বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬

মুশরিক'কে বিয়ে করা

 মুশরিক'কে বিয়ে করা =• ✏ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
বিয়ে মানব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।একাকীত্ব জীবনের অবসান ঘটিয়ে পারিবারিক বন্ধনকে সূ-দৃঢ় করার নিমিত্বে দুই পরিবারের মধুর এই সম্পর্ককে আমরা বিয়ে বলতে পারি।বিয়ে শুধু শারীরীক সম্পর্কের নাম নয় বিয়ে মানষিক, সামাজিক, পারিবারিক,ধর্মিয় নিয়মে সুন্দর একটি বন্ধনের নাম।ইসলামে বিয়ে করা সুন্নত এ রাসূল সল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওসাল্লাম,এতে সন্ন্যাসী জীবনের বিরোধিতা করা হয়েছে।নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের জীবন সঙ্গী বেছে নেন এবং এর মাধ্যমে একটি পরিবার গঠিত হয়।এই পরিবারে ছায়াতলেই নীতি-নৈতিকতা ও গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে ওঠে ভবিষ্যত প্রজন্ম।আর ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান,তাই পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তার রয়েছে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা।এবার আসুন মূল আলোচনায়।মুশরিক নারী বিয়ে করার পূর্বে জেনে নিই মুশরিক কারা?


❋ মুশরিকের সংজ্ঞাঃ রব হিসাবে (একত্ববাদ) মহান আল্লাহপাকের সাথে দ্বিতীয় কাউকে শরীক সাব্যস্ত কারীরাই মুশরিক।অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়াত তথা ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সাথে গায়রুল্লাহকে শরীক করা।অর্থাত প্রভু রুপে গ্রহণকরা বা সমকক্ষ মনেকরা ইত্যাদি।
➲ আমার আল্লাহ বলেন,وَاعبُدُوا اللَّهَ وَلا تُشرِكوا بِهِ شَيـًٔا তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক্ করবে না।(সূরা নিসা ৩৬)
➲ আল্লাহ আরও বলেন, لا تُشرِك بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّركَ لَظُلمٌ عَظيمٌ আল্লাহর সাথে শরীক করো না।নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।(সুরা লোকমান ১৩)
➲ মুশরিকদের জন্য আল্লাহপাক জান্নাতকে হারাম করে দিয়ে বলেন, إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে,আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন।(সুরা মায়িাদা ৭২)
কবীরা গোনাহের মধ্যে শিরক সবচেয়ে বড় গোনাহ।
➲ আমার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ألَا أنَبِئكُمْ بِأكْبَرِ الكَبَائرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَارَسُوْلَ الله. قاَلَ الْإشْرَاكُ بِالله আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম-জ্বী,অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল !তিনি বললেন:আল্লাহর সাথে শিরক করা।(মুসলিম)
শিরক হলো আল্লাহর পরিপূর্ণ নাফরমানী।প্রকৃতপক্ষে মুশরিক ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে সবচেয়ে অজ্ঞ।সর্বশেষ কথা হচ্ছে,যে ব্যক্তি বা নারী অথবা জাতী,আল্লাহকে ব্যতি রেখে অন্য উপাস্য কামনা করে,অথবা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে তাকে মুশরিক বলা হয়।প্রাচীন আরবে যারা মুর্তি পূজা করতো তাদেরেকে মুশরিক বলা হতো।সেই হিসাবে মুর্তি পুজারীরাই মুশরিক।

❋ বিয়ে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধন।ইসলাম দিয়েছে মানব জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক,সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক,ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কেমন হবে তার দ্ব্যর্থহীন দিকনির্দেশনা।সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিয়ে সম্পর্কিত আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই।সমাজে এখন আমাদের কেউ কেউ অমুসলিম নারীকে বিয়ে করেছেন।বিয়ে করার পরে অনেকে আবার অমুসলিম নারীকে কালেমা পড়িয়ে মুসলিম বানাচ্ছেন।
➲ এ বিষয়ে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন,
وَلا تَنكِحُوا المُشرِكٰتِ حَتّىٰ يُؤمِنَّ ۚ وَلَأَمَةٌ مُؤمِنَةٌ خَيرٌ مِن مُشرِكَةٍ وَلَو أَعجَبَتكُم ۗ وَلا تُنكِحُوا المُشرِكينَ حَتّىٰ يُؤمِنوا ۚ وَلَعَبدٌ مُؤمِنٌ خَيرٌ مِن مُشرِكٍ وَلَو أَعجَبَكُم ۗ أُولٰئِكَ يَدعونَ إِلَى النّارِ ۖ وَاللَّهُ يَدعوا إِلَى الجَنَّةِ وَالمَغفِرَةِ بِإِذنِهِ ۖ وَيُبَيِّنُ ءايٰتِهِ لِلنّاسِ لَعَلَّهُم يَتَذَكَّرونَ
মুশরিক নারীদেরকে কখনো বিয়ে করো না,যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে।একটি সম্ভ্রান্ত মুশরিক নারী তোমাদের মনোহরণ করলেও একটি মু’মিন দাসী তার চেয়ে ভালো।আর মুশরিক পুরুষদের সাথে নিজেদের নারীদের কখনো বিয়ে দিয়ো না,যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে।একজন সম্ভ্রান্ত মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করলেও একজন মুসলিম দাস তার চেয়ে ভালো।তারা তোমাদের আহবান জানাচ্ছে আগুনের দিকে আর আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় তোমাদেরকে আহবান জানাচ্ছেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে।তিনি নিজের বিধান সুস্পষ্ট ভাষায় লোকদের সামনে বিবৃত করেন।আশা করা যায়, তারা শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করবে।(সুরা বাকারা ২২১)
উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্টভাবে আল্লাহপাক বলে দিয়েছেন যে,মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করো না,যতক্ষণ তারা ঈমান না আনে।বলেননি যে,ঈমান আনতে রাজি হলে বিয়ে করো।যতক্ষণ না ঈমান আনছে বিয়ে করো না।ঈমান হচ্ছে,আল্লাহর প্রতি, ফিরিশতাগণ, কিতাব সমূহ,রাসুলগণ,শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস এবং কদরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস।
-----উপরের আয়াতে কারীমাটি অবতীর্ণ হয়েছে বিশেষ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ঘটনাটি হল,জাহেলী যুগে আনাক নামের এক মহিলার সাথে হযরত মারছাদ ইবনে আবূ মারছাদ মক্কায় আসেন। তখন ঐ মহিলা তাঁকে পূর্বের মত কাছে পেতে চায়। দীর্ঘ দিনের লালিত কুপ্রস্তাবে রাজি করাতে ব্যর্থ চেষ্টা করে। কিন্তু হযরত মারছাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দেন যে,আজ ইসলাম তোমার-আমার মাঝে অন্তরায় হয়ে গেছে। তারপরও তুমি চাইলে আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওসাল্লাম-এর অনুমতি পাওয়ার পরই কেবল তোমাকে বিয়ে করতে পারি।পরবর্তীতে হযরত মারছাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওসাল্লাম-এর কাছে উক্ত বিবাহের অনুমতি প্রার্থনা করলে উপরিউক্ত আয়াতে কারীমাটি অবতীর্ণ হয় এবং চিরতরে মুশরিক নারীকে বিয়ে করা হারাম হয়ে যায়।
➲ শুধু তাই নয় কোন মুসলমান নারী অন্য কোন মুশরিক পুরুষকেও বিয়ে করতে পারবেনা।এ ব্যাপারে আমার আল্লাহপাক আরও বলেন,
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا إِذا جاءَكُمُ المُؤمِنٰتُ مُهٰجِرٰتٍ فَامتَحِنوهُنَّ ۖ اللَّهُ أَعلَمُ بِإيمٰنِهِنَّ ۖ فَإِن عَلِمتُموهُنَّ مُؤمِنٰتٍ فَلا تَرجِعوهُنَّ إِلَى الكُفّارِ ۖ لا هُنَّ حِلٌّ لَهُم وَلا هُم يَحِلّونَ لَهُنَّ ۖ وَءاتوهُم ما أَنفَقوا ۚ وَلا جُناحَ عَلَيكُم أَن تَنكِحوهُنَّ إِذا ءاتَيتُموهُنَّ أُجورَهُنَّ ۚ وَلا تُمسِكوا بِعِصَمِ الكَوافِرِ وَسـَٔلوا ما أَنفَقتُم وَليَسـَٔلوا ما أَنفَقوا ۚ ذٰلِكُم حُكمُ اللَّهِ ۖ يَحكُمُ بَينَكُم ۚ وَاللَّهُ عَليمٌ حَكيمٌ
মুমিনগণ,যখন তোমাদের কাছে ঈমানদার নারীরা হিজরত করে আগমন করে,তখন তাদেরকে পরীক্ষা কর।আল্লাহ তাদের ঈমান সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।যদি তোমরা জান যে,তারা ঈমানদার,তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না।এরা কাফেরদের জন্যে হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্যে হালাল নয়। কাফেররা যা ব্যয় করেছে,তা তাদের দিয়ে দাও।তোমরা,এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না।তোমরা কাফের নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না।তোমরা যা ব্যয় করেছ,তা চেয়ে নাও এবং তারাও চেয়ে নিবে যা তারা ব্যয় করেছে।এটা আল্লাহর বিধান;তিনি তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন।আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।(সূরা মুমতাহিনা ১০)

❋ মনে রাখতে হবে তাকওয়া হচ্ছে খোদা প্রাপ্তির পূর্বশর্ত।ইসলাম কোন জাত গোষ্টিকে প্রাধাণ্য দেয়না।প্রাধাণ্য পায় তাকওয়াবানরা,সেই জন্য বলা হয়েছে দাসী যদি তাকওয়াবান হয় সেটাই বিয়ের জন্য উত্তম।সুন্দরী অপেক্ষা সাধারণ পরহেজগার নারী বিয়ের জন্য উত্তম।
----তবে আহলে কিতাবীদের বিয়ের ব্যপারে পবিত্র কুরআনে কারীমের সুরা মায়িদার ঐ আয়াত অনেক ব্যখ্যার প্রয়োজন।আল্লাহ সহায় হলে অন্য একদিন আলোচনা করবো।আমি চেষ্টা করেছি মাত্র আর সেই চেষ্টা সার্থক হবে তখনি যখন আপনার লেখাটি বুঝতে সহজ হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন