সোমবার, ২০ জুন, ২০১৬

ঐতিহাসিক বদর দিবস।

ঐতিহাসিক বদর দিবস।

===¤¤¤¤¤¤===• ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।বদর একটি কূপের নাম।এই কূপের নিকটবর্তী স্থানকে বদর প্রান্তর বলা হয়।এটি মদিনা থেকে প্রায় ৯০কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।৬২৪ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমজান,মুসলমানদের গৌরবময় উজ্জ্বল ইতিহাসের স্বর্ণখচিত ঐতিহাসিক একটি দিন।এটি ছিল ইসলামের প্রথম সিদ্ধান্তমূলক সামরিক যুদ্ধ।এ ঐতিহাসিক যুদ্ধে মুসলমানদের চূড়ান্ত বিজয় রচিত হয়েছিল।বদর যুদ্ধের মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সুনিশ্চিত হয়েছিল।এটি ছিল একটি অসম যুদ্ধ।যুদ্ধে অল্পসংখ্যক মুসলমান সৈন্যবাহিনী বেশি সংখ্যক কাফির সৈন্যবাহিনীর ওপর বিজয় অর্জন করেছিল।

═✽ এবার আসুন, কেন এ অসম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।এ যুদ্ধ মূলত মুসলমানদের আত্নরক্ষামূলক যুদ্ধ ছিল।নবুয়তের পর মক্কী জীবনে আমার আকায়ে তাজিদার নবী মুহাম্মাদ মুস্তফা সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকে তখন আরবের তথা ততকালিন বক্কার কাফিরেরা তাদের পূর্বপুরুষদের পৌত্তলিকতার ধর্মের বিনাস দেখতে পেয়ে রহমাতুল্লীন আলামীন নবী ﷺ সহ মুসলমানদের উপর একের পর এক অত্যাচার শুরু করেদিল।এরি মাঝে তায়িফের ঘটনা সহ অনেক ঘটনার জন্ম দিয়েছিল এই আরবের কুরাইশরা।তারা মেনে নিতে পারেনি তাদের ধর্ম বিলুপ্তিতে এই সত্য সমাগমের অধ্যায়কে।ফলে মিরাজের ঘটনায় আল্লাহ তার হাবিবকে সবকিছু দেখিয়ে পরবর্তীতে হিজরতের অধ্যাদেশ নাজিল করেন।হিজরতের পর মদিনায় বিশ্ব মানবতার মুক্তির সোপান যখন রচনা করেছিলেন আমার নবী ﷺ তখন মক্কার কুরাইশরা মদীনা রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে।ফলে রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।সেদিন মক্কার কাফিররা ১ হাজার সুসজ্জিত সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে সমবেত হলো বদর প্রান্তরে।আর আমার প্রিয় রাসুল ﷺ মাত্র ৩১৩ জন সৈনিককে (সাহাবায়ে কেরাম) নিয়ে উপস্থিত হলেন বদর প্রান্তরে।অসম এ যুদ্ধে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের গায়েবী সাহায্যে করেছিলেন।ফলে আবু জেহেলের বিশাল বাহিনীকে অত্যন্ত কঠিনভাবে পর্যুদস্ত করেছিলেন।যুদ্ধে দুই জন আনসার কিশোর সহদর (আফ্‌রার দুই পুত্র) হযরত মায়াজ (রা.) ও হযরত মোয়াজ (রা.) আবু জেহেলকে হত্যা করেছিল।এবং আমার রাসুলের ﷺ সাথে বিয়াদবী করা সেই কাফিরেরা যারা সিজদারত অবস্থায় উটের গর্ভাশয় আমার নবীর ﷺ নুরানী কাঁধের মাঝখানে রেখে দিয়ে হাসাহাসি করেছিল তাদের সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা বলেন ➲ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ فَوَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُهُمْ صَرْعَى يَوْمَ بَدْرٍ، ثُمَّ سُحِبُوا إِلَى الْقَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ আল্লাহর কসম! আমি এদের সবাইকে বদর যুদ্ধের দিন নিহত লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি।তারপর তাদের হিঁচড়ে বদরের কুয়ায় নিক্ষেপ করা হয়।(সহীহ বুখারী)

═ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা সূত্রে বর্ণিত রাসুল ﷺ (বদরে নিহত) গর্তবাসীদের দিকে ঝুঁকে দেখে বললেনঃ ➲ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ". فَقِيلَ لَهُ تَدْعُو أَمْوَاتًا فَقَالَ " مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ مِنْهُمْ وَلَكِنْ لاَ يُجِيبُونَ
তোমাদের সাথে তোমাদের রব যে ওয়াদা করেছিলেন,তা তোমরা বাস্তব পেয়েছো তো? তখন তাঁকে বলা হল,আপনি মৃতদের ডেকে কথা বলছেন? (ওরা কি তা শুনতে পায়?) তিনি বললেনঃ তোমরা তাদের চাইতে বেশী শুনতে পাও না,তবে তারা সাড়া দিতে পারছে না।(সহীহ বুখারী)
✽═ বদর যুদ্ধ সম্পর্কে সুরা আনফালের ১২-১৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ➲
إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلآئِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُواْ الرَّعْبَ فَاضْرِبُواْ فَوْقَ الأَعْنَاقِ وَاضْرِبُواْ مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ
যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে,আমি সাথে রয়েছি তোমাদের,সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীরস্থির করে রাখ।আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব।কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।
ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ شَآقُّواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَمَن يُشَاقِقِ اللّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
যেহেতু তারা অবাধ্য হয়েছে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের,সেজন্য এই নির্দেশ।বস্তুতঃ যে লোক আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্য হয়,নিঃসন্দেহে আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।
✽═ আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানে আরও বলেন ➲ وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ فَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
বস্তুতঃ আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন,অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক,যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো।(আয়াত ১২৩)
═ ঐতিহাসিক এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ১২মতান্তরে ১৪ জন শহীদ হয়েছিলেন,আর মুশরিক বাহিনীর ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দী হয়েছিলেন। আর এরা ছিল গোত্রসমূহের সর্দার এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি।রাসুল ﷺ যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে আদর্শ নীতি দেখিয়েছেন,বিশ্ব ইতিহাসে তার নজির মেলে না।তাঁর আদেশে আনসার ও মুহাজিররা বন্দিদের ভাগ করে আপন গৃহে নিয়ে যান।মুসলমানদের মেহমানদারি আরসুন্দর আচরণে বিমুগ্ধ হয়ে অনেকেই পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।রাসুল ﷺ তাদের পূর্ব অপরাধের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ না করে।মদিনার শিশুদের শিক্ষাদান ও মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের মুক্তিদান করেন।
═ এ যুদ্ধের সফলতা হচ্ছে:মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি,বিশ্ব বিজয়ের সূচনা,কুরাইশদের শক্তি খর্ব, ইসলামী রাষ্ট্রের পত্তন, মুসলমানদের নবযুগের সূচনা,রাজনৈতিক ক্ষমতায় ভিত্তি স্থাপন,পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে যুগান্তকারী একটি যুদ্ধ।কারণ এ যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী না হলে পৃথিবী থেকে ইসলামের নিশানা বিলীন হয়ে যেত।আর এ যুদ্ধের অপর গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো বদর যুদ্ধের বছরই মুসলমানদের উপর রোজা ফরজ হয়।বদর হলো একটি আত্মত্যাগের ইতিহাস।বদর হলো শাহাদাতের সূচনার ইতিহাস।বদর বিজয়ের পর মদিনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন দলে দলে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করতে থাকে।বদর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পবিত্র মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম তথা মুসলমানদের বিজয়ের ধারা সূচিত হয়েছিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন