজ্ঞান সমগ্র জগতকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। তিনি হচ্ছেন এমন এক সাগর যাকে অন্যান্য পরিবেষ্টনকারীরাও পরিবেষ্টন করতে পারেননি।
وَكُلُّهُمْ مِنْ رَّسُوْلِ اللهِ مُلْتَمِسٌ-
غَرْفًا مِّنَ الْبَحْرِ اَوْ رَشْفًا مِنَ الدِّيْمِ
অর্থাৎ সবাই হুযুর আলাইহিস সালামের নিকট থেকে জ্ঞান আহরণ করে থাকেন, যেমন কেউ সমুদ্র থেকে কলসি ভরে বা প্রবল বৃষ্টি ধারার ছিটে ফোঁটা থেকে পানি সংগ্রহ করে।

◉ইলমে গায়েবের দালিলিক চিন্তা না করে আকলিক চিন্তা করলেই যতেষ্ট। যেমন:কেও যদি প্রশ্ন করে- আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে কেও কি দেখছেন? উত্তর আসবে না দেখেনি।(মুসা (আ:) দেখতে চেয়েও পারেনি)
প্রশ্ন.সেই মহান গায়েবের (আল্লাহ রাব্বুল আলামিন) খবর কে দিয়েছেন?
উত্তর আসবে তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন।
এভাবে বেহেস্ত,দুযখ,ফেরেস্তা,কিয়ামত,ওহি,কুরআন(আল্লাহর বাণী) সবকিছুই গায়েব ছিলো।
যার প্রকাশ কেবল এই নবীই (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) করেছেন। আজ সেই মহান গায়েবের খবর দেওয়া নবীর কাছে ইলমে গায়েব আছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলছি তারই উম্মত হয়ে আমরা।
কী হতভাগ্য উম্মর আমরা! যাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেছেন সেই রাহমাতুল্লিল আলামিনের জ্ঞানকে সীমিত করতে চেস্টায় আছি।যা নেই অন্য কোনো নবীর উম্মত তথা ইহুদি ক্রিস্টানদের মাঝে। এবার আসুন যদি কোনো বিধর্মী আপনাকে প্রশ্ন করে তোমাদের নবী যা বলেছে সব মিথ্যে এর প্রমান কী আছে সত্যতার? তখন আপনি বলবেন কুরআনে আছে সত্যতার প্রমান। তখন সে যদি আপনার কুরআনকে অস্বীকার করে তখন কি করবেন? যা আজ থেকে ১৪০০বছর আগেও অস্বীকার করেছিলো।যারা তখন (১৪০০বছর আগে)এই গায়েবের খবর দেওয়া নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা বিশ্বাস করেছেন তারাই মুসলমান হয়ে হজরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হয়েছিলো আর যারা করেনি তারাই কাফের হয়ে আবু জেহেল হয়েছিলো।আমাদের সল্প জ্ঞানে নবীর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)ইলমকে পরিমাপ করা একজন মুসলমান হিসেবে আদৌ ঠিক নয়।
➲ হে আল্লাহ আমাদের সেই সব নবী প্রেমিকদের দলে পরিনত করো,যারা হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর মত নবী প্রেমে সিক্ত হয়ে তোমার হাবিবকে ভালোবাসতে পারে।
(বন্ধুরা আমরা কেও ভুলের ঊর্ধে নই,আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে।আমি চেষ্ঠাকরি সত্যটাকে উপলব্দি করতে আর তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

ঈমানের দাবি মসজিদুল আকসা রক্ষা করা

ঈমানের দাবি মসজিদুল আকসা রক্ষা করা
═════════════════════
✏ ইমরান বিন বদরী ≪ 
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
আবার কবে জন্মনিবে সেই বীরসিপাহী খালীদ বিন ওয়ালীদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর অনুসারী সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর মত বীর সেনাপতি ?যার হাত ধরে মুসলমানরা ফিরে পেয়েছিলো আজকের এই হারানো বাইতুল মুকাদ্দাস।
অলৌকিক ঘটনা,নির্মাণ,পুনর্নির্মাণ,যুদ্ধ,দখল,পাল্টা দখল,অগি্নসংযোগ এর মতো ঘটন-অঘটনের নীরব সাক্ষী হয়ে পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছে 'মসজিদ আল আকসা'।
(আরবিঃالمسجد الاقصى) 'আকসা' শব্দটি দিয়ে দূরবর্তী কিছুকে বুঝানো হয়। মসজিদটির অপর নাম 'বায়তুল মুকাদ্দাস।' মসজিদটি প্রকৃতপক্ষে আল কুদস্ নামক স্থানে অবস্থিত, যা বর্তমানে জেরুজালেম নামে অধিক পরিচিত।১৫০ কোটি মুসলমানের প্রথম কিবলা জেরুজালেমের মসজিদ আল আকসা এখন আগ্রাসী ইহুদিদের হাতে অবরুদ্ধ। মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস রক্ষা আজ মুসলমানের ঈমানের দাবি।ইহুদীদের বর্বরতায় আজ এই পবিত্র মসজিদে হামলা করা হচ্ছে।
মুসলিম ওয়াকফ এর পরিচালক আজাম আল-খতিব বলেন,প্রায় ৩০০ সৈন্য আল-আকসা মসজিদের ভেতর প্রবেশ করে তান্ডবলীলা চালায়।
মুসলমানদের প্রথম কেবলা এই মসজিদের ভিতর সেনাদের একটি অংশ সরাসরি তাদের বুট দিয়ে মিহরাব এবং মিম্বরকে পদদলিত করে।এখন কোন মুসলমানকে মসজিদ এরিয়াতেও প্রবেশ করতে দিচ্ছেনা।


❖ বন্ধুরা══
আল-আকসা মসজিদ রক্ষার দায়িত্ব কেবলমাত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অর্পিত নয় বরং গোটা মুসলিম জাতিরই এ বিষয়ে দায়িত্ব রয়েছে।শবে মি’রাজের ঐতিহাসিক রাতে হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লাম মক্কা থেকে প্রথমে আল আকসা মসজিদে আসেন। এরপর বিশেষ বাহনে চড়ে হজরত জিব্রাইল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশে ঊধর্্বমুখে উড্ডয়ন করেন।
সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত 0১ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:-
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
''পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল''।
══আল আকসা মসজিদের গুরুত্বের আরও একটি বড় কারণ হলো প্রথম থেকে হিজরত পরবর্তী ১৭ মাস পর্যন্ত মুসলমানরা আল আকসা মসজিদের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে মহান আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানদের কেবলা মক্কার দিকে পরিবর্তিত হয়।
মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লাম নয় শুধু অনেক নবী রাসুলের এই স্মৃতির মসজিদ এখন মহাঝুকিতে রয়েছে।বর্তমানে মসজিদ প্রাঙ্গণটি ১৫,৫০,০০০ স্কয়ার ফুট এলাকার ওপর অবস্থিত। শুধু মসজিদের আয়তন ৩,৮০,০০০ স্কয়ার ফুট। মসজিদটিতে ২টি বড় এবং ১০টি ছোট গম্বুজ রয়েছে। এ মসজিদ নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বর্ণ, সিসা বা লিড এবং মার্বেলসহ বিভিন্ন প্রকার পাথর ব্যবহৃত হয়। এই মসজিদ রক্ষায় বিশ্বের সমস্ত মুসলিম জাতি,সরকার ,সংগঠনের এগিয়ে আসা খুবই জরুরী। ইসলামী এস্টেটের নামে শান্তির ধর্ম ইসলামকে অপব্যবহার করে এক মুসলিম অপর এক মুসলিম ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করছে কিন্তু জিহাদে ফি সাবিলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের কথা ভুলে গিয়ে ক্ষমতার জিহাদে আজ মুসলিম বিশ্বমগ্ন। ইসলামের তৃতীয় পবিত্র এই মসজিদ রক্ষা করা আজ আমাদের ঈমানের দাবি প্রানের দাবি,একজন মুসলমান হিসেবে যে যার অবস্থান থেকে আসুন প্রতিবাদ জানাই।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসাধারণ বৈশিষ্ট্য

══◉রাসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর অসাধারণ বৈশিষ্ট্য◉══

ইমরান বিন বদরী ≪ 
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
সৃষ্টির আদিকাল থেকে যুগে যুগে একত্ববাদের প্রচারে সত্য ও রিসালতের বাণী নিয়ে প্রেরিত হয়েছে অগনিত নবী ও রাসুল। জগতের মহান রব, রাব্বুল আলামীনের প্রেরিত প্রতিনিধি বা খলীফা হয়ে বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য এসেছেন আমার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। একজন ঈমানদারের জন্য যেমনিভাবে আল্লাহর একত্ববাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয, তেমনিভাবে তাঁর প্রিয় রাসূল দোজাহানের সরদার বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীন,খাতামুন নাবিইয়ীন,হাবীবুল্লাহ নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমানের সহিত শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও আনুগত্য করা সমভাবে আবশ্যক।একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের ঈমানের মূলে থাকতে হবে হুব্বে রাসুল বা নবী প্রেম।কারণ নবী প্রেম না থাকলে মুমিন হওয়া যায়না।
◩ রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলেন, عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের অপেক্ষা অধিক প্রিয়পাত্র হই। (মুসলিম১/১৬হাঃ৪৪,আহমদ১২৮১৪)


✼ আমাদের অনেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অতি সাধারণভাবে বলেদেন যে তিনি আমাদের মতই। আয়াত قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় (সূরা কাহাফ-১১০)।
আসলেই কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মতই! হতে পারে সেটি শারীরিক ভাবে দেখতে।শুধু এতটুকু মিল রয়েছে যে,তিনিও সাধারণ মানুষের মতই পারিবারিক ও সামাজিক জীবন যাপন করেছেন।তারমানে এই নয় যে তিনি আমাদের মত সাধারণ।মূলত মানুষ গোনাহ করে কিন্তু আমাদের পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই গোনাহ করেননি। করারতো কোন প্রশ্নই উঠেনা,সৃষ্টির মাঝে সবচে’সেরা নবী তিনি ত্রুটিমুক্ত নিষ্পাপ ছিলেন।মানবিক কোন দুর্বলতাও ছিল না। মানুষের মাঝে যেসব দোষণীয় বিষয় আছে এমন কোন দোষের আঁচড়ও ছিল না আমাদের পেয়ারা নবীর মাঝে। অনেক পার্থক্য আছে আমাদের ও আমাদের পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে। মানবজাতীর কাছে রিসালাতের অমিও বাণী প্রচারে মানবীয় গুনাবলী থাকতেই হবে।আরবের কাফেররা যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিভিন্ন মুজেজা দেখলেন তখন অনেকি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভয় পেতে লাগলেন। কেও কেও মনে করে তিনি হয়তো জাদুকর। ফলে ইসলাম প্রচারের যে মহান দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রেরিত হন তার পরিপুর্ণতায় তাদেরকে অর্থাৎ তত্কালীন কাফেরদের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংস্পর্শে আসা চাই চাই।অন্যথায় তাদেরকে কিভাবে ইসলামের দাওয়াত দিবেন? তাই তিনি বলেছিলেন 'আমি তোমাদের মত,কিন্তু আমার কাছে ওহী আসে'। এই (يُوحَى) ওহী'ই যা সাধারণ আর অসাধারণ এর মাঝে অনেক বড় পার্থক্য করে দিয়েছেন। তাছাড়া আয়াতের প্রথমে আল্লাহপাক তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হুকুম দিয়ে বলেছেন রাসুল (قُلْ)'কুল' আপনি বলুন,না বললে যে তারা আপনার কাছে আসবেনা।তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'আমি তোমাদের মত' বলাতে সাধারণ মানুষ যারা ভয়পেত তারা অতি সহজে দয়াল নবীর দর্শনে এসে ইসলামের ছায়া তলে আশ্রয় নিতে লাগলো।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষ ছিলেন তবে আমাদের মত সাধারণ নয়। সৃষ্টির রহস্য কেবল স্রষ্টাই ভালো অবগত এসব নিয়ে তর্কের প্রয়োজন নেই। তবে এটুকু জেনে রাখুন সৃষ্টির মূল উৎস রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমস্ত জগতের প্রতিপালক আর আমার পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি প্রেরিত হয়েছেন সমস্ত জগতে রহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে।
◩ প্রিয়তম বন্ধুকে সৃষ্টি জগতের রহমত হিসেবে আল্লাহ তাআলা বলেন- وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
“হে মুহাম্মদ !আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।” (আম্বিয়া-১০৭)
◩ সৃষ্টি জগতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীবকে মর্যাদা প্রদান করে আরো বলেন- وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
অর্থাৎ:এবং আমি আপনার জন্য আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি। (সূরা আল ইনশিরাহ ৪)
◩ আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি জগতে সাক্ষী ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে আরো বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا
وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا
হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। (সূরা আহযাব-৪৫-৪৬)
➲ অত্র আয়াতে شَاهِدًا শব্দটি নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন যে, কেও যদি প্রশ্ন করে সাক্ষী কি না দেখে দেওয়া যায়? উত্তর একটাই আসবে না।মিথ্যা--- সাক্ষী হতে পারেনা।এখন আসুন আল্লাহ তায়ালা বলেন হে নবী আমি আপনাকে সাক্ষী হিসেবে প্রেরণ করেছি।প্রশ্ন জাগে কীসের সাক্ষী ? শুধু কি ১৪০০ বছর আগের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই ৬৩ বছর হায়াতের সাক্ষী নাকি সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমস্ত কিছুর সাক্ষী।নিশ্চয় সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমস্ত কিছুর সাক্ষী। তাছাড়া أَرْسَلْنَاكَ আপনাকে প্রেরণ করেছি মানে দুনিয়া ও আখিরাতের সবকিছু দেখিয়ে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির গুপন রহস্য অবলোকনকারী কেবল আপনি।
◩ সূরা আন্‌ আম ১৬২-১৬৩ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلْ اِنَّ صَلٰوتِیْ وَنُسُکِیْ وَمَحْیَاءِیْ وَمَمَاتِیْ لِلّٰہِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ لَاشَرِیْکَ لَہٗ وَبِذَالِکَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ
অর্থাৎ হে নবী! আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামায, হজ্ব, কোরবানী, আমার জীবন ও ওফাত বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই; যার কোন শরীক নেই এবং এ বিষয়ে আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলমান (আল্লাহর দরবারে আত্মনিবেদনকারী)।
➲ অত্র আয়াতে اَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِیْنَ দ্বারা স্পষ্ট যে আল্লাহর নবী সল্লালাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম সৃষ্টির প্রথমে সৃষ্টি।আল্লাহপাকের ওয়াহদানীয়তের অর্থাৎ একত্ববাদের দলিল হচ্ছেন আমার নবী সল্লালাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম।আদম আলাইহে ওয়াছাল্লাম থেকে সমস্ত নবীদের সৃষ্টির পূর্বেই আমার নবীর সৃষ্টি। যদি তা নাই হয় তবে 'আমিই প্রথম মুসলমান' বলার কারণ কী।কাজেই সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বপ্রথম আত্মসমর্পণকারী হলেন হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।এ রহস্য কেবল স্রষ্টাই ভালো অবগত এসব নিয়ে তর্কের প্রয়োজন নেই।আসলে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুণাবলীর বর্ণনা,বৈশিষ্ট্য এবং প্রশংসা কারো কলমই সুবিচার করতে পারবেন না।একমাত্র আল্লাহর দ্বারাই শেষ হতে পারে,মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়।
✼এবার আসুন,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য যা আমাদের মত সাধারণ নয়।
◉═হজরত আবদূল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে এ হাদীস শোনান হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“বসে কারো সালাত অর্ধেক সালাত।” আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তখন তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে বসে সালাত আদায় করতে পেলাম। তখন তার মাথায় হাত রাখলাম।
তিনি বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু আমর ! কি ব্যাপার?
আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে হাদীস শোনানো হয়েছে যে, আপনি বলেছেন যে, উপবিষ্ট অবস্হায় কারও সালাত আদায় করা সালাতের অর্ধেকের সমান।অথচ আপনি বসে সালাত আদায় করছেন? তিনি বললেন, হাঁ (আমি তাই বলেছি)
কিন্তু #আমি_তো_তোমাদের_কারো_মত_ন। (সহীহ মুসলিম)
◉═হযরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটানা সাওম (রোজা)পালন করতে থাকলে লোকেরাও একটানা সাওম পালন করতে শুরু করে। এ কাজ তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাড়াল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিষেধ করলেন।
তাঁরা বলল,--আপনি যে এক নাগাড়ে সাওম পালন করেছেন?
তিনি বললেনঃ- #আমি_তো_তোমাদের_মত_নই
আমাকে খাওয়ানও হয় ও পান করানো হয়। (সহীহ বুখারী)
◉═রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘ্রাণ মুবারক তাও আমাদের মত সাধারণ নয়।
হজরত মুহাম্মদ (রহঃ) বর্ণিত ,তিনি বলেন,আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নফল সাওম (রোজা) র ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন,যে কোন মাসে আমি তাঁকে সাওম পালনরত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি,তাঁকে সে অবস্থায় দেখেছি,আবার তাঁকে সাওম পালন না করা অবস্থায় দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি। রাতে যদি তাঁকে সালাত (নামায) আদায়রত অবস্থায় দেখতে চেয়েছি,তা প্রত্যক্ষ করেছি।আবার ঘুমন্ত দেখতে চাইলে তাও দেখতে পেয়েছি।আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাত মুবারক হতে নরম কোন পশমী বা রেশমী কাপড় স্পর্শ করি নাই।আর আমি তাঁর (শরীরের) ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধযুক্ত কোন মিশক বা আম্বর পাইনি। (সহীহ বুখারী)
◉═সুবহানাল্লাহ ওয়াবিহামদী !!═◉
✼ পবিত্র কুরআনের আয়াত এবং অগনিত সহিহ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত মিরাজ শরিফ যদি সত্যি হয় তাইলে নবী কে আমাদের মত বলাটা বোকামি ছাড়া আর কী হতে পারে!। জিব্রাইল (আ:) দ্বারা জমজমের পানি দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্ষ পরিস্কার করাটাও কখনো সাধারণ হতে পারেনা।এই অসাধারণ বক্ষ পরিস্কার অনেকবার করা হয়েছে যা মানবীয় দৃষ্টিতে আদৌ সম্ভব নয়।
➲ হে আল্লাহ আমাদের সেই সব নবী প্রেমিকদের দলে পরিনত করো,যারা হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর মত নবী প্রেমে সিক্ত হয়ে তোমার হাবিবকে ভালোবাসতে পারে।এবং তোমার আর তোমার হাবিবের হুকুমমেনে এই ক্ষনস্থায়ী জীবনকে পরিচালনা করতে পারি।রাব্বুল আলামীন তুমি আমাদের সেই তওফিক দান কর।
(বন্ধুরা আমরা কেও ভুলের ঊর্ধে নই,আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে।আমি চেষ্ঠাকরি সত্যটাকে উপলব্দি করতে আর তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

রওজা পাক জিয়ারত

রওজা পাক জিয়ারত
════════════➲ 
ইমরান বিন বদরী
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তালা এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ﷺ উপর দরূদ পড়তেছেন । অতএব হে ঈমানদারগণ ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ কর ।(সূরা আল আহযাব ৫৬)
সমস্ত প্রশংসা পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
কার না মন চায় বন্ধুরা- হৃদয় উজাড় করে হৃদয়ের মণিকোঠায় লুকিয়ে থাকা ভালবাসা দিয়ে মানবতার মুক্তির দিশারী সায়্যাদুল মুরসালীন হাবিবুল্লাহ কমলীওয়ালা নবীﷺকে সালাম জানাতে এবং নবীর ﷺ প্রতি দরূদ পাঠ করতে !!


প্রিয় বন্ধুরা══➲ কতইনা সৌভাগ্যবান ঐ সব ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবের রওজায় নিয়ে যান এবং দুরূদ ও সালাম পেশ করার তৌফিক দান করেন। দুনিয়ার বুকে এমন কে আছে যার জন্য হাশরের মাঠের মহা সংকটের দিনে আমাদের প্রিয় নবী ﷺ এর সুপারিশ প্রয়োজন হবে না ? আর কত বড় সৌভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি, যার জন্য নবীজী ﷺ শাফায়াতের জিন্মাদারী নিবেন। আলোক প্রত্যাশী প্রতিটি মুমিন মুসলমানদের অন্তর আজন্ম উন্মুখ হয়ে থাকে নবী পাক ﷺ এর রওজা মোবারক জিয়ারত ও পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারা দর্শনের জন্য। যা দর্শনে প্রশান্তিতে ভরে ওঠে মুমিনদের হৃদয়।
➲ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-- وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
“যদি কখনও তারা নিজেদের আত্নার প্রতি জুলুম করে রসূল আপনার দরবারে হাজির হয়। অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর রাসুল ﷺ তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও মেহেরবানরূপে পাবে।” (সূরা আন নিসা,৬৪)
এখানে (আয়াতে) রাসুল ﷺ এর জীবদ্দশার কথা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই। আর এখানে وَلَوْ শব্দের অর্থ: যদি কখনও, আর جآءُوْكَ শব্দের অর্থ: যদি হাজির হত অর্থাৎ আপনার (দরবারে)কাছে আসত”।
➲ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلى اللّهِ وَكَانَ اللّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
এবং যে ব্যক্তি আপন ঘর থেকে আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি হিজরতকারী হয়ে বের হয়েছে অতপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসেছে। তাঁর পুরস্কার আল্লাহর দায়িত্বে এসে গেছে।আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সুরা নিসা :আয়াত ১০০)
➮বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের ঈমানী চেতনার প্রতীক।যার সাথে পৃথিবীর দেড়শ’ কোটি মুসলমানের গভীর ধর্মীয় আবেগ জড়িত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারত করার মধ্য দিয়ে দ্বীনে ইসলামের প্রতি মুসলমানদের ভালোবাসাই প্রকাশ পায়।
➲ পবিত্র কুরআনে অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَابْتَغُواْ إِلَيهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُواْ فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর,তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্নেষণ কর এবং তাঁর পথে সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফল কাম হতে পারবে? (সূরা মায়িদা আয়াত-৩৫)।
উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য উপায় বা অসিলা (الْوَسِيلَةَ) প্রয়োজন। আর আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য সর্ব প্রধান মাধ্যমই হচ্ছে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এর চেয়ে উত্তম উপায় আর নেই।
➲ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি 
ওয়া সাল্লাম 
ইরশাদ করেছেন : مَنْ زَارَ قَبْرىْ وَجَبَتْ لَه شَفَاعَتىْ
“যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) ওয়াজিব হয়ে গেল”।(বায়হাকী ৪১৫৯,জামে ছগীর ১৭১)
➲ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু বর্ণিত অন্য একটি হাদীসে আছে নবী ﷺ বলেছেন যে ব্যক্তি আমার ওফাতের পর হজ করবে অতঃপর আমার কবর জিয়ারত করবে, সে যেন জীবিতাবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল। (মেশকাত)।
➲ হযরত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত।
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন- তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়।

(মুসলিম ৯৭৬নাসায়ী২০৩৪আবূ দাউদ৩২৩৪)
➲ রাসূলুল্লাহﷺ আহলে বাকি’র কবর (জান্নাতুল বাকি)জিয়ারতকালে বলতেন।

السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُوْنَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيْعِ الغَرْقَدِ.
‘আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, মুমিন সম্প্রদায়ের আবাস স্থল। আমরা আপনাদের সাথে যুক্ত হব ইনশাআল্লাহ। হে আল্লাহ আপনি আহলে বাকিদেরকে মাফ করে দিন।’
➲ উম্মুল মু’মিনীন হজরত আয়িশাহ্ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহা থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ কবর জিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
➲ ইবনে নোমান রাদ্বি আল্লাহু তালা আনহু হতে বর্ণিত , নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যাক্তি প্রত্যেক জুমুয়ার দিন নিজ পিতা-মাতা অথবা তাদের মধ্যে একজনের কবর যিয়ারত করবে তাকে মাফ করে দেয়া হবে |(মিশকাত ১৬৭৬)
➲ হযরত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তাঁর মায়ের কবর জিয়ারত করেন। তিনি কান্নাকাটি করেন এবং তাঁর সাথের লোকেদেরও কাঁদান। অতঃপর তিনি বলেন : আমি আমার রবের নিকট তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। আমি আমার রবের নিকট তার কবর জিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেন। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের মৃত্যু স্মরণ করিয়ে দেয়। (মুসলিম ৯৭৬,ইবনে মাজাহ)
মা আমিনার কবর যে মদীনা শরীফ হতে অনেক দূরে তাতে কোন সন্দেহ নাই। দীর্ঘপথ তিনি একমাত্র তাঁর আম্মার কবর জিয়ারত করার নিয়তে গমন করেছিলেন অন্য কোন কারণে নয়।
➲ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু সফর থেকে ফিরে এলে রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাথি-দ্বয়ের কবরে এসে সালাম পেশ করতেন। 

الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ
➮ অতএব এরকম মহান রওজা পাকের জিয়ারতের মাধ্যমে ইহা উভয় জগতে কামিয়াবী অর্জন করার একটি সুবর্ণ সুযোগ। তাছাড়া মসজিদে নববীতে রয়েছে একটি জান্নাতের অংশ যেখানে নামাজ আদায়ে পূণ্য অর্জন করা সওয়াব প্রত্যাশা কর্তব্য
➲ রাসুল ﷺ বলেছেন :- আমার ঘর মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি জান্নাতের একটি টুকরা (রিয়াজুল জান্নাহ) এবং আমার মিম্বরটি আমার হাউজের উপর স্থাপিত”। (সহীহ বুখারী-১১৩৮)
আর যারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারত করার সফর জায়েজ নেই বলে তারা নিজেদের মতের পক্ষে নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলির পেশ করে থাকে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( لا تشد الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد المسجد الحرام ومسجد الرسول صلى الله عليه و سلم ومسجد الأقصى

➲ হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন- তিন মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসা ব্যতীত সফর করা যাবে না”। (মুত্তাফাক আলাইহি)
উক্ত হাদীসটির ক্ষেত্রে- সওয়াবের উদ্দেশ্যে, নামায আদায়,ও অতিরিক্ত কোন ফায়দার উদ্দেশ্যে এ তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে সফর করা যাবে না, কেননা এ তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করার মাঝে অতিরিক্ত কোন ফায়দা ও সওয়াব নেই। কিন্তু এ তিন মসজিদে সওয়াব বেশি হওয়ায় এ মসজিদের উদ্দেশ্যে সফরের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারতের সফর করা যাবে না। উদ্দেশ্য অনুযায়ী সফরের বিভিন্ন হুকুম হতে পারে। হারাম কাজের জন্য সফর করা হারাম। জায়েজ কাজের জন্য জায়েজ। ফরজ কাজের জন্য ফরজ- যেমন, ফরজ হজের জন্য সফর করা ফরজ।
➮ ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন॥
এ হুকুমের উদ্দেশ্য হলো শুধু মসজিদের সাথে সস্পৃক্ত। এ মসজিদত্রয় ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে নামাজের জন্য সফর করা নিষিদ্ধ। তবে যদি মসজিদ ব্যতীত জিয়ারত, জীবিত-গণের সাথে সাক্ষাৎ, ইলম অর্জন, ব্যবসায় ও ভ্রমনের জন্য সফর করে তা এ হাদীসের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না।(ফতহুল বারী ৩য় খন্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)
ঐ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য সব মসজিদে শুধু নামাজ পড়ার জন্য নিষেধ করার কারণ হলো বাকী মসজিদগুলো সওয়াবের দিক দিয়ে সমান।
বন্ধুরা══➲ প্রতিটি মোমিনের প্রাণের মানুষটি যে শুয়ে আছেন সোনার মদিনায়।
➲ সূরা আহযাবে:৬ আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ
''নবী মুমিনদের নিকট তাদের প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়তম।''
এ থেকেই অনুমান করা যায়, নবীজি প্রতিটি মুমিনের কত কাছের, শ্রদ্ধার ও প্রাণের আপনজন।
➲ হাদিস শরিফে বর্ণিত, قَالَ النَّبِيُّ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ আমি (রাসূল) তাঁর কাছে তার পিতামাতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে অধিক ভালোবাসার পাত্র না হব। (মুত্তাফাক আলাইহি,আহমাদ ১২৮১৪)
বস্তুত, সেই পরম ভালোবাসার পাত্র আল্লাহর প্রিয়তম রাসূল যে শহরে শায়িত, তাঁর মর্যাদার আসন মুমিনদের হৃদয়-সিংহাসনে কত উচ্চে তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।
পরিশেষে, মদীনা আল মুনাওয়রায় বারবার গিয়ে মসজিদে নববী এবং রওজায়ে আতহার জিয়ারত করার তৌফিক আল্লাহ রব্বুল আলামিন এর দরবারে প্রার্থনা করি। আমিন! (সবাইকে অনুরোধ করছি লেখাতে ভুল হলে আমাকে জানাবেন প্লীজ)