বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬

মুসলমানের পারস্পরিক (হক) অধিকার


মুসলমানের পারস্পরিক (হক) অধিকার 
ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।মহান আল্লাহ তা’আলা মানব জাতিকে সুন্দরতম গঠনে সৃষ্টি করেছেন।শুধু সৃষ্টি করেননি,সৃষ্টির পাশাপাশি অফুরন্ত নেয়ামত দানের মাধ্যমে এই পৃথিবীর বুকে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সম্মান-মর্যাদার সাথে জীবন যাপনের সুযোগও দান করেছেন।এবং সমগ্র মানব জাতির জন্য একটি নির্ভুল পদ্ধতি এঁকে দিয়েছে।এ নির্ভুল পদ্ধতির নাম হচ্ছে ‘ইসলাম’।যা সর্বক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ করে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা রূপে মনোনীত করেছেন।
‪#‎পবিত্র‬ কুরআনে আমার আল্লাহ ইরশাদ করেন- إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।(সূরা আলে ইমরান ১৯)
আল্লাহপ্রদত্ব জীবন ব্যবস্থাই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত।যার মাঝে রয়েছে জীবনের প্রতিটি স্তর ও বিভাগের সুষ্ঠু সমাধান।এতে রয়েছে ভ্রাতৃত্ব,অধিকার ও কর্তব্যের সুন্দর সমন্বয়।সবাইকে দেয়া হয়েছে তার প্রাপ্ত অধিকার।এবার আসুন মূল আলোচনায়।ইসলামে সেই খোদা প্রদত্ব ভ্রাতৃত্বে একে অন্যের প্রতি রয়েছে কিছু অধিকার যার কিছুটা আজকে আলোচনা করবো যদি আল্লাহপাক সহায় হোন।সর্বপ্রথম দরুদ পড়ে শুকরিয়া আদায় করছি সেই নবীর (দরুদ) উম্মত হতে পেরে যাকে সৃষ্টি না করলে সৃষ্টিকর্তা কিছুই সৃষ্টি করতোনা।

মুসলমান ভাইয়ের একে অন্যের প্রতি অধিকার।
-----------------------
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া একটি সামগ্রিক মূল্যবান নিয়ামত।
ইসলাম যে সব অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে,তার অন্যতম হলো- এক মুসলমান ভাইয়ের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের (হক)অধিকার।#পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই।অতএব,তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ 
মুমিনগণ,কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে।কেননা,সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে।কেননা,সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে।তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ।যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
মুমিনগণ,তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক।নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ।এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না।তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে ? বস্তুতঃতোমরা তো একে ঘৃণাই কর।আল্লাহকে ভয় কর।নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী,পরম দয়ালু।(সুরা হুজুরাত ১০-১২)
মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের জন্য 'ইসলাম'একমাত্র আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত জীবনাদর্শ।আমাদের উচিত অপর মুসলমান ভাইয়ের হক বা অধিকার আদায় করার মাধ্যমে এই ভ্রাতৃত্ববোধকে অব্যাহত রাখা।এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের সর্বপ্রথম হক হলো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তাকে ভালোবাসা।
‪#‎হজরত‬ আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
 وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ  মানুষকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা।(সহিহ মুসলিম ১৭৫)
অন্যদিকে মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের সুনির্দিষ্ট ছয়টি হকের আলোচনা এসেছে।
#হজরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- 
حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ قِيلَ مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَسَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ 
এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে।বলা হলো,সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন,
(১) তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে,তাকে সালাম দেবে।
(২) সে যখন তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে তা রক্ষা করবে।
(৩) সে যখন তোমার মঙ্গল কামনা করবে,তুমিও তার শুভ কামনা করবে।
(৪) যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে,তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে।
(৫) যখন সে অসুস্থ হবে,তুমি তাকে দেখতে যাবে।
(৬) এবং যখন সে মারা যাবে,তখন তার জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।(মুসলিম ৫৭৭৮)
আরেকটি হক হলো,তার সম্পর্কে মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রাখা।যেমন-
#হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 
لاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَدَابَرُوا وَلاَ تَنَافَسُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا তোমরা পরস্পর হিংসা করো না,একে অন্যের পেছনে লেগে থেকো না এবং একে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না।বরং একে অন্যের সাথে ভাই-ভাই ও এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও।(মু,আহমদ ৯০৫১)
➲ এছাড়াও আরো অনেক অধিকার রয়েছে।যেমন এতিমের অধিকার সহ ইসলাম প্রতিবেশীদের হক নির্ধারণ করে দিয়েছে যেমনিভাবে নিকটাত্মীয়দের অধিকার আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে।অপর ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে যা নিজের জন্য পছন্দ করে।তার সাথে বিনয়ী আচরণ করবে।কখনও অহংকারী হবে না।তার গীবত বা পিছনে নিন্দা করবে না।তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে না।তাকে উপহাস করবে না।তার দোষ ত্র“টি খুঁজে বের করবে না।তার প্রতি কোন ধরনের অপবাদ দিবে না।তার প্রতি দয়া ও মহানুভবতা দেখানো এবং তার কষ্ট হয় এমন ব্যবহার না করা।
‪#‎আল্লামা‬ কবি শেখ সাদি (রহ.) বলেছেন- গোটা মুসলিম জাতি একটি মানব শরীর।
➲ পরিশেষে আমাদের জেনে রাখা উচিত,মানুষের অন্তরের ব্যাধিসমূহের অন্যতম হলো হিংসা-বিদ্বেষ।সুতরাং কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রেখে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে অপর মুসলিম ভাইয়ের হক বা অধিকারগুলোকে যথাযথভাবে আদায় করার মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধ মুমিন ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করার তওফিক দান করুন।আমিন।
************

বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬

মুশরিক'কে বিয়ে করা

 মুশরিক'কে বিয়ে করা =• ✏ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
বিয়ে মানব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।একাকীত্ব জীবনের অবসান ঘটিয়ে পারিবারিক বন্ধনকে সূ-দৃঢ় করার নিমিত্বে দুই পরিবারের মধুর এই সম্পর্ককে আমরা বিয়ে বলতে পারি।বিয়ে শুধু শারীরীক সম্পর্কের নাম নয় বিয়ে মানষিক, সামাজিক, পারিবারিক,ধর্মিয় নিয়মে সুন্দর একটি বন্ধনের নাম।ইসলামে বিয়ে করা সুন্নত এ রাসূল সল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওসাল্লাম,এতে সন্ন্যাসী জীবনের বিরোধিতা করা হয়েছে।নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের জীবন সঙ্গী বেছে নেন এবং এর মাধ্যমে একটি পরিবার গঠিত হয়।এই পরিবারে ছায়াতলেই নীতি-নৈতিকতা ও গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে ওঠে ভবিষ্যত প্রজন্ম।আর ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান,তাই পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তার রয়েছে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা।এবার আসুন মূল আলোচনায়।মুশরিক নারী বিয়ে করার পূর্বে জেনে নিই মুশরিক কারা?


❋ মুশরিকের সংজ্ঞাঃ রব হিসাবে (একত্ববাদ) মহান আল্লাহপাকের সাথে দ্বিতীয় কাউকে শরীক সাব্যস্ত কারীরাই মুশরিক।অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়াত তথা ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সাথে গায়রুল্লাহকে শরীক করা।অর্থাত প্রভু রুপে গ্রহণকরা বা সমকক্ষ মনেকরা ইত্যাদি।
➲ আমার আল্লাহ বলেন,وَاعبُدُوا اللَّهَ وَلا تُشرِكوا بِهِ شَيـًٔا তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক্ করবে না।(সূরা নিসা ৩৬)
➲ আল্লাহ আরও বলেন, لا تُشرِك بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّركَ لَظُلمٌ عَظيمٌ আল্লাহর সাথে শরীক করো না।নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।(সুরা লোকমান ১৩)
➲ মুশরিকদের জন্য আল্লাহপাক জান্নাতকে হারাম করে দিয়ে বলেন, إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে,আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন।(সুরা মায়িাদা ৭২)
কবীরা গোনাহের মধ্যে শিরক সবচেয়ে বড় গোনাহ।
➲ আমার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ألَا أنَبِئكُمْ بِأكْبَرِ الكَبَائرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَارَسُوْلَ الله. قاَلَ الْإشْرَاكُ بِالله আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম-জ্বী,অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল !তিনি বললেন:আল্লাহর সাথে শিরক করা।(মুসলিম)
শিরক হলো আল্লাহর পরিপূর্ণ নাফরমানী।প্রকৃতপক্ষে মুশরিক ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে সবচেয়ে অজ্ঞ।সর্বশেষ কথা হচ্ছে,যে ব্যক্তি বা নারী অথবা জাতী,আল্লাহকে ব্যতি রেখে অন্য উপাস্য কামনা করে,অথবা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে তাকে মুশরিক বলা হয়।প্রাচীন আরবে যারা মুর্তি পূজা করতো তাদেরেকে মুশরিক বলা হতো।সেই হিসাবে মুর্তি পুজারীরাই মুশরিক।

❋ বিয়ে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধন।ইসলাম দিয়েছে মানব জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক,সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক,ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কেমন হবে তার দ্ব্যর্থহীন দিকনির্দেশনা।সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিয়ে সম্পর্কিত আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই।সমাজে এখন আমাদের কেউ কেউ অমুসলিম নারীকে বিয়ে করেছেন।বিয়ে করার পরে অনেকে আবার অমুসলিম নারীকে কালেমা পড়িয়ে মুসলিম বানাচ্ছেন।
➲ এ বিষয়ে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন,
وَلا تَنكِحُوا المُشرِكٰتِ حَتّىٰ يُؤمِنَّ ۚ وَلَأَمَةٌ مُؤمِنَةٌ خَيرٌ مِن مُشرِكَةٍ وَلَو أَعجَبَتكُم ۗ وَلا تُنكِحُوا المُشرِكينَ حَتّىٰ يُؤمِنوا ۚ وَلَعَبدٌ مُؤمِنٌ خَيرٌ مِن مُشرِكٍ وَلَو أَعجَبَكُم ۗ أُولٰئِكَ يَدعونَ إِلَى النّارِ ۖ وَاللَّهُ يَدعوا إِلَى الجَنَّةِ وَالمَغفِرَةِ بِإِذنِهِ ۖ وَيُبَيِّنُ ءايٰتِهِ لِلنّاسِ لَعَلَّهُم يَتَذَكَّرونَ
মুশরিক নারীদেরকে কখনো বিয়ে করো না,যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে।একটি সম্ভ্রান্ত মুশরিক নারী তোমাদের মনোহরণ করলেও একটি মু’মিন দাসী তার চেয়ে ভালো।আর মুশরিক পুরুষদের সাথে নিজেদের নারীদের কখনো বিয়ে দিয়ো না,যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে।একজন সম্ভ্রান্ত মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করলেও একজন মুসলিম দাস তার চেয়ে ভালো।তারা তোমাদের আহবান জানাচ্ছে আগুনের দিকে আর আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় তোমাদেরকে আহবান জানাচ্ছেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে।তিনি নিজের বিধান সুস্পষ্ট ভাষায় লোকদের সামনে বিবৃত করেন।আশা করা যায়, তারা শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করবে।(সুরা বাকারা ২২১)
উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্টভাবে আল্লাহপাক বলে দিয়েছেন যে,মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করো না,যতক্ষণ তারা ঈমান না আনে।বলেননি যে,ঈমান আনতে রাজি হলে বিয়ে করো।যতক্ষণ না ঈমান আনছে বিয়ে করো না।ঈমান হচ্ছে,আল্লাহর প্রতি, ফিরিশতাগণ, কিতাব সমূহ,রাসুলগণ,শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস এবং কদরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস।
-----উপরের আয়াতে কারীমাটি অবতীর্ণ হয়েছে বিশেষ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ঘটনাটি হল,জাহেলী যুগে আনাক নামের এক মহিলার সাথে হযরত মারছাদ ইবনে আবূ মারছাদ মক্কায় আসেন। তখন ঐ মহিলা তাঁকে পূর্বের মত কাছে পেতে চায়। দীর্ঘ দিনের লালিত কুপ্রস্তাবে রাজি করাতে ব্যর্থ চেষ্টা করে। কিন্তু হযরত মারছাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দেন যে,আজ ইসলাম তোমার-আমার মাঝে অন্তরায় হয়ে গেছে। তারপরও তুমি চাইলে আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওসাল্লাম-এর অনুমতি পাওয়ার পরই কেবল তোমাকে বিয়ে করতে পারি।পরবর্তীতে হযরত মারছাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওসাল্লাম-এর কাছে উক্ত বিবাহের অনুমতি প্রার্থনা করলে উপরিউক্ত আয়াতে কারীমাটি অবতীর্ণ হয় এবং চিরতরে মুশরিক নারীকে বিয়ে করা হারাম হয়ে যায়।
➲ শুধু তাই নয় কোন মুসলমান নারী অন্য কোন মুশরিক পুরুষকেও বিয়ে করতে পারবেনা।এ ব্যাপারে আমার আল্লাহপাক আরও বলেন,
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا إِذا جاءَكُمُ المُؤمِنٰتُ مُهٰجِرٰتٍ فَامتَحِنوهُنَّ ۖ اللَّهُ أَعلَمُ بِإيمٰنِهِنَّ ۖ فَإِن عَلِمتُموهُنَّ مُؤمِنٰتٍ فَلا تَرجِعوهُنَّ إِلَى الكُفّارِ ۖ لا هُنَّ حِلٌّ لَهُم وَلا هُم يَحِلّونَ لَهُنَّ ۖ وَءاتوهُم ما أَنفَقوا ۚ وَلا جُناحَ عَلَيكُم أَن تَنكِحوهُنَّ إِذا ءاتَيتُموهُنَّ أُجورَهُنَّ ۚ وَلا تُمسِكوا بِعِصَمِ الكَوافِرِ وَسـَٔلوا ما أَنفَقتُم وَليَسـَٔلوا ما أَنفَقوا ۚ ذٰلِكُم حُكمُ اللَّهِ ۖ يَحكُمُ بَينَكُم ۚ وَاللَّهُ عَليمٌ حَكيمٌ
মুমিনগণ,যখন তোমাদের কাছে ঈমানদার নারীরা হিজরত করে আগমন করে,তখন তাদেরকে পরীক্ষা কর।আল্লাহ তাদের ঈমান সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।যদি তোমরা জান যে,তারা ঈমানদার,তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না।এরা কাফেরদের জন্যে হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্যে হালাল নয়। কাফেররা যা ব্যয় করেছে,তা তাদের দিয়ে দাও।তোমরা,এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না।তোমরা কাফের নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না।তোমরা যা ব্যয় করেছ,তা চেয়ে নাও এবং তারাও চেয়ে নিবে যা তারা ব্যয় করেছে।এটা আল্লাহর বিধান;তিনি তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন।আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।(সূরা মুমতাহিনা ১০)

❋ মনে রাখতে হবে তাকওয়া হচ্ছে খোদা প্রাপ্তির পূর্বশর্ত।ইসলাম কোন জাত গোষ্টিকে প্রাধাণ্য দেয়না।প্রাধাণ্য পায় তাকওয়াবানরা,সেই জন্য বলা হয়েছে দাসী যদি তাকওয়াবান হয় সেটাই বিয়ের জন্য উত্তম।সুন্দরী অপেক্ষা সাধারণ পরহেজগার নারী বিয়ের জন্য উত্তম।
----তবে আহলে কিতাবীদের বিয়ের ব্যপারে পবিত্র কুরআনে কারীমের সুরা মায়িদার ঐ আয়াত অনেক ব্যখ্যার প্রয়োজন।আল্লাহ সহায় হলে অন্য একদিন আলোচনা করবো।আমি চেষ্টা করেছি মাত্র আর সেই চেষ্টা সার্থক হবে তখনি যখন আপনার লেখাটি বুঝতে সহজ হবে।

লাউ খাওয়া সুন্নাত কথাটির সত্যতা কী?

প্রশ্নঃ লাউ খাওয়া সুন্নাত কথাটির সত্যতা কী?
•✏ইমরান বিন বদরী 
প্রশ্নটি করেছিল এক ভাই কিছুদিন পূর্বে।তার যুক্তি ছিল আরবের ঐ তপ্ত মরুতে লাউয়ের কথা সত্য হতে পারেনা।এতদিন সময় আর অসুস্থতার কারণে লিখতে পারিনি। লাউ ইংরেজী Bottle gourd ফলটি খাওয়া সুন্নাত বলতে এটি আমার সরকারে কায়েনাত সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লামের প্রিয় একটি খাদ্য। যে খাদ্য আমার রাসুলের (দরুদ) পছন্দ তা উম্মতে মুহাম্মদীর পছন্দ হওয়া চাই।কারণ পবিত্র কুরআনুল কারীমের সুরা আহজাবে আল্লাহপাক বলেন, لَقَد كانَ لَكُم فى رَسولِ اللَّهِ أُسوَةٌ حَسَنَةٌ
তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ । (সুরা আহজাব-২১)
অর্থাত রাসুলে কারীমের পছন্দ ঈমানদারের পছন্দ হওয়া চাই।এখানে রয়েছে উম্মতের জন্য মহা কল্যাণ।সেই ১৫০০ বছর পূর্বে আমার রাসুলের প্রিয় খাদ্য লাউ বর্তমান বিজ্ঞানের যুগেও মানবদেহের উপকারী একটি খাদ্য হিসেবে প্রমাণিত।চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে,লাউ মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য।প্রতি ১০০ গ্রাম লাউয়ে আছে, কার্বোহাইড্রেট- ২.৫ গ্রাম, প্রোটিন- ০.২ গ্রাম, ফ্যাট- ০.৬ গ্রাম, ভিটামিন-সি- ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২০ মি.গ্রা.,ফসফরাস- ১০ মি.গ্রা.,পটাশিয়াম- ৮৭ মি.গ্রা., নিকোটিনিক অ্যাসিড- ০.২ মি.গ্রা.। এছাড়াও লাউয়ে রয়েছে খনিজ লবন, ভিটামিন বি-১, বি-২, আয়রন।
আসুন হাদিসে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম দেখি তখনকার সময় লাউ ছিলো কিনা।
➲ হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, إِنَّ خَيَّاطًا دَعَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِطَعَامٍ صَنَعَهُ قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ فَذَهَبْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى ذَلِكَ الطَّعَامِ فَقَرَّبَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم خُبْزًا وَمَرَقًا فِيهِ دُبَّاءٌ وَقَدِيدٌ فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ يَتَتَبَّعُ الدُّبَّاءَ مِنْ حَوَالَيْ الْقَصْعَةِ قَالَ فَلَمْ أَزَلْ أُحِبُّ الدُّبَّاءَ مِنْ يَوْمِئِذٍ এক দরজী খাবার তৈরী করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাওয়াত করলেন। আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে রুটি এবং ঝোল যাতে লাউ ও গোশতের টুকরা ছিল, পেশ করলেন। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেলাম যে, পেয়ালার কিনারা হতে তিনি লাউয়ের টুকরা খোঁজ করে নিচ্ছেন। সেদিন হতে আমি সব সময় লাউ ভালবাসতে থাকি।(মুসলিম ২০৪১,আহমাদ ১২৮৬১ ইফা ১৯৬২,বুখারি ৫১১৭)



➲ হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يُحِبُّ الْقَرْعَ নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাউয়ের তরকারী পছন্দ করতেন।(সুনানে ইবনে মাজাহ)

আমি চেষ্টা করেছি মাত্র আর সেই চেষ্টা সার্থক হবে তখনি যখন আপনার লেখাটি বুঝতে সহজ হবে।
------------------