বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

মুসলমানের পারস্পরিক (হক) অধিকার


মুসলমানের পারস্পরিক (হক) অধিকার 
ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।মহান আল্লাহ তা’আলা মানব জাতিকে সুন্দরতম গঠনে সৃষ্টি করেছেন।শুধু সৃষ্টি করেননি,সৃষ্টির পাশাপাশি অফুরন্ত নেয়ামত দানের মাধ্যমে এই পৃথিবীর বুকে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সম্মান-মর্যাদার সাথে জীবন যাপনের সুযোগও দান করেছেন।এবং সমগ্র মানব জাতির জন্য একটি নির্ভুল পদ্ধতি এঁকে দিয়েছে।এ নির্ভুল পদ্ধতির নাম হচ্ছে ‘ইসলাম’।যা সর্বক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ করে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা রূপে মনোনীত করেছেন।
‪#‎পবিত্র‬ কুরআনে আমার আল্লাহ ইরশাদ করেন- إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।(সূরা আলে ইমরান ১৯)
আল্লাহপ্রদত্ব জীবন ব্যবস্থাই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত।যার মাঝে রয়েছে জীবনের প্রতিটি স্তর ও বিভাগের সুষ্ঠু সমাধান।এতে রয়েছে ভ্রাতৃত্ব,অধিকার ও কর্তব্যের সুন্দর সমন্বয়।সবাইকে দেয়া হয়েছে তার প্রাপ্ত অধিকার।এবার আসুন মূল আলোচনায়।ইসলামে সেই খোদা প্রদত্ব ভ্রাতৃত্বে একে অন্যের প্রতি রয়েছে কিছু অধিকার যার কিছুটা আজকে আলোচনা করবো যদি আল্লাহপাক সহায় হোন।সর্বপ্রথম দরুদ পড়ে শুকরিয়া আদায় করছি সেই নবীর (দরুদ) উম্মত হতে পেরে যাকে সৃষ্টি না করলে সৃষ্টিকর্তা কিছুই সৃষ্টি করতোনা।

মুসলমান ভাইয়ের একে অন্যের প্রতি অধিকার।
-----------------------
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া একটি সামগ্রিক মূল্যবান নিয়ামত।
ইসলাম যে সব অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে,তার অন্যতম হলো- এক মুসলমান ভাইয়ের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের (হক)অধিকার।#পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই।অতএব,তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ 
মুমিনগণ,কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে।কেননা,সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে।কেননা,সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে।তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ।যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
মুমিনগণ,তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক।নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ।এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না।তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে ? বস্তুতঃতোমরা তো একে ঘৃণাই কর।আল্লাহকে ভয় কর।নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী,পরম দয়ালু।(সুরা হুজুরাত ১০-১২)
মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের জন্য 'ইসলাম'একমাত্র আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত জীবনাদর্শ।আমাদের উচিত অপর মুসলমান ভাইয়ের হক বা অধিকার আদায় করার মাধ্যমে এই ভ্রাতৃত্ববোধকে অব্যাহত রাখা।এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের সর্বপ্রথম হক হলো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তাকে ভালোবাসা।
‪#‎হজরত‬ আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
 وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ  মানুষকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা।(সহিহ মুসলিম ১৭৫)
অন্যদিকে মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের সুনির্দিষ্ট ছয়টি হকের আলোচনা এসেছে।
#হজরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- 
حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ قِيلَ مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَسَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ 
এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে।বলা হলো,সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন,
(১) তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে,তাকে সালাম দেবে।
(২) সে যখন তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে তা রক্ষা করবে।
(৩) সে যখন তোমার মঙ্গল কামনা করবে,তুমিও তার শুভ কামনা করবে।
(৪) যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে,তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে।
(৫) যখন সে অসুস্থ হবে,তুমি তাকে দেখতে যাবে।
(৬) এবং যখন সে মারা যাবে,তখন তার জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।(মুসলিম ৫৭৭৮)
আরেকটি হক হলো,তার সম্পর্কে মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রাখা।যেমন-
#হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 
لاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَدَابَرُوا وَلاَ تَنَافَسُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا তোমরা পরস্পর হিংসা করো না,একে অন্যের পেছনে লেগে থেকো না এবং একে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না।বরং একে অন্যের সাথে ভাই-ভাই ও এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও।(মু,আহমদ ৯০৫১)
➲ এছাড়াও আরো অনেক অধিকার রয়েছে।যেমন এতিমের অধিকার সহ ইসলাম প্রতিবেশীদের হক নির্ধারণ করে দিয়েছে যেমনিভাবে নিকটাত্মীয়দের অধিকার আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে।অপর ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে যা নিজের জন্য পছন্দ করে।তার সাথে বিনয়ী আচরণ করবে।কখনও অহংকারী হবে না।তার গীবত বা পিছনে নিন্দা করবে না।তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে না।তাকে উপহাস করবে না।তার দোষ ত্র“টি খুঁজে বের করবে না।তার প্রতি কোন ধরনের অপবাদ দিবে না।তার প্রতি দয়া ও মহানুভবতা দেখানো এবং তার কষ্ট হয় এমন ব্যবহার না করা।
‪#‎আল্লামা‬ কবি শেখ সাদি (রহ.) বলেছেন- গোটা মুসলিম জাতি একটি মানব শরীর।
➲ পরিশেষে আমাদের জেনে রাখা উচিত,মানুষের অন্তরের ব্যাধিসমূহের অন্যতম হলো হিংসা-বিদ্বেষ।সুতরাং কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রেখে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে অপর মুসলিম ভাইয়ের হক বা অধিকারগুলোকে যথাযথভাবে আদায় করার মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধ মুমিন ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করার তওফিক দান করুন।আমিন।
************

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন