বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

এক খৃষ্টান পাদ্রি

এক খৃষ্টান পাদ্রি,সে প্রায় সময় আমাকে একটা কাগজ দিতো আর বলতো কাগজটি পড়ে দেখতে। এভাবে সে একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি বুঝলে পড়ে? আমি প্রথম থেকেই দেখলাম সে তার ধর্মপ্রচার করে যাচ্ছে,কাগজটি ছিলো স্পেনীশ ভাষায়। বুঝেও না বুঝার ভান করে উত্তরে বললাম দেখ পাদ্রি, আমি তোদের ভাষাটা তেমন ভালো করে বুঝিনা। পাদ্রি বলে, তো আমাকে আগে বলিসনি কেন? আমি তোকে বুঝিয়ে দিতাম! সে আরো বললো তোর দেশের ভাষা কোনটি বল আমি সেই ভাষায় কাগজ নিয়ে আসবো। এরা নিজেদের ধর্মকে সহজে প্রসার প্রচারে বিভিন্ন ভাষায় কাগজগুলো তৈরি করে রেখেছেন। বললাম লাগবেনা,পাদ্রি বলে- না না আমার সময় আছে আমি তোকে বুঝাতে সক্ষম হব। আমি অবাক হলাম তার এই আগ্রহ দেখে। এ দেশে তাদের নিজেদের অর্ধেকের চেয়েও বেশী মানুষ যারা ধর্ম মানেনা,ধর্মের প্রতি নুন্যতম জ্ঞানও রাখেনা। ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহটাই তাদের নেই। কিন্তু তারা তাদের ইংলেশিয়া যাকে আমরা গির্জা বলি অর্থাত্‍ ধর্মীয় অনুদানে নিয়োগ প্রাপ্তরা রাস্তায় রাস্তায় ঘরের দরজায় গিয়ে মানুষকে ধর্ম সম্পর্কে বুঝাতে চেষ্টা করে। আর যদি লোকটি অন্যদেশি কিংবা অন্য ধর্মের মনেহয় তার প্রতি তাদের আগ্রহটা দ্বিগুন ভেড়ে যায়। তারা আপ্রাণ চেষ্টায় থাকে ভিনদেশী কাউকে পেলে তাকে কী করে খৃষ্টান ধর্মে দিক্ষীত করা যায়। পাদ্রির সাথে এভাবে অনেক্ষন কথা বলার পর বললাম, দেখ আমি মুসলমান। একজন মুসলমানকে তুই হাজার চেষ্টা করলেও তোর কোন ফায়দা হবেনা বরং তোদের ধর্মের যারা আস্তাহারা, ধর্ম বিমূখ হয়ে পড়ছে তাদেরকে কীভাবে এক সৃষ্টিকর্তাতে বিশ্বাস করাতে পারিস তাই চেষ্টা কর। সে আমার কথা শুনে কিছুক্ষন বোবারমত চুপচাপ থাকার পর অবশ্য বর্তমান বিশ্বের ইসলামের বিষপোড়া ধর্মীয় জিহাদের নামে পাগলামী নিয়ে ইসলামকে কঠাক্ষ করতে চাইলো- কিন্তু তাকে সে সুযোগটা দিলামনা। তাকে উল্টো বুঝালাম ইসলামের প্রকৃত আদর্শটা আসলে কেমন হওয়া চাই। সে কিন্তু চেষ্টায় আছে আমাকে কীভাবে বুঝানো যায় আর ধর্মীয় উগ্রতার দোষারোপে দোষারোপ করে ঘায়েল করা যায়। শেষে অপারগ হয়ে পাদ্রি বলে তোদের নবী মুহাম্মদ আমাদের ধর্মকে চুরি করে নতুন ধর্ম সৃষ্টি করেছে। জিজ্ঞেস করলাম কেমনে? সে বলে,তোদের কুরআনে আমার খেসুছ (jesus স্পেনীশ) অর্থাত্‍ ঈশা আলাইহিস সালামের অনেক কাহিনী রয়েছে যা দেখে পড়ে মুহাম্মদ তোদের কুরআনে ঢ়ুকায়েছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম তুই কী জেনে বলছিস নাকি ধারনা করে বলছিস? বলে না এটা আমাদের সবাই জানে। আশ্চর্য্য হলাম তাদের এমন মূর্খ ধারনা দেখে ! এরপর তাকে অনেক্ষন বুঝালাম। পরে বল্লাম দেখ পাদ্রি, আমার দয়াল নবী মুহাম্মদ মুস্তফা ﷺ এমন একজন নবী যিনি দুনিয়াবী হায়াতে কোন প্রাতিষ্ঠানীক শিক্ষা নেয়নি। তাকে বল্লাম তুই কী জানিস সেই আমলে পবিত্র কুরআনের আয়াতেরমত একটি আয়াত হাজার চেষ্টা করেও তখনকার পন্ডিতরা লিখতে পারেনি! সে বল্ল না। বল্লাম সেই আমলে অর্থাত্‍ আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বেও নানান অজুহাতে ইসলামের অমিয় বাণীকে অশ্বীকার করা হয়েছিলো কিন্তু পারেনি থামিয়ে দিতে। পারেনি অশ্বীকার করতে সত্যেকে। আমার দয়াল নবীর সত্যের অমিয় বাণীতে তখনকার জাহেলিয়াত আলোকিত হয়েছিলো। আমার নবী ﷺ বলেছেন তিনি শিক্ষক হয়ে এসেছেন ধরার বুকে। দুনিয়াবী পাঠদান তোর আর আমার জন্য এটা নবীদের জন্য নয়, এটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য নবী আর উম্মতের মাঝে। আমরা সাধারণ আর নবীরা অসাধারণ। তারা বলতে পারে গায়েব তথা অদৃশ্যের খবর যা আমার আর তোর সম্ভব নয়। সৃষ্টিকর্তার খবর যারা আমাদের প্রকাশ করে সৃষ্টিকর্তাকে চিনিয়েছেন তারাই নবী। আর যদি তোদের নবীর অর্থাত্‍ ঈসা আলাইহিস সালামের কথা পবিত্র কুরআনে বলে থাকেন, তো তাতে এটাই প্রমাণিত যে আমার নবী সত্য নবী যার জ্ঞান কোন যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তোদের নবী ঈসার ৫৭০ বছর পরে এসে যদি তোর নবীর কাহিনী বলতে পারে-এতে কি প্রমাণ করেনা আমার নবী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রেরিত নবী! ।
তাকে আরো বল্লাম দেখ, তখনকার সময় আমার নবীর ﷺ অনেক মুজেজাকেও অশ্বীকার করা হয়েছিলো। সত্য মিথ্যের পার্থক্য না বুঝে যাদুকর বলে আখ্যায়িত করে অবিশ্বাসের দর্পনে নিজেদের অজ্ঞতায় পরিপূর্ণ কুতচিত্ চেহরা দেখেছিলো। সে আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনার পর বলে কুরআনে কি মুসেসের ঘটনা আছে? বললাম মুসেস (মুসা আলাইহিস সালাম) না শুধু আব্রাহাম অর্থাত্‍ ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম সহ সমস্ত সৃষ্টিজগতের সব কিছুই উল্লেখ করা আছে আমার কুরআনে। এমন কোন বিষয় নেই যার সমাধান নেই এ কুরআনে করীমে। অতীত থেকে শুরু করে আগামীর পথচলার পথে এমনকি পরকালের সবকিছুই বর্ণনা করা হয়েছে। পাদ্রি দেখলো- এখানে আর বেশিক্ষন থাকলে হয়তো নিজের বিশ্বাসের উপর আঘাত আসতে পারে ভেবে আবার দেখা হবে বলে সেই যে গেল অনেকদিন আর দেখিনি। আজ হঠাৎ তার সাথে রাস্তায় দেখা হলে সে দেখি কথা বেশি না বাড়িয়ে সুজা চলে যাচ্ছে।

✏ইমরান বিন বদরী ≪

সৎকর্মের প্রতিদান

সৎকর্মের প্রতিদান
════════❋✏ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
জগতের মহান রব আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তার ইবাদতের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। বান্দাকে দিয়েছেন সব কর্মে ইচ্ছার স্বাধীনতা।সুতরাং কর্ম সম্পাদনে একজন্ বান্দার সৎ নিয়্যাতের গুরুত্ব অত্যাধিক।আমার রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ➲
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত।আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।ইমাম ইসমাঈল বুখারী (রাহেমাহুল্লাহ) উনার সহিহ হাদিস গ্রন্থের সূচনায় এই হাদিসটি নিয়তের গুরুত্ব বর্ণনায় সংকলন করেছেন।
ক্ষনিকের এই জীবন চলার পথে মিথ্যে মায়ায় মানুষ সৎকর্মের প্রতি অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত যে যার অবস্হান থেকে সাধ্যমত উত্তম কাজটি করার ইচ্ছাপোষন করা যা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।সৎ কাজে উৎসাহ আর পাপ কাজে বাধা দেয়ার লোক সমাজে হারিয়ে যাচ্ছে।যার ফলে প্রতিনিয়ত সমাজটা যেন খারাফের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। সৎ এবং পাপ কর্মের প্রতিদানে আমার আল্লাহ বলেন, مَن جَاء بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَمَن جَاء بِالسَّيِّئَةِ فَلاَ يُجْزَى إِلاَّ مِثْلَهَا وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ
যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ পাবে এবং যে, একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে।বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। (সুরা আনআম ১৬০)
এ ব্যপারে মানবমুক্তির দিশারী রইয়িছুল মুরছালীন আমার রসুল ﷺ বলেছেন--➲ যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা করে,অথচ এখনো সে তা পূর্ণ করেনি, তথাপি তার জন্য একটি নেকি লেখা হবে। যদি সে ওই কাজটি করে ফেলে,তাহলে তার জন্য দশ থেকে সাত শ; বরং অগণিত নেকি লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি কোনো পাপ কাজের ইচ্ছা করে, অতঃপর তা থেকে বিরত থাকে, তার আমল নামায়ও একটি নেকি লেখা হয়। কিংবা সে যদি মন্দ ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করে, তবে কবল একটি গুনাহ লেখা হয় অথবা একেও মিটিয়ে দেওয়া হয়। (মুত্তাফাকুন আলাই)।



***আসুন দেখি বান্দা ভালো কিছু করলে তার প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের দিতে বেশি দেরি করেনা। বিপদে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাকে সেই ভালো কাজের ওসিলায় সাহায্যও করে থাকেন।নিন্মের হাদিস শরীফটি দেখুন ইমাম বোখারী তার বিখ্যাত বোখারী শরীফে উল্লেখ করেছেন প্রসিদ্ব সাহাবী হযরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।তিনি রসুলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে ----➲ তিনজন লোক হেঁটে চলছিল। তাদের উপর বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। এমন সময় পাহাড় থেকে একটি পাথর তাদের গুহার মুখের উপর গড়িয়ে পড়ে এবং মুখ বন্ধ করে ফেলে। তাদের একজন অপরজনকে বললঃ তোমরা তোমাদের কৃত আমলের প্রতি লক্ষ্য করো, যে নেক আমল তোমরা আল্লাহর জন্য করেছ; তার ওসিলায় আল্লাহর নিকট দু’আ করো। হয়তো তিনি এটি সরিয়ে দিবেন। তখন তাদের

#একজন বলল ইয়া আল্লাহ! আমার বায়োবৃদ্ধ মাতাপিতা ছিল এবং ছেটি ছোট শিশু ছিল। আমি তাদের (জীবিকার) জন্য মাঠে পশু চরাতাম। যখন সন্ধায় ফিরতাম, তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তানদের আগেই পিতামাতাকে পান করতে দিতাম। একদিন সেগুলো দূরে বনের মধ্যে চলে যায়। ফলে আমার ফিরতে রাত হয়। ফিরে দেখলাম তারা উভয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি যেমন দুধ দোহন করতাম, তেমনি দোহন করলাম। তারপর দুধ নিয়ে এলাম এবং উভয়ের মাথার কাছে দাড়িয়ে রইলাম। ঘূম থেকে তাদের উভয়কে জাগানো ভাল মনে করলাম না। আর তাদের আগে শিশুদের পান করানোও অপছন্দ করলাম। আর শিশুরু া আমার দু”পায়ের কাছে কান্নাকাটি করছিল। তাদের ও আমার মাঝে এ অবস্থা চলতে থাকে। অবশেষে ভোর হয়ে গেল। (ইয়া আল্লাহ) আপনি জানেন যে, আমি কেন আপনার সন্তানটির জন্যই একাজ করেছি। তাই আপনি আমাদের জন্য একটু ফাক করে দিন, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পাই।
তখন আল্লাহ তাদের জন্য একটু ফাক করে দিলেন, যাতে তারা আকাশ দেখতে পায়।

#দ্বিতীয় ব্যক্তি বললঃ ইয়া আল্লাহ আমার একটি চাচাৎ বোন ছিল। আমি তাফে এতখানি ভালবাসতাম, যতখানি একজন পূরুষ কোন নারীকে ভালবাসতে পারে। আমি তাতে একান্তভাবে পেতে চাইলাম। সে অসম্মতি জানাল, যতক্ষণ আমি তার কাছে একশ- দীনার উপস্থিত না করি। আমি চেষ্টা করলাম এবং একশ- স্বর্ণমুদ্রা জোগাড় করলাম। এগুলো নিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম। যখন আমি তার দু-পায়ের মখ্যে বসলাম, তখন সে বলল
হে -আবদুল্লাহ! আল্লাহকে ভয় করো; আমার কুমারিত্ত নষ্ট করো না। তখন আমি উঠে গেলাম। ইয়া আল্লাহ! আপনি জানেন যে, কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যই আমি তা করেছি। তাই আমাদের জন্য এটি ফাক করে দিন। তখন তাদের জন্য আল্লাহ আরও কিছু ফাক করে দিলেন।

#শেষের লোকটি বললঃ ইয়া আল্লাহ! আমি একজন মজদুরকে এক “ফারক”- চাউলের বিনিময়ে কাজে নিয়োগ করেছিলাম। সে তার কাজ শেষ করে এসে বলল, আমার প্রাপ্য দিয়ে দিন। আমি তার প্রাপ্য তার সামনে উপস্থিত করলাম কিন্তু সে তা ছেড়ে দিল ও প্রত্যাখ্যান করলো। তারপর তার প্রাপ্য আমি জমাগত কৃষিকাজে খাটাতে লাগলাম। তার দ্বারা অনেকগুলো গরু ও গাধা জমা করলাম। এরপর সে একদিন আমার কাছে এসে বললঃ আল্লাহকে ভয় কর, আমার উপর যুলম করো না এবং আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও। আমি বললামঃ গরু ও রাখালের কাছে চলে যাও। সে বললঃ আল্লাহকে ভয় করো, আমরে সাথে উপহাস করো না। আমি বললাম তোমার সঙ্গে আমি উপহাস করছি না। তুমি ঐ গরুগুলো ও তার গাধা নিয়ে যাও। তারপর সে ওগুলো নিয়ে চলে গেল। (ইয়া আল্লাহ) আপনি জানেন যে, তা আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্যই করেছি, তাই আপনি অবশিষ্ট অংশ উন্মুক্ত করে দিন। তারপর আল্লাহ তাদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দিলেন। سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر

✪বন্ধুরা-➲ লাইকের আশায় নয়,শুধুমাত্র আল্লাহ এবং তার হাবীবের দেখিয়ে দেয়া পথ আপনার সামনে উপস্থাপন করাই আমার উদ্দেশ্য।আসুন ভালো কাজ নিজে করি এবং অন্যকে করতে উৎসাহ দিই কেননা আমার রসুল ﷺ বলেছেন--➲ أَمْرٌ بِمَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ
প্রত্যেক ভালো কাজের হুকুম দেয়া হচ্ছে সদকাহ্ এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত করাও হচ্ছে সদকাহ্।
(শেয়ার করে মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন)।

বিদআত শব্দটির অপব্যবহার।

বিদআত শব্দটির অপব্যবহার।
═══❋---❋═══ ✏ইমরান বিন বদরী ≪
বিদআত এটি গুরুত্ত্বপূর্ণ একটি বিষয়।বর্তমানে এ বিষয়ে সঠিক ধারনা না থাকায় আমাদের সরলমনা মানুষ এক গোলাটে পরিস্থতিতে রয়েছে। সমাজের একশ্রেনীর আলেম বর্তমানে শব্দটির অপব্যবহারে নিজেদের স্বপক্ষে অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার করে আমারমত সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহের যে চারা রুপন করছে তার ফলাফল ফিতনা ছাড়া আর কিছু পাচ্ছিনা। বর্তমানে আলেম সমাজে বিভিন্ন মতের কারণে ইসলামের সঠিক আলোচনা করার সাহস নেই বল্লে চলে।প্রয়োজনের তাকিদ দেখিয়ে অপ্রয়োজনীয় আলোচনা করে দিনের পর দিন ফিতনার হাত লম্বা-ই করতে চলছে। ফলে সাধারণ মানুষদেরকে ধর্মবিমূখ করে দিচ্ছেন। ১৪০০ বছর আগের পরিপূর্ণ ইসলামকে এবং পরবর্তীতে ইসলামের কিছু কিছু বিষয় যা অষ্পষ্ট তা ইমামদের ইজতিহাদী ফলাফলে সমাধান করা অনেক বিষয়কেও বিদায়াতের পর্যায়ে নিয়ে ইসলামকে পেকেজ করার মানসিকতায় অহেতুক সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমি সত্যকে সব সময় সামনে রেখে নিজের ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু বুঝি তাই লিখতে চেষ্টা করি। আত্নপ্রচারে নয়,কেবল প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেখিয়ে দেয়া পথ আমার মত সাধারণদের মাঝে পৌঁছে দিয়ে মহান রব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন করাই অধমের একমাত্র উদ্দেশ্য। ইসলামী শরীয়তে হারাম,শিরীক,বিদআত এ শব্দগুলির ব্যবহার সাবধানে করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী কর্তব্য। মনের হীনস্বার্থে এসব শব্দ ব্যবহার করে মুসলীম সমাজে ফিতনা যারা সৃষ্টি করে তাদের কতটুকু ক্ষমা করবেন তা আল্লাহপাকই ভালো জানেন।

'বিদআত' আরবি শব্দ। আভিধানিক অর্থ নতুনত্ব বা নতুন আবিষ্কার। আর পরিভাষায় মোল্লা ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন وَفِى الشَّرْعِ اِحْدَاثُ مَالَمْ يَكُنْ فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ বিদআত হচ্ছে শরীয়তে ওই ধরনের কাজের সূচনা করা, যা হুযুরপাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ছিল না।(মিরকাত শরহে মিশকাত) অর্থাৎ ইসলামী শরীয়তে এমন কিছু আবিষ্কার বা সংযোজন করা যা শরীয়তের মূল বিষয়ের পরিপন্তী এবং রসুলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের রেখে যাওয়া কিতাবুল্লাহ (কুরআনে করীম) এবং সুন্নাহর পরিপন্তী। বিদাআতের ব্যপারে আমার নবী কঠোরভাবে সাবধান করেছেন।কারণ এই বিদাআতের কারণে মানুষ ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে হারিয়ে গিয়ে সিরাতাল মুস্তাকীমের পথ ভুলে যেতেপারে। রসুলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন :
إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ. رواه مسلم والنسائى.
নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল নব উদ্ভাবিত বিষয়।আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। (নাসায়ী ১৫৬০,মুসলিমঃ ৭৬৮)
---উপরোক্ত হাদিস শরীফটিতে ভালো করে লক্ষ্য করুণ এতে দ্বীনের ব্যপারে এমন কাজ যা শরীয়তের বিপরীতে অবস্থান অর্থাৎ যা পালনে-আমলে রয়েছে ষ্পষ্ট ভ্রষ্টতা এবং যে কাজ কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে অবস্থান করে ইসলামের সম্পূর্ণ পরিপন্তী যাতে রয়েছে গোমরাহী। যা পালনে ইবাদাতের মূল বিষয়ে পরিবর্তন নিয়ে আসে অর্থাৎ ফরজ,ওয়াজীব,সুন্নাতের মাঝে নব সংযোজন করে ইবাদাতের মূল আমলে পরিবর্তন নিয়ে আসা। আর সেটিই হচ্ছে সম্পূর্ণ রুপে বিদাআত যার গন্তব্য জাহান্নাম।
যেমন-বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম" সশব্দে না পাঠ করা প্রসঙ্গে
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ إِيَاسٍ الْجُرَيْرِيُّ، عَنْ قَيْسِ بْنِ عَبَايَةَ، عَنِ ابْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ، قَالَ سَمِعَنِي أَبِي، وَأَنَا فِي الصَّلاَةِ، أَقُولُ: (بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ) فَقَالَ لِي أَىْ بُنَىَّ مُحْدَثٌ إِيَّاكَ وَالْحَدَثَ . قَالَ وَلَمْ أَرَ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ أَبْغَضَ إِلَيْهِ الْحَدَثُ فِي الإِسْلاَمِ يَعْنِي مِنْهُ . قَالَ وَقَدْ صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَمَعَ أَبِي بَكْرٍ وَمَعَ عُمَرَ وَمَعَ عُثْمَانَ فَلَمْ أَسْمَعْ أَحَدًا مِنْهُمْ يَقُولُهَا فَلاَ تَقُلْهَا إِذَا أَنْتَ صَلَّيْتَ فَقُلِ: (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَالْعَمَلُ عَلَيْهِ عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِنْهُمْ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ وَعَلِيٌّ وَغَيْرُهُمْ وَمَنْ بَعْدَهُمْ مِنَ التَّابِعِينَ وَبِهِ يَقُولُ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَابْنُ الْمُبَارَكِ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ لاَ يَرَوْنَ أَنْ يَجْهَرَ بِـ (بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ) قَالُوا وَيَقُولُهَا فِي نَفْسِهِ .
হযরত ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমার পিতা (আবদুল্লাহ) আমাকে নামাযের মধ্যে শব্দ করে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' পাঠ করতে শুনলেন। তিনি বললেন, হে বৎস! এটা তো বিদ'আত; বিদ'আত হতে সাবধান হও। তারপর তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাদের চেয়ে অন্য কাউকে ইসলামে বিদ'আতের প্রচলন করার প্রতি এত বেশী ঘৃণা ও শত্রুতা পোষণ করতে দেখিনি। তিনি আরো বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বাকার রাদিআল্লাহু আনহু, উমার রাদিআল্লাহু আনহু ও উসমান রাদিআল্লাহু আনহু-এর সাথে নামায আদায় করেছি। কিন্তু তাদের কাউকে বিসমিল্লাহ সশব্দে পাঠ করতে শুনিনি। অতএব তুমিও সশব্দে পাঠ কর না। যখন তুমি নামায আদায় করবে তখন আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” এর মাধ্যমে কিরা'আত শুরু করবে। (তিরমিজী)
বিদআত বিষয়টি নিকৃষ্ট এ জন্যই বিদআতকে ভ্রষ্টতা বলে অভিহিত করা হয়েছে।বিদআতের সাথে শরীয়তের কোন ইবাদাতের মিল থাকতে পারেনা।কুরআনে পাকের হুকুম এবং আমার রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফেয়লি এবং কওলিতে নির্দেশিত যা দেখিয়ে দিয়েছেন তার বিপরীতে অন্যভাবে নতুনত্ত্ব দিয়ে পালন করাই প্রকৃত বিদাআত।
আমি বিদাআতের প্রকার উল্লেখ করছিনা কারণ বিদাআত বলতে যতটুকু বুঝি সুরা মায়িদার ৩ আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন যে ইসলামের পূর্নাঙ্গতার কথা বলেছেন তার মাঝে নতুন কিছু সংযোজন করাই বিদাআত। বর্তমানে আমাদের সমাজে ''বিদাআত'' শব্দের ব্যবহার হচ্ছে নিজের স্বার্থানুযায়ী।যার ফলে একে অন্যের বিরুদ্ধে অযাচিত ফতোয়া দিয়ে দিনের পর দিন মুসলমানের মাঝে যোজন বিয়োজন দূরত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মাঝে বিভেধ সৃষ্টিকারী কোন আলেম- কাল কিয়ামতের দিনে আল্লাহর দরবারে রেহাই পাবেনা। মুসলমানদের মাঝে বিভেধ সৃষ্টি করা পাপ।বাংলাদেশে ইসলামের মূল বিষয়ে ইবাদাতের কোনো আমল নিয়ে বিভেধও নেই বিতর্কও নেই। সকলেই একই মতের একই পথের। সকলে রসুলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তবে তাবেঈন যেভাবে ইসলাম পালন করেছেন সেভাবেই পালন করে থাকে। যা শতাব্দীর পর শতাব্দী একি নিয়মে চলে আসছে।হয়তোবা আকিদাগত কিছু মতপার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু বর্তমানে কিছু আলেম নামের বিভেধ সৃষ্টিকারী লোক কথায় কথায় ছহি যঈফের কথা বলে যে বা-যারা হাদিস কিংবা উসুলে হাদিসের নুন্যতম ধারনাও নেই তাদের মনে সন্দেহের বীজ রুপন করছেন এই বলে -এটি সহীহ হাদিস দিয়ে প্রমাণ নয় সুতরাং এটা পরিতায্য। তারা এভাবে বিতর্ক জোড়ে দিয়ে বিভিন্ন মাসয়ালা নিয়ে বিভেধ সৃষ্টি করে চলছে মুসলমানদের মাঝে। ইসলামী অনৈক্যের মূলে এখন তারাই সবচেয়ে বড় অবদান রাখছেন।
আসুন জেনে নিই সব নতুন কাজ কিন্তু বিদাআত নয়। সবকিছুকে বিদাআতের পর্যায়ে নিয়ে ফতোয়া দেয়াটাও ইসলামে ফিত্নাবাজ হিসেবে গন্য হবে। যেমনঃ জুমু‘আহর দিনের আযান।
آدَمُ قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ كَانَ النِّدَاءُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوَّلُهُ إِذَا جَلَسَ الْإِمَامُ عَلَى الْمِنْبَرِ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فَلَمَّا كَانَ عُثْمَانُوَكَثُرَ النَّاسُ زَادَ النِّدَاءَ الثَّالِثَ عَلَى الزَّوْرَاءِ قَالَ أَبُو عَبْد اللهِ الزَّوْرَاءُ مَوْضِعٌ بِالسُّوقِ بِالْمَدِينَةِ.
হযরত সায়িব ইবনু ইয়াযীদ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বকর রাদিআল্লাহু আনহু এবং উমর রাদিআল্লাহু আনহু -এর সময় জুমু‘আহর দিন ইমাম যখন মিম্বরের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেয়া হত। পরে যখন ‘উসমান রাদিআল্লাহু আনহু খলীফাহ হলেন এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি ‘যাওরাহ’ হতে তৃতীয়* আযান বৃদ্ধি করেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেন, ‘যাওরাহ’ হল মাদ্বীনার অদূরে বাজারের একটি স্থান। (সহীহ বুখারী)
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا أَبُو إِسْرَائِيلَ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " مَنْ سَنَّ سُنَّةً حَسَنَةً فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ كَانَ لَهُ أَجْرُهَا وَمِثْلُ أُجُورِهِمْ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ سَنَّ سُنَّةً سَيِّئَةً فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهُ وَمِثْلُ أَوْزَارِهِمْ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْئًا " .
হযরত আবূ জুহাইফাহ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি কোন ভালো প্রথার প্রচলন করলে এবং তার পরে তদনুসারে কাজ করলে তার জন্য এ কাজের পুরস্কার রয়েছে, অধিকন্তু তার অনুসরণকারীদের সমপরিমাণ পুরস্কারও রয়েছে। অবশ্য তাতে তাদের পুরস্কারে কোন ঘাটতি হবে না। পক্ষান্তরে কোন ব্যাক্তি কোন মন্দ প্রথার প্রচলন করলে এবং তার পরে তদনুযায়ী কাজ করা হলে তার জন্য এ কাজের গুনাহ রয়েছে এবং যারা তদনুসারে কাজ করবে তাদের গুনাহের সমপরিমাণ তার উপর বর্তাবে, এতে তাদের গুনাহের পরিমাণ কিছুই কমবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
এই হাদিস শরিফটি একিভাবে হযরত জারী রাদিআল্লাহু আনহু এবং হাদিস বর্নণাকারীদের সম্রাট হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্নণা করেছেন।
উপরোক্ত হাদীসের প্রথম আমলটা যেন করেছিলেন খলীফাতুল মুসলেমীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রাদ্বিআল্লাহু আনহু তারাবির সালাত জামায়াতের সাথে পড়ার প্রবর্তন করে। এতে বুঝা যায় বিদাআতের ধরনের মাঝেও পার্থক্য রয়েছে, এক উত্তম বিদআত অন্যটি নিকৃষ্ট বিদআত। বিদআতে হাসানা মুসলমানরা করলেও বিদাআতে সাইয়্যা অর্থাৎ নিকৃষ্ট বিদাআত করা একজন মুসলমানের পক্ষে অসম্ভব। আমি আর লম্বা করতে চাইনা শুধু এতটুকু বলবো ফিত্না যেন সৃষ্টিকরা না হয়। আর যদি একে অন্যের বিপক্ষে ইচ্ছানুযায়ী ফতোয়া দিতে থাকে তবে মনে রাখতে হবে কেউ তথাকথিত ফতোয়ার ঊর্ধে নয়। ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিচ্ছি কারণ আমার বুঝেও ভুল হতেপারে আল্লাহ ক্ষমা করুক আমাকে।

কালজয়ী বিখ্যাত আলেম মওলানা রুমি রহ

কালজয়ী বিখ্যাত আলেম মওলানা রুমি রহ.
❋═════ ✏ইমরান বিন বদরী ≪
মওলানা রুমি ও মসনবি শরিফ নাম দুটি আমাদের মধ্যে বহুল পরিচিত। ধর্মীয় মাহফিল, মাদরাসা, খানকাহ সর্বত্র এখনও মওলানা রুমি (রহ.)রচিত মসনবি শরিফের বয়েত পাঠ ও ব্যাখ্যা করে ভক্ত হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটানো হয়। বিশেষত, দর্শন ও সাহিত্যাঙ্গনে মওলানা রুমির জনপ্রিয়তা কালজয়ী। তাসাউফ,তরিকত,আল্লাহ প্রেমের সাধনা বলতে যে অর্থ গ্রহণ করা হয় তার অমর বিশ্বকোষ মসনবি।ইতিহাসের বিশ্ব বিখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি (র)।মাওলানা রুমি প্রাথমিক জীবনে সারা দিন হাদিস,তফসির ইত্যাদি ধর্ম গ্রন্থের কিতাব পাঠে সময় ব্যায় করতেন।মাওলানা রুমির আশে পাশে লক্ষ লক্ষ মুরিদান,আলেম, মুহাদ্দিস বসে থাকতেন শুধু তার মুখের একটু বানি শোনার জন্য,কিন্তু যখন তার বয়স ৪০ তখন কোথাকার এক পাগল শামস তাব্রিজ নামের এক মস্ত বড় আউলিয়া তার দিনের খাওয়া ও রাতের ঘুম হারাম করে ফেলেন।


মওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (مولانا جلال الدين محمد رومي)
তুর্কি ভাষায় Mevlânâ Celâleddin Mehmed Rumi (১২০৭ - ১২৭৩) মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বাল্খি নামেও পরিচিত, কিন্তু বিশ্ব তাকে সংক্ষেপে রুমি নামে জানে। তিনি ত্রয়োদশ শতকের একজন ফার্সি কবি, ধর্মতাত্ত্বিক এবং সুফি দর্শনের শিক্ষক ছিলেন।রুমি খোরাসানের (বর্তমান আফগানিস্তান ) বলখ শহরে ১২০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর (৬০৪ হিজরি ৬ই রবিউল আউয়াল) জন্মগ্রহন করেন।তাঁদের পরিবার ছিল বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও ধর্মতত্তবিদ পরিবার ।তার পিতা শেখ বাহাউদ্দিন ছিলেন সে যুগের একজন বিখ্যাত বুজুর্গ আলেম। পিতার সাথে পবিত্র হজ পালনের পর সিরিয়া গমন করেন। শেষ পর্যন্ত পূর্ব রোমে সালজুকি বংশের দ্বাদশতম শাসক, সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদের (৬১৬-৬৩৪ হিজরি) আমন্ত্রণে তার রাজধানী (বর্তমান তুরস্কের) কুনিয়ায় গমন করেন এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে সেখানে অবস্থান করেন।
জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি তার পিতার কাছেই প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা হাসিল করেন। হিজরি ৬২৮ সনে তিনি বুজুর্গ পিতাকে হারান এবং ২৪ বছর বয়সেই পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। পিতার ইন্তেকালের এক বছর পর তিনি সৈয়দ বোরহান উদ্দিন মুহাক্কেক তিরমিজির সাহচর্য গ্রহণ করেন। সৈয়দ বোরহান উদ্দিন ছিলেন মওলানা রুমির পিতার সাগরেদ। সৈয়দ বোরহান উদ্দিনের পরামর্শক্রমে দেশ সফরের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়, উচ্চতর জ্ঞান আহরণ ও তরিকতের বুজুর্গদের সাহচর্য লাভের জন্য দামেস্ক সফর করেন। দামেস্কে জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতায় পূর্ণতা হাসিলের পর তিনি পুনরায় কুনিয়া ফিরে আসেন। দীর্ঘকাল কুনিয়ায় অবস্থানই মওলানা রুমি হিসেবে তার খ্যাতির আসল কারণ। কেননা কুনিয়া ছিল পূর্ব রোমের অন্যতম নগরী এবং তা রুমিয়াতুছ ছোগরা বা ছোট রুম নামে প্রসিদ্ধ ছিল। মওলানা রুমি সে যুগের প্রচলিত অধিকাংশ জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন এবং আমির-ওমরাহ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মওলানা রুমি (রহ.) কুনিয়ায় অতি সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে শিক্ষাদীক্ষা ও অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। এমন সময় এক মহান মজজুুব অলির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় এবং তার জীবনধারায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। সেই মহাসাধকের নাম শামসে তাবরিজি।
তিনি (শামসে তাবরিজি )মওলানা জালাল উদ্দিন রুমির অন্তরে প্রেমের এমন আগুন জ্বালিয়ে দেন, যার ফলে তার অন্তর থেকে একমাত্র প্রেমাস্পদ আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
শামস তাব্রিজের মত পাগলের ভেতর আল্লাহর নুরী জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার দেখে মাওলানা রুমি বলে উঠলেন---"ওরে খোঁদার ভাব মিলে নাই মাওলানায়,কি দেখিয়া এত ফালফালায় শরীয়তের হুজুর ব্যাটায়"।
শামসে তাবরিজির সংস্পর্শে মওলানা রুমি এভাবে উদভ্রান্ত ও পাগল হয়ে যাওয়ার ফলে কুনিয়ার বাসিন্দারা শামসে তাবরিজির ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। এর ফলে তিনি কুনিয়া ছেড়ে চলে যান। বলা হয় যে, মওলানা রুমির ভক্তরা তাকে হত্যা করে।শামসে তাবরিজিকে হারানোর পর মওলানার অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়। তবে ধীরে ধীরে আত্মস্থ হলে ঝরনার মতো অজস্র ধারায় কবিতা বলতে থাকেন।
মওলানা রুমির অবিস্মরণীয় রচনাবলির মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে- দিওয়ানে শামসে তাবরিজি। মওলানা রুমি রচনার সময়কালে শেষ জীবনে অধিকাংশ সময় তার বিশ্ববিখ্যাত মসনবি শরিফ রচনার কাজেই ব্যয় করেন।মসনবি শরিফকে তৌহিদের এবং শরিয়তের জ্ঞানের বিশ্বকোষ নামে অভিহিত করা হয়। মসনবি শরিফ মওলানা রুমির (রহ.) চিন্তা, চেতনা ও প্রেমের সবচেয়ে সুন্দর, সাবলীল ও পূর্ণাঙ্গ সৃষ্টি ।

#বিশ্ব বিখ্যাত মসনবি শরিফ রচনাঃ-মাওলানা রুমি শামস তাব্রিজের দেওয়া তার সিনায় মারিফতের ফায়েজ কে চির-স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২২ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে রচনা করেন মসনবি শরিফ।যা সুবিশাল ৪০ হাজার লাইনের একটা মহাজ্ঞানের সমাহার।মাওলানা রুমি তার বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব মসনবির প্রশংসায় বলেছেন যে- "কুরআনের সমস্ত মগজ আমি রুমি চেটে খেয়ে ফেলেছি,শুধু তার হাড় গুলি রেখে দিয়েছি শরিয়তের অল্প বুদ্ধির আলেম রূপী কুকুরদের জন্য"
তাহার এই উক্তিতে বুঝতে আর বাকি থাকে না যে তিনি কোন পর্যায়ের আলেম। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সাধক কবি মওলানা জালাল উদ্দিন রুমি ৬৭২ হিজরির ৫ জমাদিউল আখের (১২৭৩ ইং) ৬৮ বছর বয়সে সূর্যাস্তের সময় পরম প্রেমাস্পদ আল্লাহর সনি্নধানে চলে যান। বর্তমান তুরস্কের কুনিয়া শহরে তার সমাধি বিশ্বের আল্লাহ প্রেমিকদের জিয়ারতগাহ। পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার আগে তিনি তার মৃত্যু সম্পর্কে কিছু উক্তি করে গেছেন তা হল -

যেদিন আমি মরে যাব, আমার কফিন এগিয়ে যাবে
সেদিন ভেবো না, আমার অন্তর এই ধরাধামে রয়ে গেছে!
তোমরা অযথা অশ্রু বিসর্জন দিও না, হা-হুতাশ করো না
হায়রে লোকটা চলে গেল’ এই বলে বিলাপ করো না।
আমার সমাধিকে অশ্রুজলে কর্দমাক্ত করে দিও না।
আমিতো মহামিলনের মহাযাত্রার অভিযাত্রী।
আমায় কবরে শোয়ালে ‘বিদায়’ জানাবে না,
কবরতো ইহকাল-পরকালের মাঝে একটা পর্দা মাত্র
অনন্ত আশীর্বাদের ফোয়ারা।
তোমরা অবতরণ দেখেছ এবার চেয়ে দেখ আমার আরোহণ।
চন্দ্র-সূর্যের অস্তাগমন কি বিপজ্জনক?
তোমাদের কাছে যেটা অস্তাগমন, আসলে সেটাই উদয়ন।

ইসলামে পর্দার গুরুত্ব

ইসলামে পর্দার গুরুত্ব
====❉❉===✏ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়ের পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায় হল পর্দা বা হিজাব করা।এই বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব।পর্দা নারী-পুরুষ উভয়ের মর্যাদার প্রতীক।অনেকে মনে করেন,পর্দা-বিধান শুধু নারীর জন্য,এ ধারণা ঠিক নয়।পুরুষের জন্যও পর্দা অপরিহার্য। তবে উভয়ের পর্দার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে।পর্দা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।পর্দাহীনতা মানেই যেকোনো একটি ফিতনার কারণ।পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, দাম্পত্য-কলহ ও পারস্পরিক অবিশ্বাস, বিবাহ-বিচ্ছেদ, নারী-নির্যাতন ইত্যাদি সবকিছুর পেছনেই একটি প্রধান কারণ হলো পর্দাহীনতা এবং নর-নারীর অবাধ মেলা-মেশা।ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থা বা ক্ষেত্র-বিশেষে নারী-পুরুষের পৃথকীকরণ নারীকে শৃঙ্খলিত করার পরিবর্তে তাঁকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, সমাজে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ-ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে।আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন- ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব:৫৩)
সাধারণত মানুষ পর্দা নিয়ে আলোচনা করে নারীদের ক্ষেত্রে। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন নারীর পর্দার আগে পুরুষের পর্দার কথা বলেছেন।সূরা নূরে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন -
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।(সূরা নূর :৩০)
যে মুহুর্তে কোনো পুরুষ একজন নারীর দিকে তাকাবে- লজ্জাকর অশ্লীল চিন্তা তার মনে এসে যেতে পারে। কাজেই তার দৃষ্টি অবনত রাখাই তার জন্য কল্যাণকর।



❋ আসুন দেখি পর্দার উদ্দেশ্য কি ?
পর্দার উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী-পুরুষ উভয়ের উন্মুক্ত সৌন্দর্যে আসক্ত হয়ে কোন পুরুষ বা নারী যেন তাঁর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে।আর এভাবে যেন সমাজ কলুষিত না হয় ।পর্দার ক্ষেত্রে পোশাক-পরিচ্ছদ মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, পোশাক যেমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা ও সৌন্দর্যের উপকরণ, তেমনি শরীয়তের দিক-নির্দেশনা মেনে তা ব্যবহার করে আল্লাহ এবং রাসূলের নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।যেমন═❋ আমার আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন-
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْءَاتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَىَ ذَلِكَ خَيْرٌ
হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশ-ভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং তাকওয়ার পরিচ্ছদ এটাই সর্বোৎকৃষ্ট।(সূরা আ’রাফ :২৬)
ইসলামে নারীদের পর্দা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।সূরা নূরে নারীদের পর্দার জন্য আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন -
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ,ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।(সূরা নূর :৩১)

═❋ পর্দাহীন নারীর বিষয়ে আমার রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘তারা জাহান্নামি।’ হাদিসে আছে, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন ‘এক শ্রেণির নারী আছে, যারা কাপড় পরিহিতা, অথচ নগ্ন,তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করে থাকে এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় । তাদের মাথা হবে উটের চুটের মত বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।এমনকি জান্নাতের সুবাসও তারা পাবে না।(মুসলিম)
উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রাদিআল্লাহু আনহা ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত হলেন।এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা।তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,তোমরা তার সামনে থেকে সরে যাও। আমরা বললাম,তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না?! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না? (আবু দাউদ /জামে তিরমিযী ৫/১০২,হাদীস:২৭৭৯)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন,আমরা যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত।তারা যখন আমাদের সামনাসামনি চলে আসত তখন আমাদের সকলেই চেহারার ওপর ওড়না টেনে দিতাম।তারা চলে গেলে আবার তা সরিয়ে নিতাম।(মুসনদে আহমাদ৬/৩০ইবনে মাজাহ ২৯৩৫)
হযরত আবু মুসা আশআরী রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো মহিলা সুগন্ধি মেখে ঘর থেকে বের হয় এবং লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার খুশবু গ্রহণ করে, তবে সে ব্যভিচারিণী।(মুসনাদে আহমদ ১৯৩৬/ জামে তিরমিযী ২৭৮৭/ সুনানে আবু দাউদ)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে জানা গেল যে,কুরআনে পাকে ও হাদীস শরীফে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে।এই বিধান মেনে চলা সকল ঈমানদার নারী-পুরুষের জন্য অপরিহার্য।প্রকৃতপক্ষে পর্দা সম্পর্কীয় বিধানের সমষ্টি হলো তাকওয়ার পোশাকের অন্তর্ভুক্ত।নারী দেহের সৌন্দর্য প্রকাশ না করা,শালীনতা বজায় রাখা, অবাধ মেলামেশা থেকে দূরে থাকা, দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং মনের পবিত্রতা রক্ষার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনই পোশাকের উদ্দেশ্য।নারীকে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে এই জন্য যে, তারা যেন রুচিশীলা পরিচ্ছন্ন নারী হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।এবং এটা তাদেরকে লজ্জাকর উৎপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করবে।‘হিজাব’ নারীকে অপদস্ত করেনি বরং উপরে তুলে সম্মানের আসন দিয়েছে।আর সংরক্ষণ করেছে তার শালীনতা ও পবিত্রতা।পর্দা মুসলিম নারীকে প্রশান্তি দান করেছে।আমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবো যে, পর্দা বা হিজাব পালনকারী একজন নারী অধিকতর নিরুদ্বেগ ও স্বাচ্ছন্দপূর্ণ জীবন যাপন করে থাকেন।মহান আল্লাহ্‌ তা'আলা সবাইকে পর্দার প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করে তা পালন করার শক্তি দান করুন, আমীন।
(ভুল হলে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ আমায় ক্ষমা করুক)

মানব জীবনে আযল এর বিধান।

মানব জীবনে আযল এর বিধান।
=▒=❉=▒=❉=▒=✏ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।আজকের বিষয় (عزل) আযল।আর এই আযল সম্পর্কে জানার পূর্বে জেনে রাখি মানব সৃষ্টিতে আল্লাহপাকের উদ্দেশ্য কী। স্র্রষ্টার সৃষ্টির উদ্দেশ্যের দিকে থাকালে আমরা দেখতে পাই মহান রব্বুল আলামীন মানব সৃষ্টির মূলে ছিলো তার ইবাদত করা।আজকের লেখাটি সেদিকটাই বেশী প্রাধান্য দিয়ে লিখছি। বিষয়টি কঠিন মনে হলেও একটু চিন্তা করলে খুব সহজ ভাবে বুঝা যায়। আল্লাহপাক রব্বুল আলামীন বাবা হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করে মা হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি না করলেই পারতেন।মহিলা ছাড়া মানব সৃষ্টির সেই ক্ষমতা আমার মহান আল্লাহপাকের থাকার পরেও নিয়মতান্ত্রিকতার সাথে আদম (আঃ) এর একাকীত্ব দুর করে মানব বৃদ্ধিতে একত্ববাদের ঘোষণা পূর্বক ইবাদতগাহীর পরিপূর্ণা লাভের জন্য মা হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। 

'আযল' হল জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি একটি কৌশল মাত্র। উদ্দেশ্য স্ত্রীকে গর্ভধারণ থেকে বিরত রাখা।তবে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ চাইলে এর পরেও গর্ভে সন্তান আসতে পারে।আমাদের মনে রাখতে হবে যে,ইসলামে অধিক সন্তান লাভে উৎসাহিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ সূরা কাহাফ এ বলেন,
الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا
ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম। (কাহাফ ৪৬)
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা প্রেমময়ী ও অধিক সন্তানদায়িনী নারীকে বিবাহ কর। কেননা আমি ক্বিয়ামতের দিন অন্যান্য উম্মতের চাইতে তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে গর্ব করব’(সহিহ আবুদাঊদ)।
আযল এর ব্যপারে পবিত্র কুরআনে কারীমে সরাসরি নিষেধ না করলেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন আল্লাহপাক বলেন,
َوَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلاَدَكُم مِّنْ إمْلاَقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ
‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না দারিদ্রের কারণে,আমিই তোমাদের রিযিক দান করি এবং তাদেরও আমিই রিযিক দান করব’ (আন‘আম ১৫১)
উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্ট যে খাবারের অভাবের আশংকায় অনাগত সন্তানকে হত্যা করতে মহান আল্লাহ স্পষ্ট নিষেধ করেছেন এবং অনাগত সন্তানদের রিযিকের মালিক আল্লাহ রব্বুল আলামীন।
আযল সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কারীমে কোন আলোচনা খুঁজে পাওয়া যায় না তবে হ্যাঁ পবিত্র হাদীছে স্পষ্ট আলোচনা আছে যে প্রয়োজন ক্ষেত্রে সাময়িক অসুবিধা এড়ানোর জন্য শারীরিক অসুস্থতায় আযল করা অনুমতি দেখা যায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মানুষ আযল করেছেন যেমনঃ 
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةِ بَنِي الْمُصْطَلِقِ فَأَصَبْنَا سَبْيًا مِنْ سَبْيِ الْعَرَب فاشتهينا النِّسَاء واشتدت عَلَيْنَا الْعُزْبَةُ وَأَحْبَبْنَا الْعَزْلَ فَأَرَدْنَا أَنْ نَعْزِلَ وَقُلْنَا: نَعْزِلُ وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ أَظْهُرِنَا قَبْلَ أَنْ نَسْأَلَهُ؟ فَسَأَلْنَاهُ عَن ذَلِك فَقَالَ: مَا عَلَيْكُمْ أَلاَّ تَفْعَلُوْا مَا مِنْ نَسَمَةٍ كَائِنَةٍ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ إِلاَّ وَهِيَ كَائِنَةٌ-
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
আমরা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বনী মুস্তালিকের যুদ্ধে বের হয়ে গেলাম। সেখানে কিছু সংখ্যক আরবকে (দাসী) বন্দী করে নিলাম। তখন আমাদের মধ্যে রমণীদের প্রতি আকর্ষণ জাগে। যৌন ক্ষুধাও তীব্র হয়ে উঠে এবং এ অবস্থায় ‘আযল করাকেই আমরা ভাল মনে করলাম। তখন এ সম্পর্কে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি জবাবে বললেন, তোমরা যদি তা কর তাতে তোমাদের ক্ষতি কি? কেননা আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি করবেন, তা তিনি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন এবং তা অবশ্যই সৃষ্টি করবেন।(মুত্তাফাক্ব আলাইহ,মিশকাত ৩১৮৬)
হযরত জাবির রাদিআল্লাহু আনহু বলেন,جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ كُنَّا نَعْزِلُ وَالْقُرْآنُ يَنْزِلُ
‘আমরা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় ‘আযল’ করতাম অথচ তখনও কুরআন নাযিল হচ্ছিল। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ,মিশকাত ৩১৮৪)
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا نَعْزِلُ فَزَعَمَتِ الْيَهُودُ أَنَّهَا الْمَوْءُودَةُ الصُّغْرَى . فَقَالَ" كَذَبَتِ الْيَهُودُ إِنَّ اللَّهَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَخْلُقَهُ لَمْ يَمْنَعْهُ "
হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা একবার বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ আমরা তো আযল করতাম। কিন্তু ইয়াহুদীরা বলে, এতো হলো সন্তানকে ছোট ধরণের পুতে মারার অপর নাম। তখন তিনি বললেন, ইয়াহূদীরা মিথ্যা বলেছে। আল্লাহ্ যদি কাউকে সৃষ্টি করার ইরাদা করেন তবে কেউ-ই তা বাধা দিতে পারবে না। (সহিহ আবু দাউদ ১৮৮৪)
অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে কারীমে ‘আযল’ সম্পর্কে কোন নিষেধবাণী আসেনি। আর এ সম্পর্কে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সরাসরি নিষেধ করেননি।
পরিশেষে বলব আমরা বিজ্ঞানের যুগে মানুষের যোগ্যতা অনুযায়ী তার শ্রমশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারিনি বলে জন্মনিয়ন্ত্রণকে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ সমস্যার প্রকৃত সমাধান মনে করছি। মোটকথা,কোন ওজর ব্যতিত আযল নয়। আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা আমার বুঝার অক্ষমতায় যেন আমায় ক্ষমা করেন তার প্রিয় হাবীবের দিকে চেয়ে। আমীন।