রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৬

কারবালার ঘটনা



কারবালার ঘটনা
═══════════ ✏ ইমরান বিন বদরী ≪
#হাল_মিন_নাসেরিন_ইয়ানসুরুন ?
কারবালার প্রান্তে সাইয়্যেদুশ শোহাদা ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু।
প্রশংসা মাত্রই আল্লাহ জাল্লা শানুহু জন্য, যিনি বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সায়্যাদুল মুরসালীন সাফিউল মুজ্নেবিন খাতামান নাবিয়্যীন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার এবং সকল সাহাবীর (রাদিআল্লাহু আনহুর) উপর।
আশুরায় দিনে সংঘটিত অসংখ্য ঘটনাবলীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্রাজেটি হলো কারবালার মরু প্রান্তরে ইয়াজিদ কর্তৃক ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু ও তার পরিবারের হৃদয়বিদারক হত্যাকান্ড।যুগ যুগ ধরে কারবালার এ ঐতিহাসিক ঘটনা সবাই শুনে আসছি আমরা। মোটামুটি সবাই এ হৃদয় বিদারক ঘটনা সম্পর্কে অবগত,তাই নতুন করে আলোচনার তেমন প্রয়োজন নেই।সংক্ষেপে কয়েটি কথা লিখবো যাতে কিছুটা ধারণা যাতে পেতে পারে আমার ঈমানী ভাইয়েরা।
কারণ--এক সময় বই কিনে বই পড়ার একটা প্রবণতা ছিল সবার মাঝে যা আজ-কালের পরিবর্তনে ক্রমান্নয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।তাই অনলাইনের লেখা গুলো পড়ে অন্তত কিছুটা হলেও যেন জানতে পারে ইসলামের সুন্দর ইতিহাস ঐতিহ্য।আর সেই লক্ষেই আজ আমার এই সংক্ষিপ্ত লেখা।

বন্ধুরা-➲ স্বৈরাচারি ইয়াজীদি ভালোবাসা যার মাঝে বিদ্যমান সে কখনো আহলে বাইতকে ভালোবাসতে পারেনা। হজরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু আনহুর পুত্র ইয়াজীদের মনে ভয় ছিল ক্ষমতা হারার।যার পরিনামে কারবালার এই নিষ্ঠুর ইতিহাস।ক্ষমতা লোভি ইয়াজিদ সুক্ষ পরিকলপনায় ইবনে জিয়াদ কে বর্তমান ইরাকে গভর্নর করে পাঠিয়ে হযরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু এর চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিল কে প্রথমে হত্তা করেন যা থেকে কারবালার পরিকলপনা শুরু। সেই বিন জিয়াদের নির্দেশে পরবর্তীতে হৃদয় বিদারক এই ঘঠনার সৃষিট ।

#কারবালার_ঘটনা:
কারবালা; শব্দটি শুনলেই মন কেঁদে ওঠে।স্বভাবতই মানুষ যখনই কোন হৃদয়বিদারক ঘটনা দেখে বা অপর কেউ তার জন্য বর্ণনা করে তখন সে মর্মাহত হয়। কেননা সে ঘটনা তো এমন এক ব্যক্তি কেন্দ্রীক, যাকে আল্লাহ্ পাক বেহেশ্তের যুবকদের সর্দার বানিয়েছেন, আর রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেদায়েতের বাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।যে স্থানে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৌহিত্র, আলী ও ফাতেমা (আলাইহিমাস সালাম) এর কনিষ্ঠ সন্তান ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু ৬১/৬০ হিজরীতে ১০ই মহররম শহীদ হয়েছিলেন।
সেদিন শুক্রবারে ভোরে ফজরের নামাজের ইমামতি করলেন ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু।এই নামাজই ছিল কারবালার শহীদদের শেষ নামাজ।আল্লাহর সৈনিকদের এই নামাজ শেষ হবার আগেই এজিদ বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয়ে যায়।তীর বৃষ্টির মধ্যেই ইমাম ও তার সাথীরা নামাজ শেষ করলেন।ইমাম তার সাথীদেরকে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হবার নির্দেশ দিয়ে দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন।ভাই আব্বাসকে দিলেন পতাকা রক্ষার দায়িত্ব ।
এ সত্যের পতাকাবাহী হযরত আব্বাস " #আব্বাস_ই_আলমদার " নামে বিখ্যাত।
মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই তীব্র আকার ধারন করলো।এ ছিল অসম যুদ্ধ ।
মাত্র ৭০/৭৮ জন মুসলমানের সাথে হাজার হাজার মোনাফেকের যুদ্ধ । এ ছিল এক অসহায় মুষ্টিমেয় ঈমানদারের প্রতিরোধ যুদ্ধ ।একদল ধর্মপ্রাণ আল্লাহর বান্দাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে হিংস্র নেকড়ের এজিদী দল।ছোট্ট একদল মোমিন কারবালার এই মরু প্রান্তরে যে অসীম সাহসিকতা,বীরত্ব ও ধৈর্য্যরে পরিচয় দিলেন মানব ইতিহাসে তেমনটি আর কখনো দেখা যায় নি এবং ভবিষ্যতেও হয়ত দেখা যাবে না।মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র আহলে বাইতকে রক্ষা করার জন্যে ইমাম হুসাইনের সাথীরা সিংহ বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন শত্রু সৈন্যের উপর।
এভাবে একে একে ইমাম হুসাইনের বাহিনীর বিখ্যাত বীরেরা এবং আহলে বাইতের সদস্যগণও শহীদ হয়ে গেলেন। যেখানে ছিলেন নবীজীর প্রিয় নাতনী হযরত যয়নবের দুই শিশু সন্তান অউন এবং মোহাম্মদ এবং কাসিম ইবনে হাসান (ইমাম হাসান রাদিআল্লাহু আনহুর ছেলে) মহাবীর আব্বাস আলমদার,ইমাম হুসাইনের ছেলে আলী আকবর। দুধের শিশু আলী আসগরকেও শহীদ করে দিয়েছেন এ এজিদ বাহিনী।এভাবে সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্যে মিথ্যার বিরুদ্ধে সংগ্রামে নিজেদের বিলীন করে দিয়েছেন।ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু দেখলেন চূড়ান্ত সময় এসে গেছে।পৃথিবীর ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন তিনি।
ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধের ময়দানে এসে মুর্খ সেনাদের উদ্দেশ্যে উপদেশ দিতে চাইলেন।এজিদ বাহিনীকে সম্বোধন করে তিনি বললেন, হে জনসাধারণ ! তোমরা কেন আমাকে হত্যা করতে চাও? আমার কি অপরাধ ? শত্রুদের কাছ থেকে কোন উত্তর পেলেন না তিনি।শত্রু পরিবেষ্টিত ইমাম একাকী দাঁড়িয়ে আছেন।তীরের আঘাতে জর্জরিত তার দেহ থেকে রক্ত ঝরছে।তিনি আবার ডাক দিলেন-*হাল মিন নাসেরিন ইয়ানসুরুনা? (আমাদের সাহায্য করার কেউ আছে কি)
এজিদী বাহিনী তীর ছুড়ে তার জবাব দিল।শেরে খোদার সন্তান মহাবীর ইমাম হুসাইন স্থির থাকতে পারলেন না তিনি শত্রুদের দিকে ছুটে গেলেন।পাপিষ্ঠ সৈন্যরা একযোগে ইমামের উপর আঘাত হানতে থাকলে তীরের আঘাতে জর্জরিত ইমামের দেহ থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরণের ফলে ধীরে ধীরে তার দেহ নিস্তেজ হয়ে আসছিল।এক সময় তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চেয়েছিলেন মুসলিম উম্মাহ যেন আহলে বাইতকে ভালোবাসে।ইয়া আল্লাহ এ কি আচরণ ! আহলে বাইতের প্রতি ?
#হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলেন,আমি নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,এরা দুজন(হাসান ও হুসাইন)আমার দুনিয়ার দুটি ফুল।(সহীহ বুখারী ৫৯৯৪)

#এ ছাড়াও তিনি বলেছেন,"নিশ্চয়ই হাসান ও হোসাইন জান্নাতে যুবকদের সর্দার।(তিরমিজি ৩৭২০)

#রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,হোসাইন আমার থেকে এবং আমি হোসাইন থেকে”(তিরমিযি ১১খন্ড,৩২৪পৃষ্ঠা)। 

এভাবে নিষ্ঠুরতার বিকট উল্লাসের মোকাবেলায় আত্মত্যাগের চরম দৃষ্টান্ত মহাকালের পাতায় চির উজ্জল হয়ে থাকল।ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু ও তার সাথীরা নতুন করে যেন স্থাপন করলেন لا اله الا الله محمد رسول الله কালেমার ভিত্তি।

❋ কবিতার যে লাইন দু'টি মানুষের মুখে মুখে চর্চা হয়ে থাকে তা হলো➲
কতলে হুসাইন আসলে মে মরগে এযিদ থা,ইসলাম জিন্দা হুতা হায় হার কারবালাকে বাদ।
(হোসাইনের শাহাদাত মূলত ইয়াযিদের মৃত্যু,ইসলাম পুনর্জীবিত হয় প্রতি কারবালার শেষে)

❋ হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু মাথা দিয়েছেন কিন্তু ইয়াজিদের সামনে মাথানত করেননি।
অন্যায়ের কাছে মাথানত করা যাবে না এটাই ইমাম রাদিআল্লাহু আনহু হোসাইনের শিক্ষা।--খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি আজমিরী (রহ.)

❋‘‘ফিরে এলো আজ সেই মহর্রম মাহিনা,ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না।--কবি নজরুল ইসলাম

═কারবালার এই নিষ্ঠুর অত্যাচার অবিচারের কাহিনী জনসাধারণের কাছে তুলে ধরেন ইসলামের বিপ্লবী মহিয়সী নারী হযরত জয়নাব এবং সাইয়্যেদুশ শোহাদা ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহুর অসুস্থ ছেলে ইমাম জয়নুল আবেদীন।হযরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু কারবালার প্রান্তরে নিজের জীবন ও স্বল্প দুধের শিশুসহ ৭২ জন আহলে বাইতের কারবালার কংকরময় প্রান্তরে তাজা খুনে রঞ্জিত করে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ্ সত্যের পতাকাকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে আল্লাহ্র পরিপূর্ণ দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা ও রাখার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্র রিযামন্দী হাসিলের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়ার চেতনার ও প্রেরণাকে চির জাগ্রত করে রেখে গেছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন