মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

জুম’আর দিন

জুম’আর দিন
 ✍ ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
‘জুম’আ’ الجُمُعَةِ অর্থ সমাবেশ,মুসুল্লীদের জমায়েত হওয়ার কারণে এ দিনের নাম জুম’আর দিন অর্থাৎ জমা হওয়ার দিন।যখন যোহর শুরু হয় জুম’আও তখনই শুরু হয়।অর্থাৎ ঠিক দুপুরে সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে কিছুটা ঢলে পড়লে জুম’আর সময় শুরু হয় (সহীহ বুখারী)।
═❖ পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক বলেছেন -
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا إِذا نودِىَ لِلصَّلوٰةِ مِن يَومِ الجُمُعَةِ فَاسعَوا إِلىٰ ذِكرِ اللَّهِ وَذَرُوا البَيعَ ۚ ذٰلِكُم خَيرٌ لَكُم إِن كُنتُم تَعلَمونَ
“হে মু’মিনগণ! জুম’আর দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হবে তখন তোমরা আল্লাহর স্মরনে ধাবিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর।”
(সূরা জুম’আঃ ৯)

═❖ হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে,তারপর তার নির্ধারিত সালাত (নামাজ) আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে,তা হলে তার সে জুম্মা থেকে আরেক জুম্মা পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহীহ বুখারী)।

═❖ হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের জন্য জুম্মার দিন গোসল করা কর্তব্য। (সহীহ বুখারী)।

═❖ হযরত আবায়া ইবনুূু রিফা’আ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জুম্মার সালাত যাওয়ার সময় আবূ আবস রাদিয়াল্লাহু আনহু -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন,আমি রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে,যার দু’পা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়,আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (সহীহ বুখারী)।

═❖প্রথম ‘জুম’আ’❖═
হযরত ইবনুূু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন-সর্বপ্রথম জুম্মার সালাত অনুষ্ঠিত হয় বাহরাইনে জুওয়াসা নামক স্থানে অবস্থিত আবূল কায়স গোত্রের মসজিদে। (সহীহ বুখারী)।
(উল্লেখ্য যে,এই বাহরাইন বর্তমান রাষ্ট্র বাহরাইন নয় মদীনার একটি গ্রামের নাম)



═❖জুম’আ ও যোহরের মধ্যে পার্থক্য❖═
(১) যোহর সকল বিবেক সম্পন্ন মুমিন নর-নারীর উপর ফরজ, আর জুম’আ সকলের উপর ফরজ নয়;
(২) যোহর হল মূল সালাত, আর জুম’আ হল যোহরের পরিবর্তে;
(৩) জুম’আর কিরা’আত প্রকাশ্যে আর যোহরের কিরা’আত চুপে চুপে;
(৪) জুম’আর ফরজ দুই রাকা’আত, আর যোহরের ফরজ চার রাকা’আত;
(৫) জুম’আয় খুৎবা আছে কিন্তু যোহরে কোন খুৎবা নেই।

═❖জুম‘আর কতিপয় জ্ঞাতব্য বিষয়❖═
❖বাধ্যগত কারণে জুম‘আ পড়তে অপারগ হ’লে যোহর পড়বে।
❖জুম‘আর ছালাত ইমামের সাথে এক রাক‘আত পেলে বাকী আরেক রাক‘আত যোগ করে পূরা পড়ে নিবে। (মিশকাত হা/১৪১)
❖কিন্তু রুকূ না পেলে এবং শেষ বৈঠকে যোগ দিলে চার রাক‘আত পড়বে’।(বায়হাক্বী )
অর্থাৎ জুম‘আর নিয়তে ছালাতে যোগদান করবে এবং যোহর হিসাবে শেষ করবে।এর মাধ্যমে সে জামা‘আতে যোগদানের পূরা নেকী পাবে’। (বায়হাক্বী)
❖রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,যে ব্যক্তি নিয়মিত দূরে বসবে,সে ব্যক্তি জান্নাতে গেলেও দেরীতে প্রবেশ করবে।(আবুদাঊদ১১০৮ মিশকাত হা/১৪১৪)
❖পিছনে এসে সামনের মুছল্লীদের ডিঙিয়ে যাওয়া উচিত নয়। বরং সেখানেই বসে পড়বে।
(আবুদাঊদ হা/১১১৮)
❖জুম‘আ সহ কোন বৈঠকেই কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসতে আল্লাহর রাসূল ﷺ নিষেধ করেছেন। (মিশকাত হা/১৩৯৫)
❖তবে সকলকে বলবে, إِفْسَحُوْا ‘আপনারা জায়গা ছেড়ে দিন’।(মুসলিম)
═❖ হুঁশ-জ্ঞান সম্পন্ন ও স্বাধীন প্রত্যেক বালেগ মুসলমানদের উপর জুম’আ ফরজ।

═❖মুমিনের খুশির দিন জুমার দিন❖═
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘জুমার দিন হলো সর্বোত্তম দিন,যাতে সূর্য উদিত হয়।এ দিনে আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনে তাকে বেহেশতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনে তাকে বেহেশত থেকে বের করা হয়েছে। আর জুমার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (সহীহ মুসলিম)
↪আসুন আমরা যেন ইচ্ছাকৃত ভাবে জুমা ত্যাগ না করি।এবং এ দিনটির যথাযথ মর্যাদা দিই। আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন