বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৬

কুলখানি বা যিয়াফত করা


কুলখানি বা যিয়াফত করা
═══❋◉❋═══ ✏ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
বর্তমান সমাজে এমন কিছু আলেমের আবির্ভাব হলো যারা কথায় কথায় `বিদায়াত' শব্দটির অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধর্মবিমূখ করে দিচ্ছেন।ফলে আমাদের মত সাধারন মানুষ দিশেহারা হয়েই পড়ছি।গোলাটে পরিস্থিতিতে ভেবে পাইনা কার কথা শুনবো! কার কথাকে প্রাধান্য দেব।১৪০০ বছর আগের পরিপূর্ণ ইসলামকে এবং পরবর্তীতে ইসলামের কিছু কিছু বিষয় যা অষ্পষ্ট তা ইমামদের ইজতিহাদী ফলাফলে সমাধান করা অনেক বিষয়কেও বিদায়াতের পর্যায়ে নিয়ে ইসলামকে পেকেজ করার মানসিকতায় তারা ইসলামে এটা নাই, ইসলামে ওটা নাই, এটা করলে বিদায়াত এসব করতে করতে মানুষ এখন ধর্মবিমূখ হয়ে পড়ছেন। তেমনি একটি তথাকথিক মিথ্যে ফতোয়ার জালে আবদ্ধিত যিয়াফত (দাওয়াত খাওয়ান)। মানুষ মারা গেলে রেখে যাওয়া যে ৩ বিষয়ের সরাসরি ছাওয়াব কবরবাসীর নিকট পৌঁছবে তা যেমন সত্য তেমনি দয়াল নবী ﷺ দাওয়াতে (যিয়াফতে) অংশগ্রহণ করা পছন্দ করতেন তাও তেমনি সত্য। প্রশ্ন করতে পারেন,তাতে কী ছাওয়াব হবে? হ্যাঁ, ছাওয়াব না হওয়ার কোন কারণ-ত দেখিনা।
❋ হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন➲
سَأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ " تُطْعِمُ الطَّعَامَ
এক ব্যাক্তি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাবার খাওয়াবে। (সহীহ বুখারী,ঈমান অধ্যায়)
উপরোক্ত হাদিসে রাসুলে বলা হয়েছে খাওয়ার খাওয়াতে,এখানে উল্লেখ করা হয়নি যে তাতে ছাওয়াব হবেনা।আল্লাহর রসুল ﷺবলেছেন এটি একটি উত্তম আমল। সুতরাং ইসলামে প্রত্যেক উত্তম আমলে ছাওয়াব রয়েছে।এখানে প্রশ্ন করতে পারেন তাতে কী মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হবে? হ্যাঁ অবশ্যই হবে কেননা যে হাদিসে রাসুলে তিনটি ছাওয়াবে জারীর কথা বলা হয়েছে তার অন্যতম হলো- أو ولد صالح يدعو له সত্‍‌ এবং নেক্কার সন্তান রেখে যাওয়া যে তার পিতামাতার জন্য দোয়া করবে।আর এই দোয়া কীভাবে করবে তার কোন নির্দশনার প্রয়োজন আছে কিনা জানা নেই।সন্তান সরাসরি মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের দরবারে করলে যেমন দোয়া তেমনি উত্তম কাজের মাধ্যমে তার পিতামাতার জন্য দোয়া করলেও দোয়া। কুলখানিতে যিয়াফতের উদ্দেশ্য ভুরিভোজন নয় বরং খেয়ে দোয়া পাওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়।তাছাড়া প্রচলিত যিয়াফত যেখানে করে সেখানে পবিত্র কুরআানে কারীমের খতমও দেয়া হয়,যা ছাওয়াবের কাজ।আর কুলখানি ফারসি শব্দ। অর্থ قُلْ কুল পড়া,পবিত্র কুরআনের ত্রিশতম পারার যে সকল সূরার শুরুতে قُلْ কুল শব্দ রয়েছে সেগুলো পাঠ করা।যেমন,সূরা এখলাছ,সূরা ফালাক্ব,সূরা নাস।
এছাড়াও আরেকটি হাদিসে পাকে দেখা যায়➲ عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: مر النبي صلى الله عليه وسلم بقبرين، فقال : إنهما ليعذبان، وما يعذبان في كبير، أما أحدهما فكان لا يستبرئ من البول، وأما الآخر فكان يمشي بالنميمة، ثم أخذ جريدة رطبة فشقها نصفين، فغرز في كل قبر واحدة. قالوا يا رسول الله! لم فعلت هذا؟ قال: لعله يخفف عنهما ما لم ييبسا. رواه البخاري
❋ হজরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেছেন,একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে বলেন,এ কবরবাসী দুজনকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এদেরকে কোন বড় অপরাধের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না, বরং এদের একজন চোগলখুরী করে বেড়াত, আর অপরজন প্রসাবের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করত না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর গাছের একখানা কাঁচা ডাল আনিয়ে তা দু টুকরা করে প্রত্যেক কবরের উপর একটি করে গেড়ে দিলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি এরূপ করেছেন কেন? তিনি বলেন, খুব সম্ভব ডাল দু’টি না শুকানো পর্যন্ত তাদের আযাব হাল্কা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী)
দেখুন- একটি খেজুর গাছের ডালের কারণে যদি শাস্তি হাল্কা হয়, তবে উম্মতে মুহাম্মদীর দোয়ায় কেন মুক্তি মিলবেনা।এবার আসুন দেখি সেই হাদিস শরীফটি যে যিয়াফতে আমার রসুল ﷺ উপস্থিত ছিলেন।

❋ হজরত আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন➲ আমরা নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক#যিয়াফতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁর সামনে (রান্না করা) ছাগলের বাহু পেশ করা হল,এটা তাঁর কাছে পছন্দনীয় ছিল। তিনি সেখান থেকে এক টুকরা খেলেন এবং বললেন, আমি কিয়ামতের দিন সমগ্র মানব জাতির সরদার হব। (সহীহ বুখারী,আম্বিয়া কিরাম(আঃ)
(হাদিস শরীফের বাকী অংশ `শাফা আতে রাসুলﷺ' নামের পোষ্টে বিস্তারিত উল্লেখ করেছি) উপরোক্ত হাদিস শরীফে দেখুন আমার রাসুলﷺ যিয়াফতে (দাওয়াতে) উপস্থিত হলেন এবং পছন্দনীয় খাওয়ারও খেলেন।---সুবহান আল্লাহ!
যিয়াফত করা(দাওয়াত দেয়া)কী আসলে কুরআন আর হাদিস শরীফে কোথাও নিষেধ করা হয়েছে? যদি করে থাকেন তবে তা `বিদায়াত' নয় হারাম হয়ে যাবে।এমন হারামের যদি কোন প্রমাণ না থাকে তবে অহেতুক সাধারণ মানুষকে আর বিভ্রান্ত না করাই একজন মুসলমানের ঈমানী কর্তব্য।

যৌতুক প্রথা


---
-
যৌতুক প্রথা
----

═══
❋◉❋═══ ✏
ইমরান বিন বদরী

নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
আমাদের সমাজে যৌতুক গ্রহণের কারণটি হচ্ছে,আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি ভয়হীনতা এবং শরীয়তের বিধানের প্রতি অবজ্ঞা ও উদাসীনতা।নারীর মর্যাদা দান ও নারীর আর্থিক অধিকার সুরক্ষায় ইসলাম যে বিধিবিধান দিয়েছে তার প্রতি সাধারণ পর্যায়ের সম্মানবোধ থাকলে কোনো বরের পরিবারের পক্ষেই যৌতুক গ্রহণের কোনো উদ্যোগ থাকার কথা ছিল না। বিয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় বর-কনের উভয় পক্ষ আলোচনায় বসে দেনা-পাওনার কিছু অংশ নগদ আর কিছু অংশ বকেয়া রাখা হয়। সেটা পরে মেয়েপক্ষের কাছ থেকে উসূল করে নেওয়া হয়। কিংবা উসূল করতে গিয়ে নব পরিণীতা মেয়েটির জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়। এরই নাম-যৌতুক।

আদর্শ পরিবার গঠন ও মানসিক প্রশান্তি লাভের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বিয়ে।বিয়ে প্রিয়নবী মুহাম্মদ ﷺএর গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। প্রাপ্তবয়স্ক ও সামর্থ্যবান হলে বিয়ে করে নেয়া উচিত।বিয়ের মাধ্যমে দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণ লাভ করা যায়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন- فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً 
অর্থাৎ সে সব মেয়েদের থেকে যাদের তোমাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই দুই, তিন তিন, কিংবা চার চারটি পর্যন্ত। আর যদি আশঙ্কা কর যে, তাদের মাঝে ন্যায়-সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না তবে একটি। (সূরা নিসা:৩)
প্রিয় রসূল ﷺ বলেন-إِذَا تَزَوَّجَ الْعَبْدُ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ نِصْفَ الدِّينِ فَلْيَتَّقِ اللَّهَ فِي النِّصْفِ الْبَاقِي 
অর্থাৎ যে ব্যক্তি বিয়ে করল তার অর্ধেক ঈমান পূর্ণ হয়ে গেল। সে যেন বাকি অর্ধেক (ঈমান) এর ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে। (মিশকাত ২ পৃ:২৬৪)
বৈবাহিক সম্পর্ক ভালবাসা ও সম্প্রীতির এক পবিত্রতম বন্ধন হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় এর মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় যৌতুক নামের এই অভিশাপ।
পৃথিবীর বুকে আমরা জন্ম নিয়েছি,যে মাতৃগর্ভের প্রাণ সঞ্চার নিয়ে যে পৃথিবীর প্রকৃতির উপাদানে ও মাতৃস্নেহের কোলে লালিত-পালিত হয়েছি তাদের ঋণকে আজন্ম শোধ করা যায়? নারীদের দায়িত্ববোধ,নৈতিক জ্ঞান ও মানসিক শক্তি দিয়েই সমস্ত পরিবার ও সমাজ চালিত হয়।কিন্তু আজ কুসংস্কার আর অজ্ঞতার ফলে নারীরা বিশ্বায়নের যুগেও উপেক্ষিতা,লাঞ্ছিতা।তারমধ্যে যৌতুক প্রথাই আজ নারী সমাজ এবং অভিভাবকদের পঙ্গু করে দিচ্ছেন।সভ্য নামের অসভ্য সমাজের কিন্তু লজ্জাবোধ হওয়া উচিত। এ প্রথা আজ সভ্য সমাজের কলঙ্ক যা এক ভয়ানক সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।সমাজের আমূল পরিবর্তনে মানসিক ও নৈতিক চিন্তাধারার পরিবর্তনই এই ব্যাধি নির্মূল করতে পারে। যারা যৌতুকের জন্যে লালায়িত এরা সমাজে অন্ধ এবং কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ একপ্রকার ভয়ানক ব্যাক্টেরিয়া।আজকাল প্রায় দেখা যায় দাড়িদ্রতার কারনে যৌতুকের অর্থ ও সামগ্রী যোগাড় করতে না পারায় মেয়েদের বিয়ে হচ্ছেনা। আবার দেখা যায় বিয়ের পর যৌতুকের জন্য একটি নারীর সুন্দর জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠে।এ ভয়াবহ চিত্র বর্তমানে মেয়েদের মৃত্যুর ফাঁদ হিসাবে প্রকাশ পাচ্ছে। ১৯৮০ সালে আইনগতভাবে যৌতুক নিষিদ্ধ করা হয়। তারপরও কমছে না যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের ঘটনা।যৌতুকের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য কোন আন্দোলন কিংবা আইনের প্রয়োজন নেই,প্রয়োজন আমাদের মানসিক পরিবর্তন।আমাদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট এ মহামারী থেকে মুক্তির জন্য।আমরা যদি আমাদের নারী সমাজের পরিবর্তন চাই সর্বপ্রথম আমাদের পরিবারের নারীদের অর্থাত্ আমাদের মা বোনদের মানসিক পরিবর্তন করা অপরিহার্য্য।আমি মনেকরি সামাজিক পরিবর্তনের পূর্বে পারিবারিক পরিবর্তন সর্বাগ্রে।যে মেয়ের বিয়েতে যৌতুক নেয়া হচ্ছে সে পরিবারে পক্ষে বর পক্ষের মা বোনদের কি এ প্রথার বিপরীতে কোন ভুমিকা নেই? অবশ্যই আছে।একজন মেয়ে হয়ে যদি অন্য মেয়ের পক্ষে ঐক্যতার বন্দনে আবদ্ধ হয়ে পারিবারিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে তবেই এই সমাজ যৌতুক মুক্ত সমাজ উপহার পাবে।যৌতুক লোভী নরাধম পুরুষদের পাশাপাশি নিরব ভূমিকা পালন করে ছেলে পরিবারের মেয়েরাও একি অপরাধের অপরাধী হয়ে যাচ্ছে।যৌতুক গ্রহণকারী পরিবারের সবাই এ অভিশাপ থেকে মুক্ত নয়। এই যৌতুক ব্যাধি নির্মুলে আন্তরিকতার সাথে সমাজের স্নেহময়ী মা,বাবা,ভাই,বোন সহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।অন্যথায় তীলে তীলে নিঃশেষ হয়ে যাবে একটি পরিবার,সমাজ ,রাষ্ট্র এবং ধ্বংস হয়ে যাবে একটি সভ্যতা।এই অমানবিক প্রথাটি আজ সমাজের জন্য একটি অভিশাপ।এটি সমাজের সবচেয়ে জটিল ব্যাধিও বটে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই নারী সমাজ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। কখনো কন্যা সন্তানকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো, কখনো স্বামীর সঙ্গে সহমরণ। আধুনিক যুগেও নারী নির্যাতনের আধুনিক রূপ হলো যৌতুক প্রথা বা উপহার প্রথা।মনে রাখতে হবে যৌতুকের আধুনিক নাম কিন্তু উপহার/উপঢৌকন। যৌতুকের প্রভাবে ধর্মীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি সুরক্ষার রীতি 'বিয়ে' শব্দটিও একদিন হয়ত হারিয়ে যাবে। যৌতুক নয় ছেলে-মেয়েকে সাধ্যমত উপহার বা ঘর সাজানোর নামে কি আগের থেকে বেশি চাপ সহ্য করতে হচ্ছে না কনে পক্ষকে !?। 
আসলে সমাজের সঠিক রীতি পালন ও নৈতিক মানসিকতা গঠনে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই। 
শরীয়তের দৃষ্টিতে যৌতুক একটি অবৈধ ও ঘৃণিত প্রথা,যা কনে পক্ষের উপর অর্থনৈতিক জুলুম এবং অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনের একটি হীন মাধ্যম।
এ বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ 
অর্থাৎ তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। (সূরা বাকারা:১৮৮)

আসুন শুধু কথায় নয়,নতুন প্রজন্মকে কলহমুক্ত সুন্দর পরিবার উপহার দিতে যৌতুক মুক্ত সুন্দর মানসিকতাই আমাদের বেশি প্রয়োজন।এ ব্যাধির মূলোত্‍পাটনে সমাজের আগে পারিবারিকভাবে সবাই প্রতিরোধ গড়েতুলি।

রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৬

প্রিয় নবীর ﷺ অবস্থান নেয়া তিনটি বিখ্যাত গুহা।

প্রিয় নবীর ﷺ অবস্থান নেয়া তিনটি বিখ্যাত গুহা।

✏ ইমরান বিন বদরী ≪

১-গারে হেরা।✔
যেখানে দয়াল নবীর ৪০ বছর বয়সে নুর পাহাড়ের হেরা গুহায় সর্ব প্রথম অহী নাজিল (প্রেরণ) হয়েছিলো।হযরত জিব্রাইল (আ:)আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রেরিত অহি নিয়ে আসেন এবং পড়তে বলেন ➲
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ 
পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।
اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ
পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু,
الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন,
عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সুরা আলাক ১-৫)

২-গারে সওর।✔
৬২২ খ্রিস্টাব্দে হিজরতের সময় আমার দয়াল নবী মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার বাবা সিদ্দীকে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে নিয়ে মক্কার অদূরে 'গারে সওরে' ৩ দিন অবস্থান করেছিলেন। সেখানেই ঘটেছিলো ইসলামের আরেক অলৌকিক ঘটনা।গর্তের মূখে মাকড়শার জাল দেখে ঐ সমস্ত নালায়েক কাফিরের বাচ্চারা বুঝতেই পারেনি এখানে কোন মহামানবের অবস্থান।

৩-গারে ওহুদ।✔
৬২৫ খ্রিস্টাব্দে গজওয়া এ ওহুদ তথা ওহুদ যুদ্ধের সময় মুসলমানরা গনীমতের মাল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কাফেররা পিচন থেকে আক্রমণ করলে হযরত আমীরে হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মত বিখ্যাত সাহাবীরা শহীদ হন এতে মুসলমানেরা দুর্বল হয়ে পড়লে আল্লাহর নবী ﷺ এই গুহাতে অবস্থান নেন।এতে প্রথম দিকে মুসলমানরা পরাজিত হলেও শেষে বিজয়ীর বেশে মদীনায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়।

ব্যক্তি জীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব।

ব্যক্তি জীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব।
✏ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
মানব জীবনে সৎ স্বভাব গ্রহণ আর ঘৃণিত তথা মন্দ স্বভাব পরিত্যাগে আমাদের চরিত্র বিনির্মাণের ভূমিকায় ইসলামই হচ্ছে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যা সমগ্র মানব জীবনের জন্য একটি নির্ভুল পদ্ধতি এঁকে দিয়েছে। যার মাঝে রয়েছে জীবনের প্রতিটি স্তর ও বিভাগের সুষ্ঠু সমাধান।এটা মানব রচিত কোন জীবন বিধান নয় যে, তার মাঝে সত্য মিথ্যার সম্ভাবনা থাকবে,বরং এটা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান,আমার আল্লাহ বলেন➲ وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।(সূরা মায়েদাহ ৩)যা তার অনুসারীদের জন্য দুনিয়ার জীবনে বয়ে নিয়ে আসে কল্যাণ,শান্তি ও মানুষিক স্বস্তি, আর কিয়ামতের কঠিন দিনে পুরস্কৃত করে তার চিরস্থায়ী সুখের জান্নাত। আদব বা শিষ্টাচার ব্যক্তি জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আদর্শ সমাজ গঠনে আদব-কায়দার গুরুত্ব অপরিসীম। উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার, সুসভ্য জাতি গঠনের সর্বোত্তম উপায় ও উপকরণ রয়েছে পবিত্র কুরআন এবং হাদীস শরীফে।এতে রয়েছে প্রতিটি স্তরের সুষ্ঠু সমাধান।
❋যেমন আল্লাহ পাক বলেন➲ مَّا فَرَّطْنَا فِي الكِتَابِ مِن شَيْءٍ“
আমরা কিতাবে (কুরআনে) কোন কিছুই বাদ দেইনি।”(সূরা আনআম আয়াত ৩৮ )
❋আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন➲ ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ 
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। (সূরা বাক্বারাহ ২)

বাস্তব জীবনে ইসলাম এমন কিছু উন্নত শিষ্টাচার,সুন্দর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের উপর মুসলিম সন্তানদের গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেছে,যেটা মুসলিম প্রজন্মের শিক্ষা প্রশিক্ষণ, লালন-পালন ও তাদের চরিত্র বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করে থাকে।এবং খাদ্য-পানীয় গ্রহণ থেকে পোষাক-পরিচ্ছদ, নিদ্রা ও দাম্পত্য জীবনের আদব ছাড়াও অনেক অনেক বিষয়।এমনকি তিনি পায়খানায় প্রবেশের আদব ও বলে দিয়েছেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন,নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
❋হজরত সালমান ফারেসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,মুশরিকরা আমাদেরকে বলে,এ কেমন কথা তোমাদের নবী তোমাদেরকে সকল কিছুই শিক্ষা দেন,এমনকি পায়খানা করার নিয়মও! তিনি বললেন,-হ্যাঁ! তিনি আমাদেরকে পায়খানা-পেশাবের সময় কেবলা মূখী অথবা কেবলাকে পিছনে দিয়ে বসতে বারণ করেছেন''।
❋রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন➲
إِنَّ الْهَدْىَ الصَّالِحَ ، وَالسَّمْتَ الصَّالِحَ ، وَالاِقْتِصَادَ جُزْءٌ مِنْ خَمْسَةٍ وَعِشْرِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ
‘নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র,ভালো ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুয়্যাতের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ সমতুল্য।’ (আবু দাউদ)
আমাদের অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সর্বোচ্চ শিষ্টাচার প্রদর্শন করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন➲
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ
“কোন মুমিন পুরুষ কিংবা নারীর উচিৎ নয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দেয়া ফায়সালার উপর নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। (সূরা আহযাব ৩৬)
❋আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন➲
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا
“মুমিনদের কথাতো এমনই হবে যে,যখনই তাদের মধ্যকার কোন ফায়সালার জন্য তাদেরকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান করা হবে,তখন তারা বলবে: শুনলাম এবং মানলাম। (সূরা-নূর-৫১)
একজন মুসলমানের অপরিহার্য আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করা এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করা,এবং সকল প্রকার কবিরা ও সগীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকাই যেন হয় সর্বোচ্চ শিষ্টাচার।সাথে সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর সাথে সর্বোচ্চ আদব রক্ষা করা। কেননা তিনিই হলেন সর্বশেষ নবী,স্র্রষ্টার সৃষ্টির শ্রেষ্ট যে জন যাকে আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য প্রেরণ করেছেন। রাসুূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশের অনুগত হওয়া,এবং তিনি যে সকল কাজ থেকে নিষধ করেছেন সে গুলো থেকে বিরত থাকা ।
❋সূরা হাশরের ৭নং আয়াতে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন➲
مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
রসূল তোমাদেরকে যা দেন,তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
═✼আর প্রকৃত মু’মিন হতে হলে অপরিহার্যভাবে আমার কমলিওয়ালা নবীকে ভালবাসা। যেমন আমার রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলেন➲
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের অপেক্ষা অধিক প্রিয়পাত্র হই।
(মুসলিম১ /১৬হাঃ৪৪,আহমদ১২৮১৪)
তাঁর সুন্নাতের অনুগত হওয়া এবং আদব আখলাক তথা শিষ্টাচারে তাঁরই মত হওয়া।
আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্রের উত্তম প্রশংসা করে বলেন➲
وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ
অর্থাৎ:নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সূরা আল-কালাম ৪)
═✼হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে,সে ঈমানের স্বাদ পায়।
১।আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছুর থেকে প্রিয় হওয়া
২।কাউকে খালিস আল্লাহ্‌র জন্যই মুহব্বত করা
৩।কুফ্‌রীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা।
আমাদের অপরিহার্য আমার কমলিওয়ালা নবীর আনিত বিধান প্রত্যেকের জীবনে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করা। আমার আল্লাহ বলেন➲
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا
যে নিজেকে শুদ্ধ করে,সেই সফলকাম হয়।
وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا
আর সেই ক্ষতিগ্রস্ত যে আত্মাকে কলুষিত করেছে। (সূরা আশ-শামস্ ৯-১০)
✼আমাদের নফসের সাথে জিহাদ করতে হবে। গুনাহ থেকে ফিরে আসা,গুনার কাজের জন্য অনুশোচনা করা। এবং তওবা করা যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন➲
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
হে মুমিনগণ! তোমরা খালেসভাবে আল্লাহর কাছে তওবা কর সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। (সূরা তাহরীম ৮)
═আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন➲
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَى
আর যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে,আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। (সূরা ত্বোয়া-হা ৮২)
═রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন➲ যে ব্যক্তি নিয়মিত তওবা (ইস্তেগফার) করবে;আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন,সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।
(ইবনে মাজা ৩৮১৯)
✼একজন মুসলমান তার কথা-বার্তা, চাল-চলন,আচার আচরণে মানুষের সাথে শিষ্টাচার প্রদর্শন করা।পিতা-মাতার সাথে সর্বক্ষেত্রে আনুগত্য প্রদর্শন করা,নারীদের উপর যেমন পুরুষদের ন্যায় সংগত অধিকার রয়েছে তেমনি অধিকার রয়েছে নারীদের স্বামীদের উপরও।
═নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন➲
তোমাদের সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। ( তিরমিযী)
ন্যায় বিচার করা এবং অত্যাচার না করা গোপনীয় কথা প্রকাশ না করা সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।মুসলমান ব্যক্তি তার নিকট আত্মীয় ও রক্ত সম্পর্কীয় লোকদের সাথে ভদ্র সুলভ আচরণ করা। তারা আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করলেও সে আত্মীয়তা বজায় রাখা। ইসলাম প্রতিবেশীদের হক নির্ধারণ করে দিয়েছে যেমনিভাবে নিকটাত্মীয়দের অধিকার আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে।
✼সম্মানীত বন্ধুরা➲ সর্বক্ষেত্রে আমারদের উচিৎ যখন কারো সাথে দেখা হয় সালাম দেয়া। সালামের উত্তর দেয়া।নিজের জন্য যা পছন্দ তা অপর ভাইয়ের জন্য পছন্দ করা।মুসলমান ভাইকে সাহায্য করা এবং তাকে লাঞ্ছিত বা অসম্মান না করা। যে কোন ব্যাপারে সুপরামর্শ দেয়া।রুগ্ন হলে তার সেবা করা বা দেখা করা এবং মারা গেলে তার দাফন কাফন ও জানাযাতে অংশ গ্রহণ করা। বিনয়ী আচরণ করা। কখনও অহংকার না করা। গীবত বা নিন্দা না করা। উপহাস না করা। দোষ ত্র“টি খুঁজে বের না করা। কোন ধরনের অপবাদ না দেয়া। ধোকা না দেয়া, প্রতারণা না করা।গালি না দেয়া। হিংসা ও ঘৃণা না করা। তার প্রতি মন্দ ধারণা না করা।খিয়ানাত না করা এবং তিন দিনের বেশী তার সাথে রাগ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন না করা।তার দোষ-ত্র“টি ক্ষমা করা। সম্মান রক্ষা করা।এবং ন্যায় বিচার করা।
═ আল্লাহ তায়ালা আমাদের আদব রক্ষা করে শিষ্টাচারের বৈশিষ্ট্যেকে কাঙ্খিত মানে প্রকাশ করার তাওফীক দান করুন,আমীন।

প্রিয়নবী মুহাম্মদ মুস্তফা ﷺ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী।

প্রিয়নবী মুহাম্মদ মুস্তফা ﷺ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
যে বিষয়ে কলম ধরতে অনেকবার পিছপা হয়েছি,ভেবেছি শতবার এই ভেবে যে আমারমত অযোগ্য গুনাহগার মূর্খ ধারা কী এ বিষয়ে কলম ধরা শুভাপায় ! যার প্রসংশায় স্বয়ং রাব্বুল আলামীন নাম রেখেছেন (محمد) মুহম্মদ অর্থাত্ প্রসংশিত। সেই দু'জাহানের সরদারের প্রসংশা বা সংক্ষিপ্ত জীবনী লিখতে গিয়ে বারবার সাহস হারিয়ে ফেলেছি।তার পরেও এই গোলামের নামটি কাল কিয়ামতের কঠিন সময়ে শাফায়াতে রাসুলের তালিকায় স্থান পাওয়ার আশায় আগ্রহী হলাম।আল্লাহপাকের দরবারে এই আশাটি রইল। এ রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে ৫৭০ ঈসায়ী সোমবার মরুরপ্রান্তে মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের হাশেমী গোত্রে সোবিহ সাদিক মা সৈয়্যদা আমিনার কোল আলোকিত করে স্র্রষ্টার সৃষ্টির শ্রেষ্ট যে জন ধরার বুকে আগমন করেছিলো বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী,জাহেলিয়াতকে আলোকিত করতে স্র্রষ্টার মহান ঐশি বাণী (আল কুরআন) পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিয়ে ছৈয়্যদুল মুরছালীন শফিউল মুজনেবীন রহমাতুল্লিল আলামীন নবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম।লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি অধম সেই নবীর একজন গুনাহগার উম্মত হতে পেরে। 
অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তাদের মতে তিনি ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেরই চূড়ান্ত সফলতা অর্জনকারী। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনি সামাজিক,রাজনৈতিক জীবনেও। জাহেলিয়াতকে আলোকিত করে সমগ্র বিশ্বে মানবতার জাগরণে তিনিই পথিকৃৎ হিসেবে অগ্রগণ্য।আমার আল্লাহপাকও বলেন═➲
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
“হে মাহবুব ! আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।”(সূরা আম্বিয়া-১০৭)

❋ প্রিয়নবী ﷺ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী।✔
আসলে রাসুলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামের প্রতিটা মূহুর্তের বর্ণনা করাটাও কোন মানবের সাধ্য নেই।উনার এক একটা অংশের বর্ণনা করা আদৌ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তার পরেও ৬৩ বছরের দুনিয়াবী হায়াতের বিশেষ বিশেষ কয়েকটি বর্ণনা করতে চেষ্ঠা করবো ইনশাহ্ আল্লাহ।

❋ শৈশব কাল।✔
হয়রত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রসুল সল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ায় নুরানি শুভাগমনের প্রায় ছয় মাস পূর্বে পরলোকগমণ করেন।তত্কালীন আরবের রীতি অনুসারে হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের (অপর নাম হালিমা সাদিয়া) হাতে দিয়ে দেয়া হয়। তিনি উনাকে সঠিকভাবে লালনপালন করতে সমর্থ হন। তখনকার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যা সেই ছোট্ট বয়সেই মানবকুলে ইনসাফের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন আমার দয়াল নবী-তিনি কেবল হালিমার একটি স্তনই পান করতেন এবং অপরটি তার অপর দুধভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। দুই বছর লালনপালনের পর হালিমা উনাকে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন।এর পর রাসুলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লামকে আবারো দুধমা হালিমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। হালিমাও চাচ্ছিলেন উনাকে ফিরে পেতে এতে মা হালিমার আশা পূর্ণ হল। এর কিছুদিন পর ৪ বছর বয়সে ঘটেযায় এক অলৌকিক ঘটনা যা মানবীয় জ্ঞানের ঊর্ধে! সাধারণ আর অসাধারণের পার্থক্য নির্ণয়ে সহজতার পথ সুগম করতে বুক চিরে কলিজার একটি অংশ বের করে তা জমজম কূপের পানিতে ধুয়ে আবার যথাস্থানে স্থাপন করে দেন ফেরেশতা হযরত জিব্রিল ও মিকাইল(আ:)।এই ঘটনাটি ইতিহাসে বক্ষ বিদারণের ঘটনা হিসেবে খ্যাত।
এই ঘটনার পরই হালিমা রাসুলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লামকে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। ছয় বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে কাটান। এই সময় একদিন মা আমিনার ইচ্ছা হয় ছেলেকে নিয়ে মদীনায় যাবেন। সম্ভবত কোন আত্মীয়ের সাথে দেখা করা এবং স্বামীর কবর যিয়ারত করাই এর কারণ ছিল। মা আমিনা,ছেলে,শ্বশুর এবং দাসী উম্মে আয়মনকে নিয়ে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদীনায় পৌছেন। তিনি মদীনায় একমাস সময় অতিবাহিত করেন। একমাস পর মক্কায় ফেরার পথে আরওয়া নামক স্থানে এসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।মাতার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মুত্তালিবই দেখাশোনা করতে থাকেন। বয়স যখন ৮ বছর তখন দাদা'ও মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালিবকে রাসুলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লাম এর দায়িত্ব দিয়ে যান।এবং ১০ বছর বয়সে দ্বিতীয়বার মক্কার অদুরে অলৌকিকভাবে বক্ষ মুবারক বিদারণ হয়।

❋ সিরিয়া গমন।✔
ব্যবসায়ী আবু তালিব আরবদের নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার সিরিয়া সফরে যেতেন।বয়স যখন ১২ বৎসর তখন তিনি চাচার সাথে সিরিয়া যাওয়ার জন্য বায়না ধরলেন। প্রগাঢ় মমতার কারণে আবু তালিব আর নিষেধ করতে পারলেননা। যাত্রাপথে বসরা পৌছার পর কাফেলাসহ আবু তালিব তাবু ফেললেন। সে সময় আরব উপদ্বীপের রোম অধিকৃত রাজ্যের রাজধানী বসরা অনেক দিক দিয়ে সেরা ছিল। কথিত আছে, শহরটিতে জারজিস নামক এক খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন যিনি বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি তার গীর্জা হতে বাইরে এসে কাফেলার মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন। এ সময় তিনি বালক মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লামকে দেখে শেষ নবী হিসেবে চিহ্নিত করেন।তাঁর উত্তম চরিত্র ও সদাচরণের কারণে পরিচিত মহলের সবাই তাঁকে "আল-আমিন"الامين (বিশ্বস্ত) বলে সম্বোধন করতেন। বিশ্বনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্রের উত্তম প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন═➲ وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ
অর্থাৎ: নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।(সূরা আল-কালাম ৪)

❋ হিলফুল ফুযুল।✔
আরবদের মধ্যে বিদ্যমান হিংস্রতা,খেয়ানতপ্রবণতা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমনের জন্যই হিলফুল ফুযুল গঠন করেন এবং ১৬ বছর বয়সে এই সংঘকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট ভূমিকা রাখেন।

❋ ব্যবসা এবং বিবাহ।✔
তিনি ১৭ বছর বয়সে ব্যবসায় শুরু করেন।অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। ব্যবসায় উপলক্ষ্যে তিনি সিরিয়া,বসরা, বাহরাইন এবং ইয়েমেনে সফর করেন। রাসুলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লাম এর সুখ্যাতি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ তা অবহিত হয়েই উনাকে নিজের ব্যবসার জন্য সফরে যাবার অনুরোধ জানান।এবং তাঁর ব্যবসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২৫ বছর বয়সে বিবি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে বিবাহ।বিবি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা স্বীয় বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের কাছে বিয়ের ব্যাপরে তার মনের কথা ব্যক্ত করেন। নাফিসার কাছে শুনে রাসুলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লাম বলেন যে তিনি তাঁর অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন জানাবেন। চাচাদের সাথে কথা বলে বিয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। বিয়ের সময় হযরত খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার বয়স ছিল ৪০। মা ফাতিমাতুজ জহরা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁরই সন্তান।

❋ হাজরে আসওয়াদ স্থাপন।✔
আমার কমলিওয়ালা নবীর বয়স যখন ৩৫ বছর তখন কা'বা গৃহের পূনঃনির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বেশ কয়েকটি কারণে কাবা গৃহের সংস্কার কাজ শুরু হয়। পুরনো ইমারত ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করা শুরু হয়।এখানে পাথর স্থাপন নিয়ে গোত্রিক সমস্যা দেখা দিলে সিদ্ধান্ত হয় যে সকালে কাবা ঘরে আসবে সেই পাথর স্থাপন করবে। যেখানে সবার পূর্বে আমার দয়াল নবীর আগমন হয়েছিলো।এভাবে পুনঃনির্মানের সময় হাজরে আসওয়াদ (পবিত্র কালো পাথর) যথাস্থানে তিনি স্থাপন করেন।

❋ নবুয়তের ঘোষণা।✔
দয়াল নবীর ৩৭ বছর বয়সে নুর পাহাড়ের হেরা গুহায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ধ্যানে নিমগ্ন থেকে ৪০ বছর বয়সে হযরত জিব্রাইল (আ:)আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রেরিত(প্রথম অহি)বানী নিয়ে আসেন এবং পড়তে বলেন═➲
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ
পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।
اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ
পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু,
الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন,
عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। (সুরা আলাক ১-৫)
সে সময় ওয়ারাকা বিন নওফেল ভবিষ্যৎ বাণী করেন। বিবি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তিনি প্রথম (মহিলা) মুসলমান। ৪১ বছর বয়সে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু,হযরত জায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু এর ইসলাম গ্রহণ। সাফা পাহাড়ের পাশে,হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহুর গৃহে অবস্থান ও গোপনে ইসলাম প্রচার করেন। হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু সহ ৪০ জন নারী-পুরুষের ইসলাম গ্রহণ করেন।এভাবেই প্রথম পর্যায়ে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। এবং এই প্রচারকাজ চলতে থাকে সম্পূর্ণ গোপনে। নবুয়তের তৃতীয় বর্ষে প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন।এবং কুরাইশরা বিরোধীতা করেন।তাদের বিরোধীতার মূল কারণ ছিল একাত্ববাদ নিয়ে। তারা মূলত:বহু ইলাহ্ এর ওপর বিশ্বাসী ছিলো। বহু দেবদেবীর পূজা অর্চনা করতো। মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লাম যখন তাদের মাঝে এক ইলাহ্ এর কথা বললেন তখন শুরু হলো বিরোধিতা।ফলে মক্কায় বিরোধিতার সম্মুখীন হয় এবং বয়স যখন ৪৬ বছর তখন সংঘবদ্ধভাবে দয়াল নবীর উপর কুরাইশরা নির্যাতন চালায়। ধীরে ধীরে যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চরম রূপ ধারণ করে, তখন নবীﷺ কিছু সংখ্যক মুসলিমকে আবিসিনিয়ায় (ইথিওপিয়ায়) হিজরত করতে পাঠান। সেখান থেকেও কুরাইশরা মুসলিমদের ফেরত আনার চেষ্টা করে, যদিও তৎকালীন আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশীর কারণে তা সফল হয়নি।যার গায়েবানা জানাজা পড়েছিলো আমার গায়েবের খবর দেয়া নবীﷺ।

❋ কুরাইশদের অবরোধ এবং চন্দ্র দ্বি-খন্ডিত করা।✔
নবুয়তের ৭ম বর্ষ ইসলামের ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে তা হল চাচা হযরত হামযা রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু এবং কুরাইশ নেতা উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তালা আনহুর ইসলাম গ্রহণ।এরপর কুরাইশদের পক্ষ থেকে বয়কট ও শে’আব উপত্যকায়,চাচা আবু তালেবসহ ৩ বছর একঘরে ও অবরোধ করে। ঐ সময় ঘটেছিলো আরেক মুজেজায়ে রাসুল যার কোন সঠিক ব্যখ্যা আধুনিক যুগে নয় শুধু ১৪০০ বছর অতিবাহিত হলেও আদৌ তার বর্ণনা মানবমন্ডলীর করা সম্ভব হয়নি,বস্তুতঃ নবীদের মুজেজা তাকেই বলে যা সাধারণ জ্ঞানে ব্যখ্যার বাইরে।আর তা হলো মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লাম-এর শাহাদত আঙ্গুলের ইশারায় আকাশের চন্দ্র দ্বি-খন্ডিত করা (শক্বক্বুল ক্বামার)। অবিশ্বাসীরা বলেছিল,মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লাম আপনি যদি আকাশের পূর্ণিমার চন্দ্রটিকে দ্বিখন্ডিত করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আমরা আপনার নবুওয়াত বিশ্বাস করবো। তখন আল্লাহর নির্দেশে শাহাদত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা মাত্র চন্দ্র দ্বি-খন্ডিত হয়ে এক খন্ড সাফা পাহাড়ে আরেক খন্ড মারওয়া পাহাড়ে এসে পড়ল। তখন অবিশ্বাসীরা এটা জাদু বললো।
পবিত্র কুরআনের সূরা কমরের ১,২ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন═➲
اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانشَقَّ الْقَمَرُ
কেয়ামত আসন্ন,চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে।
وَإِن يَرَوْا آيَةً يُعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ
তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে,এটা তো চিরাগত জাদু।

❋ তায়িফ গমন।✔
৫০ বছর বয়সে কুরাইশদের সামাজিক বয়কটের সমাপ্তি হয়। বয়কটের পরের বছর ছিল দুঃখের বছর,কারণ এই বছরে খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে। চাচা আবু তালিব ও হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ওফাত হয়।এরপর ইসলাম প্রচারের জন্য আমন্ত্রিত হয়ে তায়িফ গমন কিন্তু সেখানে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি চূড়ান্ত অপমান ও উপহাসের শিকার হয়ে নির্মমভাবে নির্যাতিত হন। তবুও তিনি একাত্ববাদের হাল ছাড়েননি; বরং সেখানেও তিনি ইসলাম প্রসারের সম্ভবনার কথা চিন্তা করতে থাকেন।

❋ মি'রাজ গমন।✔
এই রাত্রে আবারো মানবীয় জ্ঞানের ঊর্ধে! মক্কায় বক্ষ মুবারক বিদারণ করা হয়।এবং মক্কা থেকে ২৬ রজব সোমবার দিবাগত রাত্রে মিরাজ গমন।মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় যান; এই ভ্রমণ ইসলামে 'ইসরা' নামে পরিচিত।মসজিদুল আকসা থেকে তিনি একটি বিশেষ যানে করে উর্দ্ধারোহণ করেন এবং মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করেন এবং এ সময় তিনি বেহেশ্‌ত ও দোযখ সহ মহাবিশ্বের সকল স্থান অবলোকন করেন।মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের বিধান নিয়ে আসেন।এটি এমন এক অভাবনীয় বিশ্ময়কর ঘটনা যার বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহপাক বলেন═➲
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই।নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।(সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত ১)
(মিরাজের বিস্তারিত একটি পোষ্ট করেছিলাম পোষ্টটি দেখে নিবেন)।

❋ ইয়াশ্রাবে হিজরত ।✔
হুজুরপাক সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের বয়স যখন ৫১ তে তখন মক্কায় যে খোদাপদত্ত্ব দায়িত্ত্ব নিয়ে আসে তা প্রচার প্রসারে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে পরবর্তিতে ৫৩ বছর বয়সে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে আল্লাহর নির্দেশে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তালা আনহুকে নিয়ে ইয়াশ্রাবে হিজরত করেন যা বর্তমান মদিনা।এদিকে এর মাঝে অনেক মদিনাবাসী গোপনে আকাবা নামক স্থানে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে দয়াল নবীﷺ কে তাদের সেখানে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে যান।যা 'আকাবার শপথ' নামে সুপরিচিত।এখানে আরো অনেক ঘটনা রয়েছে মক্কার কুরাইশরা চিরতরে ইসলামের আলো নিভিয়ে দেয়ার জন্য 'দারুন নদোয়ার' বৈঠকে সিদ্বান্ত নিয়েছিলেন তারা ১০কি ১২জন যুবককে পুরুস্কৃত করার লোভ দেখিয়ে পাঠিয়েছিলেন এমনকি হুজুরেপাকের ঘর ঘেরাও করেও হতাস হয়েছিলেন।অন্যদিকে হিংশ্রদের কালো থাবা থেকে রক্ষার আশায় মক্কার অদূরে 'গারে সওরে' আশ্রয়নেন আমার দয়াল নবী তাঁর সদ্য বিবাহিত স্ত্রী মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার বাবা সিদ্দীকে আকবরকে নিয়ে।সেখানেই ঘটেছিলো ইসলামের আরেক অলৌকিক ঘটনা।গর্তের মূখে মাকড়শার জাল দেখে ঐ সমস্ত নালায়েক কাফিরের বাচ্চারা বুঝতেই পারেনি এখানে কোন মহামানবের অবস্থথান।এভাবেই হুজুরপাক সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের মক্কী যুগের সমাপ্তি ঘটে।
**সম্মানীত বন্ধুরা,আমি এভাবে যদি লিখতে যাই তবে আদৌ শেষ করতে পারবোনা তাই সংক্ষেপে ইতি টানতে হবে।হিজরত পরবর্তী ঘটনাটি হযরত আয়ুব আনসারীর একটি পোষ্ট করেছি ওখানে বিস্তারিত রয়েছে।

❋ মাদানী জীবন ✔
শুরু হয় মদনী জীবন। যে ইয়াশ্রাবে ছোটবেলায় গিয়েছিলেন আম্মাজান মা আমিনার সাথে তা আমার দয়াল নবীর পদার্পনে নাম পরিবর্তন করে হয়ে গেল (مدينة رسول )মদিনাতুন্নবী বা নবীর শহর।প্রভাতে সূর্যের উদয় হলে যেমন রাতের অাঁধার বিদায় নিতে বাধ্য হয়, তেমনি নূর নবী আল্লাহর পেয়ারা হাবিবের শুভ পদার্পণে ইয়াশ্রাব আলোকিত হয়ে যায়।
➲ হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু তখন স্বল্পবয়সী বালক ছিলেন। তিনি বলেন, যেদিন রাসুল ﷺ মদিনা শরিফে তাশরিফ আনেন, সেদিনের চেয়ে আলোকোজ্জ্বল এবং অনিন্দ্য সুন্দর দিন আমি আর দেখিনি।
সে সময়ে মদীনায় বিবদমান দুটি মূল পক্ষ ছিল বনু আওস ও বনু খাজরাজ।আমার রাসুল ﷺতার মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।৫৪ বছর বয়সে মদীনা শরীফে ইহুদী ও পৌত্তলিকদের সঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতার স্বীকৃতিসহ ৫০দফার মত একটি লিখিত সনদ স্বাক্ষরিত হয় (পৃথিবীর ইতিহাসে এটি ১ম লিখিত সনদ) যা ইসলামের ইতিহাসে মদীনার সনদ নামে পরিচিত।এই সনদের মাধ্যমে মধ্যে সকল রক্তারক্তি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এমনকি এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতির গোড়াপত্তন করা হয় এবং সকল গোত্রের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভুতি সৃষ্টি করা হয়। পরবর্তিতে আওস,খাযরাজ উভয় গোত্রই ইসলাম গ্রহণ করেছিল।এছাড়াও প্রধানত তিনটি ইহুদী গোত্র বনু কাইনুকা, কুরাইজা এবং বনু নাদির এগুলোসহ মোট আটটি গোত্র এই সনদে স্বাক্ষর করেছিল।এই সনদের মাধ্যমে পরবর্তিতে মদীনা একটি ইসলামী স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।এবং ঐ বছর আমার রাসুল ﷺ মদিনায় ছোট্ট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন যাই বর্তমান (المسجد النبوي) মসজিদে নববী বা মদিনা শরীফ নামেই পরিচিত।
➲ হযরত আবদুল্লাহ ইবনুূু উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় এর সময়ে মসজিদ তৈরী হয় কাঁচা ইট দিয়ে, তার ছাদ ছিল খেজুরের ডালের, খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু এতে কিছু বাড়ান নি। অবশ্য উমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু বাড়িয়েছেন। আর তার ভিত্তি তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যে ভিত্তি ছিল তার উপর কাঁচা ইট ও খেজুরের ডাল দিয়ে নির্মাণ করেন এবং তিনি খুঁটিগুলো পরিবর্তন করে কাঠের (খুঁটি) লাগান। তারপর উসমান রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু তাতে পরিবর্তন সাধন করেন এবং অনেক বৃদ্ধি করেন। তিনি দেয়াল তৈরী করেন নকশী পাথর ও চুন-সুরকি দিয়ে। খুঁটিও দেন নকশা করা পাথরের, ছাদ বানান সেগুন কাঠ দিয়ে। (সহীহ বুখারী
এর পর ২য় হিজরিতে আযান, ইকামত ও জামাতের প্রবর্তন,যাকাত দেওয়া,রমযানের রোযা ফরয করা হয়।রোজা ফরয করা প্রসংগে আমার আল্লাহ বলেন,═➲
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারাহ ১৮৩)

❋ বদরে বিজয় অর্জন।✔
মদীনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই মক্কার সাথে এর সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে। মক্কার কুরাইশরা মদীনা রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে। ফলে ২য় হিজরী ১৭ রমজান ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বদরের যুদ্ধ-কাফিরদের আক্রমণ,আত্মরক্ষামূলক এই যুদ্ধে মুসলিমরা বিজয় অর্জন করে। বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসের প্রথম যুদ্ধ। মক্কার কাফেররা ১ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে সমবেত হলো বদর প্রান্তরে। আর আমার প্রিয় রাসুল ﷺমাত্র ৩১৩ জন সৈনিককে নিয়ে উপস্থিত হলেন বদর প্রান্তরে। অসম এ যুদ্ধে আমার আল্লাহ মুসলমানদের সাহায্যে করেন।
আমার আল্লাহ বলেন,═➲
وَقَاتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلاَ تَعْتَدُواْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبِّ الْمُعْتَدِينَ
আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানে বলেন═➲
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ فَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
বস্তুতঃ আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক,যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো।(আয়াত ১২৩)
আল্লাহ তায়ালা সংখ্যায় কম হওয়া সত্ত্বেও বদর প্রান্তরে মুসলমানদের বিজয় ও সফলতা দিয়েছেন।
এরপর পবিত্র কাবার দিকে মুখ করে নামায পড়ার নির্দেশ হয়। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু’র সাথে হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তালা আনহার শুভ বিবাহ হয়।
পরবর্তিতে ৬২৫ সালের ২৩ মার্চে উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে প্রথম দিকে মুসলমানরা পরাজিত হলেও শেষে বিজয়ীর বেশে মদীনায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়।৬২৭ সালে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের আরেকটি দল নিয়ে মদীনা আক্রমণ করে। কিন্তু এবারও খন্দকের যুদ্ধে মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়। যুদ্ধ বিজয়ে উৎসাহিত হয়ে মুসলমানরা আরবে একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়। ফলে আশেপাশের অনেক গোত্রের উপরই মুসলিমরা প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।
(উহুদ যুদ্ধের বিস্তারিত একটি পোষ্ট করেছিলাম পোষ্টটি দেখে নিবেন)।

❋ হুদাইবিয়ার সন্ধি।✔
আমার দয়াল নবীরﷺ বয়স যখন ৫৯ বছর তখন পবিত্র কুরআনে যদিও মুসলিমদের হজ্জ্বের নিয়ম ও আবশ্যকীয়তা উল্লেখ করা আছে, তথাপি কুরাইশদের শত্রুতার কারণে মুসলিমরা হজ্জ্ব আদায় করতে পারছিল না। আমার দয়াল নবী হজ্জ্ব করার জন্য মনস্থির করে ৬ হিজরীতে হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে ১৪০০ সাহাবা নিয়ে মক্কার পথে যাত্রা করেন। কিন্তু এবারও কুরাইশরা বাধা দেয়। অগত্যা মুসলিমরা মক্কার উপকণ্ঠে হুদাইবিয়া নামক স্থানে ঘাটি স্থাপন করে। এখানে কুরাইশদের সাথে মুসলমানদের একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যা ইতিহাসে (صلح الحديبية) হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। এই সন্ধি মতে মুসলমানরা সে বছর হজ্জ্ব করা ছাড়াই মদীনায় প্রত্যাবর্তন করে।এবং সেই সন্ধির বছর হযরত খালেদ ইবনে অলিদ ও হযরত আমর রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

❋ দাওয়াতের বছর।✔
৭ম হিজরীতে আমার নবীর ৬০তম দুনিয়াবী হায়াতের বছরটি ছিলো বিভিন্ন দেশে রাজা বা বাদশাদের নিকট দাওয়াত প্রেরণ এর বছর। সেই সময় খাইবার বিজয় থেকে শুরুকরে মিশর,আবিশিনীয়া, রোম ইত্যাদি দেশে শান্তির বার্তাবাহক পাঠিয়েছিলেন। প্রেরিত দূতগণের তালিকায়-দাহিয়া ক্বালবী কে রোমসম্রাট কায়সারের (হিরাক্লিয়াস) কাছে।
আবদুল্লাহ বিন হুযায়ফা আস-সাহমীকে পারস্যসম্রাট কিসরা বা খসরু পারভেজের (খসরু ২) কাছে।
হাতিব বিন আবূ বুলতা'আ কে মিশরের (তৎকালীন আলেকজান্দ্রিয়ার) শাসনকর্তা মুকাউকিসের কাছে।আমর বিন উমাইয়া কে হাবশার রাজা নাজ্জাশীর কাছে।সলীত বিন উমর বিন আবদে শামস কে ইয়ামামার সর্দারের কাছে।শুজা ইবনে ওয়াহাব আসাদী কে গাসসানী শাসক হারিসের কাছে।
আল আলা আল হাদরামিকে বাহরাইনের শাসক মুনজির ইবন সাওয়া আল তামিমি'র কাছে।
শাসকদের মধ্য হতে বাদশাহ নাজ্জাসী ও মুনজির ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
এর পরবর্তীতে হজ্ব ফরয হওয়ার হুকুম হয়।মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا
মানুষের মধ্যে যারা কাবা শরীফ পৌঁছুতে সক্ষম তাদের ওপর আল্লাহর ঘর জিয়ারত করা ফরজ
(সূরা আলে ইমরান ৯৭)

❋ মক্কা বিজয়।✔
ইসলামের ইতিহাসে মক্কা বিজয়ের ঘটনা এমন একটি আযীমুশ শান ঘটনা,যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর দ্বীন এবং তাঁর রসূলকে শক্তিশালী করেছেন।৬৩০ খ্রিস্টাব্দে আমার দয়াল নবী ﷺ দশ হাজার সাহাবীর বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হলেন।সেদিন ছিল অষ্টম হিজরীর রমজান মাসের দশ তারিখ। বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ছাড়া মোটামুটি বিনাপ্রতিরোধে মক্কা বিজিত হলো এবং আমার দয়াল নবীﷺবিজয়ীবেশে সেখানে প্রবেশ করলেন।আর বার বার উঁচু আওয়াজে পড়ছিলেন═➲
إِنَّا فَتَحۡنَا لَكَ فَتۡحٗا مُّبِينٗا
‘নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দিয়েছি। (সূরা ফাতহ,আয়াত১)
তিনি মক্কাবাসীর জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলেন। পরবর্তিতে আমার নবী সর্বপ্রথম কাবাঘরে আগমন করে সেখানকার সকল মূর্তি ধ্বংস (৩৬০টি) করেন।এ সময় তিনি এই আয়াতটি পাঠ করছিলেন═➲ وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا
‘‘বলঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল’’।(সূরা বানী ইসরাঈল ৮১)
মুসলমানদের শান-শওকত আর আমার নবীরﷺ ক্ষমাগুণে মুগ্ধ হয়ে অধিকাংশ মক্কাবাসীই ইসলাম গ্রহণ করেন।আমার আল্লাহ মুসলমানদের বিজয়ের ইংগিত দিয়ে বলেন═➲
إِذَا جَاء نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ
যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়
وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন ।(সূরা নছর ১,২আয়াত)

❋ হজ্জাতুল-বিদা বা বিদায় হজ✔
দশম হিজরির জিলক্বদ মাসে লোকদেরকে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি এবার হজ্জে যাচ্ছেন।এতদশ্রবণে লোকেরা আমার নবীরﷺসঙ্গে হজ্জ গমনের আশায় প্রস্তুতি শুরু করে দেয়।এই খবর মদিনার চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেসব এলাকার লোকেরাও দলে দলে মদিনায় এসে উপস্থিত হয়। পথিমধ্যে এত বিপুল সংখ্যক লোক কাফেলায় শামিল হয় যে,এর সংখ্যা নিরূপণও কষ্টসাধ্য ছিল। এ ছিল যেন এক মানব সমুদ্র! সামনে পিছনে ডানে বামে যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু মানুষ আর মানুষ আমার নবীকে ﷺ ঘিরে রেখেছে। তিনি মদিনা থেকে ২৫ জিলক্বদ বাদে জোহর তালবিয়া পাঠ করতে করতে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হন।
لبيك اللهم لبيك ، لاشريك لك لبيك ، إن الحمد والنعمة لك والملك لاشريك
মক্কায় তিনি কয়েকদিন অবস্থান করে মিনায় গমন করেন। অতঃপর সেখান থেকে আরাফাত প্রান্তরে রওয়ানা হয়ে ঐতিহাসিক ভাষণ পেশ করলেন।এ সময় সূরা মায়েদার এই আয়াতটি নাজিল হয়
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا
আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। (সূরা মায়েদাহ ৩)
(এ ভাষনের উপর একটি পোষ্ট আছে আশাকরি দেখে নিবেন)।
অবশেষে বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার ৮০ দিন পর ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার ৬৩ বছর বয়সে সন্ধ্যায় তিনি মদিনায় আয়িশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে ইহজগতের সমাপ্তি ঘটে।এবং সেই ঘরেই মুমিনের প্রাণের স্থান রওজাপাক অবস্থিত। যেখানে শুয়ে আছেন আমার কমলিওয়ালা নবী।
✔পরিশেষে,আমার অজ্ঞতার কারণে ভুল হলে রহমাতুল্লীল আলামীনের দিকে তাকিয়ে আল্লাহপাক যেন আমায় ক্ষমা করেন

মানবতার মুক্তির দিন (মৌলুদে মুস্তফা)


মানবতার মুক্তির দিন (মৌলুদে মুস্তফা)

✏ইমরান বিন বদরী ≪

রবিউল আউয়াল মাসটি নবী প্রেমে সিক্ত যারা তাদের মনে সর্বদা উকি দিয়ে যায়।কারণ স্র্রষ্টার সৃষ্টির শ্রেষ্ট যে জন তাঁর আগমনের মাস এই রবিউল আউয়াল।মহান রবের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাস এই মাস।এ মাসের ১২তারিখ ধরার বুকে মরুরপ্রান্তে আগমন করেছিলো বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী জাহেলিয়াতকে আলোকিত করতে স্র্রষ্টার মহান বাণী পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিয়ে ছৈয়্যদুল মুরছালীন শফিউল মুজনেবীন রহমাতুল্লিল আলামীন নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম।
◩ আল্লাহপাক বলেন হে মাহবুব- وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
“হে মুহাম্মদ !আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।” (আম্বিয়া-১০৭)
শতাব্দির পর শতাব্দি সেই আগমনি বার্তা আর প্রশংসার কীর্তন(নাত) মুমিন মানবের মনের গহীনে, লেখনিতে ধারণ করে আসছেন অদ্যাবদি।নিছে কয়েকটি কবির কিছু পংক্তিমালায় মনের ভাব প্রকাশ করা দেখুন।

১) ক) ‘‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে
মধু পূর্ণিমারই সেথা চাঁদ দোলে’’
(খ) ‘‘আজকে যত পাপী ও তাপী
সব গুনাহের পেল মাফি।’’
(গ) ‘‘ত্রিভূবনের প্রিয় মুহাম্মদ এলরে দুনিয়ায়
আয়রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়।’’
-------কাজী নজরুল ইসলাম

২) ‘‘পূর্বেতে আছিল প্রভু নৈরূপ আকার
ইচ্ছিলেক নিজ সখা করিতে প্রচার’’
নিজ সখা মুহাম্মদ প্রথমে সৃজিলা
সেই জ্যোতির মূলে ভুবন নির্মিলা’
--------মহাকবি আলাওল

৩) “তুমি যে নূরের রবি,
নিখিলের ধ্যানের ছবি;
তুমি না এলে দুনিয়ায়,
আঁধারে ডুবিত সবি”।
-----কবি গোলাম মোস্তফা

◩ আল্লাহপাক আরো বলেন,قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَ بِرَحْمَتِهِ فَبِذَالِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَا خَىْرٌ مِمَّا ىَجْمَعُوْنَ
হে রাসুল আপনি বলুন আল্লাহর “অনুগ্রহ ও রহমত” প্রাপ্তিতে তাঁদের মুমিনদের খুশি উদযাপন করা উচিত এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও শ্রেষ্ট।(সুরা ঈউনূছ৫৮)
আলোচ্য আয়াতের তাফসীরে অনুগ্রহ দ্বারা ইলমে দ্বীন আর রহমত দ্বারা নবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম এর কথা বুঝানো হয়েছে।(ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রঃ)
যে রহমতের কথা আমি প্রথমেই বলেছি যে,আল্লাহপাক মানবজাতীর জন্য নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লামকে রহমত করেই পাঠিয়েছেন।সুতরাং পৃথিবীতে একজন মুসলমান হিসেবে মৌলুদে মুস্তফার আনন্দে সীরতে রাসুলের আলোচনা করাই নবীপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।

হালাল ভেবে হারাম না খাওয়া

হালাল ভেবে হারাম না খাওয়া
✏ইমরান বিন বদরী≪

يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي الأَرْضِ حَلاَلاً طَيِّباً 
হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষন কর। (সূরা বাকারা১৬৮)
❋ নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
সম্মানীত বন্ধুরা,হালালের মাঝেও হারাম থেকে বাচার জন্য আমার এই লেখা। আশাকরি সবাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।কেও ইচ্ছেকরে গুনাহ করলে তার ক্ষমা কেবল,(ক্ষমাকারী) মহান রাব্বুল আলামীন আর যে গুনাহগার বান্দা সেই ভালো জানেন যে তার দরবারে নিজেকে সমর্পন করে কতটুকু ক্ষমা করাতে পেরেছেন। আজকের বিষয়টি আমাদের যারা দেশের বাইরে থাকি বিশেষ করে যে সমস্ত দেশে ইসলামী অনুসাসন মেনে চলেনা তাদের জন্য। আমাদের সবার জানা আছে যে প্রাণিজগতে হালাল করা প্রাণি যেমন- গরু,মুরগি,ছাগলের মাংস আমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন। কিন্তু সেই হালাল প্রাণিটা যদি আল্লাহর নাম ব্যতিত অর্থাত্‍ গায়রুুল্লার নামে জবেহ করা হয় বা কোন নাম নেয়া হয়নি এমনি জবেহ করা হয়েছে তা কি আমাদের জন্য হালাল হবে? নিঃসন্দেহে নয়। কিন্তু আমাদের অনেকি আছেন আজ মনের অজান্তে তাই করছেন অর্থাত্‍ হালাল ভেবে হারাম খাচ্ছেন। রেস্টুরেন্ট, Kfc, BurgerKing কিংবা কোন পিজার দোকানে গিয়ে এসব অর্ডার দিয়ে খেয়ে যাচ্ছি সাথে পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদেরও খাওয়াচ্ছি। অথচ একবারও কী ভেবে দেখেছি তা একজন মুসলমান হিসেবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য !
❖রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ
যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করে তার উপর আল্লাহর লানত। (মুসলিম১৯৭৮/মিশকাত ৪০৭০) আসুন একজন মুসলমান হিসেবে এসমস্ত খাওয়ার যদিও সুস্বাদু ও লোভনীয় তথাপি পরিহার করি।শুধু তাই নয়, এই হালাল খাদ্যটি যদি কোন হারাম খাদ্য রান্নাকরা পাত্রেও তথা একি পাত্রের একি তেলে যদিও রান্নাকরে তবেও তা পরিহার করি। মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল,আর এ খাদ্যের প্রভাবই তার স্বভাব ও চরিত্রের ওপর বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল হয়।পবিত্র খাদ্য আহার করলে মানুষের ওপর ভাল প্রভাব পড়ে আর অপবিত্র খাদ্য আহার করলে মানুষের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করার নিদের্শ দিয়েছেন।


❖মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللّهِ
তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। (সূরা বাকারা১৭৩)
উপরোক্ত আয়াতে কারিমায় স্পষ্ট প্রতিয়মান যে,মহান আল্লাহর নাম ব্যতিত কোন প্রাণি জবেহ করা হলে তার মাংস খাওয়া সম্পুর্ণ হারাম হবে একজন মুসলমানের জন্য। হালাল হারামের পার্থক্য মেনে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরজ।
❖মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন আরো বলেনঃ وَلاَ تَأْكُلُواْ مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ
যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না; নিশ্চয় এ ভক্ষণ করা গোনাহ(সীমালঙ্গন)।(সূরা আনআম ১২১)
❖আসুন আমাদের চিন্তাশক্তি দিয়ে দেখতে হবে আসলে এসব খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কী আদৌ মুসলমানদের জন্য কোন প্রাণী জবেহ করেছিলো কীনা যা ইসলামের বিধান অনুযায়ী হালাল হিসেবে পরিগনিত হয় ! আর হ্যাঁ যদি কোন খাদ্য হালাল হিসেবে যথেষ্ট প্রমাণ থাকে তবে তা সবার জন্য গ্রহণীয় অন্যথায় বর্জন করা ঈমানী দায়িত্ব।
বন্ধুরা,নিজেকে সাধ্যমত ইসলামের বিধি নিষেধ অনুযায়ী পরিচালনা করাই তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাধ্যম।

সৌভাগ্যবান এক সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারী

সৌভাগ্যবান এক সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারী (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)

✏ইমরান বিন বদরী≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
আমাদের মাঝে কে এমন আছে যে চেনে না সৌভাগ্যবান সাহাবী ( أَبُو أَيُّوبَ الأَنْصَارِيُّ )হযরত আবু আইয়ুব আনসারীকে।ইসলামের ইতিহাসে যার নাম অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।সায়্যাদুল মুরসালীন খাতামান নাবিয়্যীন আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করার পর শহরের অধিবাসীরা সকলেই তাদের বাসায় প্রিয়নবীকে অবস্থান নেয়ার অনুরোধ জানায়।মদীনায় তাদের এই আন্তরিকতা দেখে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা আমার কসওয়াকে (উষ্ট্র্রী) ছেড়ে দাও আমার অবস্থানস্থল সে খুঁজে বের করুক।কসওয়া হাঁটতে হাঁটতে হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর বাড়ির সামনে এসে শুয়ে পড়ল।প্রিয়নবী সল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসল্লাম সেই বাড়িতেই অবস্থান করেছিলেন।হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর বাড়িটি দোতলা। নবীজীর জন্য তিনি দ্বিতীয় তলাটি খালি করে দিলেও নবীজী নিচ তলাকে প্রাধান্য দিলে উনি প্রিয়নবীর পছন্দনীয় স্থানেই থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন।এভাবে সেদিন রহমাতুল্লীল আলামীন প্রিয়নবী সল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসল্লাম এর সৌভাগ্যের পদ-ধুলায় ধন্য হয়েছিলো আবু আইয়ুব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু সহ ইয়াসরিব শহরের অধিবাসীরাও।তিনি একজন সৌভাগ্যবান সাহাবী যার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নবী প্রেমের জীবন্ত ইতিহাস।উনার জন্ম মদীনার নাজ্জার বংশের খাযরাজ গোত্রে পূর্ণ নাম হচ্ছে খালিদ ইবনে যায়েদ ইবনে কুলায়েব আল-খাযরাজী আন্-নাজ্জারী।উপনাম আবু আইয়ুব।মদীনার আনসারদের একজন হওয়ার কারণে উনাকেও আনসারী বলা হয়।হজ্জ মৌসুমে প্রিয়নবী সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মদীনার কিছু ব্যক্তির সঙ্গে আকাবা নামক স্থানে রাত্রি বেলায় গোপনে মিলিত হয়ে তাঁদের নিকট ইসলামের বাণী তুলে ধরলে তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদীনা যাবার জন্য প্রিয়নবীকে দাওয়াত দিয়ে যান,সেই দলে হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুও ছিলেন।আবু আইয়ুব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু ৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে হযরত মু’আবিয়া রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর আমলে কনস্টান্টিনোপল তথা বর্তমান তুরস্কের ইস্তাম্বুল অভিযানে গমন করেন।রাসুল সল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসল্লাম কন্সট্যান্টিনোপল বিজয়ের যে ভবিষ্যতবানী করে যান,সেই বিজয় অভিযানের একজন সঙ্গী হওয়ার সে প্রবল আকাঙ্খায় ৮৬ বছরের বৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও অংশগ্রহণ করেন। এই অবস্থায় তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই ইন্তিকাল করেন।তিনি অসিয়ত করে যান উনাকে কনস্টান্টিনোপলেই যেন দাফন করা হয়। উনার সেই অসিয়ত অনুযায়ী কনস্টান্টিনোপলের নগর প্রাচীরের পাশেই কবর দেয়া হয়।তুরস্কতে ইস্তাম্বুল শহরের আইয়ুপ সুলতান মসজিদটি হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর মাজারকে ঘিরেই। তুরস্কবাসী উনাকে আইয়ুপ সুলতান নামে স্মরণ করে।তিনি ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং কুরআন মজীদের হাফিজ।উনার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা অনেক। ইলমে ফিক্হেও উনার ছিল পাণ্ডিত্য। ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু মদীনা থেকে রাজধানী কূফায় স্থানান্তরিত করলে হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদিআল্লাহু আনহুকে মদীনার গবর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। 

তিনি ছিলেন মদিনাতুন্নবীতে সবার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ত্ব। তথকালীন বড় বড় রাবীরাও সায়্যাদুল মুরসালীন রহমাতুল্লীল আলামীনের অবর্তমানে হাদিসে রসুলের সমাধানে উনার স্বরণাপন্ন হতেন।যেমন;নিন্মের হাদিস শরীফটি দেখুন,
◉হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ন (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আবওয়া নামিক স্থানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর মধ্যে মতানৈক্য হল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, মুহরিম ব্যাক্তি তা র মাথা ধৌত করতে পারবে আর মিসওয়ার রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, মুহরিম তাঁর মাথা ধৌত করতে পারবে না। এরপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আমাকে আবূ আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর নিকট পাঠালেন। আমি তাঁকে কূপ থেকে পানি ঊঠানোর চরকার দু’খুটির মাঝে কাপড়ঘেরা অবস্থায় গোসল করতে দেখতে পেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, কে? বললাম, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ুন। মুহরিম অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে মাথা ধৌত করতে, এ বিষয়টি জিজ্ঞাসা করার জন্য আমাকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। এ কথা শুনে আবূ আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর হাতটি কাপড়ের উপর রাখলেন এবং কাপড়টি নিচু করে দিলেন। ফলে তাঁর মাথাটি আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম। তারপর তিনি এক ব্যাক্তিকে, যে তাঁর মাথায় পানি ঢালছিল, বললেন, পানি ঢাল। সে তাঁর মাথায় পানি ঢালতে থাকল। তারপর তিনি দু’হাত দ্বারা মাথা নাড়া দিয়ে হাত দুখানা একবার সামনে আনলেন আবার পেছনের দিকে টেনে নিলেন। এরপর বললেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরুপ করতে দেখেছি।
(অধ্যায়ঃ হজ্ব ১৭২১ সহীহ বুখারী,ইফাঃ)
❖ উনার বর্ণিত দুটি হাদিস শরীফ নিন্মে আপনাদের জন্য উল্লেখ করলাম,
أَبُو أَيُّوبَ الأَنْصَارِيُّ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم جَمَعَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ بِالْمُزْدَلِفَةِ
◉হযরত আবূ আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের সময় মুযদালিফায় মাগরিব এবং ‘ইশা একত্রে আদায় করেছেন।
(৪৪১৪, মুসলিম ১৫/৪৭, হাঃ ১২৮৭, আহমাদ ২৩৬২১/ইফা ১৫৬৬)
، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْغَائِطَ فَلاَ يَسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ وَلاَ يُوَلِّهَا ظَهْرَهُ،
◉হযরত আবূ আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন শৌচাগারে যায়, তখন সে যেন কিবলার দিকে মুখ না করে এবং তার দিকে পিঠও না করে।

(সহীহ বুখারী/মুসলিম/ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৪৬)
❖ হে আল্লাহ আমাদের সেই সব নবী প্রেমিকদের দলে পরিনত করো,যারা হজরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুর মত নবী প্রেমে সিক্ত হয়ে তোমার হাবিবকে ভালোবাসতে পারে।এবং তোমার আর তোমার হাবিবের হুকুমমেনে এই ক্ষনস্থায়ী জীবনকে পরিচালনা করতে পারি।রাব্বুল আলামীন তুমি আমাদের সেই তওফিক দান কর।
(বন্ধুরা,লেখাতে মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

নবজাতকের কানে আযান দেয়া।


নবজাতকের কানে আযান দেয়া।

✏ইমরান বিন বদরী≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
কিছু আমল সময়ের সাথে সাথে তথাকথিত আধুনিকতার মায়াজালে বন্দী হয়ে পড়েছে।হারাতে বসেছি ইসলামী ঐতিহ্যের বিভিন্ন উত্তম আমল গুলি।আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে সময় পরিবর্তন হলেও ইসলামী নিয়ম নীতি পরিবর্তনীয় নয়।আসুন,ভুলতে বসা তেমনি একটি উত্তম আমল সম্পর্কে অবগত হই। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যেসব নেয়ামত দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সন্তান-সন্ততি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাধ্যমে মানবজাতি দ্বারা পৃথিবীকে আবাদ রাখার জন্য আল্লাহ তায়ালা যে বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা দান করেছেন তা হচ্ছে ইসলামী নিয়ম নীতির উপর বিবাহভিত্তিক সন্তান জন্মদান করা।আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে,সন্তান এটি আল্লাহ জাল্লা শানুহুর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ বা নেয়ামত।
═➲ আল্লাহ তাআলা বলেন: لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاء يَهَبُ لِمَنْ يَشَاء إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاء الذُّكُورَ “নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা’আলারই।তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।“(সূরা আশ-শুরা ৪৯)
আর এই নেয়ামত যার ঘরে আগমন ঘটবে,সেই সৌভাগ্যবান।

❋ সম্মানীত বন্ধুরা-আমাদের অনেকের সন্তান হয়েছে এবং হবে,কিন্তু আমরা ক'জন আছি যারা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে সুন্নাতে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিয়ম নীতি পালন করি? অথচ নবজাতকের কানে আযান দেয়া সুন্নাতে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।আমাদের অনেকেরি আছে উদাসিনতা নবজাতকের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে।তবে এটাও ঠিক যে,অনেকে আছে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও না-জানার কারণে পালন করতে সক্ষম হয় না।
═➲ হযরত আবু রাফেই (রা.)তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন:
” رأيتُ رسول الله صلى الله عليه و سلم أذّنَ في أُذُنِ الحسنِ ابن عليٍّ حين ولدتهُ فاطمة بالصلاة ” رواه أبو داود والترمذي و قال: هذا حديث صحيح.
“আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আলীর (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)পুত্র হাসানের (রা.)কানে নামাযের আযানের মত আযান দিতে দেখেছি,যখন ফাতেমা (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) তাকে জন্ম দেয়।”(আবু দাউদ এবং তিরমিযী,আযাহী,১৫,১৫৫৩) ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
═➲ হাদিস শরীফে আরও বর্ণিত আছে যে,যখন আযানের শব্দগুলো উচ্চারণ করা হয় তখন আযানের শব্দ যে পর্যন্ত শুনা যায়,সে পর্যন্ত শয়তান পলায়ন করে থাকে। (বুখারি, মুসলিম)
❋ অতএব,আমাদের কর্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আযান দেয়া যেন তার কানে আল্লাহ জাল্লা শানুহুর প্রশংসা/মহত্ব বিষয়ক প্রথম আওয়াজ প্রবেশ করে সায়্যাদুল মুরসালীন প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাহাদাতের বাণী পৌঁছে যায় আর বিতাড়ীত শয়তান দূর হয়ে যায়। আমাদের উপর সন্তান জন্মদানের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সন্তানের চরিত্র গঠনে তাকে ইসলামী জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।নবজাতক সম্বন্ধে ইসলামের এই বিধান আল্লাহ যেন আমাদের সঠিক আমল করার তাওফীক দেন আমীন !
و صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه أجمعين
--------------নবজাতকের ডান কানে আযান দেওয়া সুন্নাত।আযান দেওয়ার উত্তম পদ্ধতি হলো, যিনি আযান দিবেন তিনি পশ্চিম দিক অর্থাত কিবলার দিকে মুখ করে নিজে শিশুকে কোলে নিবেন অথবা অন্য কেউ শিশুকে কোলে নিয়ে তার সামনে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াবেন কিংবা আযানদাতার সামনে খাট বা টেবিলের উপর শিশুকে শুয়ায়ে রাখতে হবে। আযান দেযার জন্য মসজিদের ইমাম সাহেবকে ডেকে আনা জরুরী না। বরং সন্তানের বাবা চাচা যে কেউ দিতে পারবে। তবে আযান দেয়ার মত যদি কেউ না থাকে তাহলে ইমাম সাহেব বা অন্য কাউকে ডেকে এনে আযান দিতে পারবে।অনেকে বাম কানে ইকামতের কথাও উল্লেখ করেছেন তবে ডান কানে আযান দেওয়াটি উল্লেখযোগ্য।
(অনুরোধ করছি লেখাতে ভুল হলে জানাবেন,আপনার সঠিক মতামতে উপকৃত হব)

সত্যের মাপকাঠি সাহাবা-ই কিরাম


সত্যের মাপকাঠি সাহাবা-ই কিরাম

✏ইমরান বিন বদরী≪

নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
লেখার শুরুতে বলেরাখি আমরা মুসলমান,আমাদের প্রতিটি কথায়,লেখনীতে ইসলামী ইতিহাসের স্বর্ণালী যুগের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে কলম ধরা কর্তব্য।বর্তমানে যেভাবে সমালোচনাকারী দেখা যায় তাতে সামান্যতম শ্রদ্ধাও লক্ষ্যনীয় নয়।আমি সংক্ষেপে কয়েকটি লাইন লিখছি যাতে আমরা অতি উত্সাহি হয়ে সীমালঙ্গন না করি। ইতিহাসের উজ্জ্ল নক্ষত্র সম্মানীত সাহাবীদের(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)প্রতি সম্মান দেখানো তাঁদের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকাই আমাদের ঈমানী কর্তব্য।আজ লিখছি এমন এক বিশিষ্ট সাহাবী কাতবে ওহী যাঁকে সন্তানের(এজিদের)অপরাধের অপবাদে জর্জরিত করা হচ্ছে সাথে সিফ্ফীনের যুদ্ধের ভুমিকা নিয়েও।সত্য মিথ্যার যাচাই না করে মনের অজান্তে যারা সমালোচনার উর্দ্ধে তাদের সমালোচনাই প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি।আমার লেখাটির একমাত্র উদ্দেশ্য, 'আহলে বাইতকে' সম্মানের সাথে সাথে আল্লাহর রাসুলের প্রিয় সত্যের মাপকাঠি সাহাবা-ই কিরামের যথাযত বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে সম্মান করে যাওয়া।

◩ কে এই মুয়াবিয়া (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)।
-------------------------------------➮
معاوية ابن أبي سفيان নাম ‘মুয়াবিয়া’ উপনাম ‘আবু আব্দুর রহমান’।খোলাফায়ে রাশেদীনের পর ইসলামের অন্যতম খাদিমের নাম আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু।তাঁর জন্ম হয়েছিল বনু উমাইয়া গোত্রে।যদিও তাদের ইসলাম পূর্বের ইতিহাস কলঙ্খিত কেননা তাঁর পিতা এই আবু সুফিয়ানই ছিলেন কুরাইশ নেতাদের মধ্যে অন্যতম আর মা হিন্দা সম্পর্কে কম বেশী সবাই জানেন,উহুদের যুদ্ধে সৈয়্যদুস শোহাদা আমীরে হামজার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কলিজা বের করে খাওয়া মহিলা।তথাপি রহমাতুল্লীল আলামীন সায়্যাদুল মুরসালীন খাতামান নাবিয়্যীন প্রিয় নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ক্ষমা করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বিশ্ব দরবারে।মক্কা বিজয়ের বরকময় দিনে আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুবই প্রীত হয়েছিলেন এবং তার মর্যাদার স্বীকৃতি স্বরূপ ঘোষণা দিয়েছিলেন,আবু সুফিয়ানের ঘরে যে আশ্র্য় নিবে তাকে নিরাপত্তা দেয়া হল।ইসলাম গ্রহণের পর আবু সুফিয়ান বেদনাদগ্ধ হৃদয়ে অনুভব করলেন তার জীবনের বিরাট অংশ হাতছাড়া হয়ে গেছে।কিশোর মুয়াবিয়া ছিলেন তখনকার দিনে মাত্র কয়েকজন লেখাপড়া জানা লোকের মধ্যে অন্যতম।ইসলাম পূর্ব জীবনেও তিনি প্রশংসিত গুণ ও উন্নত নৈতিকতার অধিকারী ছিলেন।হযরত ইমাম সুয়ুতি (র) সহ অনেক ঐতিহাসিকের মতে আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুও মক্কা বিজয়ের দিনে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর মুয়াবিয়া (রা)পরিবারের সঙ্গে মদিনায় হিজরত করেন।এছাড়া ইসলামের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল পূর্ব থেকেই।এ জন্যই হয়ত বদর,উহুদ ও খন্দকের মত গুরুত্বপূর্ণ ও সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধ গুলোতে তিনি অনুপস্থিত।অথচ সেসব যুদ্ধে পিতা আবু সুফিয়ান ছিলেন কুরাইশদের প্রধান সেনাপতি।সকল যুদ্ধে তাঁর দূরে থাকাই প্রমাণ করে যে,শুরু থেকেই ইসলামের সত্যতা তাঁর হৃদয়ের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল। যে স্বল্পসংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম যাঁরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে সর্বক্ষণ হাজির থেকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ওহী লিপিবদ্ধ করার দুর্ল্ভ সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছিলেন তিনি তাঁদের অন্যতম।আজ প্রচারণার ধুম্রজালে সিফফীনের যুদ্ধে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু-এর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণকারী মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু-এর কথা তো জানে,কিন্তু জানে না সেই মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু-এর কথা, যিনি ছিলেন রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরম প্রিয়পাত্র।ওহী লেখার দায়িত্ব পালন করে শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ দুআ ও সুসংবাদ লাভ করেছিলেন তিনি।ইসলামী ইতিহাসে প্রথম নৌবহর অভিযাএী দলের সেনাপতি,দক্ষতায় যিনি মুসলিম জাহানকে উপহার দিয়েছিলেন সাইপ্রাস ও সুদানের মত গুরুত্বপূর্ণ দেশ।ব্যক্তিত্ব ও কর্মদক্ষতার বলে তিনি প্রায় ৪০ বছর যাবৎ একাধিক পদে ক্ষমতার মসনদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।কিন্তু আজ তিক্ত হলেও সত্য যে মাওলা আলী শের-ই খোদা হযরত আলী ও আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা’র মধ্য যে ইজতিহাদী মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়,তার যথাযথ ও সঠিক বিশ্লেষণ না করে সত্যের মাপকাঠি সাহাবা-ই কিরামের সমালোচনায় উঠেপড়ে লেগেছে।
◩ অথচ সাহাবা-ই কেরামের মর্যাদায় মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন –
لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُوْلَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى অর্থাৎ,তোমাদের মধ্যে সমান নয় ঐসব লোক যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় ও জিহাদ করেছে, তারা মর্যাদায় ঐসব লোক অপেক্ষা বড়, যারা মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় ও জিহাদ করেছে এবং তাদের সবার সাথে আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন।(সূরা হাদীদ আয়াত ১০)
◩ হাদীস শরীফ বর্ণিত আছে-عن ابی سعید الخدری رضی اللہ تعالی عنہ قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم ولا تسبوا اصحابی فلو انّ احدکم انفق مثل احد ذھبا ما بلغ مدّ احدھم ولا نصفہ
অর্থাৎ,হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন -“আমার কোন সাহাবীকে মন্দ বলনা । তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বততূল্য স্বর্ণও খয়রাত করে,তবুও তাঁদের সোয়া সের যব সদ্‌কা করার সমানও হতে পারেনা;বরং এর অর্ধেকেরও বরাবর হতে পারেনা।”(বুখারী১/৫১৮ পৃষ্ঠা,তিরমিযী২/২২৫ পৃষ্ঠা)
◩ মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,বিদ্রোহীরা হযরত ওসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে নির্দয়ভাবে শহীদ করে।তাঁর শাহাদাতের পর আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু মুহাজীর ও আনসারগণের সর্বসম্মত রায়ে বরহক খলীফা মনোনীত হন।কিন্তু কয়েকটি কারণে হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে পারেননি।এদিকে কুচক্রিমহল সিরিয়ায় আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র মনে এ ধারণাটি বদ্ধমূল করে দেয় যে,হযরত আলী মুরতাদ্বা ইচ্ছাকৃত ভাবে কিসাস কার্যকর করতে গড়িমসি করছেন এবং সে হত্যাকান্ডে (নাঊযুবিল্লাহ) তাঁর হাত রয়েছে।
মতবিরোধের মূল কারণ ছিল এটাই। অন্যান্য মতভেদ ছিল এ মূলেরই শাখা-প্রশাখা। অন্যদের বিরোধিতার কারণও ছিল এটাই।এ হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সাহাবা-ই কেরাম বিভক্ত হয়ে পড়েন। একদল নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন,তারা কারো পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেননি।
হযরত আমীর মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সাথে মতভেদ থাকার পরও তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।
◩ ইবনে কাসীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-হযরত আমীর মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর নিকট যখন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র শাহাদাতের সংবাদ পৌঁছলো, তখন তিনি কান্না করতে লাগলেন।ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর স্ত্রী বললেন,আপনি কি আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র শাহাদাতে ক্রন্দন করছেন? অথচ আপনি তাঁর সাথে লড়াই করেছেন। উত্তরে হযরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন,তুমি নিশ্চয় জাননা,আজ মানবসমাজ অসংখ্য কল্যাণ,ইলমে ফিক্বহ এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়েছ।(বিদায়া৮:১৩০পৃষ্ঠা)
❋আসল কথা হলো ততকালীন ২ গোত্র বনু হাশিম আর ওমাইয়া এরা গোত্র কেন্দ্রীক ছিলো বেশী।গোত্রীয় ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিতো বেশী তাই সর্বপ্রথম উমাইয়া খলিফা হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের বিচারের কথাকে প্রাধান্য দিয়ে আমীরে মুয়াবিয়া বিরোধীতা করলেও পরবর্তীতে শেরে খোদা আলী মরতুজার শাহাদাতের পরে আর বিচার করা হয়নি। আর এজিদ সম্পর্কে বলার কিছু নেই তা সবাই জানেন। তার জন্ম ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান বিন আফ্ফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতের সময়। সে অল্প বয়সেই মৃত্যু বরন করেছিলো। ক্ষমতালোভী এজিদের রাজত্বকাল প্রায় ৪ বছরের মতো হলেও সেই সময়ে ইবনে যিয়াদের সহায়তায় ইসলামের কলঙ্খিত অধ্যায় রচনা করছিলো-যাই কারবালার রক্তাক্ত ইতিহাস। আসুন এজিদের ভুমিকায় পিতা আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহুকে টেনে না এনে সত্যের মাপকাঠি সাহাবা-ই কিরামের যথাযত সম্মান করে যাই।
(অনুরোধ করছি লেখাতে ভুল হলে জানাবেন,আপনার সঠিক মতামতে উপকৃত হব)

কারবালার ঘটনা



কারবালার ঘটনা
═══════════ ✏ ইমরান বিন বদরী ≪
#হাল_মিন_নাসেরিন_ইয়ানসুরুন ?
কারবালার প্রান্তে সাইয়্যেদুশ শোহাদা ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু।
প্রশংসা মাত্রই আল্লাহ জাল্লা শানুহু জন্য, যিনি বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সায়্যাদুল মুরসালীন সাফিউল মুজ্নেবিন খাতামান নাবিয়্যীন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার এবং সকল সাহাবীর (রাদিআল্লাহু আনহুর) উপর।
আশুরায় দিনে সংঘটিত অসংখ্য ঘটনাবলীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্রাজেটি হলো কারবালার মরু প্রান্তরে ইয়াজিদ কর্তৃক ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু ও তার পরিবারের হৃদয়বিদারক হত্যাকান্ড।যুগ যুগ ধরে কারবালার এ ঐতিহাসিক ঘটনা সবাই শুনে আসছি আমরা। মোটামুটি সবাই এ হৃদয় বিদারক ঘটনা সম্পর্কে অবগত,তাই নতুন করে আলোচনার তেমন প্রয়োজন নেই।সংক্ষেপে কয়েটি কথা লিখবো যাতে কিছুটা ধারণা যাতে পেতে পারে আমার ঈমানী ভাইয়েরা।
কারণ--এক সময় বই কিনে বই পড়ার একটা প্রবণতা ছিল সবার মাঝে যা আজ-কালের পরিবর্তনে ক্রমান্নয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।তাই অনলাইনের লেখা গুলো পড়ে অন্তত কিছুটা হলেও যেন জানতে পারে ইসলামের সুন্দর ইতিহাস ঐতিহ্য।আর সেই লক্ষেই আজ আমার এই সংক্ষিপ্ত লেখা।

বন্ধুরা-➲ স্বৈরাচারি ইয়াজীদি ভালোবাসা যার মাঝে বিদ্যমান সে কখনো আহলে বাইতকে ভালোবাসতে পারেনা। হজরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু আনহুর পুত্র ইয়াজীদের মনে ভয় ছিল ক্ষমতা হারার।যার পরিনামে কারবালার এই নিষ্ঠুর ইতিহাস।ক্ষমতা লোভি ইয়াজিদ সুক্ষ পরিকলপনায় ইবনে জিয়াদ কে বর্তমান ইরাকে গভর্নর করে পাঠিয়ে হযরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু এর চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিল কে প্রথমে হত্তা করেন যা থেকে কারবালার পরিকলপনা শুরু। সেই বিন জিয়াদের নির্দেশে পরবর্তীতে হৃদয় বিদারক এই ঘঠনার সৃষিট ।

#কারবালার_ঘটনা:
কারবালা; শব্দটি শুনলেই মন কেঁদে ওঠে।স্বভাবতই মানুষ যখনই কোন হৃদয়বিদারক ঘটনা দেখে বা অপর কেউ তার জন্য বর্ণনা করে তখন সে মর্মাহত হয়। কেননা সে ঘটনা তো এমন এক ব্যক্তি কেন্দ্রীক, যাকে আল্লাহ্ পাক বেহেশ্তের যুবকদের সর্দার বানিয়েছেন, আর রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেদায়েতের বাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।যে স্থানে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৌহিত্র, আলী ও ফাতেমা (আলাইহিমাস সালাম) এর কনিষ্ঠ সন্তান ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু ৬১/৬০ হিজরীতে ১০ই মহররম শহীদ হয়েছিলেন।
সেদিন শুক্রবারে ভোরে ফজরের নামাজের ইমামতি করলেন ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু।এই নামাজই ছিল কারবালার শহীদদের শেষ নামাজ।আল্লাহর সৈনিকদের এই নামাজ শেষ হবার আগেই এজিদ বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয়ে যায়।তীর বৃষ্টির মধ্যেই ইমাম ও তার সাথীরা নামাজ শেষ করলেন।ইমাম তার সাথীদেরকে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হবার নির্দেশ দিয়ে দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন।ভাই আব্বাসকে দিলেন পতাকা রক্ষার দায়িত্ব ।
এ সত্যের পতাকাবাহী হযরত আব্বাস " #আব্বাস_ই_আলমদার " নামে বিখ্যাত।
মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই তীব্র আকার ধারন করলো।এ ছিল অসম যুদ্ধ ।
মাত্র ৭০/৭৮ জন মুসলমানের সাথে হাজার হাজার মোনাফেকের যুদ্ধ । এ ছিল এক অসহায় মুষ্টিমেয় ঈমানদারের প্রতিরোধ যুদ্ধ ।একদল ধর্মপ্রাণ আল্লাহর বান্দাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে হিংস্র নেকড়ের এজিদী দল।ছোট্ট একদল মোমিন কারবালার এই মরু প্রান্তরে যে অসীম সাহসিকতা,বীরত্ব ও ধৈর্য্যরে পরিচয় দিলেন মানব ইতিহাসে তেমনটি আর কখনো দেখা যায় নি এবং ভবিষ্যতেও হয়ত দেখা যাবে না।মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র আহলে বাইতকে রক্ষা করার জন্যে ইমাম হুসাইনের সাথীরা সিংহ বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন শত্রু সৈন্যের উপর।
এভাবে একে একে ইমাম হুসাইনের বাহিনীর বিখ্যাত বীরেরা এবং আহলে বাইতের সদস্যগণও শহীদ হয়ে গেলেন। যেখানে ছিলেন নবীজীর প্রিয় নাতনী হযরত যয়নবের দুই শিশু সন্তান অউন এবং মোহাম্মদ এবং কাসিম ইবনে হাসান (ইমাম হাসান রাদিআল্লাহু আনহুর ছেলে) মহাবীর আব্বাস আলমদার,ইমাম হুসাইনের ছেলে আলী আকবর। দুধের শিশু আলী আসগরকেও শহীদ করে দিয়েছেন এ এজিদ বাহিনী।এভাবে সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্যে মিথ্যার বিরুদ্ধে সংগ্রামে নিজেদের বিলীন করে দিয়েছেন।ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু দেখলেন চূড়ান্ত সময় এসে গেছে।পৃথিবীর ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন তিনি।
ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধের ময়দানে এসে মুর্খ সেনাদের উদ্দেশ্যে উপদেশ দিতে চাইলেন।এজিদ বাহিনীকে সম্বোধন করে তিনি বললেন, হে জনসাধারণ ! তোমরা কেন আমাকে হত্যা করতে চাও? আমার কি অপরাধ ? শত্রুদের কাছ থেকে কোন উত্তর পেলেন না তিনি।শত্রু পরিবেষ্টিত ইমাম একাকী দাঁড়িয়ে আছেন।তীরের আঘাতে জর্জরিত তার দেহ থেকে রক্ত ঝরছে।তিনি আবার ডাক দিলেন-*হাল মিন নাসেরিন ইয়ানসুরুনা? (আমাদের সাহায্য করার কেউ আছে কি)
এজিদী বাহিনী তীর ছুড়ে তার জবাব দিল।শেরে খোদার সন্তান মহাবীর ইমাম হুসাইন স্থির থাকতে পারলেন না তিনি শত্রুদের দিকে ছুটে গেলেন।পাপিষ্ঠ সৈন্যরা একযোগে ইমামের উপর আঘাত হানতে থাকলে তীরের আঘাতে জর্জরিত ইমামের দেহ থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরণের ফলে ধীরে ধীরে তার দেহ নিস্তেজ হয়ে আসছিল।এক সময় তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চেয়েছিলেন মুসলিম উম্মাহ যেন আহলে বাইতকে ভালোবাসে।ইয়া আল্লাহ এ কি আচরণ ! আহলে বাইতের প্রতি ?
#হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলেন,আমি নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,এরা দুজন(হাসান ও হুসাইন)আমার দুনিয়ার দুটি ফুল।(সহীহ বুখারী ৫৯৯৪)

#এ ছাড়াও তিনি বলেছেন,"নিশ্চয়ই হাসান ও হোসাইন জান্নাতে যুবকদের সর্দার।(তিরমিজি ৩৭২০)

#রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,হোসাইন আমার থেকে এবং আমি হোসাইন থেকে”(তিরমিযি ১১খন্ড,৩২৪পৃষ্ঠা)। 

এভাবে নিষ্ঠুরতার বিকট উল্লাসের মোকাবেলায় আত্মত্যাগের চরম দৃষ্টান্ত মহাকালের পাতায় চির উজ্জল হয়ে থাকল।ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু ও তার সাথীরা নতুন করে যেন স্থাপন করলেন لا اله الا الله محمد رسول الله কালেমার ভিত্তি।

❋ কবিতার যে লাইন দু'টি মানুষের মুখে মুখে চর্চা হয়ে থাকে তা হলো➲
কতলে হুসাইন আসলে মে মরগে এযিদ থা,ইসলাম জিন্দা হুতা হায় হার কারবালাকে বাদ।
(হোসাইনের শাহাদাত মূলত ইয়াযিদের মৃত্যু,ইসলাম পুনর্জীবিত হয় প্রতি কারবালার শেষে)

❋ হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু মাথা দিয়েছেন কিন্তু ইয়াজিদের সামনে মাথানত করেননি।
অন্যায়ের কাছে মাথানত করা যাবে না এটাই ইমাম রাদিআল্লাহু আনহু হোসাইনের শিক্ষা।--খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি আজমিরী (রহ.)

❋‘‘ফিরে এলো আজ সেই মহর্রম মাহিনা,ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না।--কবি নজরুল ইসলাম

═কারবালার এই নিষ্ঠুর অত্যাচার অবিচারের কাহিনী জনসাধারণের কাছে তুলে ধরেন ইসলামের বিপ্লবী মহিয়সী নারী হযরত জয়নাব এবং সাইয়্যেদুশ শোহাদা ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহুর অসুস্থ ছেলে ইমাম জয়নুল আবেদীন।হযরত ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু কারবালার প্রান্তরে নিজের জীবন ও স্বল্প দুধের শিশুসহ ৭২ জন আহলে বাইতের কারবালার কংকরময় প্রান্তরে তাজা খুনে রঞ্জিত করে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ্ সত্যের পতাকাকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে আল্লাহ্র পরিপূর্ণ দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা ও রাখার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্র রিযামন্দী হাসিলের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়ার চেতনার ও প্রেরণাকে চির জাগ্রত করে রেখে গেছেন।

হিজরী সন বা মুসলিম বর্ষপঞ্জি


হিজরী সন বা মুসলিম বর্ষপঞ্জি

═══════════════ ✏ ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
বন্ধুরা ➲ মুসলিম হিসেবে হিজরী নববর্ষ উদযাপন কিংবা মুসলিমদের গৌরবের দিনটি পালনের ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতিতে ব্যাপকতা লাভ করেনি। আমরা অনেকেই জানি না যে,মুসলিমদের নববর্ষ কোন মাসে হয়? আবার কেউ হয়তবা হিজরীবর্ষ গণনার সঠিক ইতিহাসও জানেনা। হিজরী সনের তারিখের খবরও রাখেনা। এর প্রতি মানুষ আকর্ষণও অনুভব করেনা।তা খুব দুঃখজনক। আর আমরা যারা মুসলমান আমাদের হিজরী সন সম্পর্কে জানাটা আবশ্যক। আর সেই লক্ষেই আজ আমার এই লেখা। আশা করি লেখাটি বিস্তারিত পড়ে দেখবেন।
আল্লাহ পাক তার ইবাদতের জন্য যেমন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন, তেমনি তাদের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। তাঁরা নিজেদের সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা, শ্রম-সাধনা এ পথে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। দিন-রাত মানুষকে আহ্বান করেছেন আল্লাহর পথে। কিন্তু খুব কম লোকই নবী রাসূলগণের হক্বের দাওয়াতকে কবুল করেছে। অধিকাংশ লোক তাদের দাওয়াতকে অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং আল্লাহর এই প্রিয় বান্দাদেরকে নানাভাবে অত্যাচার ও নিপীড়ন করেছে। তাঁদের ইবাদতে-দাওয়াতে বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। তাদেরকে মাতৃভূমি থেকে উৎখাত করার, এমনকি হত্যা করার চক্রান্তও করা হয়েছে।
►যেমন কুরাইশদের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আল্লাহ জাল্লা শানুহু জানায়,
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللّهُ وَاللّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
এবং হে মাহবূব, স্মরণ করুন, যখন কাফির (গোষ্ঠী) আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলো যে আপনাকে বন্দি করে রাখবে কিংবা শহীদ করবে অথবা নির্বাসিত করবে এবং তারা নিজেদের মতো ষড়যন্ত্র করছিলো; আর আল্লাহ নিজের গোপন কৌশল (প্রয়োগ) করছিলেন; এবং আল্লাহর গোপন কৌশল সর্বাপেক্ষা উত্তম। (সূরা আনফাল ৩০)
কাফিরদের এসব গর্হিত ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ফলে একদিকে যেমন তারা আল্লাহর কঠিন আযাবের উপযুক্ত হয়ে যেত অন্যদিকে এতে এই সকল নবীদের জীবনে আল্লাহর রাহে কুরবানী,সবর ও মহাব্বতের কঠিন পরীক্ষাও হয়ে যেত।এহেন কঠিন পরিস্থিতিতেই তাঁদের জীবনে নেমে আসত হিজরতের আসমানী আদেশ।
হিজরী একটি চন্দ্র নির্ভর বর্ষপঞ্জি।এটি চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে।আর পৃথিবীব্যাপী মুসলমানগণ অনুসরণ করেন ইসলামের পবিত্র দিনসমূহ উদযাপনের জন্য।৬২২ খ্রীষ্টাব্দের আল্লাহর নির্দেশে সায়্যাদুল মুরসালীন সাফিউল মুজ্নেবিন খাতামান নাবিয়্যীন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় সাথী খোলাফায়ে রাসুল হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিআল্লাহু আনহুকে নিয়ে মক্কা থেকে উত্তরে অবস্থিত ইয়াসরিব শহরে (মদীনা) হিজরত করেন।

✽ হিজরতের সময় মদীনার সর্বস্তরের জনগন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
طلع البدر علينا, من سانية البداع  তালা আল বাদরু আলাইনা মিন সানিয়াতিল বিদা।
وجب الشكر علينا, ما دعا لله داع  ওয়াজাবাশ শুকরু আলাইনা,মা দা‘আ লিল্লাহি দা’।
أيها المبعوث فينا, جئت بالأمر المطاع  আইয়্যুহাল মাব উসু ফি-না,জি’তা বিল আমরিল মুতা।
جئت شارادا المدينة, مرحبا يا خير داع  জি’তা শাররাদ্দাল মাদিনা,মারহাবান ইয়া খাইরা দা।
অর্থাৎ:“পূর্ণিমার চাঁদ উদিত হয়েছে আমাদের উপর বিদা পাহাড়ের চূড়া থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের জন্য ওয়াজিব আহবানকারীর আল্লাহর প্রতি আহবানের বিনিময়ে।যতদিন পর্যন্ত আল্লাহর পথের দিকে কোনো একজন আহ্বানকারী থাকবে। আমাদের মাঝে প্রেরিত হে প্রিয়জন! আপনি বাধ্যতামূলক আনুগত্যের নির্দেশনা নিয়ে এসেছেন, এসেছেন অকল্যাণসমূহ দূর করতে। শুভেচ্ছা স্বাগতম! হে সর্বোত্তম পথের প্রতি আহ্বানকারী।” বলে বলে অভ্যর্থনা ঞ্জাপন করেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মভূমি ত্যাগ করার ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যেই ইসলামে 'হিজরত' আখ্যা দেয়া হয় বা হিজরী সাল গণনার সূচনা হয়।হিজরতের ১৭তম বর্ষে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহু এর শাসনামলে চন্দ্র মাসের হিসাবে এই পঞ্জিকা প্রবর্তন করা হয়। হিজরতের এই ঐতিহাসিক তাৎপর্যের ফলেই হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহু এর শাসনামলে যখন মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র পঞ্জিকা প্রণয়নের কথা উঠে আসে তখন তাঁরা সর্বসম্মতভবে হিজরত থেকেই এই পঞ্জিকার গণনা শুরু করেন।যার ফলে চান্দ্রমাসের এই পঞ্জিকাকে বলা হয় ‘হিজরী সন’।

✽ ইসলামে রমযানের রোযা,ঈদ,হজ্ব,যাকাত ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে চান্দ্রবর্ষ বা হিজরী সন ধরেই আমল করতে হয়। রোযা রাখতে হয় চাঁদ দেখে,ঈদ করতে হয় চাঁদ দেখে।এভাবে অন্যান্য আমলও। অর্থাৎ আমাদের ধর্মীয় কতগুলো দিন-তারিখের হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্র রয়েছে,সেগুলোতে চাঁদের হিসাবে দিন,তারিখ,মাস ও বছর হিসাব করা আবশ্যকীয়। মুসলমানদের(আমাদের) জন্য ‘হিজরী সন অনুসরণ করা জরুরি।
►কুরআন মজীদে হজ্বের বিষয়কে চাঁদের ওপর নির্ভরশীল ঘোষণা করা হয়েছে।আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন-
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الأهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে।বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম।
(সূরা বাকারা১৮৯)
►রোযার বিষয়কে চাঁদের ওপর নির্ভরশীল ঘোষণা করা হয়েছে।সূরা বাক্বারাহ আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে।(সূরা বাক্বারাহ ১৮৫)
►রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে ইফতার কর। (সহীহ বুখারী ১৯০৯)

✼ হিজরী মাসের নামসমূহ নিম্নরূপ-
মুহররম محرّم
সফর صفر
রবিউল আউয়াল ربيع الأول
রবিউস সানি ربيع الآخر أو ربيع الثاني
জমাদিউল আউয়াল جمادى الأول
জমাদিউস সানি جمادى الآخر أو جمادى الثاني
রজব رجب
শা'বান شعبان
রমজান رمضان
শাওয়াল شوّال
জ্বিলকদ ذو القعدة
জ্বিলহজ্জ ذو الحجة

✼বন্ধুরা-আমাদের উচিত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরতের তাৎপর্য স্পষ্টভাবে জনসম্মুখে তুলে ধরা এবং হিজরী সন অনুসরণ করা।মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন। আমীন।
(সবাইকে অনুরোধ করছি লেখাতে ভুল হলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না প্লীজ,আপনার সঠিক মতামতে আমি উপকৃত হব)