সুদ এক ভয়ানক পরিণতির নাম।
✏ ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
সুদ বিষয়টি নিয়ে লেখা আসলে অনেকটা কঠিন। কারণ এটি বর্তমান মুসলিম সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে এমনভাবে আক্রান্ত করে রেখেছে যা মরনব্যাধী রোগের মত ভয়ানক ঈমান হরনে পরিনত হয়েছে।মানুষ জেনে না জেনে মনের অজান্তে প্রয়োজনের অপব্যক্ষায় প্রবেশ করে এমন এক সীমানা অতিক্রম করছে যেখান থেকে ফিরে আসা হয়তো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়বে।বন্দুরা,আমি এমন কোন জ্ঞানী নই যে এ ব্যপারে বিস্তারিত লেখতে পারবো। সামান্য যতটুকু সল্পজ্ঞানে বুঝেছি তাই হয়তো দু'কলমে শেষ করবো। গত কিছুদিন পূর্বে এক ব্যক্তির সাথে এ প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সুদ হারাম,তবে আল্লাহপাক ত ব্যবসাকে হালাল করেছেন আমিত টাকা দিয়ে টাকার ব্যবসা করছি ব্যবসার লাভ নিচ্ছি এখানে ক্ষতি কী? চিন্তিত হলাম তার যু্ক্তি আর ব্যবসার ধরন দেখে। পরে অবশ্যই বুঝাতে সক্ষম হলাম যদিও অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয়েছে।
✼এবার আসুন জেনে নিই সুদ কী?
সুদ শব্দটি বাংলায় ব্যবহৃত হলেও এটি বিদেশী শব্দ ফার্সি বা উর্দুতে ব্যবহৃত হয় যা বাংলায় পবিত্র কুরআনে কারীমের رِّبٰوا রিবা শব্দের অর্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয় যা 'রাবউন' শব্দমূল থেকে উদ্ভূত।সুদ শব্দটি অন্যান্য বিদেশী শব্দ যেমন নামাজ,রোজা ইত্যাদির মত। প্রকৃতপক্ষে রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অতিরিক্ত,বৃদ্ধি,প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি। শরীয়াতের দৃষ্টিতে রিবা হল যে সমস্ত অর্থ বা পণ্যের বিনিময়ে প্রদেয় সামগ্রীর মূলধনের সাথে অতিরিক্ত অর্থ বা পণ্য শর্ত সাপেক্ষে গ্রহণ করা হয় তাই সুদ।প্রায় সব মুসলমানেরই কম-বেশি জানা আছে যে কোনো পার্থক্য ছাড়াই সকল রিবা বা সুদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
✼ পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা'আলা বলেন- وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا
অর্থ:অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাকারা ২৭৫)
বর্তমানে রিবা সংক্রান্ত পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদীসকে এড়িয়ে গিয়ে মুসলমানদের মধ্যে সুদের মতো জঘন্যতম হারামের প্রচলনের অবতারণা করা হয়েছে। আসলে পবিত্র কুরআনে কারীমে ন্যূনতম সুদকেও স্পষ্টভাবে হারাম করা হয়েছে। এই আয়াতে তো সুদের অতি বেশি ভয়াবহ একটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। যেমন ✼ আল্লাহ তা'আলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ ۚ وَ اِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْ ۚ لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে অংশই অবশিষ্ট রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও। যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। আর তোমরা যদি তওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। তোমরাও কারো প্রতি যুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও যুলুম করা হবে না। (সূরা বাকারা ২৭৮-২৭৯)
✼সুরা বাকারার ২৭৫আয়াতের প্রথমেই এ ব্যপারে উম্মতে মুহাম্মদীকে আরো সতর্ককরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ
যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি,যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।
✼আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন- يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ
আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।(সূরা বাকারা ২৭৬)
✼পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। (সূরা আল-ইমরান ১৩০)
পবিত্র কুরআনে সামান্য সুদকেও হারাম করেছে এবং এটাকে জুলুম সাব্যস্ত করেছে যদিও তা হয়০.০০১%। আর এ বিষয়টিও স্পষ্ট যে,ঋণের বিপরীতে মূলধনের অতিরিক্ত সামান্য পরিমাণও কুরআনের দৃষ্টিতে রিবা। সুতরাং কম এবং বেশি পরিমাণের সাথে রিবা হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই; বরং ঋণের অতিরিক্ত যাই কিছু হোক সেটি রিবার অন্তর্ভুক্ত। তা যে নামেই ডাকা হোকনা কেন। পবিত্র কুরআনে কারীমে সুদ সম্পর্কে যেসব আয়াত এসেছে সেখানে সুদের কোনো শ্রেণীবিভাগ করা হয়নি। ফলে সব ধরনের সুদই হারাম।যে কোনো মুসলমানের জন্য ওয়াজিব হলো সে আহকামে শরিয়াকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর যে কোনো বিধানের ওপর সন্তুষ্ট থাকবে। সুদকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ কারণেই হারাম করেছেন যে,এর মাধ্যমে অভাবীদের অভাবকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো হয়, একজন গরিব লোকের ওপর অধিকহারে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া না হয়।এছাড়াও সমাজে সুদের প্রচলনের কারণে পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট হয়, বিশৃংখলা,মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি,খুন-খারাবি ব্যাপকহারে সংঘটিত হয়।এ ছাড়াও সুদের রয়েছে আরো অনেক ক্ষতিকারিতা। আমাদের জন্য স্পষ্ট যে,ইসলামে যে জিনিসগুলো হারাম তার মধ্যে সুদ নিকৃষ্টতম।
✼হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম-এর ভাষায় সুদগ্রহীতা, দাতা, এর লেখক ও সাক্ষীগণ সবাই অভিশপ্ত।
(সহীহ মুসলিম ১৫৯৮,তিরমিযী)
✼হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেন,রিবার গুনাহ সত্তর প্রকার,তার মধ্যে সবচেয়ে কম ভয়ংকরটি হলো একজন লোকের তার আপন মায়ের সাথে ব্যভিচারের সমান। (ইবনে মাজাহ,বাইহাকি)
✼বন্দুরা, আমাদের সবাইকে কথার বিভ্রান্তিতে না পড়ে নিজেদের ঈমান,আমলের হেফাজত করাই কর্তব্য।আমি একজন মুসলমান হিসাবে আমাকে বিশ্বাস করতে হবে যে,আমার কবরে আমিই যাব,সাথে যাবে খোদাপ্রদত্ত জ্ঞানদ্বারা যাচাই বাছাই করা আমার আমল।সাথে কোন আলেম বা মুফতিই থাকবে না। যদিও উত্তম বিষয়টি মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনই ভাল জানেন। আর
বর্তমান বিশ্ব যখন সুদের সাগরে নিমজ্জিত তখন একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের নিজেদের সাধ্যমত বেচে থাকার জন্যে ডিংগি নায়ে জীবন নামের পথটি অতিক্রম করাই হোক আমাদের কাম্য।কারণ এখন আর সেই সময় নেই যে কর্জে হাসানা দিয়ে আমাকে আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।
قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا أُمُورٌ مُشْتَبِهَةٌ فَمَنْ تَرَكَ مَا شُبِّهَ عَلَيْهِ مِنْ الإِثْمِ كَانَ لِمَا اسْتَبَانَ أَتْرَكَ وَمَنْ اجْتَرَأَ عَلَى مَا يَشُكُّ فِيهِ مِنْ الإِثْمِ أَوْشَكَ أَنْ يُوَاقِعَ مَا اسْتَبَانَ
✼হযরত নু‘মান ইবনু বাশীর রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।(সহীহ বুখারী ইফা ১৯২৩)
অতএব আমাদের চেস্টা করতে হবে সর্বাবস্থায়ই নিজেকে যতটুকু সম্ভব আল্লাহর নির্দেশে পরিচালনা করা।মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে এখলাসের সাথে চলার তাওফিক যেন দান করেন। আমিন ।(বন্ধুরা আমরা কেও ভুলের ঊর্ধে নই,আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে।তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
✏ ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
সুদ বিষয়টি নিয়ে লেখা আসলে অনেকটা কঠিন। কারণ এটি বর্তমান মুসলিম সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে এমনভাবে আক্রান্ত করে রেখেছে যা মরনব্যাধী রোগের মত ভয়ানক ঈমান হরনে পরিনত হয়েছে।মানুষ জেনে না জেনে মনের অজান্তে প্রয়োজনের অপব্যক্ষায় প্রবেশ করে এমন এক সীমানা অতিক্রম করছে যেখান থেকে ফিরে আসা হয়তো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়বে।বন্দুরা,আমি এমন কোন জ্ঞানী নই যে এ ব্যপারে বিস্তারিত লেখতে পারবো। সামান্য যতটুকু সল্পজ্ঞানে বুঝেছি তাই হয়তো দু'কলমে শেষ করবো। গত কিছুদিন পূর্বে এক ব্যক্তির সাথে এ প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সুদ হারাম,তবে আল্লাহপাক ত ব্যবসাকে হালাল করেছেন আমিত টাকা দিয়ে টাকার ব্যবসা করছি ব্যবসার লাভ নিচ্ছি এখানে ক্ষতি কী? চিন্তিত হলাম তার যু্ক্তি আর ব্যবসার ধরন দেখে। পরে অবশ্যই বুঝাতে সক্ষম হলাম যদিও অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয়েছে।
✼এবার আসুন জেনে নিই সুদ কী?
সুদ শব্দটি বাংলায় ব্যবহৃত হলেও এটি বিদেশী শব্দ ফার্সি বা উর্দুতে ব্যবহৃত হয় যা বাংলায় পবিত্র কুরআনে কারীমের رِّبٰوا রিবা শব্দের অর্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয় যা 'রাবউন' শব্দমূল থেকে উদ্ভূত।সুদ শব্দটি অন্যান্য বিদেশী শব্দ যেমন নামাজ,রোজা ইত্যাদির মত। প্রকৃতপক্ষে রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অতিরিক্ত,বৃদ্ধি,প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি। শরীয়াতের দৃষ্টিতে রিবা হল যে সমস্ত অর্থ বা পণ্যের বিনিময়ে প্রদেয় সামগ্রীর মূলধনের সাথে অতিরিক্ত অর্থ বা পণ্য শর্ত সাপেক্ষে গ্রহণ করা হয় তাই সুদ।প্রায় সব মুসলমানেরই কম-বেশি জানা আছে যে কোনো পার্থক্য ছাড়াই সকল রিবা বা সুদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
✼ পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা'আলা বলেন- وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا
অর্থ:অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাকারা ২৭৫)
বর্তমানে রিবা সংক্রান্ত পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদীসকে এড়িয়ে গিয়ে মুসলমানদের মধ্যে সুদের মতো জঘন্যতম হারামের প্রচলনের অবতারণা করা হয়েছে। আসলে পবিত্র কুরআনে কারীমে ন্যূনতম সুদকেও স্পষ্টভাবে হারাম করা হয়েছে। এই আয়াতে তো সুদের অতি বেশি ভয়াবহ একটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। যেমন ✼ আল্লাহ তা'আলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ ۚ وَ اِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْ ۚ لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে অংশই অবশিষ্ট রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও। যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। আর তোমরা যদি তওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। তোমরাও কারো প্রতি যুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও যুলুম করা হবে না। (সূরা বাকারা ২৭৮-২৭৯)
✼সুরা বাকারার ২৭৫আয়াতের প্রথমেই এ ব্যপারে উম্মতে মুহাম্মদীকে আরো সতর্ককরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ
যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি,যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।
✼আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন- يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ
আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।(সূরা বাকারা ২৭৬)
✼পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। (সূরা আল-ইমরান ১৩০)
পবিত্র কুরআনে সামান্য সুদকেও হারাম করেছে এবং এটাকে জুলুম সাব্যস্ত করেছে যদিও তা হয়০.০০১%। আর এ বিষয়টিও স্পষ্ট যে,ঋণের বিপরীতে মূলধনের অতিরিক্ত সামান্য পরিমাণও কুরআনের দৃষ্টিতে রিবা। সুতরাং কম এবং বেশি পরিমাণের সাথে রিবা হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই; বরং ঋণের অতিরিক্ত যাই কিছু হোক সেটি রিবার অন্তর্ভুক্ত। তা যে নামেই ডাকা হোকনা কেন। পবিত্র কুরআনে কারীমে সুদ সম্পর্কে যেসব আয়াত এসেছে সেখানে সুদের কোনো শ্রেণীবিভাগ করা হয়নি। ফলে সব ধরনের সুদই হারাম।যে কোনো মুসলমানের জন্য ওয়াজিব হলো সে আহকামে শরিয়াকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর যে কোনো বিধানের ওপর সন্তুষ্ট থাকবে। সুদকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ কারণেই হারাম করেছেন যে,এর মাধ্যমে অভাবীদের অভাবকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো হয়, একজন গরিব লোকের ওপর অধিকহারে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া না হয়।এছাড়াও সমাজে সুদের প্রচলনের কারণে পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট হয়, বিশৃংখলা,মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি,খুন-খারাবি ব্যাপকহারে সংঘটিত হয়।এ ছাড়াও সুদের রয়েছে আরো অনেক ক্ষতিকারিতা। আমাদের জন্য স্পষ্ট যে,ইসলামে যে জিনিসগুলো হারাম তার মধ্যে সুদ নিকৃষ্টতম।
✼হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম-এর ভাষায় সুদগ্রহীতা, দাতা, এর লেখক ও সাক্ষীগণ সবাই অভিশপ্ত।
(সহীহ মুসলিম ১৫৯৮,তিরমিযী)
✼হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেন,রিবার গুনাহ সত্তর প্রকার,তার মধ্যে সবচেয়ে কম ভয়ংকরটি হলো একজন লোকের তার আপন মায়ের সাথে ব্যভিচারের সমান। (ইবনে মাজাহ,বাইহাকি)
✼বন্দুরা, আমাদের সবাইকে কথার বিভ্রান্তিতে না পড়ে নিজেদের ঈমান,আমলের হেফাজত করাই কর্তব্য।আমি একজন মুসলমান হিসাবে আমাকে বিশ্বাস করতে হবে যে,আমার কবরে আমিই যাব,সাথে যাবে খোদাপ্রদত্ত জ্ঞানদ্বারা যাচাই বাছাই করা আমার আমল।সাথে কোন আলেম বা মুফতিই থাকবে না। যদিও উত্তম বিষয়টি মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনই ভাল জানেন। আর
বর্তমান বিশ্ব যখন সুদের সাগরে নিমজ্জিত তখন একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের নিজেদের সাধ্যমত বেচে থাকার জন্যে ডিংগি নায়ে জীবন নামের পথটি অতিক্রম করাই হোক আমাদের কাম্য।কারণ এখন আর সেই সময় নেই যে কর্জে হাসানা দিয়ে আমাকে আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।
قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا أُمُورٌ مُشْتَبِهَةٌ فَمَنْ تَرَكَ مَا شُبِّهَ عَلَيْهِ مِنْ الإِثْمِ كَانَ لِمَا اسْتَبَانَ أَتْرَكَ وَمَنْ اجْتَرَأَ عَلَى مَا يَشُكُّ فِيهِ مِنْ الإِثْمِ أَوْشَكَ أَنْ يُوَاقِعَ مَا اسْتَبَانَ
✼হযরত নু‘মান ইবনু বাশীর রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।(সহীহ বুখারী ইফা ১৯২৩)
অতএব আমাদের চেস্টা করতে হবে সর্বাবস্থায়ই নিজেকে যতটুকু সম্ভব আল্লাহর নির্দেশে পরিচালনা করা।মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে এখলাসের সাথে চলার তাওফিক যেন দান করেন। আমিন ।(বন্ধুরা আমরা কেও ভুলের ঊর্ধে নই,আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে।তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)