বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬

হজরে আসওয়াদ নিয়ে নাস্তিকদের বিভ্রান্তি।

হজরে আসওয়াদ নিয়ে নাস্তিকদের বিভ্রান্তি।
════❖❖════ ইমরান বিন বদরী
আমাদের মুসলিম সমাজে `হজরে আসওয়াদ' সম্পর্কে জানেনা এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে,তার পরেও এ পবিত্র পাথরটি সম্পর্কে সমান্য একটু লেখলাম যাতে আমার কোন ঈমানী ভাই নাস্তিকদের কথায় বিভ্রান্ত না হয়।কারণ কিছুদিন পূর্বে একটি লেখা দেখলাম যেখানে এ পবিত্র পাথরটিকে হিন্দুদের প্রতিমাপুজার সাথে তুলনা করেছে (নাউযূবিল্লাহ) যা পড়লে আমার সাধারণ মুসলমান ভাইয়েরা বিভ্রান্তিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।আসুন এ পবিত্র পাথরটি সম্পর্কে কিছুটা অবগত হই।'হজরে আসওয়াদ' আরবিতে الحجر الأسود কালো রঙের প্রাচীন পাথর যা পবিত্র কাবা'র দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত।এটি হজের সময় তাওয়াফ (কাবার সাত চক্কর) শুরুর স্থান হিসাবে নির্দেশিত হয়।এ পাথরটি নিয়ে অনেক ঘটনা রয়েছে।এটি প্রাগৈতিহাসিক ইসলামি নিদর্শন এবং মূল্যবান বরকতময় উপকরণ।ইসলামের পূর্বেও এ পাথরটি কুরাইশদের কাছে মর্যাদাপূর্ণ পাথর হিসেবে পরিচিত।ইসলামী সমাজে এ পাথরটিকে সম্মান দেখানো নিয়ে নাস্তিকরা এটাকে কাবার ৩৬০ মুর্তির অন্যতম একটি মুর্তি ভেবে এটাকে প্রতিমাপূজার সাথে তুলনা করে যাচ্ছে।একজন নাস্তিক যার কাছে ধর্মের কোন মূল্যায়ন নেই সে কিভাবে বুঝবে কিতাবী ধর্মের মূল উৎস কোথায়।এ পাথরটি কোন মূর্তি নয় এটি জান্নাতী একটি পাথর হযরত আদম (আঃ) থেকে নূহ (আঃ) হয়ে একত্ববাদের নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে পৌঁছিয়েছেন আল্লাহপাক রব্বুল আলামীন।হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কতৃক পবিত্র কাবা শরীফ নির্মান থেকে ইসলামের পূর্বে মক্কায় কাবা শরীফ পুনঃনির্মান পর্যন্ত এই পাথর এবং মকামে ইব্রাহীম সেখানেই ছিল।
══ হযরত ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে,তিনি বলেন-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَزَلَ الْحَجَرُ الأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ 
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত হতে হজরে আসওয়াদ অবতীর্ণ হয়েছিল দুধ হতেও বেশি সাদা অবস্থায়।কিন্তু এটিকে আদম সন্তানের গুনাহ এমন কালো করে দিয়েছে।(মিশকাত ২৫৭৭/সূনান আত তিরমিজী)

❖ হজরে আসওয়াদ প্রতিস্থাপন নিয়ে সৃষ্ট বিবাদ নিরসন।
কাবা শরীফ পুনঃনির্মাণের সময় নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুনিয়াবী বয়স ছিল ৩৫ বছর।হজরে আসওয়াদ স্থাপনের বিষয়ে সৃষ্ট বিবাদ নিরসন কল্পে একটি সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয় যে,আগামীকাল যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম কাবা ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সেই এ ব্যাপারে ফয়সালা পেশ করবে।তার ফয়সালাকে সকলে খোদায়ী ফয়সালা হিসেবে মেনে নিবে।আল্লাহ তাআলার কুদরতে পরের দিন সর্বপ্রথম নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করতে দেখে সকলে সমবেত কণ্ঠে বলে উঠল এই যে আমাদের প্রিয় ‘আল আমীন’!আমরা সকলে তার প্রতি সন্তুষ্ট।তিনি একটি চাদর বিছিয়ে স্বহস্তে পাথরটি চাদরের উপর রেখে দিলেন।এরপর প্রত্যেক গোত্রের প্রতিনিধিকে বললেন,তারা যেন প্রত্যেকে চাদরের এক প্রান্ত ধরে পাথরটি দেয়ালের কাছে নিয়ে যায়।তারা যখন নিয়ে গেল তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বহস্তে পাথরটি উঠিয়ে যথাস্থানে স্থাপন করলেন।(বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
❖ সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান নর-নারীর কাছে হজের সময় হজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর অত্যন্ত মূল্যবান।প্রতিবছর হজের সময় হাজিদের অন্যতম কাজ আল্লাহর প্রেমে ব্যাকুল হয়ে পবিত্র কাবাঘর জিয়ারত ও তাওয়াফ করা।‘বায়তুল্লাহ’প্রদক্ষিণের সময় হজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা ও চুম্বন করা সুন্নত।
══ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে,তিনি বলেন-
لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَكَّةَ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَاسْتَلَمَ الْحَجَرَ
মক্কায় পৌছার পর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন এবং হজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন।(তিরমিজী ৮৫৬/ইবনু মা-জাহ ৩০৭৪)
══ হযরত আবিস ইবনু রবীআ (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে,তিনি বলেন-
رَأَيْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ يُقَبِّلُ الْحَجَرَ وَيَقُولُ إِنِّي أُقَبِّلُكَ وَأَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ وَلَوْلاَ أَنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُقَبِّلُكَ لَمْ أُقَبِّلْكَ
উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আমি হাজরে আসওয়াদে চুমা দিতে দেখেছি এবং তিনি তখন বলছিলেনঃ আমি তোমাকে চুমা দিচ্ছি অথচ আমি জানি তুমি শুধুই একটি পাথর।আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যদি তোমাকে চুমা দিতে না দেখতাম তাহলে আমি তোমাকে চুমা দিতাম না।(ইবনু মা-জাহ ২৯৪৩)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়শঃই হজরে আসওয়াদকে চুম্বন করতেন।সুতরাং উক্ত কাজটি মূর্তিপুজা তো নয়ই বরং সুন্নতে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
══ হাদীস শরীফে এসেছে,হযরত ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে,তিনি বলেন-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْحَجَرِ " وَاللَّهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ يَشْهَدُ عَلَى مَنِ اسْتَلَمَهُ بِحَقٍّ
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরে আসওয়াদ প্রসঙ্গে বলেছেনঃ আল্লাহর শপথ! এই পাথরকে আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠাবেন যে,এর দুটি চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখবে এবং একটি জিহবা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে।যে লোক সত্য হৃদয়ে একে পর্শ করবে তার সম্বন্ধে এই পাথর আল্লাহ্ তা'আলার নিকটে সাক্ষ্য দিবে।(মিশকাত ২৫৭৮) সুবহান আল্লাহ!
❖ আর লম্বা করবোনা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ পবিত্র বেহেশতি পাথরকে জীবনে একবার অন্তত চুমু দেয়ার তৌফিক দান করুক। আমীন।লেখাতে ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর কেউ কপি করলে অধমের নামটি রাখবেন যাতে গোনাহগারের জন্য কারো ইচ্ছে হলে দোয়া করতে পারে।

সোমবার, ২০ জুন, ২০১৬

ঐতিহাসিক বদর দিবস।

ঐতিহাসিক বদর দিবস।

===¤¤¤¤¤¤===• ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।বদর একটি কূপের নাম।এই কূপের নিকটবর্তী স্থানকে বদর প্রান্তর বলা হয়।এটি মদিনা থেকে প্রায় ৯০কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।৬২৪ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমজান,মুসলমানদের গৌরবময় উজ্জ্বল ইতিহাসের স্বর্ণখচিত ঐতিহাসিক একটি দিন।এটি ছিল ইসলামের প্রথম সিদ্ধান্তমূলক সামরিক যুদ্ধ।এ ঐতিহাসিক যুদ্ধে মুসলমানদের চূড়ান্ত বিজয় রচিত হয়েছিল।বদর যুদ্ধের মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সুনিশ্চিত হয়েছিল।এটি ছিল একটি অসম যুদ্ধ।যুদ্ধে অল্পসংখ্যক মুসলমান সৈন্যবাহিনী বেশি সংখ্যক কাফির সৈন্যবাহিনীর ওপর বিজয় অর্জন করেছিল।

═✽ এবার আসুন, কেন এ অসম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।এ যুদ্ধ মূলত মুসলমানদের আত্নরক্ষামূলক যুদ্ধ ছিল।নবুয়তের পর মক্কী জীবনে আমার আকায়ে তাজিদার নবী মুহাম্মাদ মুস্তফা সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকে তখন আরবের তথা ততকালিন বক্কার কাফিরেরা তাদের পূর্বপুরুষদের পৌত্তলিকতার ধর্মের বিনাস দেখতে পেয়ে রহমাতুল্লীন আলামীন নবী ﷺ সহ মুসলমানদের উপর একের পর এক অত্যাচার শুরু করেদিল।এরি মাঝে তায়িফের ঘটনা সহ অনেক ঘটনার জন্ম দিয়েছিল এই আরবের কুরাইশরা।তারা মেনে নিতে পারেনি তাদের ধর্ম বিলুপ্তিতে এই সত্য সমাগমের অধ্যায়কে।ফলে মিরাজের ঘটনায় আল্লাহ তার হাবিবকে সবকিছু দেখিয়ে পরবর্তীতে হিজরতের অধ্যাদেশ নাজিল করেন।হিজরতের পর মদিনায় বিশ্ব মানবতার মুক্তির সোপান যখন রচনা করেছিলেন আমার নবী ﷺ তখন মক্কার কুরাইশরা মদীনা রাষ্ট্রের ধ্বংসের জন্য যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে।ফলে রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।সেদিন মক্কার কাফিররা ১ হাজার সুসজ্জিত সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে সমবেত হলো বদর প্রান্তরে।আর আমার প্রিয় রাসুল ﷺ মাত্র ৩১৩ জন সৈনিককে (সাহাবায়ে কেরাম) নিয়ে উপস্থিত হলেন বদর প্রান্তরে।অসম এ যুদ্ধে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের গায়েবী সাহায্যে করেছিলেন।ফলে আবু জেহেলের বিশাল বাহিনীকে অত্যন্ত কঠিনভাবে পর্যুদস্ত করেছিলেন।যুদ্ধে দুই জন আনসার কিশোর সহদর (আফ্‌রার দুই পুত্র) হযরত মায়াজ (রা.) ও হযরত মোয়াজ (রা.) আবু জেহেলকে হত্যা করেছিল।এবং আমার রাসুলের ﷺ সাথে বিয়াদবী করা সেই কাফিরেরা যারা সিজদারত অবস্থায় উটের গর্ভাশয় আমার নবীর ﷺ নুরানী কাঁধের মাঝখানে রেখে দিয়ে হাসাহাসি করেছিল তাদের সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা বলেন ➲ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ فَوَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُهُمْ صَرْعَى يَوْمَ بَدْرٍ، ثُمَّ سُحِبُوا إِلَى الْقَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ আল্লাহর কসম! আমি এদের সবাইকে বদর যুদ্ধের দিন নিহত লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি।তারপর তাদের হিঁচড়ে বদরের কুয়ায় নিক্ষেপ করা হয়।(সহীহ বুখারী)

═ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা সূত্রে বর্ণিত রাসুল ﷺ (বদরে নিহত) গর্তবাসীদের দিকে ঝুঁকে দেখে বললেনঃ ➲ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ". فَقِيلَ لَهُ تَدْعُو أَمْوَاتًا فَقَالَ " مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ مِنْهُمْ وَلَكِنْ لاَ يُجِيبُونَ
তোমাদের সাথে তোমাদের রব যে ওয়াদা করেছিলেন,তা তোমরা বাস্তব পেয়েছো তো? তখন তাঁকে বলা হল,আপনি মৃতদের ডেকে কথা বলছেন? (ওরা কি তা শুনতে পায়?) তিনি বললেনঃ তোমরা তাদের চাইতে বেশী শুনতে পাও না,তবে তারা সাড়া দিতে পারছে না।(সহীহ বুখারী)
✽═ বদর যুদ্ধ সম্পর্কে সুরা আনফালের ১২-১৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ➲
إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلآئِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُواْ الرَّعْبَ فَاضْرِبُواْ فَوْقَ الأَعْنَاقِ وَاضْرِبُواْ مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ
যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে,আমি সাথে রয়েছি তোমাদের,সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীরস্থির করে রাখ।আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব।কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।
ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ شَآقُّواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَمَن يُشَاقِقِ اللّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
যেহেতু তারা অবাধ্য হয়েছে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের,সেজন্য এই নির্দেশ।বস্তুতঃ যে লোক আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্য হয়,নিঃসন্দেহে আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।
✽═ আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানে আরও বলেন ➲ وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ فَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
বস্তুতঃ আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন,অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক,যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো।(আয়াত ১২৩)
═ ঐতিহাসিক এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ১২মতান্তরে ১৪ জন শহীদ হয়েছিলেন,আর মুশরিক বাহিনীর ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দী হয়েছিলেন। আর এরা ছিল গোত্রসমূহের সর্দার এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি।রাসুল ﷺ যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে আদর্শ নীতি দেখিয়েছেন,বিশ্ব ইতিহাসে তার নজির মেলে না।তাঁর আদেশে আনসার ও মুহাজিররা বন্দিদের ভাগ করে আপন গৃহে নিয়ে যান।মুসলমানদের মেহমানদারি আরসুন্দর আচরণে বিমুগ্ধ হয়ে অনেকেই পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।রাসুল ﷺ তাদের পূর্ব অপরাধের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ না করে।মদিনার শিশুদের শিক্ষাদান ও মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের মুক্তিদান করেন।
═ এ যুদ্ধের সফলতা হচ্ছে:মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি,বিশ্ব বিজয়ের সূচনা,কুরাইশদের শক্তি খর্ব, ইসলামী রাষ্ট্রের পত্তন, মুসলমানদের নবযুগের সূচনা,রাজনৈতিক ক্ষমতায় ভিত্তি স্থাপন,পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে যুগান্তকারী একটি যুদ্ধ।কারণ এ যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী না হলে পৃথিবী থেকে ইসলামের নিশানা বিলীন হয়ে যেত।আর এ যুদ্ধের অপর গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো বদর যুদ্ধের বছরই মুসলমানদের উপর রোজা ফরজ হয়।বদর হলো একটি আত্মত্যাগের ইতিহাস।বদর হলো শাহাদাতের সূচনার ইতিহাস।বদর বিজয়ের পর মদিনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন দলে দলে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করতে থাকে।বদর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পবিত্র মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম তথা মুসলমানদের বিজয়ের ধারা সূচিত হয়েছিল।

বুধবার, ১ জুন, ২০১৬

জাকির নায়েকের বিরোধীতা কেন ?

জাকির নায়েকের বিরোধীতা কেন ? 
✽✽✽✽✽✽✽✽ ✏ইমরান বিন বদরী 
লেখাটির প্রথমেই বলেরাখি সমালোচনা নয় তবে যে বিষয়ে সন্দিহান তা প্রকাশ করাকে সমালোচনা মনে করাও ঠিকনা।নিজের যোগ্যতার গন্ডি দেখে কলম ধরা উচিত তাই কারো সমালোচনা নয় বরং সন্দেহাতীত বিষয় প্রকাশ করাই উদ্দেশ্য।একটা বিষয় আপনাদের নজরে এসেছে কিনা জানিনা।বর্তমান মুসলিম বিশ্বে আলোচিত সমালোচিত ব্যক্তি ডাঃ জাকির নায়েকের বিরোধীতা যারা করছেন তাদের অধিকাংশ কিন্তু আলেম সমাজ বিশেষ করে সুন্নী এবং কওমিরা।কিন্তু কেন এ বিরোধীতা? এ বিষয়ে খুব সুক্ষভাবে গভীরতায় প্রবেশ করে নিরপেক্ষ চিন্তা ধারায় একমাত্র পেতে পারেন এর সদুত্তর।গোড়ামীতে কেউ কোনদিন কোন সময় সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।আমি ব্যক্তিগতভাবেও ক্ষুদ্রজ্ঞানে শিখতে বেশী পছন্দ করি এবং চেষ্টাকরি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে।আজ ভারতে দেওবন্দি আর বেরলভীরা অলরেডী জাকির নায়েকের বিরোধীতা করে যাচ্ছেন।আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়।প্রশ্ন জাগতে পারে এর কারণ কী? কেনইবা একজন বিশ্বের পরিচিত ইসলামীক স্কলারের বিরোধীতা করছেন? তার মাধ্যমে তো ইসলামের প্রচার হচ্ছে এতে সবার খুশি হওয়ার কথা! আপনার মনে এমন ধারনাও আসতে পারে যে মুল্লারা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়ার ভয়ে তার বিরোধীতা করছেন।বাস্তবিক পক্ষে এসব ধারনা ভুল,কারণ ইসলামকে বুঝতে বা বুঝাতে গিয়ে আকিদার দর্পনে মুসলিম সমাজ আজ যোজন বিয়োজন দুরত্ত্বে অবস্থান করছে।আর এই দুরত্ত্বের মূলে কাজ করছে কিতাবী ইলম।যার সিংহভাগ দখল করে আছে সুন্নী এবং দেওবন্দিরা।আরবী,উর্দু,ফার্সিতে হাজারও মুসান্নেফদের (রচয়িতা) লেখা কিতাব গুলির চর্চা এরাই বেশী করে।যেমন,১.ইলমে কোরআন,২.ইলমে হাদিস,৩.ইলমে ফিকহ্‌,৪.ইলমে তাফসীর ৫.ইলমে আকাঈদ,৬.ইলমে ফরাইজ,৭.উসুলে হাদিস.৮.ইলমে নাহাভ,৯.ইলমে ছরফ,১০,ইলমে মান্‌তিক্‌,১১.উসুলে ফিকহ্‌ ইত্যাদির মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এরা পান্ডিত্ত অর্জন করে ইলমের ধারক বাহক হয়ে ইসলামের খিদমত করে যাচ্ছেন যুগের পর যুগ।সাথে আমাদের এও ভুলে গেলে চলবেনা যে ১৫০০ বছর পূর্বের মদিনার সেই ইসলাম আজ আমাদের মাঝে পোঁছানোর পিছনে অনেকেরি অবদান রয়েছে,তদমধ্যে আকায়ে তাজেদার রসূলে কারিম সল্লাল্লাহ তা'য়ালা আলাইহিস সালামের রেখে যাওয়া ঐশি বাণী পবিত্র কুরআন শরীফ আর সুন্নাহ'তে যে সমস্ত বিষয় সাধারনের বোধগম্য নয় সে সব বিষয়ে ইজতিহাদী ফয়সালা করে ইসলামকে বুঝার জন্য সহজ করে দিয়েছেন তাদের অবদানের কথা।তিক্ত হলেও সত্য যে আজ তাদের (সম্মানীত ইমামদের) রেখে যাওয়া ইজতিহাদের সমালোচনা করে অনেকে মুসলিম সমাজে ফিৎনা সৃষ্টি করে মুসলমানদের বিভক্ত করে দিচ্ছে।যুগে যুগে মুসলিম সমাজে এমন সমস্যা সৃষ্টিকারীর আভির্বাব হয়ে আসছে তবে ভারত বর্ষে যে সমস্যা বড় আকারে দেখা যাচ্ছে তা হল `বাইতুল্লাহ' বা আল্লাহর ঘর মসজিদের কোন গোত্রিকভাবে নামান্ত্রিত করা হয়নি।কিন্তু নবী দাবীকারী গোলাম মুহাম্মদ কাদিয়ানীর অনুসারীরা এসে মসজিদের নাম করন করেন `আহমদিয়া মসজিদ'।যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সালাফীরা `আহলে হাদিস মসজিদ' নামে মসজিদের প্রবেশ পথে জানিয়ে দিচ্ছে এটি আহলে হাদিসদের মসজিদ।কেন এমনটা করা হচ্ছে!ইবাদতের স্থানটিও আজ পার্থ্ক্যের কালো গর্তে নিমজ্জিত করা হচ্ছে।আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে কারো সমালোচনার যোগ্যতা রাখিনা আর সমালোচনার পক্ষেও নই,কিন্তু উপরোল্লিখ বিরোধীতার কারণ খোজতে গিয়ে আমার এই লেখা। ডাঃ জাকির নায়েক একজন জ্ঞানী এবং সু-বক্তা এতে যেমন সন্দেহ নেই তেমনি আকিদার দর্পণে কারো কথায় অন্ধবিশ্বাস করাটাও যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা।অনেকে আবার মনে করেন (আমার মত)স্বল্প জ্ঞানীরা নিজেদের মূর্খতার কারণে জাকির নায়েকের বিরোধীতা করেন এবং এটাও বিশ্বাস করেন উনার প্রোগ্রামে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় সাথে অনেক বিধর্মীও মুসলমান হয় আর যথেষ্ট দলীল দিয়ে কিতাবের পৃষ্ঠাসহ বক্তব্য দেন।খুব ভালো কথা তো একটা বিষয় জানিনা আপনাদের দৃষ্টিতে এসে কিনা,যে দেশের মানুষ এতো মুসলমান বিরোধী,গরু জবেহ করতে দেয়না,কুরবান করতে বিরোধীতা করে,মসজিদে আক্রমন করে, মুসলমানদের ধর্ম ত্যাগে বাধ্য করে,হাজার হাজার মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করে,সে দেশে এমন জাকজমক পূর্ন অনুষ্ঠানে হিন্দুদের মুসলমান করাতে কি আদৌ হিন্দুরা ডাঃ জাকিরের বিরোধীতা করেছে? কোথাও কি প্রতিবাদ করা হয়েছে এই বলে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরাষ্ট্রে কোন প্রকার ধর্মান্ত্ররিত করা যাবেনা! না করেনি।বরং তাদের (হিন্দুদের) ধর্মগুরু নাপাকীদের আনাগোনা হয় সেই সব প্রোগ্রামে।জানি,আমার এই লেখার সমালোচনাও করবে অনেকে তাতে কিচ্ছু আসে যায়না।আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের সন্দিহান বিষয়টাই প্রকাশ করলাম।এতে আমার বুঝারও ভুল হতে পারে।বাস্তবিক পক্ষে কেও কিন্তু ব্যক্তি ডঃ জাকির নায়েকের বিরোধীতা করছেনা,করছে তার আকিদা এবং লেকচারের।যে লেকচারে মানুষ এতো বিমোহিত তাদের অধিকাংশ কিন্তু সাধারন শিক্ষিতরা যাদের নেই সেই কিতাবী ইলম যা আগেই উল্লেখ করেছি।যে ব্যক্তির কাছে কিতাবী ইলম নেই সে যে কোন একজন তার সামনে ইসলামের কথা কিছুটা যুক্তি দিয়ে আলোচনা করলে তাতে শতভাগ সমর্তন করে যাবে এটাই বাস্তবতা।ইসলাম কিন্তু যুক্তির উপর নির্ভর করেনা।ঈমানের সঙ্গায় কিন্তু যুক্তির কথা উল্লেখ নেই।বর্তমান বিশ্বে যারা যুক্তি দিয়ে ইসলামকে বিচার করছে তাদের অনেকে ভুল পথে পদার্পন করছে।মুসলমানদের ঈমানের মূলে রাসুলের (দরুদ) প্রতি শতভাগ বিশ্বাস রেখে সাধারন আর অসাধারনের পার্থক্য স্পস্ট থাকতে হবে।যারা যুক্তিতে বিশ্বাসী তারা কিন্তু আদৌ রাসুলের (দরুদ) মিরাজ কিংবা চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করণের কোন স্থায়ী সমাধান মিলাতে পারেনি।ইসলামের গভীরে প্রবেশ করা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য কারো বক্তব্য কিংবা কারো মাহফিল শুনে অকাট্য দলীল মনেকরে নিজেকে পরিচালনা করা বুকামী ছাড়া আর কিছুইনা।কুরআন হাদিসের কিতাব নিজে পড়ে আমল করলে কারো কথায় বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা।এজন্য ইসলামে ধর্মীয় জ্ঞান আবশ্যক করা হয়েছে।ডঃ জাকির নায়েকের বক্তব্য মতে আমরা সবাই মুসলমান আমাদের কোন মাজহাব মানার প্রয়োজন নেই,ইসলামে এসব কিছু নেই।তো প্রশ্ন জাগে `আহলে হাদীস' নামে সালাফী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার কোন হুকুম কি ইসলামে আছে?
রসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম কোথাও আমাদেরকে শুধু হাদীসের আহাল অর্থাৎ হাদীসের অনুসারী হওয়ার জন্য বলে যায়নি বরং বলেছেন কিতাবুল্লাহ ওয়া সুন্নাতিহী অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে করীম এবং রাসুলের সুন্নাতকে অনুসরন করতে।আর 'সুন্নাহ' বলতে এতে অনেক ব্যাপকতা বিদ্যমান রয়েছে।সালাফীরা শুধু সহীহ হাদীসের অনুসরনের কথা বলে সহীহ হাদীসের কিতাব (الكتب السته সিহাহ সিত্তা) হাদীসের প্রধান ছয়টি গ্রন্থ থেকে আলবানী কর্তৃক নিজের মনবুত সংগ্রহের কিতাবকে প্রাধান্য দিয়ে সালাফী মতবাদ প্রচার করার কারণে আলেম সমাজ আজ তাদের বিরোধীতা করছেন।এ কথা অনস্বীকার্য যে আমাদের সব ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মানতে হবে।কিন্তু এমন অনেক সুন্নাহ আছে,যা হাদিস আকারে লিপিবদ্ধ হয়নি কিন্তু মদীনার সাহাবাদের মধ্যে সেই সুন্নাহগুলোর প্রচলন ছিল।এবং এমন অনেক আমলও ছিলো যা হাদিস আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়নি হযরত ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ মদিনায় তাবেঈনদের সাথে থেকে অনেক আমল দেখে দেখে শিখেছেন আর লিখেছেন যা অনেক ক্ষেত্রে হাদীসের বিপরীতে অবস্থান হয়।যেমন-শুক্রবারের নফল রোজা।বেশীরভাগ হাদিসের উৎস মূলত মদীনা শহর,আর ইমাম মালিক তাঁর সারাটা জীবন মদীনায় কাটিয়েছেন তাবেঈনদের কাছে পড়াশুনা করে।ইমাম মালিক সরাসরি ৬০০ তাবেঈনের কাছ থেকে হাদিস ও ফিকহ শিখেছেন,আর এই ৬০০ তাবেঈন শিখেছেন সরাসরি সাহাবীদের কাছ থেকে,মদীনায় তখন ১০ হাজার সাহাবী ছিল।ইমাম মালিক হাদিস শিখেছেন ঐ যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিশাম ইবনে ‘উরওয়া,ইবনে শিহাব আল-যুহরীর মতো বাঘা মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে।হযরত ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহও তেমনি হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাজধানী কুফায় নিয়ে গেলে মদিনার সাহাবীদের বিশাল একটি অংশ সেখানে চলে গেলে প্রখ্যাত তাবেঈনদের আমল দেখে সহীহ মতে লিপিবিব্ধ করেছেন।তিনি কয়েকজন সাহাবিদের পেয়েছেন বলে তিনি একজন সলফে সালেহীনদের বিখ্যাত তাবেঈন ছিলেন।

═ অনেককে বলতে শুনি ডাঃ জাকিরের কারণে পির আর মাজার পুজা বন্ধ হচ্ছে দেখে তারা এর বিরোধীতা করছেন।এটি খুব হাস্যকর উক্তি যে একজন মুসলমান হয়ে অন্য এক মুসলমান ভাইকে পুজারী হিসেবে গন্য করছে।একজন মুসলমানকে হিন্দুদের সাথে তোলনা করাটা কি ঠিক হচ্ছে? আমি কাউকে বলছিনা যে মাজারে যান এবং এটাও বলছিনা যে মাজারে সবসময় ভালোকাজ হয় তার পরেও তর্কের খাতিরে মেনেনিলাম যে সুন্নীরা সালাফীদের মতে মাজার ব্যবসা বন্ধ হবে দেখে ডাঃ সাহেবের বিরোধীতা করছেন।কিন্তু দেওবন্দীরা !যারা মাজার বিরোধী তারা কি বন্ধ হওয়ার ভয়ে সালাফীদের বিরোধীতা করেন? আসলে এটা নব্য সালাফীদের কিছু দর্শকদের মন আকৃষ্ট করার কৌশলমাত্র।এটা সত্য যে কিছু অজ্ঞ নির্বোধের কারণে আল্লাহর ওলীদের মাজারে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ হচ্ছে যার তিব্র প্রতিবাদ করা প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব।তার মানে এই নয় যে সমস্ত সুন্নীজনতা শিরিক বিদাআতে লিপ্ত।
আর ডাঃ জাকির নায়েকের একটি ভ্রান্ত আক্বীদা হল যে,তিনি অন্ধভাবে পরকাল, জান্নাত, জাহান্নাম, রূহ, জ্বিন,ফিরিশতা বিশ্বাস করেন না।তিনি সম্ভবনা এবং যুক্তি তত্ত্ব দ্বারা বিশ্বাস করেন।(নাউযুবিল্লাহ) (Quraan and Modern Science-conflict or conciliation-“Presenting Islaam and Clarifying Misconceptions Lecture series by Dr.Zaakir Naik,Developed by AHYA Multi-Media- 12 Enlightening Sessions) অথচ আল্লাহপাক তার পবিত্র কালামে ঈমানের সংজ্ঞায় বলেছেন,
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ  যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।
وَبِالآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ  আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।
أُوْلَـئِكَ عَلَى هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত,আর তারাই যথার্থ সফলকাম।
(সূরা বাক্বারার ৩-৫) (ঈমানের সংজ্ঞায় সূরা নিসার ১৩৬ আয়াত টাও দেখতে পারেন)
═ হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "ঈমান হলো- তুমি বিশ্বাস করবে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাব সমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি ও শেষ দিবসের (আখিরাতের) প্রতি এবং ভাগ্যের (তাকদীরের) ভাল মন্দের প্রতি বিশ্বাস করবে।"(সহীহ মুসলিম) এ ছাড়াও হাদিসে জিবরাইলে রয়েছে ঈমানের সংজ্ঞা। 
ডঃ সাহেবের আরেক বিশ্বাস হচ্ছে মুসলমান ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নবী মুহাম্মদ মুস্তফা সল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহের প্রতি ঈমান না এনে যদি এক প্রভুর প্রতি বিশ্বাস থাকে তো সে জান্নাতে যাবে তবে উনি সেখানে পার্সের্ন্টিস যোগ করে বলেন ০০০০০১%! তাই যদি হয়-পৃথিবীতে জাহান্নামী কেবল শুধু নাস্তিকেরা কারণ এরা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী নয়।আপনি হিন্দু বৌদ্ধের কথা চিন্তা না করে সে সমস্ত কিতাবীদের কথা ভেবে দেখুন যারা একত্নবাদের পুরোপুরি বিশ্বাসী যেমন ইহুদী,খৃষ্টানরা তো সবাই উনার তিওরীতে পার্সেন্টিস হারে জান্নাতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে!! ৮টি জান্নাতের স্থরের মাঝে যদি আমল অনুযায়ী বন্টন করা হয় তো তারা নিন্মের স্থরে প্রবেশ করলেও জান্নাত ঠিকই পাবে।যদি তাই হয় তো মুমিন হওয়ার প্রয়োজন কী শুধু জান্নাতের উত্তম স্থান অধিকার করার জন্য! মুসলমান আর অন্যান্যদের পার্থক্য কোথায়? এমন মনোভাব নিয়ে `দ্বীনে ইলাহী' তৈরী করে ধবংস হয়েছিলো ভারতের কোন মুসলিম বাদশা তা ইতিহাসের পাতায় এখনো কলঙ্খিত হয়ে আছে। বাকীটা খোদাপ্রদত্ব জ্ঞান দিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
═ আপনি জানেন কি,সালাফীরা যে আমাদের প্রকৃত মুসলমান মনে করেনা!তাদের দৃষ্টিতে উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলমান যুগ যুগ ধরে বিদাআতে লিপ্ত ।কথায় কথায় এরা মুসলমানকে বিদাআতী বলে সম্বোধন করে যায়।আপনি হয়ত জানেন যে বিদাআতকারী জান্নাতে প্রবেশ করবেনা।আর তাই যদি হয় তো একবার ভেবে দেখুন আমাদের পুর্ব পুরুষরা যারা গত হয়ে গেছে তারা সবাই ইসলামের ভুল পথে চলে বিদাআত করে জাহান্নামী হয়ে গিয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের মর্মবাণী যে সমস্ত লোকদের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি তাদের সিংহভাগ কিন্তু মাঝহাব মেনে ওলী আল্লাহদের অনুসারী ছিলেন।এই সালাফী মতবাদের আগমন এ ভূখন্ডে বেশী দিনের নয়।এদের সাথে একাত্নতা প্রকাশকরে আপনি আপনার পূর্বপুরুষদের কিন্তু অস্বীকার করে যাচ্ছেন।আজ ইসলামের মূলে সবাই এক হলেও আকিদার অমিলে সমাজে বিভিন্ন মতবাদের মানুষের সহাবস্থান।অথচ আল্লাহপাক তার পবিত্র কালামে বলেছেন, وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُواْ 
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর;পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।(আল-ইমরান:১০৩)।
কিন্তু আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ করতে পারেনি।আর এই না পারার কারণ যে আকিদার মতবেদ।আল্লাহপাক পবিত্র কালামে আরো বলেছেন,إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
“নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে,তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই।(সূরা আনআম ১৫৯)
বর্তমান বিশ্বে এই সালাফীজম প্রতিষ্ঠা কারীরা যুক্তির কথা বলে ইজতিহাদী গ্রহনযোগ্য বিভিন্ন মাসয়ালাকে অগ্রায্য করে নিজেদের মনবুত মতামত ব্যক্ত করে সমাজে যে ফিৎনা সৃষ্টি করে মুসলমানদের বিভক্ত করে দিচ্ছেন তাতে উপরোক্ত আয়াতের মিল আছে কিনা একবার ভেবে দেখার বিষয়।সুতরাং একজন মুসলমান হয়ে আকিদার ভিত্তিতে কাউকে ছাড় দেয়ার কোন অবকাশ নেই।আমি জাকির নায়েকের বিরোধিতা করছিনা কিন্তু সালাফীদের আকিদার পক্ষে একজন নগন্য গুনাহগার বান্দা হিসেবে সমর্থন করা অসম্ভব।এবার আসুন তাদের সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নিই।
=➲ “সালাফ” শব্দের অর্থ হলো পূর্বসূরী।সালাফী শব্দটি খুব সুন্দর এটি এসেছে সালফে সালেহীন থেকে।এই সালফে সালেহীনদের সময় ছিলো উম্মতে মুহাম্মদীর শ্রেষ্ঠ যুগ।অর্থাত সম্মানীত সাহাবী (রাঃ) থেকে তাবে-তাবেঈনদের সময়কাল।যে সময়ের একজন ইমামে আজম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি।তিনি ৭০০ সালে ৮০ হিজরীতে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের রাজত্বকালে ইরাকের কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।যার ইজতিহাদী মাসয়ালাকে তারা তাকলীদ করতে নারাজ।তাদের দৃষ্টিতে মাযহাব ইসলামকে পার্থক্য করে দিয়েছেন অথচ মাযহাব কেবল ইসলামে যে সমস্ত বিষয় স্পষ্ট নয় সেসব বিষয়কে সম্মানীত ইমামরা তাদের ইজতিহাদী সিদ্বান্তে ফায়সালা দিয়েছেন মাত্র।এতে পথ ভ্রষ্ট হয়ে মাযহাবীরা ইসলামকে বিভক্ত করে দিয়েছেন বলাটা একদম মিথ্যের আশ্রয় নেয়া ছাড়া আর কিছুই না।সালাফীরা সহীহ হাদীসের অনুসারী দাবী করলেও পরক্ষোভাবে কিন্তু তারা মাঝহাব বিরোধী অবস্থান করাই তাদের উদ্দেশ্য।আসলে কী মাযহাব ইসলামকে বিভক্ত করে দিয়েছেন? কেন এত বৈপরিত্নে অবস্থান? ইসলামে কুরআন সুন্নাহ এক হলেও এত পার্থক্য কেন? এসব কিছুর জানতে হলে গোড়ামী পরিহার করা আবশ্যক।আমাদের বর্তমানে যত সমস্যা হচ্ছে তার অধিকাংশ নিজেদের স্বপক্ষে গোড়ামীর কারণে কেউ কারো কথা শুনার বা জানার ইচ্ছাশক্তি হারিয়ে ফেলা।
= সালাফীদের বৈশিষ্ট্যঃ=
১।বিনা দলীলে কারো উক্তির অনুসরন করা চলবেনা বলে মাযহাবী ইমামদের সমাদৃত ফায়সালাকে অস্বীকার করা।অথচ সহীহ হাদীস সংকলকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইমাম,শায়খুল মুহাদ্দেসীন,সহীহ বুখারী শরীফের মুসান্নেফ তথা রচয়িতা হযরত ইসমাঈল বুখারী রহিমাহুল্লাহও কিন্তু ইমাম আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির অনুসারী ছিলেন।
২।সহীহ জঈফের কথা বলে আব্দুল্লাহ বিন বাজ আর (আলবেনিয়ান যে দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মকে পুরোপুরি আমল করেনা) সেই নাসিরুদ্দিন আলবানীর সংগ্রীহিত কিতাবে যা উল্লেখ আছে তাকেই সহীহ মনেকরা।
৩।রাসু্লুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ছাড়া ভুলের উর্ধ্বে কেউ নয়।এর মানে কী অন্যান্য নবী থেকে শুরু করে আল্লাহর প্রিয় নবীর প্রিয় সাহাবীরা (রাঃ) কেউ ভুলের ঊর্ধে নয় অর্থাৎ এঁদের সমালোচনা করাতে দোষের কিছু নেই।
৪।আল্লাহ নিরাকর নয় ও আরশে সমাহীন।
৫।এক সাথে ৩ তালাক দিলে এক তালাক গন্য হবে।
তারা রাসু্লুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ছাড়া কারো অনুসরন করা চলবেনা বলে থাকলেও মূলত:ইবনে তাইমিয়াকে তারা বিশেষভাবে অনুসরণ করেন।বর্তমান সালাফীরা সম্পূর্ণভাবে দেহবাদী আকিদায় বিশ্বাসী।অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আরশে বসে আছেন।এসব ভ্রান্ত আকিদাকেই তারা তথাকথিত সহীহ আকিদা হিসেবে প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।মহান আল্লাহ তায়ালাকে আকৃতি দেয়া এবং তার পক্ষে সন্তান জন্ম দেয়া এসব বিশ্বাস কেবল নাসারা তথা খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস।যে কারনে তারা ঈসা (আঃ) কে ইবনুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর পুত্র হিসেবে গন্যকরে।
-----------------------
আমি চাই না আমরা ইসলামের সঠিক মর্মবানী না জেনে ফিত্না আর বিভ্রান্তিতে ডুবে থাকি।ওমা আলাইনা ইল্লাল বালাগুল মুবীন।