বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

সূরা ফাতিহার ফজিলত

══ ✏ইমরান বিন বদরী
সূরা ফাতিহা (سورة الفاتحة )পবিত্র কালামে পাকের সর্বপ্রথম এবং মর্যাদাবান সূরা।এটি হিজরতের পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিলো।এটি সর্ব প্রথম পূর্ণাঙ্গ সুরা।সূরাটির ফজিলত অপরিসীম।অনেক গুরুত্বপূর্ণ এ সূরাটিতে ৭টি আয়াত রয়েছে।সূরা ফাতিহার সর্বাধিক পরিচিত নাম সূরাতুল ফাতিহা।ফাতিহা' শব্দটি ফাতহুন থেকে যার অর্থ উন্মুক্তকরণ।এ ছাড়াও সূরাটির বৈশিষ্ট্যে ভাবধারা ও বিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ রেখে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে।যেমনঃ উমমূল কিতাব/উম্মুল কুরআন,আস সাবউল মাসানী, আস শিফা,আল হামদ,আল কাফিয়া,আদ্ দুয়া,সূরাতুস সালাত বা নামাযের সূরা ইত্যাদি।

📖 নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,সুরা ফাতিহা না পড়লে কোন ব্যক্তির নামায পূর্ণাঙ্গ হবে না।(বুখারী ও মুসলিম) এ সূরাটিকে পবিত্র কুরআনে কারীমের মূল হিসেবে গন্যকরা যায় কারণ এর তরজুমায় স্পষ্ট যে মহান আল্লাহপাকের প্রসংশার সাথে তার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে পরকালের বিচারকে মেনে নিয়ে ফরিয়াদ করা সেই সরল সঠিক পথের অর্থাৎ সিরাতুল মুস্তাকিমের জন্য যে পথে গিয়েছেন নাজাত প্রাপ্তরা এবং সকল প্রকার গোমরাহী থেকে মুক্ত রাখার প্রার্থনা।এটাইতো একজন ঈমানদারের চাওয়া।মূলত এটি একটি প্রার্থনা বিশেষ সূরা, এতে উলুহিয়াত (আল্লাহর ইলাহ হওয়া) রবুবিয়াত (আল্লাহর রব হওয়া) এর আলোচনা করা হয়েছে।সৃরাটির একের পর এক গুরুত্ব লিখতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন।আসলে এ সূরাটি হচ্ছে একটি দোয়া।যে কোন ব্যক্তি এ পবিত্র কালামে পাক পড়তে শুরু করলে আল্লাহ প্রথমে তাকে যেন এ দোয়াটি শিখিয়ে দেন।
📖 হজরত সাঈদ ইবনু মুআল্লা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন,তখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাক দিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন না।অতপর ছালাত শেষে এসে বললাম,হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ছালাত আদায় করছিলাম।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,আল্লাহ কি বলেননি,হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও,যখন তোমাদেরকে ডাকা হয়?’(সূরা আনফাল : আয়াত ২৪)।অতঃপর আমাকে বললেন, মসজিদ থেকে তোমার বের হওয়ার পূর্বেই আমি তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সবচেয়ে মহান সূরাটি শিক্ষা দিব।অতপর তিনি আমার হাত ধরলেন।যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হতে চাইলেন, তখন আমি উনাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম,আপনি কি আমাকে বলেননি যে,তোমাকে আমি কুরআনের সবচেয়ে মহান সূরাটি শিক্ষা দিব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,সূরাটি হচ্ছে الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ এটিই সাবউল মাছানী এবং কুরআনুল আজিম যা আমাকে দেয়া হয়েছে’।(আবু দাউদ,মুসনাদে আহমদ)
📖 ইমাম তিরমিযী (রহ:) হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবীয়ে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন,সূরা ফাতিহা প্রত্যেক রোগের ঔষধ বিশেষ। মূলত সূরা ফাতিহা হল এমন এক মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যা শুধু উম্মতে মুহাম্মদীকে দান করা হয়েছে।
📖 হযরত আবূ সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একদল সাহাবী কোন এক সফরে যাত্রা করেন।তারা এক আরব গোত্রে পৌঁছে তাদের মেহমান হতে চাইলেন।কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল।সে গোত্রের সরদার বিচ্ছু দ্বারা দংশিত হল। লোকেরা তার (আরোগ্যর) জন্য সব ধরনের চেষ্টা করল।কিন্তু কিছুতেই কোন উপকার হল না। তখন তাদের কেউ বলল,এ কাফেলা যারা এখানে অবতরন করেছে তাদের কাছে তোমরা গেলে ভাল হত।সম্ভবত,তাদের কারো কাছে কিছু থাকতে পারে।ওরা তাদের নিকট গেল এবং বলল,হে যাত্রীদল।আমাদের সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছে, আমরা সব রকমের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুতেই উপকার হচ্ছে না।তোমাদের কারো কাছে কিছু আছে কি? তাদের (সাহাবীদের) একজন বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম আমি ঝাড়-ফুঁক করতে পারি।আমরা তোমাদের মেহমানদারী কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাদের জন্য মেহমানদারী করনি।কাজেই আমি তোমাদের ঝাড়-ফুঁক করবো না, যে পর্যন্ত না তোমরা আমাদের জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ কর। তখন তারা এক পাল বকরীর শর্তে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হল। তারপর তিনি গিয়ে আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (সূরা ফাতিহা) পড়ে তার উপর ফুঁ দিতে লাগলেন। ফলে সে (এমন ভাবে নিরাময় হল) যেন বন্ধন থেকে মুক্ত হল এবং সে এমনভাবে চলতে ফিরতে লাগল যেন তার কোন কষ্টই ছিল না।(বর্ণনাকারী বলেন)তারপর তারা তাদের স্বীকৃত পারিশ্রমিক পুরোপুরি দিয়ে দিল।সাহাবীদের কেউ কেউ বলেন, এগুলো বণ্টন কর। কিন্তু যিনি ঝাড়- ফুঁক করেছিলেন, তিনি বললেন এটা করবো না, যে পর্যন্ত না আমরা নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নিকট গিয়ে তাঁকে এই ঘটনা জানাই এবং লক্ষ্য করি তিনি আমাদের কি হুকুম দেন। তারা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে এসে ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি (নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )বলেন, তুমি কিভাবে জানলে যে, সূরা ফাতিহা একটি দূয়া? তারপর বলেন, তোমরা ঠিকই করেছ। বণ্টন কর এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটা অংশ রাখ। এ বলে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন। (সহীহ বুখারী)
🔊 আল্লাহ যেন আমাদেরকে সর্বাধিক পরিচিত মর্যাদাপূর্ণ সূরা ফাতিহা আমল করে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তওফীক দান করুন।আমিন,ছুম্মা আমিন।

মেঘহীন আকাশে হঠাৎ বৃষ্টি !

✏ইমরান বিন বদরী।
তখন মদিনায় বৃষ্টি হচ্ছিলনা বলে চারিদিকে শুরু হয় প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ।সেদিন ছিল জুমার দিন।আমার দয়াল নবী মানব মুক্তির দিশারী মসজিদে নববীতে খোতবা দেয়ার প্রাক্কালের এই ঘটনা।যথারীতি নবী প্রেমে সিক্ত হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত আরেকটি মুজেজা এ রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম।সেদিন আরেকবার প্রমাণীত হয়েছিল রহমাতুল্লিল আলামীনের দোয়া করার সাথে সাথে মহান আল্লাহর দরবারে তা কবুল আর মন্জুর হয়ে যায়।সুবহান'আল্লাহ!

📖 আসুন মূল হাদিস শরীফটি পড়ি।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ أَصَابَتِ النَّاسَ سَنَةٌ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَبَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ فِي يَوْمِ جُمُعَةٍ قَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكَ الْمَالُ وَجَاعَ الْعِيَالُ، فَادْعُ اللَّهَ لَنَا. فَرَفَعَ يَدَيْهِ، وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ قَزَعَةً، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا وَضَعَهَا حَتَّى ثَارَ السَّحَابُ أَمْثَالَ الْجِبَالِ، ثُمَّ لَمْ يَنْزِلْ عَنْ مِنْبَرِهِ حَتَّى رَأَيْتُ الْمَطَرَ يَتَحَادَرُ عَلَى لِحْيَتِهِ صلى الله عليه وسلم فَمُطِرْنَا يَوْمَنَا ذَلِكَ، وَمِنَ الْغَدِ، وَبَعْدَ الْغَدِ وَالَّذِي يَلِيهِ، حَتَّى الْجُمُعَةِ الأُخْرَى، وَقَامَ ذَلِكَ الأَعْرَابِيُّ ـ أَوْ قَالَ غَيْرُهُ ـ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، تَهَدَّمَ الْبِنَاءُ وَغَرِقَ الْمَالُ، فَادْعُ اللَّهَ لَنَا. فَرَفَعَ يَدَيْهِ، فَقَالَ " اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا، وَلاَ عَلَيْنَا ". فَمَا يُشِيرُ بِيَدِهِ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ السَّحَابِ إِلاَّ انْفَرَجَتْ، وَصَارَتِ الْمَدِينَةُ مِثْلَ الْجَوْبَةِ، وَسَالَ الْوَادِي قَنَاةُ شَهْرًا، وَلَمْ يَجِئْ أَحَدٌ مِنْ نَاحِيَةٍ إِلاَّ حَدَّثَ بِالْجَوْدِ.
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় এক জুমু'আর দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন এক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (বৃষ্টির অভাবে) সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।পরিবার পরিজনও অনাহারে রয়েছে। তাই আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দু’আ করুন। তিনি দু’হাত তুললেন। সে সময় আমরা আকাশে এক খন্ড মেঘও দেখিনি।যার হাতে আমার প্রাণ,তাঁর শপথ (করে বলছি)! (দু’আ শেষে) তিনি দু’হাত (এখনও) নামান নি, এমন সময় পাহাড়ের ন্যায় মেঘের বিরাট বিরাট খন্ড উঠে আসল। তারপর তিনি মিম্বর থেকে অবতরণ করেন নাই, এমন সময় দেখতে পেলাম তাঁর পবিত্র দাঁড়ির উপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। সে দিন আমাদের এখানে বৃষ্টি হল।এর পরে ক্রমাগত দু’দিন এবং পরবর্তী জুমু'আ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন।
(পরবর্তী জুমু'আর দিন) সে বেদুইন অথবা অন্য কেউ উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (বৃষ্টির কারণে) এখন আমাদের বাড়ী ঘর ধ্বসে পড়ছে,সম্পদ ডুবে যাচ্ছে।তাই আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করুন।তখন তিনি দু’হাত তুললেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বৃষ্টি দাও),আমাদের উপর নয়।(দু’আর সময়) তিনি মেঘের এক একটি খন্ডের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন, আর সেখান-কার মেঘ কেটে যাচ্ছিল।এর ফলে চতুর্দিকে মেঘ পরিবেষ্টিত অবস্থায় ঢালের ন্যায় মদিনার আকশ মেঘমুক্ত হয়ে গেল এবং কানাত উপত্যকার পানি এক মাস ধরে প্রবাহিত হতে লাগল,তখন (মদিনার) চতুরপার্শের যে কোন অঞ্চল হতে যে কেউ এসেছে,সে এ মুষলধারে বৃষ্টির কথা আলোচনা করেছে।(সহীহ বুখারী/ইফাঃ)


🔊 শুধু তাইনয় হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু অন্য এক রেওয়ায়েতে বলেন, أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا. قَالَ فَيُسْقَوْنَ. উমর ইবনু খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অনাবৃষ্টির সময় আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব এর উসিলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দু’আ করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ! (প্রথমে) আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উসিলা দিয়ে দোয়া করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন।এখন আমরা আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচার উসিলা দিয়ে দু’আ করছি, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন।বর্ণনাকারী বলেন,দু’আর সাথে সাথেই বৃষ্টি বর্ষিত হতো।(সহীহ বুখারী)
✔এতে স্পষ্ট যে উছিলা বা মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করা যায় এবং তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী,বিশেষ করে আমার নবী সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর উছিলায়। যে নবীর নামে দরুদ পড়লে দোয়া কবুল হয় বেশী।আল্লাহপাক আমাদের রহমাতুল্লীল আলামীনের শান মান বুঝার তাওফিক দান করুক।আমীন।

দোয়া

📖 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম--➲
দোয়া শব্দটির আক্ষরিক অর্থ 'ডাকা' যা একটি পদ্ধতি-সিদ্ধ মিনতি প্রক্রিয়া।আল্লাহপাক তার কুরআনে করীমের সূরা আল-মু’মিনে বলেছেন, ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ তোমরা আমাকে ডাক,আমি সাড়া দেব।(আয়াত ৬০)।পবিত্র কুরআনে করীমে উল্লেখিত ফজিলতপূর্ণ কিছু দোয়া (دُعَاء) একত্রে করলাম।আমি মনেকরি একজন মুসলমান হিসেবে মহান আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভের জন্য দোয়াগুলি নিয়মিত পাঠকরা প্রয়োজন।বর্তমানে মুনাজাতে দোয়া করা'ত দুরে থাক, মুনাজাত'কে ফতোয়ার কালো থাবা থেকেও রেহাই দিচ্ছেনা।আর সাম্প্রতিক কিছু মুনাজাতকারীকে দেখা যায় আরবীতে রচনা করা বিভিন্ন মুনাজাত করতে,হ্যাঁ বর্তমান সময়ানুযায়ী প্রেক্ষাপটে মুনাজাত করলেও কুরআনে করীমে শিখিয়ে দেয়া মুনাজাতের কিন্তু বিকল্প নেই।সুতরাং আমাদের বিশেষ করে যারা সম্মানীত ইমামগন আছেন আপনাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ থাকবে মুনাজাতের মাঝে প্রেক্ষাপট দেশ ও দশের সাথে যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন আয়াতে কুরআনকে উল্লেখ করতে।দোয়া কামনায় অধম ✏ইমরান বিন বদরী।

رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
❇ হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবূল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী’।(আল-বাকারা ১২৭)
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا ۖ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
❇ হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।(আল-বাকারা ১২৮)
إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
❇ (হে আমাদের রব) নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী,প্রজ্ঞাময়’।(আল-বাকারা ১২৯)
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
❇ হে আমাদের রব,আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন।আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।(আল-বাকারা ২০১)
رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
❇ হে আমাদের রব,আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দিন, আমাদের পা স্থির রাখুন এবং আমাদেরকে কাফের জাতির বিরুদ্ধে সাহায্য করুন’।(আল-বাকারা ২৫০)
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
❇ হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।(আল-বাকারা ২৮৬)
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ
❇ হে আমাদের রব,আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা।(আলে-ইমরান ৮)
رَبَّنَا إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ
❇ হে আমাদের রব,নিশ্চয় আপনি মানুষকে সমবেত করবেন এমন একদিন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।(আলে-ইমরান ৯)
رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
❇ হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন’।(আলে-ইমরান ১৬)
رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنْزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ
❇ হে আমাদের রব, আপনি যা নাযিল করেছেন তার প্রতি আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা রাসূলের অনুসরণ করেছি।অতএব, আমাদেরকে সাক্ষ্যদাতাদের তালিকাভুক্ত করুন’।(আলে-ইমরান ৫৩)
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
❇ হে আমাদের রব,আমাদের পাপ ও আমাদের কর্মে আমাদের সীমালঙঘন ক্ষমা করুন এবং অবিচল রাখুন আমাদের পাসমূহকে, আর কাফির কওমের উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন’।(আলে-ইমরান ১৪৭)
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
❇ হে আমাদের রব আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং বিদূরিত করুন আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি,আর আমাদেরকে মৃত্যু দিন নেককারদের সাথে’।(আলে-ইমরান ১৯৩)
رَبَّنَا وَآتِنَا مَا وَعَدْتَنَا عَلَىٰ رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ
❇ হে আমাদের রব, আর আপনি আমাদেরকে তা প্রদান করুন যার ওয়াদা আপনি আমাদেরকে দিয়েছেন আপনার রাসূলগণের মাধ্যমে।আর কিয়ামতের দিনে আপনি আমাদেরকে অপমান করবেন না।নিশ্চয় আপনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না।(আলে-ইমরান ১৯৪)
رَبَّنَا آمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ
❇ হে আমাদের রব,আমরা ঈমান এনেছি।সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য দানকারীদের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন।(আল-মায়েদা ৮৩)
وَارْزُقْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
❇ (হে আমাদের রব) আর আমাদেরকে রিয্ক দান করুন,আপনিই শ্রেষ্ঠ রিয্কদাতা’।(আল-মায়েদা ১১৪)
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
❇ হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব’।(আল-আ'রাফ ২৩)
رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ 
❇ হে আমাদের রব,আমাদেরকে যালিম কওমের অন্তর্ভুক্ত করবেন না’।(আ'রাফ ৪৭)
رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
❇ হে আমাদের রব,আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন।(আল-আ'রাফ ১২৬)
رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
❇ হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে যালিম কওমের ফিতনার পাত্র বানাবেন না’।(ইউনুস ৮৫)
رَبَّنَا إِنَّكَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِي وَمَا نُعْلِنُ ۗ وَمَا يَخْفَىٰ عَلَى اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ
❇ হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি জানেন,যা আমরা গোপন করি এবং যা প্রকাশ করি,আর কোন কিছু আল্লাহর নিকট গোপন নেই,না যমীনে না আসমানে।(ইবরাহীম ৩৮)
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ
❇ হে আমার রব,আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব, আর আমার দো‘আ কবূল করুন’।(ইবরাহীম ৪০)
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
❇ হে আমাদের রব,যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন’।(ইবরাহীম ৪১)
رَبَّنَا آتِنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً
❇ হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দিন (আল-কাহফ ১০)
رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
❇ হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদেরকে ক্ষমা ও দয়া করুন, আর আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’(আল-মুমিনুন ১০৯)
رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا
❇ হে আমাদের রব,আপনি আমাদের থেকে জাহান্নামের আযাব ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় এর আযাব হল অবিচ্ছিন্ন’।(আল-ফুরকান ৬৫)
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
❇ হে আমাদের রব,আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’।(আল-ফুরকান ৭৪)
رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ
❇ হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’।(গাফির ৭)
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
❇ হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু।(আল-হাশর ১০)
رَبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
❇ হে আমাদের প্রতিপালক,আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি, আপনারই অভিমুখী হই আর প্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে।(আল-মুমতাহিনা ৪)
رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلَّذِينَ كَفَرُوا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَا ۖ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
❇ হে আমাদের রব,আপনি আমাদেরকে কাফিরদের উৎপীড়নের পাত্র বানাবেন না। হে আমাদের রব, আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।(আল-মুমতাহিনা ৫)
رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
❇ হে আমাদের রব,আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান।’(আত-তাহরীম ৮)
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
❇ হে পালনকর্তা,তাদের(মা-বাবা) উভয়ের প্রতি রহম কর,যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।(সুরা বনি ইসরাইল ২৪)
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
❇ (হে পালনকর্তা) আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী।(আল আম্বিয়া ৮৭)
اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ
❇ (হে পালনকর্তা) আমাদেরকে সরল পথ দেখান। সে সমস্ত লোকের পথ,যাদেরকে আপনি নেয়ামত দান করেছেন।(সুরা ফাতিহা ৬-৭)

বন্ধুরা--➲ আমরা যাতে প্রতিদিন উল্লেখিত দোয়াগুলি পাঠ করতে পারি পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে তাওফীক দান করুন।মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।

খাবার একজনের খেয়েছিল আশিজন!

✏ইমরান বিন বদরী
প্রসিদ্ধ রাবি অর্থাৎ আমার রাসুলের (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) হাদিস বর্ণাকারীদের অন্যতম হচ্ছেন হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু,যার প্রতিটা হাদিসের বর্ণনা যেন নবী প্রেমে সিক্ত।মুজেজা এ রাসুলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনার বর্ণনাকারী হযরত আনাস ইবনু মালিককে দেখা যায়।তেমনি একটি হাদিস শরীফ আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম।যে হাদিসের বাণী গুলির প্রতি হযরত আনাসের (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু) মত ভালবাসার দৃষ্টিতে থাকালে স্পষ্ট হয়ে যায় সাধারণ আর অসাধারণের পার্থক্য।সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহপাক আমাদের সবার মনে প্রিয় হাবীব সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালিন,হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের প্রতি বর্ণনাকারীর মত ভালবাসা সৃষ্টি করে দিক।আমীন।

আসুন মূল হাদিসে যাওয়া যাক।হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু বলেন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ صَنَعَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ لِلنَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ خُبْزَةً وَضَعَتْ فِيهَا شَيْئًا مِنْ سَمْنٍ ثُمَّ قَالَتِ اذْهَبْ إِلَى النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَادْعُهُ قَالَ فَأَتَيْتُهُ فَقُلْتُ أُمِّي تَدْعُوكَ . قَالَ فَقَامَ وَقَالَ لِمَنْ كَانَ عِنْدَهُ مِنَ النَّاسِ " قُومُوا " . قَالَ فَسَبَقْتُهُمْ إِلَيْهَا فَأَخْبَرْتُهَا فَجَاءَ النَّبِيُّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَ " هَاتِي مَا صَنَعْتِ " . فَقَالَتْ إِنَّمَا صَنَعْتُهُ لَكَ وَحْدَكَ . فَقَالَ " هَاتِيهِ " . فَقَالَ " يَا أَنَسُ أَدْخِلْ عَلَىَّ عَشْرَةً عَشْرَةً " . قَالَ فَمَا زِلْتُ أُدْخِلُ عَلَيْهِ عَشْرَةً عَشْرَةً فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا وَكَانُوا ثَمَانِينَ
উম্মু সুলাইম রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য রুটি তৈরি করলেন এবং তাতে কিছু ঘি ঢেলে দিলেন? অতঃপর তিনি (আমাকে) বলেন,তুমি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট যাও এবং তাঁকে দাওয়াত দাও।রাবী বলেন,আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমার মা আপনাকে দাওয়াত দিয়েছেন।রাবী বলেন,আমি তাদের আগেই বাড়ী পৌঁছে মাকে এ খবর জানালাম।ইতোমধ্যে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বলেনঃ তুমি যা তৈরি করেছো,তা নিয়ে এসো।মা বলেন,আমি তো মাত্র আপনার একার পরিমাণ খাবার তৈরি করেছি।তিনি বলেনঃ তাই দাও।তিনি আরও বলেনঃ হে আনাস! দশজন দশজন করে আমার কাছে ভেতরে পাঠাও।তিনি বলেন,আমি দশজন দশজন করে তাঁর নিকট পাঠাতে থাকি।তারা সবাই আহার করলেন,এমনকি সবাই পরিতৃপ্ত হলেন,আর তারা ছিলেন আশিজন।--সুনানে ইবনে মাজাহ।

পুজার নয়-আজানের ধ্বনি শুনতে চাই।

════ ✏ইমরান বিন বদরী
পরিবর্তনশীল সমাজে অধঃপতনটাই আজ পরিলক্ষিত।আধুনিকতা মানুষকে সভ্য করছে নাকি ধবংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে সে দিকে দৃষ্টিপাত করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য বলে মনেকরি।বর্তমানে নগ্নতাকে তথাকথিত আধুনিকতা মনেকরে সমাজকে বিশেষ করে মুসলিম সমাজকে ধবংস করার যে মৌন প্রয়াস চলছে তার প্রতি দৃষ্টিপাত না করলে আগামীতে প্রতিটি পরিবারে আজানের ধ্বনিতে চুপ থেকে জাওয়াব দেয়ার লোক খোজে পাওয়া যাবেনা।মুসলিম সমাজে আশির দশকে টিভি দেখা এবং ভিডিও করাকেও ভাল চোখে দেখা হতনা এটাকে গুনাহের পর্যায়ে ভাবা হত কিন্তু আজ পরিবর্তনশীল সমাজে সবকিছু যেন পর্যায়ক্রমে সহনশীল হয়ে পড়েছে।এভাবে আগামীতে হয়ত আরো অনেক পরিবর্তন দেখা যাবে।ফলে এ পরিবর্তনের অন্তরালে এ দেশীয় সংস্কৃতিতে রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে যে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন লক্ষনীয় তা হয়ত একদিন ধর্মীয় অনুষাসনের বন্ধনকে ধবংস করে দেবে।দূর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য যে আজ বাংলাদেশে প্রতিটি পরিবারে যাদের সেটেলাইট সংযোগ আছে তারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হতে চলেছে।দেশীয় চ্যানেলে আজানের ধ্বনি শুনা গেলেও ভারতীয় চ্যানেলে এখন পুজার ধ্বনি শুনানো হচ্ছে।কী দূর্ভাগ্য জাতী আমরা !! মুসলিম পরিবার আজ উলুর ধ্বনি আর পুজার মন্ত্রশব্দ শুনতে যেন অব্যস্থ হয়ে পড়েছি।পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত,হামদে বারী তা'য়ালা কিংবা মহা নবীর গুনগানের শব্দের পরিবর্তে মুসলমানের ঘরে ভারতীয় সিরিয়ালের রামায়ন বা গীতা পাঠের শব্দ শুনা যাচ্ছে! এটাই কি প্রত্যাশা ছিল একটি মুসলিম পরিবারে? আজানের শব্দে অযু করে নামাজের প্রস্তুতির কথা বাদেই দিলাম আপনি,আমি,আমরা এতে কি শিখছি এবং আমাদের সন্তানদের কী শিখাচ্ছি,আগামীর জন্য কোন প্রজন্মকে রেখে যাচ্ছি? একটুও কী ভাবার প্রয়োজন আছে বলে মনেহয় না? 



আজ ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানেল যেন অঘোষিত পূজার তালিম দিয়ে যাচ্ছে মুসলমানের প্রতিটা ঘরে।সংসারের প্রতিটা স্তরে আজ ঝগড়ার প্রসর বসছে এসব বিজাতীয় মনোভাবের প্রভাবে।মেয়েরা শিখছে কীভাবে ধবংস করা যায় একটি সুন্দর শ্রদ্ধাবোধের সংসার।দিনের পর দিন হিন্দুয়ানী কালচারে অবস্থ হয়ে কুফুরীর দিকে পদার্পন করছে।এভাবে হাজারো প্রচারণায় আমাদের বিশ্বাসে কুফুরী ডুকিয়ে দেয়া হচ্ছে যাতে আমরা মনের অজান্তে কালের অতৈ গর্তে নিমজ্জিত হতে পারি।এটি একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের জন্য খুবি ভয়ঙ্কর এবং অধিক ক্ষতিকারক বলে মনেকরি। আসুন বর্জনীয় এসব বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে রক্ষার জন্য সচেতনতার বন্ধনে আবদ্ধ হই।ঘৃণার সাথে একত্রে প্রতিবাদ জানাই প্রতিটি মুসলমানের ঘরে উলু নয় আজানের ধ্বনি শুনতে চাই।এখনি সময় এই ঘৃণ্য অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে ভারতীয় টিভি চ্যানেল বন্ধের দাবী জানানো।আমি আশা করবো প্রত্যেকে সমমনা পোষ্ট করে যাবেন, ফলে একদিন দেখবেন বিজাতীয় কালচার থেকে দেশ ও দশ মুক্ত হতে চলেছে।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬

হজরে আসওয়াদ নিয়ে নাস্তিকদের বিভ্রান্তি।

হজরে আসওয়াদ নিয়ে নাস্তিকদের বিভ্রান্তি।
════❖❖════ ইমরান বিন বদরী
আমাদের মুসলিম সমাজে `হজরে আসওয়াদ' সম্পর্কে জানেনা এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে,তার পরেও এ পবিত্র পাথরটি সম্পর্কে সমান্য একটু লেখলাম যাতে আমার কোন ঈমানী ভাই নাস্তিকদের কথায় বিভ্রান্ত না হয়।কারণ কিছুদিন পূর্বে একটি লেখা দেখলাম যেখানে এ পবিত্র পাথরটিকে হিন্দুদের প্রতিমাপুজার সাথে তুলনা করেছে (নাউযূবিল্লাহ) যা পড়লে আমার সাধারণ মুসলমান ভাইয়েরা বিভ্রান্তিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।আসুন এ পবিত্র পাথরটি সম্পর্কে কিছুটা অবগত হই।'হজরে আসওয়াদ' আরবিতে الحجر الأسود কালো রঙের প্রাচীন পাথর যা পবিত্র কাবা'র দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত।এটি হজের সময় তাওয়াফ (কাবার সাত চক্কর) শুরুর স্থান হিসাবে নির্দেশিত হয়।এ পাথরটি নিয়ে অনেক ঘটনা রয়েছে।এটি প্রাগৈতিহাসিক ইসলামি নিদর্শন এবং মূল্যবান বরকতময় উপকরণ।ইসলামের পূর্বেও এ পাথরটি কুরাইশদের কাছে মর্যাদাপূর্ণ পাথর হিসেবে পরিচিত।ইসলামী সমাজে এ পাথরটিকে সম্মান দেখানো নিয়ে নাস্তিকরা এটাকে কাবার ৩৬০ মুর্তির অন্যতম একটি মুর্তি ভেবে এটাকে প্রতিমাপূজার সাথে তুলনা করে যাচ্ছে।একজন নাস্তিক যার কাছে ধর্মের কোন মূল্যায়ন নেই সে কিভাবে বুঝবে কিতাবী ধর্মের মূল উৎস কোথায়।এ পাথরটি কোন মূর্তি নয় এটি জান্নাতী একটি পাথর হযরত আদম (আঃ) থেকে নূহ (আঃ) হয়ে একত্ববাদের নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে পৌঁছিয়েছেন আল্লাহপাক রব্বুল আলামীন।হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কতৃক পবিত্র কাবা শরীফ নির্মান থেকে ইসলামের পূর্বে মক্কায় কাবা শরীফ পুনঃনির্মান পর্যন্ত এই পাথর এবং মকামে ইব্রাহীম সেখানেই ছিল।
══ হযরত ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে,তিনি বলেন-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَزَلَ الْحَجَرُ الأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ 
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত হতে হজরে আসওয়াদ অবতীর্ণ হয়েছিল দুধ হতেও বেশি সাদা অবস্থায়।কিন্তু এটিকে আদম সন্তানের গুনাহ এমন কালো করে দিয়েছে।(মিশকাত ২৫৭৭/সূনান আত তিরমিজী)

❖ হজরে আসওয়াদ প্রতিস্থাপন নিয়ে সৃষ্ট বিবাদ নিরসন।
কাবা শরীফ পুনঃনির্মাণের সময় নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুনিয়াবী বয়স ছিল ৩৫ বছর।হজরে আসওয়াদ স্থাপনের বিষয়ে সৃষ্ট বিবাদ নিরসন কল্পে একটি সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয় যে,আগামীকাল যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম কাবা ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সেই এ ব্যাপারে ফয়সালা পেশ করবে।তার ফয়সালাকে সকলে খোদায়ী ফয়সালা হিসেবে মেনে নিবে।আল্লাহ তাআলার কুদরতে পরের দিন সর্বপ্রথম নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করতে দেখে সকলে সমবেত কণ্ঠে বলে উঠল এই যে আমাদের প্রিয় ‘আল আমীন’!আমরা সকলে তার প্রতি সন্তুষ্ট।তিনি একটি চাদর বিছিয়ে স্বহস্তে পাথরটি চাদরের উপর রেখে দিলেন।এরপর প্রত্যেক গোত্রের প্রতিনিধিকে বললেন,তারা যেন প্রত্যেকে চাদরের এক প্রান্ত ধরে পাথরটি দেয়ালের কাছে নিয়ে যায়।তারা যখন নিয়ে গেল তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বহস্তে পাথরটি উঠিয়ে যথাস্থানে স্থাপন করলেন।(বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
❖ সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান নর-নারীর কাছে হজের সময় হজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর অত্যন্ত মূল্যবান।প্রতিবছর হজের সময় হাজিদের অন্যতম কাজ আল্লাহর প্রেমে ব্যাকুল হয়ে পবিত্র কাবাঘর জিয়ারত ও তাওয়াফ করা।‘বায়তুল্লাহ’প্রদক্ষিণের সময় হজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা ও চুম্বন করা সুন্নত।
══ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে,তিনি বলেন-
لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَكَّةَ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَاسْتَلَمَ الْحَجَرَ
মক্কায় পৌছার পর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন এবং হজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন।(তিরমিজী ৮৫৬/ইবনু মা-জাহ ৩০৭৪)
══ হযরত আবিস ইবনু রবীআ (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে,তিনি বলেন-
رَأَيْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ يُقَبِّلُ الْحَجَرَ وَيَقُولُ إِنِّي أُقَبِّلُكَ وَأَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ وَلَوْلاَ أَنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُقَبِّلُكَ لَمْ أُقَبِّلْكَ
উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আমি হাজরে আসওয়াদে চুমা দিতে দেখেছি এবং তিনি তখন বলছিলেনঃ আমি তোমাকে চুমা দিচ্ছি অথচ আমি জানি তুমি শুধুই একটি পাথর।আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যদি তোমাকে চুমা দিতে না দেখতাম তাহলে আমি তোমাকে চুমা দিতাম না।(ইবনু মা-জাহ ২৯৪৩)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়শঃই হজরে আসওয়াদকে চুম্বন করতেন।সুতরাং উক্ত কাজটি মূর্তিপুজা তো নয়ই বরং সুন্নতে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
══ হাদীস শরীফে এসেছে,হযরত ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে,তিনি বলেন-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْحَجَرِ " وَاللَّهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ يَشْهَدُ عَلَى مَنِ اسْتَلَمَهُ بِحَقٍّ
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরে আসওয়াদ প্রসঙ্গে বলেছেনঃ আল্লাহর শপথ! এই পাথরকে আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠাবেন যে,এর দুটি চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখবে এবং একটি জিহবা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে।যে লোক সত্য হৃদয়ে একে পর্শ করবে তার সম্বন্ধে এই পাথর আল্লাহ্ তা'আলার নিকটে সাক্ষ্য দিবে।(মিশকাত ২৫৭৮) সুবহান আল্লাহ!
❖ আর লম্বা করবোনা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ পবিত্র বেহেশতি পাথরকে জীবনে একবার অন্তত চুমু দেয়ার তৌফিক দান করুক। আমীন।লেখাতে ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর কেউ কপি করলে অধমের নামটি রাখবেন যাতে গোনাহগারের জন্য কারো ইচ্ছে হলে দোয়া করতে পারে।

সোমবার, ২০ জুন, ২০১৬

ঐতিহাসিক বদর দিবস।

ঐতিহাসিক বদর দিবস।

===¤¤¤¤¤¤===• ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।বদর একটি কূপের নাম।এই কূপের নিকটবর্তী স্থানকে বদর প্রান্তর বলা হয়।এটি মদিনা থেকে প্রায় ৯০কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।৬২৪ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমজান,মুসলমানদের গৌরবময় উজ্জ্বল ইতিহাসের স্বর্ণখচিত ঐতিহাসিক একটি দিন।এটি ছিল ইসলামের প্রথম সিদ্ধান্তমূলক সামরিক যুদ্ধ।এ ঐতিহাসিক যুদ্ধে মুসলমানদের চূড়ান্ত বিজয় রচিত হয়েছিল।বদর যুদ্ধের মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সুনিশ্চিত হয়েছিল।এটি ছিল একটি অসম যুদ্ধ।যুদ্ধে অল্পসংখ্যক মুসলমান সৈন্যবাহিনী বেশি সংখ্যক কাফির সৈন্যবাহিনীর ওপর বিজয় অর্জন করেছিল।

═✽ এবার আসুন, কেন এ অসম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।এ যুদ্ধ মূলত মুসলমানদের আত্নরক্ষামূলক যুদ্ধ ছিল।নবুয়তের পর মক্কী জীবনে আমার আকায়ে তাজিদার নবী মুহাম্মাদ মুস্তফা সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকে তখন আরবের তথা ততকালিন বক্কার কাফিরেরা তাদের পূর্বপুরুষদের পৌত্তলিকতার ধর্মের বিনাস দেখতে পেয়ে রহমাতুল্লীন আলামীন নবী ﷺ সহ মুসলমানদের উপর একের পর এক অত্যাচার শুরু করেদিল।এরি মাঝে তায়িফের ঘটনা সহ অনেক ঘটনার জন্ম দিয়েছিল এই আরবের কুরাইশরা।তারা মেনে নিতে পারেনি তাদের ধর্ম বিলুপ্তিতে এই সত্য সমাগমের অধ্যায়কে।ফলে মিরাজের ঘটনায় আল্লাহ তার হাবিবকে সবকিছু দেখিয়ে পরবর্তীতে হিজরতের অধ্যাদেশ নাজিল করেন।হিজরতের পর মদিনায় বিশ্ব মানবতার মুক্তির সোপান যখন রচনা করেছিলেন আমার নবী ﷺ তখন মক্কার কুরাইশরা মদীনা রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে।ফলে রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।সেদিন মক্কার কাফিররা ১ হাজার সুসজ্জিত সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে সমবেত হলো বদর প্রান্তরে।আর আমার প্রিয় রাসুল ﷺ মাত্র ৩১৩ জন সৈনিককে (সাহাবায়ে কেরাম) নিয়ে উপস্থিত হলেন বদর প্রান্তরে।অসম এ যুদ্ধে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের গায়েবী সাহায্যে করেছিলেন।ফলে আবু জেহেলের বিশাল বাহিনীকে অত্যন্ত কঠিনভাবে পর্যুদস্ত করেছিলেন।যুদ্ধে দুই জন আনসার কিশোর সহদর (আফ্‌রার দুই পুত্র) হযরত মায়াজ (রা.) ও হযরত মোয়াজ (রা.) আবু জেহেলকে হত্যা করেছিল।এবং আমার রাসুলের ﷺ সাথে বিয়াদবী করা সেই কাফিরেরা যারা সিজদারত অবস্থায় উটের গর্ভাশয় আমার নবীর ﷺ নুরানী কাঁধের মাঝখানে রেখে দিয়ে হাসাহাসি করেছিল তাদের সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা বলেন ➲ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ فَوَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُهُمْ صَرْعَى يَوْمَ بَدْرٍ، ثُمَّ سُحِبُوا إِلَى الْقَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ আল্লাহর কসম! আমি এদের সবাইকে বদর যুদ্ধের দিন নিহত লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি।তারপর তাদের হিঁচড়ে বদরের কুয়ায় নিক্ষেপ করা হয়।(সহীহ বুখারী)

═ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা সূত্রে বর্ণিত রাসুল ﷺ (বদরে নিহত) গর্তবাসীদের দিকে ঝুঁকে দেখে বললেনঃ ➲ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ". فَقِيلَ لَهُ تَدْعُو أَمْوَاتًا فَقَالَ " مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ مِنْهُمْ وَلَكِنْ لاَ يُجِيبُونَ
তোমাদের সাথে তোমাদের রব যে ওয়াদা করেছিলেন,তা তোমরা বাস্তব পেয়েছো তো? তখন তাঁকে বলা হল,আপনি মৃতদের ডেকে কথা বলছেন? (ওরা কি তা শুনতে পায়?) তিনি বললেনঃ তোমরা তাদের চাইতে বেশী শুনতে পাও না,তবে তারা সাড়া দিতে পারছে না।(সহীহ বুখারী)
✽═ বদর যুদ্ধ সম্পর্কে সুরা আনফালের ১২-১৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ➲
إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلآئِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُواْ الرَّعْبَ فَاضْرِبُواْ فَوْقَ الأَعْنَاقِ وَاضْرِبُواْ مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ
যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে,আমি সাথে রয়েছি তোমাদের,সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীরস্থির করে রাখ।আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব।কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।
ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ شَآقُّواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَمَن يُشَاقِقِ اللّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
যেহেতু তারা অবাধ্য হয়েছে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের,সেজন্য এই নির্দেশ।বস্তুতঃ যে লোক আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্য হয়,নিঃসন্দেহে আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।
✽═ আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানে আরও বলেন ➲ وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ فَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
বস্তুতঃ আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন,অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক,যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো।(আয়াত ১২৩)
═ ঐতিহাসিক এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ১২মতান্তরে ১৪ জন শহীদ হয়েছিলেন,আর মুশরিক বাহিনীর ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দী হয়েছিলেন। আর এরা ছিল গোত্রসমূহের সর্দার এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি।রাসুল ﷺ যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে আদর্শ নীতি দেখিয়েছেন,বিশ্ব ইতিহাসে তার নজির মেলে না।তাঁর আদেশে আনসার ও মুহাজিররা বন্দিদের ভাগ করে আপন গৃহে নিয়ে যান।মুসলমানদের মেহমানদারি আরসুন্দর আচরণে বিমুগ্ধ হয়ে অনেকেই পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।রাসুল ﷺ তাদের পূর্ব অপরাধের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ না করে।মদিনার শিশুদের শিক্ষাদান ও মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের মুক্তিদান করেন।
═ এ যুদ্ধের সফলতা হচ্ছে:মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি,বিশ্ব বিজয়ের সূচনা,কুরাইশদের শক্তি খর্ব, ইসলামী রাষ্ট্রের পত্তন, মুসলমানদের নবযুগের সূচনা,রাজনৈতিক ক্ষমতায় ভিত্তি স্থাপন,পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে যুগান্তকারী একটি যুদ্ধ।কারণ এ যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী না হলে পৃথিবী থেকে ইসলামের নিশানা বিলীন হয়ে যেত।আর এ যুদ্ধের অপর গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো বদর যুদ্ধের বছরই মুসলমানদের উপর রোজা ফরজ হয়।বদর হলো একটি আত্মত্যাগের ইতিহাস।বদর হলো শাহাদাতের সূচনার ইতিহাস।বদর বিজয়ের পর মদিনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন দলে দলে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করতে থাকে।বদর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পবিত্র মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম তথা মুসলমানদের বিজয়ের ধারা সূচিত হয়েছিল।

বুধবার, ১ জুন, ২০১৬

জাকির নায়েকের বিরোধীতা কেন ?

জাকির নায়েকের বিরোধীতা কেন ? 
✽✽✽✽✽✽✽✽ ✏ইমরান বিন বদরী 
লেখাটির প্রথমেই বলেরাখি সমালোচনা নয় তবে যে বিষয়ে সন্দিহান তা প্রকাশ করাকে সমালোচনা মনে করাও ঠিকনা।নিজের যোগ্যতার গন্ডি দেখে কলম ধরা উচিত তাই কারো সমালোচনা নয় বরং সন্দেহাতীত বিষয় প্রকাশ করাই উদ্দেশ্য।একটা বিষয় আপনাদের নজরে এসেছে কিনা জানিনা।বর্তমান মুসলিম বিশ্বে আলোচিত সমালোচিত ব্যক্তি ডাঃ জাকির নায়েকের বিরোধীতা যারা করছেন তাদের অধিকাংশ কিন্তু আলেম সমাজ বিশেষ করে সুন্নী এবং কওমিরা।কিন্তু কেন এ বিরোধীতা? এ বিষয়ে খুব সুক্ষভাবে গভীরতায় প্রবেশ করে নিরপেক্ষ চিন্তা ধারায় একমাত্র পেতে পারেন এর সদুত্তর।গোড়ামীতে কেউ কোনদিন কোন সময় সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।আমি ব্যক্তিগতভাবেও ক্ষুদ্রজ্ঞানে শিখতে বেশী পছন্দ করি এবং চেষ্টাকরি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে।আজ ভারতে দেওবন্দি আর বেরলভীরা অলরেডী জাকির নায়েকের বিরোধীতা করে যাচ্ছেন।আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়।প্রশ্ন জাগতে পারে এর কারণ কী? কেনইবা একজন বিশ্বের পরিচিত ইসলামীক স্কলারের বিরোধীতা করছেন? তার মাধ্যমে তো ইসলামের প্রচার হচ্ছে এতে সবার খুশি হওয়ার কথা! আপনার মনে এমন ধারনাও আসতে পারে যে মুল্লারা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়ার ভয়ে তার বিরোধীতা করছেন।বাস্তবিক পক্ষে এসব ধারনা ভুল,কারণ ইসলামকে বুঝতে বা বুঝাতে গিয়ে আকিদার দর্পনে মুসলিম সমাজ আজ যোজন বিয়োজন দুরত্ত্বে অবস্থান করছে।আর এই দুরত্ত্বের মূলে কাজ করছে কিতাবী ইলম।যার সিংহভাগ দখল করে আছে সুন্নী এবং দেওবন্দিরা।আরবী,উর্দু,ফার্সিতে হাজারও মুসান্নেফদের (রচয়িতা) লেখা কিতাব গুলির চর্চা এরাই বেশী করে।যেমন,১.ইলমে কোরআন,২.ইলমে হাদিস,৩.ইলমে ফিকহ্‌,৪.ইলমে তাফসীর ৫.ইলমে আকাঈদ,৬.ইলমে ফরাইজ,৭.উসুলে হাদিস.৮.ইলমে নাহাভ,৯.ইলমে ছরফ,১০,ইলমে মান্‌তিক্‌,১১.উসুলে ফিকহ্‌ ইত্যাদির মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এরা পান্ডিত্ত অর্জন করে ইলমের ধারক বাহক হয়ে ইসলামের খিদমত করে যাচ্ছেন যুগের পর যুগ।সাথে আমাদের এও ভুলে গেলে চলবেনা যে ১৫০০ বছর পূর্বের মদিনার সেই ইসলাম আজ আমাদের মাঝে পোঁছানোর পিছনে অনেকেরি অবদান রয়েছে,তদমধ্যে আকায়ে তাজেদার রসূলে কারিম সল্লাল্লাহ তা'য়ালা আলাইহিস সালামের রেখে যাওয়া ঐশি বাণী পবিত্র কুরআন শরীফ আর সুন্নাহ'তে যে সমস্ত বিষয় সাধারনের বোধগম্য নয় সে সব বিষয়ে ইজতিহাদী ফয়সালা করে ইসলামকে বুঝার জন্য সহজ করে দিয়েছেন তাদের অবদানের কথা।তিক্ত হলেও সত্য যে আজ তাদের (সম্মানীত ইমামদের) রেখে যাওয়া ইজতিহাদের সমালোচনা করে অনেকে মুসলিম সমাজে ফিৎনা সৃষ্টি করে মুসলমানদের বিভক্ত করে দিচ্ছে।যুগে যুগে মুসলিম সমাজে এমন সমস্যা সৃষ্টিকারীর আভির্বাব হয়ে আসছে তবে ভারত বর্ষে যে সমস্যা বড় আকারে দেখা যাচ্ছে তা হল `বাইতুল্লাহ' বা আল্লাহর ঘর মসজিদের কোন গোত্রিকভাবে নামান্ত্রিত করা হয়নি।কিন্তু নবী দাবীকারী গোলাম মুহাম্মদ কাদিয়ানীর অনুসারীরা এসে মসজিদের নাম করন করেন `আহমদিয়া মসজিদ'।যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সালাফীরা `আহলে হাদিস মসজিদ' নামে মসজিদের প্রবেশ পথে জানিয়ে দিচ্ছে এটি আহলে হাদিসদের মসজিদ।কেন এমনটা করা হচ্ছে!ইবাদতের স্থানটিও আজ পার্থ্ক্যের কালো গর্তে নিমজ্জিত করা হচ্ছে।আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে কারো সমালোচনার যোগ্যতা রাখিনা আর সমালোচনার পক্ষেও নই,কিন্তু উপরোল্লিখ বিরোধীতার কারণ খোজতে গিয়ে আমার এই লেখা। ডাঃ জাকির নায়েক একজন জ্ঞানী এবং সু-বক্তা এতে যেমন সন্দেহ নেই তেমনি আকিদার দর্পণে কারো কথায় অন্ধবিশ্বাস করাটাও যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা।অনেকে আবার মনে করেন (আমার মত)স্বল্প জ্ঞানীরা নিজেদের মূর্খতার কারণে জাকির নায়েকের বিরোধীতা করেন এবং এটাও বিশ্বাস করেন উনার প্রোগ্রামে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় সাথে অনেক বিধর্মীও মুসলমান হয় আর যথেষ্ট দলীল দিয়ে কিতাবের পৃষ্ঠাসহ বক্তব্য দেন।খুব ভালো কথা তো একটা বিষয় জানিনা আপনাদের দৃষ্টিতে এসে কিনা,যে দেশের মানুষ এতো মুসলমান বিরোধী,গরু জবেহ করতে দেয়না,কুরবান করতে বিরোধীতা করে,মসজিদে আক্রমন করে, মুসলমানদের ধর্ম ত্যাগে বাধ্য করে,হাজার হাজার মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করে,সে দেশে এমন জাকজমক পূর্ন অনুষ্ঠানে হিন্দুদের মুসলমান করাতে কি আদৌ হিন্দুরা ডাঃ জাকিরের বিরোধীতা করেছে? কোথাও কি প্রতিবাদ করা হয়েছে এই বলে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরাষ্ট্রে কোন প্রকার ধর্মান্ত্ররিত করা যাবেনা! না করেনি।বরং তাদের (হিন্দুদের) ধর্মগুরু নাপাকীদের আনাগোনা হয় সেই সব প্রোগ্রামে।জানি,আমার এই লেখার সমালোচনাও করবে অনেকে তাতে কিচ্ছু আসে যায়না।আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের সন্দিহান বিষয়টাই প্রকাশ করলাম।এতে আমার বুঝারও ভুল হতে পারে।বাস্তবিক পক্ষে কেও কিন্তু ব্যক্তি ডঃ জাকির নায়েকের বিরোধীতা করছেনা,করছে তার আকিদা এবং লেকচারের।যে লেকচারে মানুষ এতো বিমোহিত তাদের অধিকাংশ কিন্তু সাধারন শিক্ষিতরা যাদের নেই সেই কিতাবী ইলম যা আগেই উল্লেখ করেছি।যে ব্যক্তির কাছে কিতাবী ইলম নেই সে যে কোন একজন তার সামনে ইসলামের কথা কিছুটা যুক্তি দিয়ে আলোচনা করলে তাতে শতভাগ সমর্তন করে যাবে এটাই বাস্তবতা।ইসলাম কিন্তু যুক্তির উপর নির্ভর করেনা।ঈমানের সঙ্গায় কিন্তু যুক্তির কথা উল্লেখ নেই।বর্তমান বিশ্বে যারা যুক্তি দিয়ে ইসলামকে বিচার করছে তাদের অনেকে ভুল পথে পদার্পন করছে।মুসলমানদের ঈমানের মূলে রাসুলের (দরুদ) প্রতি শতভাগ বিশ্বাস রেখে সাধারন আর অসাধারনের পার্থক্য স্পস্ট থাকতে হবে।যারা যুক্তিতে বিশ্বাসী তারা কিন্তু আদৌ রাসুলের (দরুদ) মিরাজ কিংবা চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করণের কোন স্থায়ী সমাধান মিলাতে পারেনি।ইসলামের গভীরে প্রবেশ করা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য কারো বক্তব্য কিংবা কারো মাহফিল শুনে অকাট্য দলীল মনেকরে নিজেকে পরিচালনা করা বুকামী ছাড়া আর কিছুইনা।কুরআন হাদিসের কিতাব নিজে পড়ে আমল করলে কারো কথায় বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা।এজন্য ইসলামে ধর্মীয় জ্ঞান আবশ্যক করা হয়েছে।ডঃ জাকির নায়েকের বক্তব্য মতে আমরা সবাই মুসলমান আমাদের কোন মাজহাব মানার প্রয়োজন নেই,ইসলামে এসব কিছু নেই।তো প্রশ্ন জাগে `আহলে হাদীস' নামে সালাফী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার কোন হুকুম কি ইসলামে আছে?
রসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম কোথাও আমাদেরকে শুধু হাদীসের আহাল অর্থাৎ হাদীসের অনুসারী হওয়ার জন্য বলে যায়নি বরং বলেছেন কিতাবুল্লাহ ওয়া সুন্নাতিহী অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে করীম এবং রাসুলের সুন্নাতকে অনুসরন করতে।আর 'সুন্নাহ' বলতে এতে অনেক ব্যাপকতা বিদ্যমান রয়েছে।সালাফীরা শুধু সহীহ হাদীসের অনুসরনের কথা বলে সহীহ হাদীসের কিতাব (الكتب السته সিহাহ সিত্তা) হাদীসের প্রধান ছয়টি গ্রন্থ থেকে আলবানী কর্তৃক নিজের মনবুত সংগ্রহের কিতাবকে প্রাধান্য দিয়ে সালাফী মতবাদ প্রচার করার কারণে আলেম সমাজ আজ তাদের বিরোধীতা করছেন।এ কথা অনস্বীকার্য যে আমাদের সব ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মানতে হবে।কিন্তু এমন অনেক সুন্নাহ আছে,যা হাদিস আকারে লিপিবদ্ধ হয়নি কিন্তু মদীনার সাহাবাদের মধ্যে সেই সুন্নাহগুলোর প্রচলন ছিল।এবং এমন অনেক আমলও ছিলো যা হাদিস আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়নি হযরত ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ মদিনায় তাবেঈনদের সাথে থেকে অনেক আমল দেখে দেখে শিখেছেন আর লিখেছেন যা অনেক ক্ষেত্রে হাদীসের বিপরীতে অবস্থান হয়।যেমন-শুক্রবারের নফল রোজা।বেশীরভাগ হাদিসের উৎস মূলত মদীনা শহর,আর ইমাম মালিক তাঁর সারাটা জীবন মদীনায় কাটিয়েছেন তাবেঈনদের কাছে পড়াশুনা করে।ইমাম মালিক সরাসরি ৬০০ তাবেঈনের কাছ থেকে হাদিস ও ফিকহ শিখেছেন,আর এই ৬০০ তাবেঈন শিখেছেন সরাসরি সাহাবীদের কাছ থেকে,মদীনায় তখন ১০ হাজার সাহাবী ছিল।ইমাম মালিক হাদিস শিখেছেন ঐ যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিশাম ইবনে ‘উরওয়া,ইবনে শিহাব আল-যুহরীর মতো বাঘা মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে।হযরত ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহও তেমনি হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাজধানী কুফায় নিয়ে গেলে মদিনার সাহাবীদের বিশাল একটি অংশ সেখানে চলে গেলে প্রখ্যাত তাবেঈনদের আমল দেখে সহীহ মতে লিপিবিব্ধ করেছেন।তিনি কয়েকজন সাহাবিদের পেয়েছেন বলে তিনি একজন সলফে সালেহীনদের বিখ্যাত তাবেঈন ছিলেন।

═ অনেককে বলতে শুনি ডাঃ জাকিরের কারণে পির আর মাজার পুজা বন্ধ হচ্ছে দেখে তারা এর বিরোধীতা করছেন।এটি খুব হাস্যকর উক্তি যে একজন মুসলমান হয়ে অন্য এক মুসলমান ভাইকে পুজারী হিসেবে গন্য করছে।একজন মুসলমানকে হিন্দুদের সাথে তোলনা করাটা কি ঠিক হচ্ছে? আমি কাউকে বলছিনা যে মাজারে যান এবং এটাও বলছিনা যে মাজারে সবসময় ভালোকাজ হয় তার পরেও তর্কের খাতিরে মেনেনিলাম যে সুন্নীরা সালাফীদের মতে মাজার ব্যবসা বন্ধ হবে দেখে ডাঃ সাহেবের বিরোধীতা করছেন।কিন্তু দেওবন্দীরা !যারা মাজার বিরোধী তারা কি বন্ধ হওয়ার ভয়ে সালাফীদের বিরোধীতা করেন? আসলে এটা নব্য সালাফীদের কিছু দর্শকদের মন আকৃষ্ট করার কৌশলমাত্র।এটা সত্য যে কিছু অজ্ঞ নির্বোধের কারণে আল্লাহর ওলীদের মাজারে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ হচ্ছে যার তিব্র প্রতিবাদ করা প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব।তার মানে এই নয় যে সমস্ত সুন্নীজনতা শিরিক বিদাআতে লিপ্ত।
আর ডাঃ জাকির নায়েকের একটি ভ্রান্ত আক্বীদা হল যে,তিনি অন্ধভাবে পরকাল, জান্নাত, জাহান্নাম, রূহ, জ্বিন,ফিরিশতা বিশ্বাস করেন না।তিনি সম্ভবনা এবং যুক্তি তত্ত্ব দ্বারা বিশ্বাস করেন।(নাউযুবিল্লাহ) (Quraan and Modern Science-conflict or conciliation-“Presenting Islaam and Clarifying Misconceptions Lecture series by Dr.Zaakir Naik,Developed by AHYA Multi-Media- 12 Enlightening Sessions) অথচ আল্লাহপাক তার পবিত্র কালামে ঈমানের সংজ্ঞায় বলেছেন,
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ  যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।
وَبِالآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ  আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।
أُوْلَـئِكَ عَلَى هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত,আর তারাই যথার্থ সফলকাম।
(সূরা বাক্বারার ৩-৫) (ঈমানের সংজ্ঞায় সূরা নিসার ১৩৬ আয়াত টাও দেখতে পারেন)
═ হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "ঈমান হলো- তুমি বিশ্বাস করবে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাব সমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি ও শেষ দিবসের (আখিরাতের) প্রতি এবং ভাগ্যের (তাকদীরের) ভাল মন্দের প্রতি বিশ্বাস করবে।"(সহীহ মুসলিম) এ ছাড়াও হাদিসে জিবরাইলে রয়েছে ঈমানের সংজ্ঞা। 
ডঃ সাহেবের আরেক বিশ্বাস হচ্ছে মুসলমান ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নবী মুহাম্মদ মুস্তফা সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহের প্রতি ঈমান না এনে যদি এক প্রভুর প্রতি বিশ্বাস থাকে তো সে জান্নাতে যাবে তবে উনি সেখানে পার্সের্ন্টিস যোগ করে বলেন ০০০০০১%! তাই যদি হয়-পৃথিবীতে জাহান্নামী কেবল শুধু নাস্তিকেরা কারণ এরা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী নয়।আপনি হিন্দু বৌদ্ধের কথা চিন্তা না করে সে সমস্ত কিতাবীদের কথা ভেবে দেখুন যারা একত্নবাদের পুরোপুরি বিশ্বাসী যেমন ইহুদী,খৃষ্টানরা তো সবাই উনার তিওরীতে পার্সেন্টিস হারে জান্নাতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে!! ৮টি জান্নাতের স্থরের মাঝে যদি আমল অনুযায়ী বন্টন করা হয় তো তারা নিন্মের স্থরে প্রবেশ করলেও জান্নাত ঠিকই পাবে।যদি তাই হয় তো মুমিন হওয়ার প্রয়োজন কী শুধু জান্নাতের উত্তম স্থান অধিকার করার জন্য! মুসলমান আর অন্যান্যদের পার্থক্য কোথায়? এমন মনোভাব নিয়ে `দ্বীনে ইলাহী' তৈরী করে ধবংস হয়েছিলো ভারতের কোন মুসলিম বাদশা তা ইতিহাসের পাতায় এখনো কলঙ্খিত হয়ে আছে। বাকীটা খোদাপ্রদত্ব জ্ঞান দিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
═ আপনি জানেন কি,সালাফীরা যে আমাদের প্রকৃত মুসলমান মনে করেনা!তাদের দৃষ্টিতে উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলমান যুগ যুগ ধরে বিদাআতে লিপ্ত ।কথায় কথায় এরা মুসলমানকে বিদাআতী বলে সম্বোধন করে যায়।আপনি হয়ত জানেন যে বিদাআতকারী জান্নাতে প্রবেশ করবেনা।আর তাই যদি হয় তো একবার ভেবে দেখুন আমাদের পুর্ব পুরুষরা যারা গত হয়ে গেছে তারা সবাই ইসলামের ভুল পথে চলে বিদাআত করে জাহান্নামী হয়ে গিয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের মর্মবাণী যে সমস্ত লোকদের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি তাদের সিংহভাগ কিন্তু মাঝহাব মেনে ওলী আল্লাহদের অনুসারী ছিলেন।এই সালাফী মতবাদের আগমন এ ভূখন্ডে বেশী দিনের নয়।এদের সাথে একাত্নতা প্রকাশকরে আপনি আপনার পূর্বপুরুষদের কিন্তু অস্বীকার করে যাচ্ছেন।আজ ইসলামের মূলে সবাই এক হলেও আকিদার অমিলে সমাজে বিভিন্ন মতবাদের মানুষের সহাবস্থান।অথচ আল্লাহপাক তার পবিত্র কালামে বলেছেন, وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُواْ 
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর;পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।(আল-ইমরান:১০৩)।
কিন্তু আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ করতে পারেনি।আর এই না পারার কারণ যে আকিদার মতবেদ।আল্লাহপাক পবিত্র কালামে আরো বলেছেন,إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
“নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে,তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই।(সূরা আনআম ১৫৯)
বর্তমান বিশ্বে এই সালাফীজম প্রতিষ্ঠা কারীরা যুক্তির কথা বলে ইজতিহাদী গ্রহনযোগ্য বিভিন্ন মাসয়ালাকে অগ্রায্য করে নিজেদের মনবুত মতামত ব্যক্ত করে সমাজে যে ফিৎনা সৃষ্টি করে মুসলমানদের বিভক্ত করে দিচ্ছেন তাতে উপরোক্ত আয়াতের মিল আছে কিনা একবার ভেবে দেখার বিষয়।সুতরাং একজন মুসলমান হয়ে আকিদার ভিত্তিতে কাউকে ছাড় দেয়ার কোন অবকাশ নেই।আমি জাকির নায়েকের বিরোধিতা করছিনা কিন্তু সালাফীদের আকিদার পক্ষে একজন নগন্য গুনাহগার বান্দা হিসেবে সমর্থন করা অসম্ভব।এবার আসুন তাদের সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নিই।
=➲ “সালাফ” শব্দের অর্থ হলো পূর্বসূরী।সালাফী শব্দটি খুব সুন্দর এটি এসেছে সালফে সালেহীন থেকে।এই সালফে সালেহীনদের সময় ছিলো উম্মতে মুহাম্মদীর শ্রেষ্ঠ যুগ।অর্থাত সম্মানীত সাহাবী (রাঃ) থেকে তাবে-তাবেঈনদের সময়কাল।যে সময়ের একজন ইমামে আজম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি।তিনি ৭০০ সালে ৮০ হিজরীতে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের রাজত্বকালে ইরাকের কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।যার ইজতিহাদী মাসয়ালাকে তারা তাকলীদ করতে নারাজ।তাদের দৃষ্টিতে মাযহাব ইসলামকে পার্থক্য করে দিয়েছেন অথচ মাযহাব কেবল ইসলামে যে সমস্ত বিষয় স্পষ্ট নয় সেসব বিষয়কে সম্মানীত ইমামরা তাদের ইজতিহাদী সিদ্বান্তে ফায়সালা দিয়েছেন মাত্র।এতে পথ ভ্রষ্ট হয়ে মাযহাবীরা ইসলামকে বিভক্ত করে দিয়েছেন বলাটা একদম মিথ্যের আশ্রয় নেয়া ছাড়া আর কিছুই না।সালাফীরা সহীহ হাদীসের অনুসারী দাবী করলেও পরক্ষোভাবে কিন্তু তারা মাঝহাব বিরোধী অবস্থান করাই তাদের উদ্দেশ্য।আসলে কী মাযহাব ইসলামকে বিভক্ত করে দিয়েছেন? কেন এত বৈপরিত্নে অবস্থান? ইসলামে কুরআন সুন্নাহ এক হলেও এত পার্থক্য কেন? এসব কিছুর জানতে হলে গোড়ামী পরিহার করা আবশ্যক।আমাদের বর্তমানে যত সমস্যা হচ্ছে তার অধিকাংশ নিজেদের স্বপক্ষে গোড়ামীর কারণে কেউ কারো কথা শুনার বা জানার ইচ্ছাশক্তি হারিয়ে ফেলা।
= সালাফীদের বৈশিষ্ট্যঃ=
১।বিনা দলীলে কারো উক্তির অনুসরন করা চলবেনা বলে মাযহাবী ইমামদের সমাদৃত ফায়সালাকে অস্বীকার করা।অথচ সহীহ হাদীস সংকলকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইমাম,শায়খুল মুহাদ্দেসীন,সহীহ বুখারী শরীফের মুসান্নেফ তথা রচয়িতা হযরত ইসমাঈল বুখারী রহিমাহুল্লাহও কিন্তু ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির অনুসারী ছিলেন।
২।সহীহ জঈফের কথা বলে আব্দুল্লাহ বিন বাজ আর (আলবেনিয়ান যে দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মকে পুরোপুরি আমল করেনা) সেই নাসিরুদ্দিন আলবানীর সংগ্রীহিত কিতাবে যা উল্লেখ আছে তাকেই সহীহ মনেকরা।
৩।রাসু্লুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ছাড়া ভুলের উর্ধ্বে কেউ নয়।এর মানে কী অন্যান্য নবী থেকে শুরু করে আল্লাহর প্রিয় নবীর প্রিয় সাহাবীরা (রাঃ) কেউ ভুলের ঊর্ধে নয় অর্থাৎ এঁদের সমালোচনা করাতে দোষের কিছু নেই।
৪।আল্লাহ নিরাকর নয় ও আরশে সমাহীন।
৫।এক সাথে ৩ তালাক দিলে এক তালাক গন্য হবে।
তারা রাসু্লুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ছাড়া কারো অনুসরন করা চলবেনা বলে থাকলেও মূলত:ইবনে তাইমিয়াকে তারা বিশেষভাবে অনুসরণ করেন।বর্তমান সালাফীরা সম্পূর্ণভাবে দেহবাদী আকিদায় বিশ্বাসী।অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আরশে বসে আছেন।এসব ভ্রান্ত আকিদাকেই তারা তথাকথিত সহীহ আকিদা হিসেবে প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।মহান আল্লাহ তায়ালাকে আকৃতি দেয়া এবং তার পক্ষে সন্তান জন্ম দেয়া এসব বিশ্বাস কেবল নাসারা তথা খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস।যে কারনে তারা ঈসা (আঃ) কে ইবনুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর পুত্র হিসেবে গন্যকরে।
-----------------------
আমি চাই না আমরা ইসলামের সঠিক মর্মবানী না জেনে ফিত্না আর বিভ্রান্তিতে ডুবে থাকি।ওমা আলাইনা ইল্লাল বালাগুল মুবীন।

বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

মুসলমানের পারস্পরিক (হক) অধিকার


মুসলমানের পারস্পরিক (হক) অধিকার 
ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।মহান আল্লাহ তা’আলা মানব জাতিকে সুন্দরতম গঠনে সৃষ্টি করেছেন।শুধু সৃষ্টি করেননি,সৃষ্টির পাশাপাশি অফুরন্ত নেয়ামত দানের মাধ্যমে এই পৃথিবীর বুকে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সম্মান-মর্যাদার সাথে জীবন যাপনের সুযোগও দান করেছেন।এবং সমগ্র মানব জাতির জন্য একটি নির্ভুল পদ্ধতি এঁকে দিয়েছে।এ নির্ভুল পদ্ধতির নাম হচ্ছে ‘ইসলাম’।যা সর্বক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ করে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা রূপে মনোনীত করেছেন।
‪#‎পবিত্র‬ কুরআনে আমার আল্লাহ ইরশাদ করেন- إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।(সূরা আলে ইমরান ১৯)
আল্লাহপ্রদত্ব জীবন ব্যবস্থাই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত।যার মাঝে রয়েছে জীবনের প্রতিটি স্তর ও বিভাগের সুষ্ঠু সমাধান।এতে রয়েছে ভ্রাতৃত্ব,অধিকার ও কর্তব্যের সুন্দর সমন্বয়।সবাইকে দেয়া হয়েছে তার প্রাপ্ত অধিকার।এবার আসুন মূল আলোচনায়।ইসলামে সেই খোদা প্রদত্ব ভ্রাতৃত্বে একে অন্যের প্রতি রয়েছে কিছু অধিকার যার কিছুটা আজকে আলোচনা করবো যদি আল্লাহপাক সহায় হোন।সর্বপ্রথম দরুদ পড়ে শুকরিয়া আদায় করছি সেই নবীর (দরুদ) উম্মত হতে পেরে যাকে সৃষ্টি না করলে সৃষ্টিকর্তা কিছুই সৃষ্টি করতোনা।

মুসলমান ভাইয়ের একে অন্যের প্রতি অধিকার।
-----------------------
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া একটি সামগ্রিক মূল্যবান নিয়ামত।
ইসলাম যে সব অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে,তার অন্যতম হলো- এক মুসলমান ভাইয়ের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের (হক)অধিকার।#পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই।অতএব,তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ 
মুমিনগণ,কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে।কেননা,সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে।কেননা,সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে।তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ।যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
মুমিনগণ,তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক।নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ।এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না।তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে ? বস্তুতঃতোমরা তো একে ঘৃণাই কর।আল্লাহকে ভয় কর।নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী,পরম দয়ালু।(সুরা হুজুরাত ১০-১২)
মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের জন্য 'ইসলাম'একমাত্র আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত জীবনাদর্শ।আমাদের উচিত অপর মুসলমান ভাইয়ের হক বা অধিকার আদায় করার মাধ্যমে এই ভ্রাতৃত্ববোধকে অব্যাহত রাখা।এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের সর্বপ্রথম হক হলো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তাকে ভালোবাসা।
‪#‎হজরত‬ আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
 وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ  মানুষকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা।(সহিহ মুসলিম ১৭৫)
অন্যদিকে মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের সুনির্দিষ্ট ছয়টি হকের আলোচনা এসেছে।
#হজরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- 
حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ قِيلَ مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَسَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ 
এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে।বলা হলো,সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন,
(১) তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে,তাকে সালাম দেবে।
(২) সে যখন তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে তা রক্ষা করবে।
(৩) সে যখন তোমার মঙ্গল কামনা করবে,তুমিও তার শুভ কামনা করবে।
(৪) যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে,তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে।
(৫) যখন সে অসুস্থ হবে,তুমি তাকে দেখতে যাবে।
(৬) এবং যখন সে মারা যাবে,তখন তার জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।(মুসলিম ৫৭৭৮)
আরেকটি হক হলো,তার সম্পর্কে মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রাখা।যেমন-
#হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 
لاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَدَابَرُوا وَلاَ تَنَافَسُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا তোমরা পরস্পর হিংসা করো না,একে অন্যের পেছনে লেগে থেকো না এবং একে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না।বরং একে অন্যের সাথে ভাই-ভাই ও এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও।(মু,আহমদ ৯০৫১)
➲ এছাড়াও আরো অনেক অধিকার রয়েছে।যেমন এতিমের অধিকার সহ ইসলাম প্রতিবেশীদের হক নির্ধারণ করে দিয়েছে যেমনিভাবে নিকটাত্মীয়দের অধিকার আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে।অপর ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে যা নিজের জন্য পছন্দ করে।তার সাথে বিনয়ী আচরণ করবে।কখনও অহংকারী হবে না।তার গীবত বা পিছনে নিন্দা করবে না।তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে না।তাকে উপহাস করবে না।তার দোষ ত্র“টি খুঁজে বের করবে না।তার প্রতি কোন ধরনের অপবাদ দিবে না।তার প্রতি দয়া ও মহানুভবতা দেখানো এবং তার কষ্ট হয় এমন ব্যবহার না করা।
‪#‎আল্লামা‬ কবি শেখ সাদি (রহ.) বলেছেন- গোটা মুসলিম জাতি একটি মানব শরীর।
➲ পরিশেষে আমাদের জেনে রাখা উচিত,মানুষের অন্তরের ব্যাধিসমূহের অন্যতম হলো হিংসা-বিদ্বেষ।সুতরাং কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রেখে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে অপর মুসলিম ভাইয়ের হক বা অধিকারগুলোকে যথাযথভাবে আদায় করার মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধ মুমিন ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করার তওফিক দান করুন।আমিন।
************

বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬

মুশরিক'কে বিয়ে করা

 মুশরিক'কে বিয়ে করা =• ✏ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
বিয়ে মানব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।একাকীত্ব জীবনের অবসান ঘটিয়ে পারিবারিক বন্ধনকে সূ-দৃঢ় করার নিমিত্বে দুই পরিবারের মধুর এই সম্পর্ককে আমরা বিয়ে বলতে পারি।বিয়ে শুধু শারীরীক সম্পর্কের নাম নয় বিয়ে মানষিক, সামাজিক, পারিবারিক,ধর্মিয় নিয়মে সুন্দর একটি বন্ধনের নাম।ইসলামে বিয়ে করা সুন্নত এ রাসূল সল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওসাল্লাম,এতে সন্ন্যাসী জীবনের বিরোধিতা করা হয়েছে।নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের জীবন সঙ্গী বেছে নেন এবং এর মাধ্যমে একটি পরিবার গঠিত হয়।এই পরিবারে ছায়াতলেই নীতি-নৈতিকতা ও গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে ওঠে ভবিষ্যত প্রজন্ম।আর ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান,তাই পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তার রয়েছে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা।এবার আসুন মূল আলোচনায়।মুশরিক নারী বিয়ে করার পূর্বে জেনে নিই মুশরিক কারা?


❋ মুশরিকের সংজ্ঞাঃ রব হিসাবে (একত্ববাদ) মহান আল্লাহপাকের সাথে দ্বিতীয় কাউকে শরীক সাব্যস্ত কারীরাই মুশরিক।অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়াত তথা ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সাথে গায়রুল্লাহকে শরীক করা।অর্থাত প্রভু রুপে গ্রহণকরা বা সমকক্ষ মনেকরা ইত্যাদি।
➲ আমার আল্লাহ বলেন,وَاعبُدُوا اللَّهَ وَلا تُشرِكوا بِهِ شَيـًٔا তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক্ করবে না।(সূরা নিসা ৩৬)
➲ আল্লাহ আরও বলেন, لا تُشرِك بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّركَ لَظُلمٌ عَظيمٌ আল্লাহর সাথে শরীক করো না।নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।(সুরা লোকমান ১৩)
➲ মুশরিকদের জন্য আল্লাহপাক জান্নাতকে হারাম করে দিয়ে বলেন, إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে,আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন।(সুরা মায়িাদা ৭২)
কবীরা গোনাহের মধ্যে শিরক সবচেয়ে বড় গোনাহ।
➲ আমার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ألَا أنَبِئكُمْ بِأكْبَرِ الكَبَائرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَارَسُوْلَ الله. قاَلَ الْإشْرَاكُ بِالله আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম-জ্বী,অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল !তিনি বললেন:আল্লাহর সাথে শিরক করা।(মুসলিম)
শিরক হলো আল্লাহর পরিপূর্ণ নাফরমানী।প্রকৃতপক্ষে মুশরিক ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে সবচেয়ে অজ্ঞ।সর্বশেষ কথা হচ্ছে,যে ব্যক্তি বা নারী অথবা জাতী,আল্লাহকে ব্যতি রেখে অন্য উপাস্য কামনা করে,অথবা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে তাকে মুশরিক বলা হয়।প্রাচীন আরবে যারা মুর্তি পূজা করতো তাদেরেকে মুশরিক বলা হতো।সেই হিসাবে মুর্তি পুজারীরাই মুশরিক।

❋ বিয়ে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধন।ইসলাম দিয়েছে মানব জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক,সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক,ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কেমন হবে তার দ্ব্যর্থহীন দিকনির্দেশনা।সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিয়ে সম্পর্কিত আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই।সমাজে এখন আমাদের কেউ কেউ অমুসলিম নারীকে বিয়ে করেছেন।বিয়ে করার পরে অনেকে আবার অমুসলিম নারীকে কালেমা পড়িয়ে মুসলিম বানাচ্ছেন।
➲ এ বিষয়ে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন,
وَلا تَنكِحُوا المُشرِكٰتِ حَتّىٰ يُؤمِنَّ ۚ وَلَأَمَةٌ مُؤمِنَةٌ خَيرٌ مِن مُشرِكَةٍ وَلَو أَعجَبَتكُم ۗ وَلا تُنكِحُوا المُشرِكينَ حَتّىٰ يُؤمِنوا ۚ وَلَعَبدٌ مُؤمِنٌ خَيرٌ مِن مُشرِكٍ وَلَو أَعجَبَكُم ۗ أُولٰئِكَ يَدعونَ إِلَى النّارِ ۖ وَاللَّهُ يَدعوا إِلَى الجَنَّةِ وَالمَغفِرَةِ بِإِذنِهِ ۖ وَيُبَيِّنُ ءايٰتِهِ لِلنّاسِ لَعَلَّهُم يَتَذَكَّرونَ
মুশরিক নারীদেরকে কখনো বিয়ে করো না,যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে।একটি সম্ভ্রান্ত মুশরিক নারী তোমাদের মনোহরণ করলেও একটি মু’মিন দাসী তার চেয়ে ভালো।আর মুশরিক পুরুষদের সাথে নিজেদের নারীদের কখনো বিয়ে দিয়ো না,যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে।একজন সম্ভ্রান্ত মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করলেও একজন মুসলিম দাস তার চেয়ে ভালো।তারা তোমাদের আহবান জানাচ্ছে আগুনের দিকে আর আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় তোমাদেরকে আহবান জানাচ্ছেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে।তিনি নিজের বিধান সুস্পষ্ট ভাষায় লোকদের সামনে বিবৃত করেন।আশা করা যায়, তারা শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করবে।(সুরা বাকারা ২২১)
উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্টভাবে আল্লাহপাক বলে দিয়েছেন যে,মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করো না,যতক্ষণ তারা ঈমান না আনে।বলেননি যে,ঈমান আনতে রাজি হলে বিয়ে করো।যতক্ষণ না ঈমান আনছে বিয়ে করো না।ঈমান হচ্ছে,আল্লাহর প্রতি, ফিরিশতাগণ, কিতাব সমূহ,রাসুলগণ,শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস এবং কদরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস।
-----উপরের আয়াতে কারীমাটি অবতীর্ণ হয়েছে বিশেষ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ঘটনাটি হল,জাহেলী যুগে আনাক নামের এক মহিলার সাথে হযরত মারছাদ ইবনে আবূ মারছাদ মক্কায় আসেন। তখন ঐ মহিলা তাঁকে পূর্বের মত কাছে পেতে চায়। দীর্ঘ দিনের লালিত কুপ্রস্তাবে রাজি করাতে ব্যর্থ চেষ্টা করে। কিন্তু হযরত মারছাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দেন যে,আজ ইসলাম তোমার-আমার মাঝে অন্তরায় হয়ে গেছে। তারপরও তুমি চাইলে আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওসাল্লাম-এর অনুমতি পাওয়ার পরই কেবল তোমাকে বিয়ে করতে পারি।পরবর্তীতে হযরত মারছাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওসাল্লাম-এর কাছে উক্ত বিবাহের অনুমতি প্রার্থনা করলে উপরিউক্ত আয়াতে কারীমাটি অবতীর্ণ হয় এবং চিরতরে মুশরিক নারীকে বিয়ে করা হারাম হয়ে যায়।
➲ শুধু তাই নয় কোন মুসলমান নারী অন্য কোন মুশরিক পুরুষকেও বিয়ে করতে পারবেনা।এ ব্যাপারে আমার আল্লাহপাক আরও বলেন,
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا إِذا جاءَكُمُ المُؤمِنٰتُ مُهٰجِرٰتٍ فَامتَحِنوهُنَّ ۖ اللَّهُ أَعلَمُ بِإيمٰنِهِنَّ ۖ فَإِن عَلِمتُموهُنَّ مُؤمِنٰتٍ فَلا تَرجِعوهُنَّ إِلَى الكُفّارِ ۖ لا هُنَّ حِلٌّ لَهُم وَلا هُم يَحِلّونَ لَهُنَّ ۖ وَءاتوهُم ما أَنفَقوا ۚ وَلا جُناحَ عَلَيكُم أَن تَنكِحوهُنَّ إِذا ءاتَيتُموهُنَّ أُجورَهُنَّ ۚ وَلا تُمسِكوا بِعِصَمِ الكَوافِرِ وَسـَٔلوا ما أَنفَقتُم وَليَسـَٔلوا ما أَنفَقوا ۚ ذٰلِكُم حُكمُ اللَّهِ ۖ يَحكُمُ بَينَكُم ۚ وَاللَّهُ عَليمٌ حَكيمٌ
মুমিনগণ,যখন তোমাদের কাছে ঈমানদার নারীরা হিজরত করে আগমন করে,তখন তাদেরকে পরীক্ষা কর।আল্লাহ তাদের ঈমান সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।যদি তোমরা জান যে,তারা ঈমানদার,তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না।এরা কাফেরদের জন্যে হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্যে হালাল নয়। কাফেররা যা ব্যয় করেছে,তা তাদের দিয়ে দাও।তোমরা,এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না।তোমরা কাফের নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না।তোমরা যা ব্যয় করেছ,তা চেয়ে নাও এবং তারাও চেয়ে নিবে যা তারা ব্যয় করেছে।এটা আল্লাহর বিধান;তিনি তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন।আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।(সূরা মুমতাহিনা ১০)

❋ মনে রাখতে হবে তাকওয়া হচ্ছে খোদা প্রাপ্তির পূর্বশর্ত।ইসলাম কোন জাত গোষ্টিকে প্রাধাণ্য দেয়না।প্রাধাণ্য পায় তাকওয়াবানরা,সেই জন্য বলা হয়েছে দাসী যদি তাকওয়াবান হয় সেটাই বিয়ের জন্য উত্তম।সুন্দরী অপেক্ষা সাধারণ পরহেজগার নারী বিয়ের জন্য উত্তম।
----তবে আহলে কিতাবীদের বিয়ের ব্যপারে পবিত্র কুরআনে কারীমের সুরা মায়িদার ঐ আয়াত অনেক ব্যখ্যার প্রয়োজন।আল্লাহ সহায় হলে অন্য একদিন আলোচনা করবো।আমি চেষ্টা করেছি মাত্র আর সেই চেষ্টা সার্থক হবে তখনি যখন আপনার লেখাটি বুঝতে সহজ হবে।

লাউ খাওয়া সুন্নাত কথাটির সত্যতা কী?

প্রশ্নঃ লাউ খাওয়া সুন্নাত কথাটির সত্যতা কী?
•✏ইমরান বিন বদরী 
প্রশ্নটি করেছিল এক ভাই কিছুদিন পূর্বে।তার যুক্তি ছিল আরবের ঐ তপ্ত মরুতে লাউয়ের কথা সত্য হতে পারেনা।এতদিন সময় আর অসুস্থতার কারণে লিখতে পারিনি। লাউ ইংরেজী Bottle gourd ফলটি খাওয়া সুন্নাত বলতে এটি আমার সরকারে কায়েনাত সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লামের প্রিয় একটি খাদ্য। যে খাদ্য আমার রাসুলের (দরুদ) পছন্দ তা উম্মতে মুহাম্মদীর পছন্দ হওয়া চাই।কারণ পবিত্র কুরআনুল কারীমের সুরা আহজাবে আল্লাহপাক বলেন, لَقَد كانَ لَكُم فى رَسولِ اللَّهِ أُسوَةٌ حَسَنَةٌ
তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ । (সুরা আহজাব-২১)
অর্থাত রাসুলে কারীমের পছন্দ ঈমানদারের পছন্দ হওয়া চাই।এখানে রয়েছে উম্মতের জন্য মহা কল্যাণ।সেই ১৫০০ বছর পূর্বে আমার রাসুলের প্রিয় খাদ্য লাউ বর্তমান বিজ্ঞানের যুগেও মানবদেহের উপকারী একটি খাদ্য হিসেবে প্রমাণিত।চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে,লাউ মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য।প্রতি ১০০ গ্রাম লাউয়ে আছে, কার্বোহাইড্রেট- ২.৫ গ্রাম, প্রোটিন- ০.২ গ্রাম, ফ্যাট- ০.৬ গ্রাম, ভিটামিন-সি- ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২০ মি.গ্রা.,ফসফরাস- ১০ মি.গ্রা.,পটাশিয়াম- ৮৭ মি.গ্রা., নিকোটিনিক অ্যাসিড- ০.২ মি.গ্রা.। এছাড়াও লাউয়ে রয়েছে খনিজ লবন, ভিটামিন বি-১, বি-২, আয়রন।
আসুন হাদিসে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম দেখি তখনকার সময় লাউ ছিলো কিনা।
➲ হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, إِنَّ خَيَّاطًا دَعَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِطَعَامٍ صَنَعَهُ قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ فَذَهَبْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى ذَلِكَ الطَّعَامِ فَقَرَّبَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم خُبْزًا وَمَرَقًا فِيهِ دُبَّاءٌ وَقَدِيدٌ فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ يَتَتَبَّعُ الدُّبَّاءَ مِنْ حَوَالَيْ الْقَصْعَةِ قَالَ فَلَمْ أَزَلْ أُحِبُّ الدُّبَّاءَ مِنْ يَوْمِئِذٍ এক দরজী খাবার তৈরী করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাওয়াত করলেন। আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে রুটি এবং ঝোল যাতে লাউ ও গোশতের টুকরা ছিল, পেশ করলেন। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেলাম যে, পেয়ালার কিনারা হতে তিনি লাউয়ের টুকরা খোঁজ করে নিচ্ছেন। সেদিন হতে আমি সব সময় লাউ ভালবাসতে থাকি।(মুসলিম ২০৪১,আহমাদ ১২৮৬১ ইফা ১৯৬২,বুখারি ৫১১৭)



➲ হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يُحِبُّ الْقَرْعَ নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাউয়ের তরকারী পছন্দ করতেন।(সুনানে ইবনে মাজাহ)

আমি চেষ্টা করেছি মাত্র আর সেই চেষ্টা সার্থক হবে তখনি যখন আপনার লেখাটি বুঝতে সহজ হবে।
------------------

সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১৬

মসজিদ নির্মাণ এর ফজিলত।

মসজিদ নির্মাণ এর ফজিলত।================• ✏ইমরান বিন বদরী 
সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিজগতের রব রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার জন্য; আর সালাত (দুরূদ) ও সালাম আমাদের নবী দোজাহানের সরদার বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সায়্যাদুল মুরসালীন সাফিউল মুজ্নেবিন খাতামান নাবিয়্যীন হাবিবুল্লাহ প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।
মসজিদ (আরবিতে: مسجد ) শব্দের অর্থ সেজদা করার স্থান।মসজিদ আমাদের দলবদ্ধভাবে নামাজ পড়ার জন্য নির্মিত স্থাপনা।সাধারণভাবে, যেসব ইমারত বা স্থাপনায় মুসলমানেরা একত্র হয়ে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ (আরবি: صلاة) আদায় করেন,তাকে মসজিদ বলে।আবার যেসব বড় আকারের মসজিদগুলো নিয়মিত নামাজের সাথে সাথে শুক্রবারের জুম'আর (صلاة الجمعة) নামাজ আদায় হয় এবং অন্যান্য ইসলামিক কার্যাবলী সম্পাদিত হয়,সেগুলো জামে মসজিদ (مسجد جامع) নামে অভিহিত।
মসজিদ আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র।
নামাজ যে কোনো পাক জায়গায় পড়া যায়।তবে মসজিদে নামাজ পড়ার সওয়াব অত্যধিক।পাঞ্জেগানা মসজিদে এক রাকায়াত বাইরে ২৫ রাকাত,জুমআর মসজিদে এক রাকায়াতে বাইরে ৫ শত রাকায়াতের,মসজিদে আকসা ও মসজিদে নববীর এক রাকায়াত ৫০ হাজার রাকায়াতের এবং মসজিদুল হারামের এক রাকায়াত বাইরে এক লাখ রাকায়াত নামাজের সমান।এতেই বুঝা যায় যে,মসজিদে নামাজ পড়লে কি সওয়াব হয়।মসজিদ নির্মাণ ও উহার আবাদ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনুল কারীমে ➲ মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللّهِ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللّهَ فَعَسَى أُوْلَـئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ الْمُهْتَدِينَ
নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে। (সূরা তওবা আয়াত ১৮)
উক্ত আয়াতের আলোকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে,মসজিদ আবাদ করবে ঈমানদারগণ। ঈমানদারের মাঝে তারাই মহান আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়,যারা অত্যাধিক তাকওয়াবান।তাই মসজিদের মোতাওয়ালি্ল হওয়া চাই তাকওয়াবান।
‪#‎মসজিদ‬ নির্মাণ ও উহার ফজিলত বিষয়ক হাদিস শরীফ এর দিকে লক্ষ্য করলে উহার গুরুত্ব আরো অনুধাবন করা সম্ভব।হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,من بنى لله مسجدا قدر مفحص قطاة بنى الله له بيتا فى الجنة যে ব্যক্তি আল্লাহ সন্তুষ্টির নিমিত্তে পাখির ডিম পাড়ার স্থান পরিমান মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। (আহমদ)
➲ হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলেছেন,যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ্ তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।(বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
➲ হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলেছেন,أحب البلاد إلى الله مساجدها، وأبغض البلاد إلى الله أسواقها
স্থান সমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয় স্থান হলো আল্লাহর নিকট মসজিদ সমূহ এবং সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য স্থান হলো বাজারসমূহ।(মুসলিম শরীফ/মিশকাত-৬৯৬)
➲ হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ নির্মাণ করতে এবং মসজিদকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ও উহাতে সুগন্ধি লাগাতে নির্দেশ দিয়েছেন।(আবু দাউদ,তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)
এ সকল হাদিস ছাড়াও আরো বহু হাদিস শরীফে মসজিদ নির্মাণ ও উহার ফজিলত বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।মসজিদের আদব রক্ষা করা।মসজিদে দুনিয়াবী কথা না বলা।মসজিদ নিয়ে গর্ব না করা।এ সকল বিষয় মেনে চলে আমাদের জীবনে মসজিদের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মসজিদের তত্ত্বাবধান যথাযথভাবে করার জন্য আল্লাহ্ তায়ালার সাহায্য কামনা করা কর্তব্য।
‪#‎সমাজে‬ মসজিদের ভুমিকা: পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উত্তম স্থান মসজিদ।তাই মসজিদ আল্লাহর ঘর হিসেবে বিবেচিত।মসজিদে মুসলিমগণ দ্বীনের মূলভিত্তি সালাত দৈনিক পাঁচ বার আদায় করে থাকে।দ্বীনের মূল ভিত্তি আদায়ের স্থান বিধায় দ্বীনের অন্যান্য কার্যাবলী সম্পাদনেও মসজিদের ভুমিকা প্রাসঙ্গিক ও অনস্বীকার্য।মসজিদের সাথে আমাদের সম্পর্ক দৈনন্দিন জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।এটি আমাদের মিলন মেলা,যেখানে আমরা প্রতিদিন পাঁচবার মিলিত হয়ে রবের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের পাশাপাশি আমাদের পারস্পরিক খোঁজ-খবর এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলি। ফলশ্রুতিতে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও ভালবাসার আবেশ ছড়িয়ে পড়ে সমাজে এবং একটি সুশীল সমাজ গড়ে উঠে।মসজিদের পানে যারা ছুটে যায় তাদের জন্য প্রতিটি কদমের বিনিময়ে উত্তম প্রতিদান,মর্যাদা ও গুনাহ মাফের ঘোষনা দিয়েছেন।عن بريدة أن النبى -صلى الله عليه وسلم- قال من تطهر فى بيته ثم مضى الى بيت من بيوت الله يقضى فريضة من فرائض الله كانت خطواته إحداها تحط خطيئة والأخرى ترفع درجة. -أخرجه مسلم হযরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলেন:যে ব্যক্তি তার বাড়ীতে পবিত্রতার অর্জন করল অত:পর ফরজ ইবাদত আদায়ের উদ্দেশ্যে আল্লাহর ঘরে (মসজিদে) গেল তার এক কদমের বিনিময়ে গুনাহ মার্জনা হবে এবং অপর কদমের বিনিময়ে মর্যদা বৃদ্ধি পাবে।(মুসলিম)
‪#‎ইসলামের‬ প্রাথমিক যুগে মসজিদের ভুমিকা: ইসলামের প্রাথমিক যুগে সমাজ পরিবর্তনে মসজিদের ভুমিকাই ছিল প্রধান।মসজিদ ছিল একই সাথে দাওয়াতী কাজের প্রাণকেন্দ্র এবং রাষ্ট্রীয় ভবন।দাওয়াতী কার্যক্রম এখান থেকেই পরিচালনা করা হত।বিভিন্ন বিষয়ের পরামর্শ ও সিন্ধান্ত গ্রহণ এখানেই সম্পাদন করা হত।বিভিন্ন দেশ ও এলাকা থেকে আগত প্রতিনিধি ও মেহমানদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম মসজিদেই স্বাগত জানাতেন।সাহাবায়ে কিরামের সাথে মসজিদেই তিনি মিলিত হতেন এবং তাদের শিক্ষাদান করতেন।এক কথায়:মসজিদ ছিল তৎকালীন মুসলিম সমাজের যাবতীয় কাজের কেন্দ্রস্থল।
দৈনিক পাঁচবার মসজিদে যেতে সক্ষম সেই রবের সন্তুষ্টির জন্যই অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার মানসিকতা তার অন্তরে জাগ্রত হয়।আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
إن الصلاة تنهى عن الفحشاء والمنكر
নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।(সুরা আনকাবুত ৪৫)
ইসলামকে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর মনোনীত একমাত্র দীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং সেই দীনে আমাদেরকে পুরোপুরিভাবে দাখিল হওয়ার তৌফিক দিন।