ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদ কারা।
================• ✏ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ। লেখাটি লিখতে গিয়ে একটু জটিলতা অনুভব করলাম। কারণ আমাদের সমাজে এর ব্যবহারটা এখন একপ্রকার অঘোষিত ভাইরাসে পরিণত হয়েছে।ফলে বর্তমান সমাজে যে হারে ব্যবহার হচ্ছে তাতে প্রকৃত শহীদের সংজ্ঞাটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে।আমি সেদিকে যাচ্ছিনা,আমার লেখা কেবল ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদ কারা।আনন্দ আর উৎফুল্প মনে কারা সেই কাঙ্খিত সুধাপান করেছেন এবং তাঁদের অবস্থান কি সে সম্পর্কে ক্ষুদ্রজ্ঞানে যা বুঝলাম তাই আপনাদের পানে স্ববিনয়ে ক্ষমা চেয়ে আলোকপাত করছি।মরণশীল প্রত্যেক মানুষকে একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।➲ আমার আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কলামে বলেন- كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু।(সুরা-আল ইমরান-১৮৫)
মৃত্যু (Death) বলতে একটি জীবনের সমাপ্তিকে বুঝায়।যা আমাদের নিয়ে যায় অপেক্ষমান অনন্তকালে।আমি স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করতে চাইনা।আমার লেখা অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে যার একটি অংশ শহীদি মৃত্যু।যে মৃত্যু স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক অনেক উত্তম।কেননা শহীদি মৃত্যুর জন্য যে আত্মত্যাগ, ধৈর্য, মনোবল ও আল্লাহভীতি দরকার হয় তা সবার পক্ষে অর্জন করা সম্ভবপর নয়।
#শহিদের পরিচয়:
ইসলামীক দৃষ্টিতে শহীদ শব্দটি খুবই মর্যাদাবান ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি শব্দ।
আরবিতে শহিদ শব্দটি ইসলাম পূর্বেও(شُهَدَاء) শোহাদা অর্থাত সাক্ষ্যদানকারী শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হত,যা আলাদা কোন মর্যাদা বহন করেনি।কিন্তু রহমাতুল্লীন আলামীনের আগমনের ফলে মহান আল্লাহতা'য়ালা আমার নবীর ভাষায় পবিত্র কুরআনকে অবতীর্ণ করে সেখানে শব্দটির ব্যবহারের ফলে যা ব্যাপকহারে মর্যাদাসম্পন্ন হয়ে উঠে।যার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা'য়ালাই নির্ণয় করেদিয়েছেন।
➲ শহিদের পরিচয়ে আমার আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কলামে বলেন-وَلِيَعْلَمَ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاء وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ الظَّالِمِينَ ‘এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহিদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান। আল্লাহ অত্যাচারীকে ভালোবাসেন না।’ (সূরা আলে ইমরান ১৪০)
উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্ট যে শহীদি মর্যাদা হাছিলের জন্য ঈমানদার হওয়া চাই।কারণ আল্লাহপাক ঈমানদারদের থেকে শহিদ আশা করেছেন آمَنُواْ শব্দটি পার্থক্য করেদিয়েছেন যে শহিদ হওয়ার জন্য একত্ত্ববাদের উপর বিশ্বাস থাকতে হবে।এবং তাদের শহীদি যেন আল্লাহর দ্বীনের জন্য হয় অর্থাত আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ (জিহাদে ফি ছাবিলিল্লাহ) হয়।
➲ নবী করিম সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘আমাদের মধ্যে যে শহিদ হলো সে জান্নাতে গেল’।ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাদের শহিদ হলো জান্নাতি আর তাদের নিহতরা কি জাহান্নামি নয়?’ রাসূল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন- ‘হ্যাঁ’।(সহীহ বুখারি)
➲ আমার আল্লাহ অন্যত্র বলেন- وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِنْ لَا تَشْعُرُونَ আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়,তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত,কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।(সূরা বাকারা-১৫৩)
➲ আমার আল্লাহ সূরা আলে ইমরানে আরো বলেন- وَلاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاء عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ ‘আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয় তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে কোরো না বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। (সূরা আলে ইমরান ১৬৯)
➲ আমার আল্লাহ আরো বলেন- وَمَنْ يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাহে লড়াই করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুণ্য দান করব।(সূরা নিসা-৭৪)
উপরোক্ত আয়াতে শহীদ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীর ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে।এভাবে সুরা মুহাম্মদে আরো কিছু আয়াত রয়েছে শহীদ সম্পর্কে।মূলতঃ শহিদ কোন দার্শনিকের দেয়া উপাধি নয় এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফির তথা তৎকালিন আরবের লোকেরা আমার প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম একত্ত্ববাদের প্রচার করতে গেলে অর্থাৎ নবুয়তের দাওয়াত দিতে গেলে যারা অস্বীকার করে মুসলমানদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করার সময় যে সমস্ত বীর সাহাবায়ে কিরাম আজমাঈন আল্লাহর রাস্তায় নিজের মূল্যবান জীবনকে উৎসর্গ করেছেন তারাই শহিদ।যার ব্যাপকতাপায় গজওয়ায়ে বদর ও উহুদসহ অন্যান্য প্রসিদ্ধ যুদ্ধে।ইচ্ছে করলেই যে কেউ শহীদি মর্যাদা ও সম্মান লাভ করতে পারে না।এর সম্মান লাভ করতে হলে বিশেষভাবে যোগ্যতা অর্জন করা বাধ্যতামূলক।আর সে যোগ্যতা হচ্ছে, আল্লাহর একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আমার রাসুল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লামের দেখিয়ে দেয়া রাহে জীবন উৎসর্গ করা।
➲ আমার রাসুল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-” من قاتل لتكون كلمة الله هي العليا فهو في سبيل الله “ যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার জন্য জিহাদ করল, সে প্রকৃত মুজাহিদ। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ)
➲ রাসুল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন,যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করে অথবা নিহত হয়,সে ব্যক্তি জান্নাতী এবং শহীদ (ইবনু মাজাহ ২৯১০,মিশকাত৩৮১১)।
➲ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রাসুল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন :শহীদগণের আত্মাসমূহ সবুজ পাখির পেটে অবস্থান করে। তাদের জন্য আল্লাহর আর্শে ঝুলন্ত রয়েছে প্রদীপসমূহ।এসব আত্মা বেহেশতে যেখানে ইচ্ছা সেখানে পরিভ্রমণ করতে থাকে এবং ঐসব প্রদীপে প্রত্যাবর্তন করে বিশ্রাম গ্রহণ করে। তাদের প্রতি লক্ষ্য করে তাদের প্রভু পরওয়ারদেগার বলেন :তোমাদের কি জিনিসের জন্য আগ্রহ হয়? তারা আরজ করে আমরা কিসের আগ্রহ করব, অথচ আমরা যেখানে ইচ্ছা বেহেশতের সেখানেই বেড়াতে পারি। আল্লাহ তাদের তিনবার এ ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করেন যে, তারা কি চায়, তারা আগ্রহ ব্যক্ত করতে থাকে যে, তাদের আত্মা পুনরায় তাদের দেহে প্রত্যাবর্তিত করে দেয়া হোক। আল্লাহতা’লা যখন তাদের এ মনোভাবে বুঝতে পারেন, তখন পূর্বাবস্থায় তাদেরকে ছেড়ে দেন।(সহীহ মুসলিম)
➲ হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,আল্লাহর কোন বান্দা এমতাবস্থায় মারা যায় যে, আল্লাহর কাছে তার সাওয়াব রয়েছে তাকে দুনিয়াতে এর সব কিছু দিলেও দুনিয়াতে ফিরে আস্তে আগ্রহী হবে না।একমাত্র শহীদ ব্যাতীত।সে শাহাদাতের ফযিলত দেখার কারণে আবার দুনিয়াতে ফিরে এসে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে।(সহীহ বুখারী/ইফা ২৬০৩)
❉ এ ছাড়া আরো কিছু মৃত্যুকেও প্রকৃত শহীদ নয় তবে কাছাকাছি মর্যাদা দান করা হয়েছে।যেমন -
أن جابر بن عتيك أخبره :أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال الشهداء سبعة سوى القتل في سبيل الله المطعون شهيد والغرق شهيد وصاحب ذات الجنب شهيد والمبطون شهيد والحرق شهيد والذي يموت تحت الهدم شهيد والمرأة تموت بجمع شهيد
হযরত জাবের বিন আতীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।রাসুল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও সাত প্রকার শহীদ রয়েছে।
১-মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ।
২-পানিতে নিমজ্জিত শহীদ।
৩-শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত শহীদ।
৪-পেটের রোগ মৃত্যুবরণকারী শহীদ।
৫-আগ্নিদগ্ধ ব্যক্তি শহীদ।
৬-যে ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে মারা যায় সেও শহীদ।
৭-সন্তান প্রসব করতে মারা যাওয়া নারীও শহীদ। (মুয়াত্তা মালিক-৫৫৪/৮০২)
শহীদ ইসলামীক দৃষ্টিতে খুবই মর্যাদাবান ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি শব্দ।এটি ইসলামের নিজস্ব পরিভাষা।শহীদ মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথেই জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করতে থাকে।শহীদ কোন সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিভাষা নয়।তাই যত্রতত্র এটার ব্যবহার কিছুতেই কাম্য নয়।ইসলামে শহীদদের মৃত্যুরপর বিনিময় দেয়া হবে এবং তাদের মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে।কিন্তু আমাদের সমাজে যেহারে শহীদ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে তার কী কোন সঙ্গা বা প্রতিদানের কথা আদৌ কোথাও উল্লেখ করা হয়েছে!প্রকৃত শহীদের সংজ্ঞাটা আসলে ধর্মযুদ্ধের সাথে সমপৃক্ত।যদিও আমাদের দেশে মাতৃভুমি রক্ষার্থে আত্নত্যাগকেও শহীদ বলা হয়। উইকিপিডিয়াতে ধর্ম আর দেশের জন্য জীবন দেয়াকে শহীদ বলা হয়েছে।শব্দটি বাংলায় অর্থাৎ আমাদের দেশে সম্মানী মৃত্যু হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে,যা ইসলামী সংজ্ঞানুযায়ী নয়।বাংলায় ক্ষুদিরামকেও শহীদ বলা হয়, এভাবে এদেশের বিপ্লবীদের শহীদ উপাধি দেয়া হয়েছে।৫২এর ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১এর স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তারা শহীদ হিসেবে গন্য হয়েছেন যা একটা সম্মানী মৃত্যু হিসেবে পরিগনিত হয়েছে।অর্থাৎ ন্যায়ের পক্ষকে আমাদের দেশে শহীদ বলা হয়। মোটকথা,শহীদ শব্দটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এখন আর ব্যবহার হচ্ছেনা। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে এদেশে সবাইকে শহীদ বলা হয়।পরিশেষে বলতে চাই শহীদ বলে উল্লেখকরা আর মহান রব্বুল আলামীনের কাছে তার প্রতিদান ভোগ করা একনয়।
➲ হযরত সামুরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,আমি আজ রাতে (স্বপ্নে) দেখতে পেলাম যে,দু’ব্যাক্তি আমার নিকট এল এবং আমাকে নিয়ে একটি গাছে উঠলো।তারপর আমাকে এমন সুন্দর উৎকৃষ্ট একটি ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিল; এর আগে আমি কখনো এর চাইতে সুন্দর ঘর দেখিনি। সে দু’ব্যাক্তি আমাকে বলল,এই ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর।(সহীহ বুখারী/ইফাঃ)
আমি চেষ্টা করেছি মাত্র আর সেই চেষ্টা সার্থক হবে তখনি যখন আপনার লেখাটি বুঝতে সহজ হবে।
================• ✏ইমরান বিন বদরী
নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ। লেখাটি লিখতে গিয়ে একটু জটিলতা অনুভব করলাম। কারণ আমাদের সমাজে এর ব্যবহারটা এখন একপ্রকার অঘোষিত ভাইরাসে পরিণত হয়েছে।ফলে বর্তমান সমাজে যে হারে ব্যবহার হচ্ছে তাতে প্রকৃত শহীদের সংজ্ঞাটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে।আমি সেদিকে যাচ্ছিনা,আমার লেখা কেবল ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদ কারা।আনন্দ আর উৎফুল্প মনে কারা সেই কাঙ্খিত সুধাপান করেছেন এবং তাঁদের অবস্থান কি সে সম্পর্কে ক্ষুদ্রজ্ঞানে যা বুঝলাম তাই আপনাদের পানে স্ববিনয়ে ক্ষমা চেয়ে আলোকপাত করছি।মরণশীল প্রত্যেক মানুষকে একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।➲ আমার আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কলামে বলেন- كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু।(সুরা-আল ইমরান-১৮৫)
মৃত্যু (Death) বলতে একটি জীবনের সমাপ্তিকে বুঝায়।যা আমাদের নিয়ে যায় অপেক্ষমান অনন্তকালে।আমি স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করতে চাইনা।আমার লেখা অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে যার একটি অংশ শহীদি মৃত্যু।যে মৃত্যু স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক অনেক উত্তম।কেননা শহীদি মৃত্যুর জন্য যে আত্মত্যাগ, ধৈর্য, মনোবল ও আল্লাহভীতি দরকার হয় তা সবার পক্ষে অর্জন করা সম্ভবপর নয়।
#শহিদের পরিচয়:
ইসলামীক দৃষ্টিতে শহীদ শব্দটি খুবই মর্যাদাবান ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি শব্দ।
আরবিতে শহিদ শব্দটি ইসলাম পূর্বেও(شُهَدَاء) শোহাদা অর্থাত সাক্ষ্যদানকারী শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হত,যা আলাদা কোন মর্যাদা বহন করেনি।কিন্তু রহমাতুল্লীন আলামীনের আগমনের ফলে মহান আল্লাহতা'য়ালা আমার নবীর ভাষায় পবিত্র কুরআনকে অবতীর্ণ করে সেখানে শব্দটির ব্যবহারের ফলে যা ব্যাপকহারে মর্যাদাসম্পন্ন হয়ে উঠে।যার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা'য়ালাই নির্ণয় করেদিয়েছেন।
➲ শহিদের পরিচয়ে আমার আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কলামে বলেন-وَلِيَعْلَمَ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاء وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ الظَّالِمِينَ ‘এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহিদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান। আল্লাহ অত্যাচারীকে ভালোবাসেন না।’ (সূরা আলে ইমরান ১৪০)
উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্ট যে শহীদি মর্যাদা হাছিলের জন্য ঈমানদার হওয়া চাই।কারণ আল্লাহপাক ঈমানদারদের থেকে শহিদ আশা করেছেন آمَنُواْ শব্দটি পার্থক্য করেদিয়েছেন যে শহিদ হওয়ার জন্য একত্ত্ববাদের উপর বিশ্বাস থাকতে হবে।এবং তাদের শহীদি যেন আল্লাহর দ্বীনের জন্য হয় অর্থাত আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ (জিহাদে ফি ছাবিলিল্লাহ) হয়।
➲ নবী করিম সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘আমাদের মধ্যে যে শহিদ হলো সে জান্নাতে গেল’।ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাদের শহিদ হলো জান্নাতি আর তাদের নিহতরা কি জাহান্নামি নয়?’ রাসূল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন- ‘হ্যাঁ’।(সহীহ বুখারি)
➲ আমার আল্লাহ অন্যত্র বলেন- وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِنْ لَا تَشْعُرُونَ আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়,তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত,কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।(সূরা বাকারা-১৫৩)
➲ আমার আল্লাহ সূরা আলে ইমরানে আরো বলেন- وَلاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاء عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ ‘আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয় তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে কোরো না বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। (সূরা আলে ইমরান ১৬৯)
➲ আমার আল্লাহ আরো বলেন- وَمَنْ يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাহে লড়াই করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুণ্য দান করব।(সূরা নিসা-৭৪)
উপরোক্ত আয়াতে শহীদ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীর ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে।এভাবে সুরা মুহাম্মদে আরো কিছু আয়াত রয়েছে শহীদ সম্পর্কে।মূলতঃ শহিদ কোন দার্শনিকের দেয়া উপাধি নয় এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফির তথা তৎকালিন আরবের লোকেরা আমার প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম একত্ত্ববাদের প্রচার করতে গেলে অর্থাৎ নবুয়তের দাওয়াত দিতে গেলে যারা অস্বীকার করে মুসলমানদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করার সময় যে সমস্ত বীর সাহাবায়ে কিরাম আজমাঈন আল্লাহর রাস্তায় নিজের মূল্যবান জীবনকে উৎসর্গ করেছেন তারাই শহিদ।যার ব্যাপকতাপায় গজওয়ায়ে বদর ও উহুদসহ অন্যান্য প্রসিদ্ধ যুদ্ধে।ইচ্ছে করলেই যে কেউ শহীদি মর্যাদা ও সম্মান লাভ করতে পারে না।এর সম্মান লাভ করতে হলে বিশেষভাবে যোগ্যতা অর্জন করা বাধ্যতামূলক।আর সে যোগ্যতা হচ্ছে, আল্লাহর একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আমার রাসুল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লামের দেখিয়ে দেয়া রাহে জীবন উৎসর্গ করা।
➲ আমার রাসুল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-” من قاتل لتكون كلمة الله هي العليا فهو في سبيل الله “ যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার জন্য জিহাদ করল, সে প্রকৃত মুজাহিদ। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ)
➲ রাসুল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন,যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করে অথবা নিহত হয়,সে ব্যক্তি জান্নাতী এবং শহীদ (ইবনু মাজাহ ২৯১০,মিশকাত৩৮১১)।
➲ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রাসুল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন :শহীদগণের আত্মাসমূহ সবুজ পাখির পেটে অবস্থান করে। তাদের জন্য আল্লাহর আর্শে ঝুলন্ত রয়েছে প্রদীপসমূহ।এসব আত্মা বেহেশতে যেখানে ইচ্ছা সেখানে পরিভ্রমণ করতে থাকে এবং ঐসব প্রদীপে প্রত্যাবর্তন করে বিশ্রাম গ্রহণ করে। তাদের প্রতি লক্ষ্য করে তাদের প্রভু পরওয়ারদেগার বলেন :তোমাদের কি জিনিসের জন্য আগ্রহ হয়? তারা আরজ করে আমরা কিসের আগ্রহ করব, অথচ আমরা যেখানে ইচ্ছা বেহেশতের সেখানেই বেড়াতে পারি। আল্লাহ তাদের তিনবার এ ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করেন যে, তারা কি চায়, তারা আগ্রহ ব্যক্ত করতে থাকে যে, তাদের আত্মা পুনরায় তাদের দেহে প্রত্যাবর্তিত করে দেয়া হোক। আল্লাহতা’লা যখন তাদের এ মনোভাবে বুঝতে পারেন, তখন পূর্বাবস্থায় তাদেরকে ছেড়ে দেন।(সহীহ মুসলিম)
➲ হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,আল্লাহর কোন বান্দা এমতাবস্থায় মারা যায় যে, আল্লাহর কাছে তার সাওয়াব রয়েছে তাকে দুনিয়াতে এর সব কিছু দিলেও দুনিয়াতে ফিরে আস্তে আগ্রহী হবে না।একমাত্র শহীদ ব্যাতীত।সে শাহাদাতের ফযিলত দেখার কারণে আবার দুনিয়াতে ফিরে এসে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে।(সহীহ বুখারী/ইফা ২৬০৩)
❉ এ ছাড়া আরো কিছু মৃত্যুকেও প্রকৃত শহীদ নয় তবে কাছাকাছি মর্যাদা দান করা হয়েছে।যেমন -
أن جابر بن عتيك أخبره :أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال الشهداء سبعة سوى القتل في سبيل الله المطعون شهيد والغرق شهيد وصاحب ذات الجنب شهيد والمبطون شهيد والحرق شهيد والذي يموت تحت الهدم شهيد والمرأة تموت بجمع شهيد
হযরত জাবের বিন আতীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।রাসুল সল্লাল্লাহু তা'য়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও সাত প্রকার শহীদ রয়েছে।
১-মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ।
২-পানিতে নিমজ্জিত শহীদ।
৩-শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত শহীদ।
৪-পেটের রোগ মৃত্যুবরণকারী শহীদ।
৫-আগ্নিদগ্ধ ব্যক্তি শহীদ।
৬-যে ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে মারা যায় সেও শহীদ।
৭-সন্তান প্রসব করতে মারা যাওয়া নারীও শহীদ। (মুয়াত্তা মালিক-৫৫৪/৮০২)
শহীদ ইসলামীক দৃষ্টিতে খুবই মর্যাদাবান ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি শব্দ।এটি ইসলামের নিজস্ব পরিভাষা।শহীদ মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথেই জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করতে থাকে।শহীদ কোন সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিভাষা নয়।তাই যত্রতত্র এটার ব্যবহার কিছুতেই কাম্য নয়।ইসলামে শহীদদের মৃত্যুরপর বিনিময় দেয়া হবে এবং তাদের মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে।কিন্তু আমাদের সমাজে যেহারে শহীদ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে তার কী কোন সঙ্গা বা প্রতিদানের কথা আদৌ কোথাও উল্লেখ করা হয়েছে!প্রকৃত শহীদের সংজ্ঞাটা আসলে ধর্মযুদ্ধের সাথে সমপৃক্ত।যদিও আমাদের দেশে মাতৃভুমি রক্ষার্থে আত্নত্যাগকেও শহীদ বলা হয়। উইকিপিডিয়াতে ধর্ম আর দেশের জন্য জীবন দেয়াকে শহীদ বলা হয়েছে।শব্দটি বাংলায় অর্থাৎ আমাদের দেশে সম্মানী মৃত্যু হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে,যা ইসলামী সংজ্ঞানুযায়ী নয়।বাংলায় ক্ষুদিরামকেও শহীদ বলা হয়, এভাবে এদেশের বিপ্লবীদের শহীদ উপাধি দেয়া হয়েছে।৫২এর ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১এর স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তারা শহীদ হিসেবে গন্য হয়েছেন যা একটা সম্মানী মৃত্যু হিসেবে পরিগনিত হয়েছে।অর্থাৎ ন্যায়ের পক্ষকে আমাদের দেশে শহীদ বলা হয়। মোটকথা,শহীদ শব্দটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এখন আর ব্যবহার হচ্ছেনা। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে এদেশে সবাইকে শহীদ বলা হয়।পরিশেষে বলতে চাই শহীদ বলে উল্লেখকরা আর মহান রব্বুল আলামীনের কাছে তার প্রতিদান ভোগ করা একনয়।
➲ হযরত সামুরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,আমি আজ রাতে (স্বপ্নে) দেখতে পেলাম যে,দু’ব্যাক্তি আমার নিকট এল এবং আমাকে নিয়ে একটি গাছে উঠলো।তারপর আমাকে এমন সুন্দর উৎকৃষ্ট একটি ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিল; এর আগে আমি কখনো এর চাইতে সুন্দর ঘর দেখিনি। সে দু’ব্যাক্তি আমাকে বলল,এই ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর।(সহীহ বুখারী/ইফাঃ)
আমি চেষ্টা করেছি মাত্র আর সেই চেষ্টা সার্থক হবে তখনি যখন আপনার লেখাটি বুঝতে সহজ হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন