রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৬

নবজাতকের কানে আযান দেয়া।


নবজাতকের কানে আযান দেয়া।

✏ইমরান বিন বদরী≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
কিছু আমল সময়ের সাথে সাথে তথাকথিত আধুনিকতার মায়াজালে বন্দী হয়ে পড়েছে।হারাতে বসেছি ইসলামী ঐতিহ্যের বিভিন্ন উত্তম আমল গুলি।আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে সময় পরিবর্তন হলেও ইসলামী নিয়ম নীতি পরিবর্তনীয় নয়।আসুন,ভুলতে বসা তেমনি একটি উত্তম আমল সম্পর্কে অবগত হই। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যেসব নেয়ামত দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সন্তান-সন্ততি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাধ্যমে মানবজাতি দ্বারা পৃথিবীকে আবাদ রাখার জন্য আল্লাহ তায়ালা যে বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা দান করেছেন তা হচ্ছে ইসলামী নিয়ম নীতির উপর বিবাহভিত্তিক সন্তান জন্মদান করা।আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে,সন্তান এটি আল্লাহ জাল্লা শানুহুর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ বা নেয়ামত।
═➲ আল্লাহ তাআলা বলেন: لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاء يَهَبُ لِمَنْ يَشَاء إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاء الذُّكُورَ “নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা’আলারই।তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।“(সূরা আশ-শুরা ৪৯)
আর এই নেয়ামত যার ঘরে আগমন ঘটবে,সেই সৌভাগ্যবান।

❋ সম্মানীত বন্ধুরা-আমাদের অনেকের সন্তান হয়েছে এবং হবে,কিন্তু আমরা ক'জন আছি যারা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে সুন্নাতে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিয়ম নীতি পালন করি? অথচ নবজাতকের কানে আযান দেয়া সুন্নাতে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।আমাদের অনেকেরি আছে উদাসিনতা নবজাতকের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে।তবে এটাও ঠিক যে,অনেকে আছে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও না-জানার কারণে পালন করতে সক্ষম হয় না।
═➲ হযরত আবু রাফেই (রা.)তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন:
” رأيتُ رسول الله صلى الله عليه و سلم أذّنَ في أُذُنِ الحسنِ ابن عليٍّ حين ولدتهُ فاطمة بالصلاة ” رواه أبو داود والترمذي و قال: هذا حديث صحيح.
“আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আলীর (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)পুত্র হাসানের (রা.)কানে নামাযের আযানের মত আযান দিতে দেখেছি,যখন ফাতেমা (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) তাকে জন্ম দেয়।”(আবু দাউদ এবং তিরমিযী,আযাহী,১৫,১৫৫৩) ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
═➲ হাদিস শরীফে আরও বর্ণিত আছে যে,যখন আযানের শব্দগুলো উচ্চারণ করা হয় তখন আযানের শব্দ যে পর্যন্ত শুনা যায়,সে পর্যন্ত শয়তান পলায়ন করে থাকে। (বুখারি, মুসলিম)
❋ অতএব,আমাদের কর্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আযান দেয়া যেন তার কানে আল্লাহ জাল্লা শানুহুর প্রশংসা/মহত্ব বিষয়ক প্রথম আওয়াজ প্রবেশ করে সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাহাদাতের বাণী পৌঁছে যায় আর বিতাড়ীত শয়তান দূর হয়ে যায়। আমাদের উপর সন্তান জন্মদানের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সন্তানের চরিত্র গঠনে তাকে ইসলামী জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।নবজাতক সম্বন্ধে ইসলামের এই বিধান আল্লাহ যেন আমাদের সঠিক আমল করার তাওফীক দেন আমীন !
و صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه أجمعين
--------------নবজাতকের ডান কানে আযান দেওয়া সুন্নাত।আযান দেওয়ার উত্তম পদ্ধতি হলো, যিনি আযান দিবেন তিনি পশ্চিম দিক অর্থাত কিবলার দিকে মুখ করে নিজে শিশুকে কোলে নিবেন অথবা অন্য কেউ শিশুকে কোলে নিয়ে তার সামনে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াবেন কিংবা আযানদাতার সামনে খাট বা টেবিলের উপর শিশুকে শুয়ায়ে রাখতে হবে। আযান দেযার জন্য মসজিদের ইমাম সাহেবকে ডেকে আনা জরুরী না। বরং সন্তানের বাবা চাচা যে কেউ দিতে পারবে। তবে আযান দেয়ার মত যদি কেউ না থাকে তাহলে ইমাম সাহেব বা অন্য কাউকে ডেকে এনে আযান দিতে পারবে।অনেকে বাম কানে ইকামতের কথাও উল্লেখ করেছেন তবে ডান কানে আযান দেওয়াটি উল্লেখযোগ্য।
(অনুরোধ করছি লেখাতে ভুল হলে জানাবেন,আপনার সঠিক মতামতে উপকৃত হব)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন