মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সুদ এক ভয়ানক পরিণতির নাম

সুদ এক ভয়ানক পরিণতির নাম।

✏ ইমরান বিন বদরী ≪ 
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
সুদ বিষয়টি নিয়ে লেখা আসলে অনেকটা কঠিন। কারণ এটি বর্তমান মুসলিম সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে এমনভাবে আক্রান্ত করে রেখেছে যা মরনব্যাধী রোগের মত ভয়ানক ঈমান হরনে পরিনত হয়েছে।মানুষ জেনে না জেনে মনের অজান্তে প্রয়োজনের অপব্যক্ষায় প্রবেশ করে এমন এক সীমানা অতিক্রম করছে যেখান থেকে ফিরে আসা হয়তো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়বে।বন্দুরা,আমি এমন কোন জ্ঞানী নই যে এ ব্যপারে বিস্তারিত লেখতে পারবো। সামান্য যতটুকু সল্পজ্ঞানে বুঝেছি তাই হয়তো দু'কলমে শেষ করবো। গত কিছুদিন পূর্বে এক ব্যক্তির সাথে এ প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সুদ হারাম,তবে আল্লাহপাক ত ব্যবসাকে হালাল করেছেন আমিত টাকা দিয়ে টাকার ব্যবসা করছি ব্যবসার লাভ নিচ্ছি এখানে ক্ষতি কী? চিন্তিত হলাম তার যু্ক্তি আর ব্যবসার ধরন দেখে। পরে অবশ্যই বুঝাতে সক্ষম হলাম যদিও অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয়েছে।

✼এবার আসুন জেনে নিই সুদ কী?
সুদ শব্দটি বাংলায় ব্যবহৃত হলেও এটি বিদেশী শব্দ ফার্সি বা উর্দুতে ব্যবহৃত হয় যা বাংলায় পবিত্র কুরআনে কারীমের رِّبٰوا রিবা শব্দের অর্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয় যা 'রাবউন' শব্দমূল থেকে উদ্ভূত।সুদ শব্দটি অন্যান্য বিদেশী শব্দ যেমন নামাজ,রোজা ইত্যাদির মত। প্রকৃতপক্ষে রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অতিরিক্ত,বৃদ্ধি,প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি। শরীয়াতের দৃষ্টিতে রিবা হল যে সমস্ত অর্থ বা পণ্যের বিনিময়ে প্রদেয় সামগ্রীর মূলধনের সাথে অতিরিক্ত অর্থ বা পণ্য শর্ত সাপেক্ষে গ্রহণ করা হয় তাই সুদ।প্রায় সব মুসলমানেরই কম-বেশি জানা আছে যে কোনো পার্থক্য ছাড়াই সকল রিবা বা সুদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
✼ পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা'আলা বলেন- وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا
অর্থ:অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাকারা ২৭৫)
বর্তমানে রিবা সংক্রান্ত পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদীসকে এড়িয়ে গিয়ে মুসলমানদের মধ্যে সুদের মতো জঘন্যতম হারামের প্রচলনের অবতারণা করা হয়েছে। আসলে পবিত্র কুরআনে কারীমে ন্যূনতম সুদকেও স্পষ্টভাবে হারাম করা হয়েছে। এই আয়াতে তো সুদের অতি বেশি ভয়াবহ একটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। যেমন ✼ আল্লাহ তা'আলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ ۚ وَ اِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْ ۚ لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে অংশই অবশিষ্ট রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও। যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। আর তোমরা যদি তওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। তোমরাও কারো প্রতি যুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও যুলুম করা হবে না। (সূরা বাকারা ২৭৮-২৭৯)
✼সুরা বাকারার ২৭৫আয়াতের প্রথমেই এ ব্যপারে উম্মতে মুহাম্মদীকে আরো সতর্ককরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ
যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি,যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।
✼আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন- يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ
আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।(সূরা বাকারা ২৭৬)
✼পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। (সূরা আল-ইমরান ১৩০)
পবিত্র কুরআনে সামান্য সুদকেও হারাম করেছে এবং এটাকে জুলুম সাব্যস্ত করেছে যদিও তা হয়০.০০১%। আর এ বিষয়টিও স্পষ্ট যে,ঋণের বিপরীতে মূলধনের অতিরিক্ত সামান্য পরিমাণও কুরআনের দৃষ্টিতে রিবা। সুতরাং কম এবং বেশি পরিমাণের সাথে রিবা হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই; বরং ঋণের অতিরিক্ত যাই কিছু হোক সেটি রিবার অন্তর্ভুক্ত। তা যে নামেই ডাকা হোকনা কেন। পবিত্র কুরআনে কারীমে সুদ সম্পর্কে যেসব আয়াত এসেছে সেখানে সুদের কোনো শ্রেণীবিভাগ করা হয়নি। ফলে সব ধরনের সুদই হারাম।যে কোনো মুসলমানের জন্য ওয়াজিব হলো সে আহকামে শরিয়াকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর যে কোনো বিধানের ওপর সন্তুষ্ট থাকবে। সুদকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ কারণেই হারাম করেছেন যে,এর মাধ্যমে অভাবীদের অভাবকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো হয়, একজন গরিব লোকের ওপর অধিকহারে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া না হয়।এছাড়াও সমাজে সুদের প্রচলনের কারণে পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট হয়, বিশৃংখলা,মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি,খুন-খারাবি ব্যাপকহারে সংঘটিত হয়।এ ছাড়াও সুদের রয়েছে আরো অনেক ক্ষতিকারিতা। আমাদের জন্য স্পষ্ট যে,ইসলামে যে জিনিসগুলো হারাম তার মধ্যে সুদ নিকৃষ্টতম।
✼হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম-এর ভাষায় সুদগ্রহীতা, দাতা, এর লেখক ও সাক্ষীগণ সবাই অভিশপ্ত।
(সহীহ মুসলিম ১৫৯৮,তিরমিযী)
✼হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেন,রিবার গুনাহ সত্তর প্রকার,তার মধ্যে সবচেয়ে কম ভয়ংকরটি হলো একজন লোকের তার আপন মায়ের সাথে ব্যভিচারের সমান। (ইবনে মাজাহ,বাইহাকি)
✼বন্দুরা, আমাদের সবাইকে কথার বিভ্রান্তিতে না পড়ে নিজেদের ঈমান,আমলের হেফাজত করাই কর্তব্য।আমি একজন মুসলমান হিসাবে আমাকে বিশ্বাস করতে হবে যে,আমার কবরে আমিই যাব,সাথে যাবে খোদাপ্রদত্ত জ্ঞানদ্বারা যাচাই বাছাই করা আমার আমল।সাথে কোন আলেম বা মুফতিই থাকবে না। যদিও উত্তম বিষয়টি মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনই ভাল জানেন। আর
বর্তমান বিশ্ব যখন সুদের সাগরে নিমজ্জিত তখন একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের নিজেদের সাধ্যমত বেচে থাকার জন্যে ডিংগি নায়ে জীবন নামের পথটি অতিক্রম করাই হোক আমাদের কাম্য।কারণ এখন আর সেই সময় নেই যে কর্জে হাসানা দিয়ে আমাকে আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।
قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا أُمُورٌ مُشْتَبِهَةٌ فَمَنْ تَرَكَ مَا شُبِّهَ عَلَيْهِ مِنْ الإِثْمِ كَانَ لِمَا اسْتَبَانَ أَتْرَكَ وَمَنْ اجْتَرَأَ عَلَى مَا يَشُكُّ فِيهِ مِنْ الإِثْمِ أَوْشَكَ أَنْ يُوَاقِعَ مَا اسْتَبَانَ
✼হযরত নু‘মান ইবনু বাশীর রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।(সহীহ বুখারী ইফা ১৯২৩)
অতএব আমাদের চেস্টা করতে হবে সর্বাবস্থায়ই নিজেকে যতটুকু সম্ভব আল্লাহর নির্দেশে পরিচালনা করা।মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে এখলাসের সাথে চলার তাওফিক যেন দান করেন। আমিন ।(বন্ধুরা আমরা কেও ভুলের ঊর্ধে নই,আমার লেখাতেও ভুল হতে পারে।তাই মনের অজান্তে জ্ঞানের স্বল্পতায় ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

মৃতের শেষ ঠিকানা


❖ মৃতের শেষ ঠিকানা ❖
════════════
✏ ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম,আম্মা বা’দ।
জন্ম মৃত্যু সম্পূর্ণ আল্লাহ পাকের দেয়া হায়াতের উপর নির্ভর করে। হায়াতের পরিসমাপ্তি কবে হবে তা কারো জানা নেই। জন্মেছি যখন মরণের দরজা দিয়ে পার হতেই হবে। আমাদের জন্য পড়ে আছে অনন্তকাল,যে কালের কোনো পরিসমাপ্তি নেই।
◉═ #আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সূরা আলে ইমরানের আয়াত নং১৮৫ তে বলেন,
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়।

◉═ পার্থিব জীবন ক্ষনস্থায়ী, এই জীবন ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। দুনিয়া হচ্ছে পরকালের প্রস্তুতির পাঠশালা,যারা এখান থেকে প্রস্তুতি নিবে তারাই সফলকাম হবে। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক এবং তার প্রিয় হাবিবের দেখিয়ে দেয়া পথেই নিজেকে পরিচালনা করতে হবে। আজ একটা হাদীস শরীফ দেখুন আশা করি ভালো লাগবে। যে হাদিস শরীফের প্রথম আমলটিই আমাদেরমত গুনাহগার বান্দার কাম্য হতে পারে কারন মৃত ব্যক্তির সমালোচনায় আমাদের কারো কোন উপকার হয়না। আমরা একজন মুসলমান হিসেবে আরেক মুসলমানকে ক্ষমা করে সাহায্যের হাত বাড়াতে পারি। আমাদের প্রশংসাই হতে পারে একজন মৃত মুসলমানের শেষ ঠিকানা জান্নাতে। শফিউল মুজনেবীন আল্লাহর হাবীব সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এ গুনাহগার উম্মতের নাজাতের জন্য ইহ জগতের শেষ মুহূর্তেও -'রাব্বি হাবলী উম্মতি,রাব্বি হাবলী উম্মতি' করে বিদায় নিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনও উম্মতে মুহাম্মদীর মুক্তির জন্য 'লাইলাতুল ক্বদরের' মত রাত্রিও উপহার দিয়েছেন যাতে করে মানুষ ইবাদত করে গুনাহ মাফের মাধ্যমে পরকালের প্রস্তুতি নিতে পারেন। আমাদের গুনাহ মাফের এতো এতো সুযোগ থাকার পরেও উম্মতে মুহাম্মদীকে, আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লাম পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী করে দিলেন। যে সাক্ষীদের সাক্ষীই হতে পারে আমাদেরমত গুনাহগার বান্দার জান্নাত লাভের অন্যতম উপায়। মৃত ব্যক্তির প্রশংসা আর বান্দা যে আল্লাহর সাক্ষী সম্পর্কে হাদীস শরীফটি ইমাম নাসাঈ (রহ.) উনার সুনানে- জানাজা অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন,
◉═ #হজরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি জানাজা যেতে লাগলে তার উত্তম প্রশংসা করা হল। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে গেল। আর একটি জানাজা যাচ্ছিল, যার পাপের আলোচনা করা হচ্ছিল। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য দোযখ সাব্যস্ত হয়ে গেল। তখন উমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, আপনার উপর আমার মাতা-পিতা উৎসর্গ হোক; একটি জানাজা যাচ্ছিল যার ভাল প্রশংসা করা হল, আর আপনি বললেন যে, তার জন্য জানাত সাব্যস্ত হয়ে গেল। অন্য আর একটি জানাজা যাচ্ছিল তার পাপের আলোচনা করা হচ্ছিল আর আপনি বললেন যে, তার জন্য দোযখ সাব্যস্ত হয়ে গেল। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যার ভাল প্রশংসা কর তার জন্য জান্নাত সাব্যস্ত হয়ে যায় আর তোমরা যার পাপের আলোচনা কর তার জন্য দোযখ সাব্যস্ত হয়ে যায়। কারণ, তোমরা জমীনে আল্লাহর সাক্ষী।
◉═প্রিয় বন্ধুরা "আসুন ইসলামের রাহে উম্মতে মুহাম্মদীর মুক্তির কথা বলি "
আললাহ যেন আমাদের সবাইকে কোরআন,হাদিস সঠিকভাবে বুঝার সে তৌফিক দান করুক। আমিন, সুম্মা আমিন।

আসহাবে কাহফের বিস্ময়কর ঘটনা

আসহাবে কাহফের বিস্ময়কর ঘটনা
✏ ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
আল কাহফ الكهف সূরাটি কুরআনে পাকের ১৮তম সূরা৷কাহাফ মানে গুহা। আর আসহাবে কাহাফ মানে গুহাবাসী।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা যে সমস্ত ঘটনা উল্লেখ করেছেন,তার প্রত্যেকটি ঘটনাতেই রয়েছে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয়।সূরাটিতে বিস্ময়কর কিছু কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। যে কাহিনীগুলো আল্লাহ তায়ালা এ জন্য উল্লেখ করেছেন,যেন তার বান্দারা এইগুলো বারবার পড়ে এবং পার্থিব জীবনের বিভিন্ন পরীক্ষাগুলো উপমা ও উদাহরণসহ উপলব্ধি করে পরকালমুখী জীবন যাপন করতে পারে।আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসীর আশ্চর্যজনক ঘটনাও পবিত্র কুরআনের শিক্ষণীয় ঘটনাসমূহের অন্যতম একটি ঘটনা।এ সূরাটিতে কোরাইশদের তিনটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহ হযরত মুসা এবং হযরত খিযির (আঃ) এর ঘটনাটিও বর্ণনা করা হয়েছে।
#হযরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূরা কাহফ সম্পূর্ণটুকু এক সময় নাযিল হয়েছে এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা এর সঙ্গে আগমন করেছেন। (রূহুল-মা'আনী)

◉═ ঘটনার শুরু যেভাবে হয়।নবুওয়তের পর ইসলামের প্রথম দিকে সায়্যাদুল মুরসালীন নবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম যখন জাহেলিয়াতের যুগে মানবজাতীর মুক্তির জন্যে ইসলামের ছায়াতলে আহ্বান করা শুরু করলেন তখন মক্কার কোরাইশদের মাঝে এক অনাকাঙ্খিত ভয় কাজ করতে লাগলো।#ইমাম ইবনে জরীর তাবারী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে,মক্কায় যখন রসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের দাওয়াত শুরু হয় কোরাইশরা তাতে বিব্রত বোধ করতে থাকে,তখন তারা নযর ইবনে হারেস ও ওকবা ইবনে আবী মুয়ী'তকে মদীনার ইহুদী পন্ডিতদের কাছে প্রেরণ করে। রসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তারা কি বলে, জানার জন্যে। ইহুদী পন্ডিতরা তাদেরকে বলে দেয় যে,তোমরা তাঁকে তিনটি প্রশ্ন করো। তিনি এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে বুঝে নেবে যে,তিনি আল্লাহ্‌র রসূল। অন্যথায় বুঝবে, তিনি একজন বাগাড়ম্বরকারী রসূল নন।
(প্রশ্ন-১) তাঁকে ঐসব যুবকের অবস্থা জিজ্ঞাস কর, যারা প্রাচীনকালে শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাদের ঘটনা কি? কেননা, এটা অত্যন্ত বিস্ময়কর ঘটনা।
(প্রশ্ন-২) তাঁকে সে ব্যক্তির অবস্থা জিজ্ঞেস কর,যে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম এবং সারা বিশ্ব সফর করেছিল। তার ঘটনা কি?
(প্রশ্নের উত্তরটি সংক্ষেপে এখানে উল্লেখ করলাম,এ সূরার ৮৩-১০১ অংশে জুলকারনাইন সম্পর্কিত বর্ণনা আছে,জুলকারনইন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতেন নির্যাতীত,বঞ্চিত,শাসকের হাতে শোসিত লোকদের মুক্তি দিতেন। পবিত্র কুরআনের বর্ননা অনুযায়ী অরুণাচলে,যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ,মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারণাইন)
(প্রশ্ন-৩) তাঁকে রূহু সম্পর্কে প্রশ্ন কর যে,এটা কি? (তার উত্তরটি সূরা বনী ইসরাঈলের শেষে বর্ণনা করা হয়েছে)
উভয় কোরাইশী মক্কায় ফিরে এসে ভ্রাতৃসমাজকে বললঃ আমরা একটি চূড়ান্ত ফয়সালার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফিরে এসেছি। অতঃপর তারা তাদেরকে ইহুদী আলেমদের কাহিনী শুনিয়ে দিল। কোরাইশরা রসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ প্রশ্নগুলো নিয়ে হাযির হল। তিনি শুনে বললেনঃ আগামীকাল উত্তর দেব। কিন্তু তিনি ইনশা'আল্লাহ্‌ বলেননি।কোরাইশরা ফিরে গেল। রসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর আলোকে জওয়াব দেবার জন্যে আল্লাহ্‌র তরফ থেকে ওহী আসার অপেহ্মায় রইলেন। কিন্তু ওয়াদা অনুয়াযী পর দিবস পর্যন্ত ওহী আগমন করল না; বরং পনের দিন এ অবস্থায় কেটে গেল। ইতিমধ্যে জিবরাঈল(আঃ)ও এলেন না এবং কোন ওহীও নাযিল হল না। অবস্থাদৃষ্টে কোরাইশরা ঠাট্টা-বিদ্রূপ আরম্ভ করে দিল। এতে রসূলুল্লাহ্‌ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই দুঃখিত ও চিন্তিত হলেন।পনের দিন পর জিবরাঈল(আঃ) সূরা কাহফ নিয়ে অবতর করলেন। এতে ওহীর বিলম্বের কারণও বর্ণনা করে দেয়া হল যে, ভবিষ্যতে কোন কাজ করার ওয়াদা করা হলে ইনশাআল্লাহ্‌ বলা উচিত। কোরাইশদের প্রথম প্রশ্নটি ছিল যুবদের সম্পর্কে।সূরা আল-কাহফ এ যুবকদের ঘটনা পুরোপুরি বর্ণনা করা হয়েছে।যাদেরকে "আসহাবে কাহফ" বা গুহাবাসী বলা হয়।
◉═এবার আসুন সংক্ষেপে যুবকদের ঘটনাটি সম্পর্কে জানি।
একদল ধর্মপরায়ণ যুবক যারা এক মূর্তিপূজক অত্যাচারী রোমান সম্রাট যে কিনা ধর্মের ব্যাপারে মানুষের ওপর জোরদারি চালাত। কেউ যদি তখনকার সত্য দ্বীনের অনুসারী হতো, তাকে ডেকে সে দুইটি বিকল্পের একটি গ্রহণের কথা বলত। প্রথম বিকল্প হলো, তার মতো মূর্তিপূজারি হয়ে সত্য ধর্মকে ত্যাগ করা। অথবা দ্বিতীয় বিকল্প হলো, তার জল্লাদের হাতেই প্রাণ দেয়া। আর এ দুইটি বিকল্পের যে কোনো একটিকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করতে হয়। চিন্তাভাবনা করার সময় দেয়া হয় না। এমন অবস্থায় সে রাজ্যের কয়েকজন যুবককে রাজদরবারে ডেকে আনা হলো, তাদের সামনে দুইটি বিকল্প পেশ করা হলো। তবে তাদের বয়সের দিকে খেয়াল করে রাজা তাদের প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হলো। তাদের কয়েক দিন চিন্তাভাবনা করার সুযোগ দেয়া হলো,যা অন্যদের দেয়া হয় না। তারা রাজদরবার থেকে বেরিয়ে গেল। এরপর অনেক চিন্তাভাবনার পর সিদ্ধান্ত করল তারা এ দুই বিকল্পের একটিকেও গ্রহণ করতে চায় না। বরং তারা অন্য কোথাও গিয়ে আত্মগোপন করবে এবং সত্য ধর্মে থেকে আল্লাহর ইবাদত করবে।পরে রাজার উৎপীড়ন থেকে নিজেদের ঈমান ও জীবন রক্ষার জন্য পাহাড়ের একটি গর্তে আশ্রয় নিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে গুহার ভেতর প্রায় ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে রেখেছিলেন। যখন তারা ঘুম থেকে জাগ্রত হল, তাদের একজন সাথীকে একটি মুদ্রা দিয়ে খাবার কিনে আনার জন্য পাঠাল। যখন সে শহরে প্রবেশ করল, দেখতে পেল পুরো শহর সম্পূর্ণরূপে বদলে গেছে। দোকানী এত প্রাচীন মুদ্রা দেখে হতবিহ্বল হয়ে গেল। সে মনে করল, এই যুবক কোনো ধরনের ধনভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছে এবং সে এই মুদ্রার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইল। যুবকটি এমন বিপত্তির মুখে পড়ে আরও অধিক বিস্মিত হল।বিষয়টি শেষ পর্যন্ত রাজ দরবার পর্যন্ত গড়াল। রাজা যুবকটির কাহিনী শুনে বিস্মিত হলেন। অতঃপর তার সভাসদদের সঙ্গে নিয়ে সেই গুহার কাছে গেলেন এবং যুবকদেরকে তাদের জন্য দুআ করতে বললেন। পরবর্তীতে তারা সেই একই গুহার মধ্যেই বসবাস করতে লাগল এবং মৃত্যু বরণকরল।একটি কুকুরও তাদের সাথে ছিল নাম ছিল 'কিতমির'।কুকুরসহ এদেরকে আসহাবে কাহফ বা গুহাবাসী বলা হয়৷
#বন্ধুরা ➲ চলুন কুরআনে পাকের আসহাবে কাহাফের আয়াতগুলি পড়ি:-
أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا
আপনি কি ধারণা করেন যে,গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল?
إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوا رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا
যখন যুবকরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয়গ্রহণ করে তখন দোআ করেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন।
فَضَرَبْنَا عَلَى آذَانِهِمْ فِي الْكَهْفِ سِنِينَ عَدَدًا
তখন আমি কয়েক বছরের জন্যে গুহায় তাদের কানের উপর নিদ্রার পর্দা ফেলে দেই।
ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ أَيُّ الْحِزْبَيْنِ أَحْصَى لِمَا لَبِثُوا أَمَدًا
অতঃপর আমি তাদেরকে পুনরত্থিত করি,একথা জানার জন্যে যে, দুই দলের মধ্যে কোন দল তাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে অধিক নির্ণয় করতে পারে।
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَأَهُم بِالْحَقِّ إِنَّهُمْ فِتْيَةٌ آمَنُوا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى
আপনার কাছে তাদের ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
وَرَبَطْنَا عَلَى قُلُوبِهِمْ إِذْ قَامُوا فَقَالُوا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَن نَّدْعُوَ مِن دُونِهِ إِلَهًا لَقَدْ قُلْنَا إِذًا شَطَطًا
আমি তাদের মন দৃঢ় করেছিলাম, যখন তারা উঠে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর তারা বললঃ আমাদের পালনকর্তা আসমান ও যমীনের পালনকর্তা আমরা কখনও তার পরিবর্তে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করব না। যদি করি, তবে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হবে।
هَؤُلَاء قَوْمُنَا اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ آلِهَةً لَّوْلَا يَأْتُونَ عَلَيْهِم بِسُلْطَانٍ بَيِّنٍ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا
এরা আমাদেরই স্ব-জাতি, এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে। তারা এদের সম্পর্কে প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তার চাইতে অধিক গোনাহগার আর কে?
وَإِذِ اعْتَزَلْتُمُوهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ فَأْوُوا إِلَى الْكَهْفِ يَنشُرْ لَكُمْ رَبُّكُم مِّن رَّحمته ويُهَيِّئْ لَكُم مِّنْ أَمْرِكُم مِّرْفَقًا
তোমরা যখন তাদের থেকে পৃথক হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করে তাদের থেকে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ কর্মকে ফলপ্রসু করার ব্যবস্থা করবেন।
وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَت تَّزَاوَرُ عَن كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَت تَّقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِي فَجْوَةٍ مِّنْهُ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ مَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِي وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُّرْشِدًا
তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।
وَتَحْسَبُهُمْ أَيْقَاظًا وَهُمْ رُقُودٌ وَنُقَلِّبُهُمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَذَاتَ الشِّمَالِ وَكَلْبُهُم بَاسِطٌ ذِرَاعَيْهِ بِالْوَصِيدِ لَوِ اطَّلَعْتَ عَلَيْهِمْ لَوَلَّيْتَ مِنْهُمْ فِرَارًا وَلَمُلِئْتَ مِنْهُمْ رُعْبًا
তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়তে।
وَكَذَلِكَ بَعَثْنَاهُمْ لِيَتَسَاءلُوا بَيْنَهُمْ قَالَ قَائِلٌ مِّنْهُمْ كَمْ لَبِثْتُمْ قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ قَالُوا رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثْتُمْ فَابْعَثُوا أَحَدَكُم بِوَرِقِكُمْ هَذِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ فَلْيَنظُرْ أَيُّهَا أَزْكَى طَعَامًا فَلْيَأْتِكُم بِرِزْقٍ مِّنْهُ وَلْيَتَلَطَّفْ وَلَا يُشْعِرَنَّ بِكُمْ أَحَدًا
আমি এমনি ভাবে তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বললঃ তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ বললঃ একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করছি। কেউ কেউ বললঃ তোমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ। এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ শহরে প্রেরণ কর; সে যেন দেখে কোন খাদ্য পবিত্র। অতঃপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য; সে যেন নম্রতা সহকারে যায় ও কিছুতেই যেন তোমাদের খবর কাউকে না জানায়।
إِنَّهُمْ إِن يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوكُمْ أَوْ يُعِيدُوكُمْ فِي مِلَّتِهِمْ وَلَن تُفْلِحُوا إِذًا أَبَدًا
তারা যদি তোমাদের খবর জানতে পারে, তবে পাথর মেরে তোমাদেরকে হত্যা করবে, অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে। তাহলে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না।
وَكَذَلِكَ أَعْثَرْنَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوا أَنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَأَنَّ السَّاعَةَ لَا رَيْبَ فِيهَا إِذْ يَتَنَازَعُونَ بَيْنَهُمْ أَمْرَهُمْ فَقَالُوا ابْنُوا عَلَيْهِم بُنْيَانًا رَّبُّهُمْ أَعْلَمُ بِهِمْ قَالَ الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَى أَمْرِهِمْ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِم مَّسْجِدًا
এমনিভাবে আমি তাদের খবর প্রকাশ করে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতে কোন সন্দেহ নেই। যখন তারা নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে পরস্পর বিতর্ক করছিল, তখন তারা বললঃ তাদের উপর সৌধ নির্মাণ কর। তাদের পালনকর্তা তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল, তারা বললঃ আমরা অবশ্যই তাদের স্থানে মসজিদ নির্মান করব।
سَيَقُولُونَ ثَلَاثَةٌ رَّابِعُهُمْ كَلْبُهُمْ وَيَقُولُونَ خَمْسَةٌ سَادِسُهُمْ كَلْبُهُمْ رَجْمًا بِالْغَيْبِ وَيَقُولُونَ سَبْعَةٌ وَثَامِنُهُمْ كَلْبُهُمْ قُل رَّبِّي أَعْلَمُ بِعِدَّتِهِم مَّا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا قَلِيلٌ فَلَا تُمَارِ فِيهِمْ إِلَّا مِرَاء ظَاهِرًا وَلَا تَسْتَفْتِ فِيهِم مِّنْهُمْ أَحَدًا
অজ্ঞাত বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এখন তারা বলবেঃ তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি তাদের কুকুর। একথাও বলবে; তারা পাঁচ জন। তাদের ছষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর। আরও বলবেঃ তারা ছিল সাত জন। তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলুনঃ আমার পালনকর্তা তাদের সংখ্যা ভাল জানেন। তাদের খবর অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবেন না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও করবেন না।
وَلَا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا
আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামী কাল করব।
إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ وَاذْكُر رَّبَّكَ إِذَا نَسِيتَ وَقُلْ عَسَى أَن يَهْدِيَنِ رَبِّي لِأَقْرَبَ مِنْ هَذَا رَشَدًا
‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন।
وَلَبِثُوا فِي كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِائَةٍ سِنِينَ وَازْدَادُوا تِسْعًا
তাদের উপর তাদের গুহায় তিনশ বছর, অতিরিক্ত আরও নয় বছর অতিবাহিত হয়েছে।
قُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوا لَهُ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ مَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا
বলুনঃ তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। (সূরা কাহফ- আয়াতঃ ৯-২৬)
➲ এ ঘটনা থেকে কতিপয় শিক্ষা:
১) ভবিষ্যতে কোন কাজ করতে ইচ্ছা করলে আমাদের প্রথমে ইনশা-আল্লাহ্ বলা উচিৎ।
২) একত্ববাদের এবাদত করা এবং তাঁর এবাদতে অন্য কিছুকে শরীক না করা।
৩) যুবকদের সাহসের সাথে আল্লাহর বাণী প্রচার করা জরুরী।
৪) চিন্তা ও গবেষণা করে কুরআন ও কুরআনে বর্ণিত ঘটনাগুলো অধ্যয়ন করা ।
৫) বিপদাপদে আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং তাঁর দয়া কামনা করা জরুরী।
৬)প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সত্যের উপর অবিচল থাকার গুরুত্ব অপরিসীম।
৭) তিন শত নয় বছর পর তাদেরকে জীবিত করা এটাই প্রমাণ করে যে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সত্য, কিয়ামত সত্য। এতে কোন সন্দেহ নেই।রূহ এবং দেহ উভয়েরই পুনরুত্থান হবে। কেননা আসহাবে কাহাফগণ এভাবেই জীবিত হয়েছিলেন।
৮) হেদায়াত আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর বান্দার প্রতি বিরাট একটি নেয়ামত। বান্দার উচিত সর্ব অবস্থায় আল্লাহর কাছে হেদায়াত প্রার্থনা করা।
৯) আসহাবে কাহাফের ঘটনা, পরকাল বিশ্বাসের সত্যতার এক উজ্জ্বল ও অকাট্ট প্রমাণ বিশেষ। আল্লাহ তায়ালা যেভাবে আসহাবে কাহাফকে এক দীর্ঘকাল পর্যন্ত মৃত্যুর মহানিদ্রায় নিমজ্জিত রাখার পরও পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছেন, অনুরূপভাবে মৃত্যুর পরে পুনরায় জীবন দান করাও তাঁর কুদরতে সামান্যতমও অসম্ভব নয়।এছাড়াও আরও অসংখ্য শিক্ষণীয় দিক আছে উক্ত ঘটনায়।
◉═সম্মানিত বন্ধুরা "আসুন ইসলামের রাহে উম্মতে মুহাম্মদীর মুক্তির কথা বলি "
আললাহপাক যেন আমাদের সবাইকে গভীরভাবে পবিত্র কুরআন,হাদিস সঠিকভাবে অধ্যয়ন করার সে তৌফিক দান করুন। আমিন,সুম্মা আমিন।

জুম’আর দিন

জুম’আর দিন
 ✍ ইমরান বিন বদরী ≪
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বা’দ।
‘জুম’আ’ الجُمُعَةِ অর্থ সমাবেশ,মুসুল্লীদের জমায়েত হওয়ার কারণে এ দিনের নাম জুম’আর দিন অর্থাৎ জমা হওয়ার দিন।যখন যোহর শুরু হয় জুম’আও তখনই শুরু হয়।অর্থাৎ ঠিক দুপুরে সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে কিছুটা ঢলে পড়লে জুম’আর সময় শুরু হয় (সহীহ বুখারী)।
═❖ পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক বলেছেন -
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا إِذا نودِىَ لِلصَّلوٰةِ مِن يَومِ الجُمُعَةِ فَاسعَوا إِلىٰ ذِكرِ اللَّهِ وَذَرُوا البَيعَ ۚ ذٰلِكُم خَيرٌ لَكُم إِن كُنتُم تَعلَمونَ
“হে মু’মিনগণ! জুম’আর দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হবে তখন তোমরা আল্লাহর স্মরনে ধাবিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর।”
(সূরা জুম’আঃ ৯)

═❖ হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে,তারপর তার নির্ধারিত সালাত (নামাজ) আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে,তা হলে তার সে জুম্মা থেকে আরেক জুম্মা পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহীহ বুখারী)।

═❖ হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের জন্য জুম্মার দিন গোসল করা কর্তব্য। (সহীহ বুখারী)।

═❖ হযরত আবায়া ইবনুূু রিফা’আ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জুম্মার সালাত যাওয়ার সময় আবূ আবস রাদিয়াল্লাহু আনহু -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন,আমি রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে,যার দু’পা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়,আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (সহীহ বুখারী)।

═❖প্রথম ‘জুম’আ’❖═
হযরত ইবনুূু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন-সর্বপ্রথম জুম্মার সালাত অনুষ্ঠিত হয় বাহরাইনে জুওয়াসা নামক স্থানে অবস্থিত আবূল কায়স গোত্রের মসজিদে। (সহীহ বুখারী)।
(উল্লেখ্য যে,এই বাহরাইন বর্তমান রাষ্ট্র বাহরাইন নয় মদীনার একটি গ্রামের নাম)



═❖জুম’আ ও যোহরের মধ্যে পার্থক্য❖═
(১) যোহর সকল বিবেক সম্পন্ন মুমিন নর-নারীর উপর ফরজ, আর জুম’আ সকলের উপর ফরজ নয়;
(২) যোহর হল মূল সালাত, আর জুম’আ হল যোহরের পরিবর্তে;
(৩) জুম’আর কিরা’আত প্রকাশ্যে আর যোহরের কিরা’আত চুপে চুপে;
(৪) জুম’আর ফরজ দুই রাকা’আত, আর যোহরের ফরজ চার রাকা’আত;
(৫) জুম’আয় খুৎবা আছে কিন্তু যোহরে কোন খুৎবা নেই।

═❖জুম‘আর কতিপয় জ্ঞাতব্য বিষয়❖═
❖বাধ্যগত কারণে জুম‘আ পড়তে অপারগ হ’লে যোহর পড়বে।
❖জুম‘আর ছালাত ইমামের সাথে এক রাক‘আত পেলে বাকী আরেক রাক‘আত যোগ করে পূরা পড়ে নিবে। (মিশকাত হা/১৪১)
❖কিন্তু রুকূ না পেলে এবং শেষ বৈঠকে যোগ দিলে চার রাক‘আত পড়বে’।(বায়হাক্বী )
অর্থাৎ জুম‘আর নিয়তে ছালাতে যোগদান করবে এবং যোহর হিসাবে শেষ করবে।এর মাধ্যমে সে জামা‘আতে যোগদানের পূরা নেকী পাবে’। (বায়হাক্বী)
❖রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,যে ব্যক্তি নিয়মিত দূরে বসবে,সে ব্যক্তি জান্নাতে গেলেও দেরীতে প্রবেশ করবে।(আবুদাঊদ১১০৮ মিশকাত হা/১৪১৪)
❖পিছনে এসে সামনের মুছল্লীদের ডিঙিয়ে যাওয়া উচিত নয়। বরং সেখানেই বসে পড়বে।
(আবুদাঊদ হা/১১১৮)
❖জুম‘আ সহ কোন বৈঠকেই কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসতে আল্লাহর রাসূল ﷺ নিষেধ করেছেন। (মিশকাত হা/১৩৯৫)
❖তবে সকলকে বলবে, إِفْسَحُوْا ‘আপনারা জায়গা ছেড়ে দিন’।(মুসলিম)
═❖ হুঁশ-জ্ঞান সম্পন্ন ও স্বাধীন প্রত্যেক বালেগ মুসলমানদের উপর জুম’আ ফরজ।

═❖মুমিনের খুশির দিন জুমার দিন❖═
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘জুমার দিন হলো সর্বোত্তম দিন,যাতে সূর্য উদিত হয়।এ দিনে আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনে তাকে বেহেশতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনে তাকে বেহেশত থেকে বের করা হয়েছে। আর জুমার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (সহীহ মুসলিম)
↪আসুন আমরা যেন ইচ্ছাকৃত ভাবে জুমা ত্যাগ না করি।এবং এ দিনটির যথাযথ মর্যাদা দিই। আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

কুরবানী

কুরবানী
══❖══ ✏ ইমরান বিন বদরী ≪
اَلْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعاَلَمِيْنَ والصَّلوةُ و السَّلاَمُ عَلى اَشْرَفِ الْاَنْبِياءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ وَعَلى اَلِه وَاَصْحَابِه اَجْمَعِيْنَ
ঈদুল আজহা (عيد الأضحى) ইসলামের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ নামে পরিচিত। ঈদুল আযহা মূলত আরবী বাক্যাংশ।এর অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব কিংবা ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা সাধ্যমত ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, গরু, দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি বা জবাই দেয় পরম করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে।
কুরবানী শব্দটি আরবী কুরবান শব্দ থেকে উদ্ভুত। কুরবানী শব্দের অর্থ উৎসর্গ ও নৈকট্য অর্জন। কিন্তু শরীয়তের পরিভাষায় জিলহজ্ব চাঁদের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট জন্তুকে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জবেহ করে উৎসর্গ করার নাম কুরবানী। এটি ইসলাম ধর্মের অতি মূল্যবান ইবাদত।

ঐতিহাসিক পটভূমি:
-----------------------
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে অনেক পরীক্ষা করেছেন। সকল পরীক্ষায় তিনি ধৈর্য্য ও সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। একরাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, আল্লাহপাক তাকে ইঙ্গিত করেছেন তার সবচাইতে প্রিয় জিনিসটিকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানী করতে। হযরত ইব্রাহীম (আ:) অনেক ভেবেচিন্তে দেখলেন একমাত্র পুত্র ইসমাঈল (আ:) এর চেয়ে তার কাছে প্রিয় আর কোনো কিছু নেই। এমনকি নিজের জীবনের চাইতেও সে পুত্র ইসমাঈল (আ:) কে বেশি ভালোবাসতেন। তারপরও তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানী করার সিদ্ধান্ত নিলেন। অত:পর পুত্র ইসমাঈল (আ:) কে তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে: “হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে আমি জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি?” সে (হযরত ইসমাঈল (আঃ)) বলল, “হে পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহ চাহেতো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন” (সূরা সফফাত আয়াত-১০২)। 
‪#‎কুরবানীর‬ অনুমোদনের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেন।
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।(সূরা হাজ্জ, আয়াত নং-৩৪) 
‪#‎আল্লাহ‬ তা’আলা আরো বলেন। فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ 
অতএব তোমরা রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং নহর কর । (সূরা কাউসার : ২)
‪#‎তিনি‬ আরো বলেন :وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ 
আর কুরবানীর উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি। (সূরা হজ :৩৬)
কুরবানীর তাৎপর্য:
----------------------
ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। প্রচলিত কুরবানী মূলতঃ হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর অপূর্ব আত্ম-ত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিচারণ। যেই আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-ভালবাসা ও ঐকান্তিকতা নিয়ে কুরবানী করেছিলেন ইব্রাহীম (আঃ), সেই আবেগ, অনুভূতি ও ঐকান্তিকতার অবিস্মরণীয় ঘটনাকে জীবন্ত রাখার জন্যই মহান আল্লাহ উম্মাতে মুহাম্মদীর উপর কুরবানী ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তাই কুরবানী কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
#আল্লাহ পাক আরো বলেন, لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ
আল্লাহর নিকট (কুরবানীর পশুর) গোশত, রক্ত পৌঁছে না; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।
(সূরা হাজ্জ, আয়াত নং-৩৭)
কুরবানী মহান একটি ইবাদাত। কোরবানি বলা হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও তার এবাদতের জন্য পশু জবেহ করা।
‪#‎হজরত‬ আনাস ইবনু মালিক রাদিআল্লাহু আনহুর বর্ণনা করেছেন।
أن النبي - صلى الله عليه وسلم - ضحى بكبشين أملحين أقرنين ذبحهما بيده وسمى وكبر.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরতাজা ও শিং ওয়ালা দুটি মেষ নিজ হাতে যবেহ করেছেন এবং তিনি তাতে বিসমিল্লাহ ও তাকবীর বলেছেন।(সহিহ বুখারী ও মুসলিম)
#হজরত জুনদুব ইবনু সুফিয়ান বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি কুরবানীর দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্হিত ছিলাম। তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি সালাত আদায়ের পুর্বে যবাহ করেছে সে যেন এর স্থলে আবার যবাহ করে। আর যে যবাহ করেনি, সে যেন যবাহ করে নেয়।(সহিহ বুখারী)
#হজরত আয়িশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, মদিনায় অবস্থানের সময় আমরা কুররানীর গোশতের মধ্যে লবন মিশ্রিত করে রেখে দিতাম। এরপর তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পেশ করতাম। তিনি বলতেনঃ তোমরা তিন দিনের পর খাবে না। তবে এটি জরুরী নয়। বরং তিনি চেয়েছেন যে,তা থেকে যেন অন্যদের খাওয়ান হয়। আল্লাহ অধিক জ্ঞাত। (সহিহ বুখারী)
কুরবানীর হুকুম:
---------------------
ইমাম আবু হানীফা রহ.ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ.মতে কোরবানি ওয়াজিব। যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া। জ্ঞান সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক, নিসাব পরিমাণ মালিকের উপর শুধু একটি কুরবানীই ওয়াজিব হবে,অবশ্য কেউ যদি একাধিক কুরবানী করে তা নফল হিসেবে সওয়াবের অধিকারী হবে। ভাগে কুরবানী জায়েয।
#হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,একটি গরু সাতজনের পক্ষ কুরবানী করা যাবে। (তিরমিযী)
#হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন,
كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ فِىْ سَفَرٍ فَحَضَرَ الْأَضْحَى فَاشْتَرَكْنَا فِى الْبَقَرَةِ سَبْعَةٌ وَ فِى الْبَعِيْرِ عَشَرَةٌ
‘আমরা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হ’ল।তখন আমরা সাতজনে একটি গরু ও দশজনে একটি উটে শরীক হ’লাম’(তিরমিযী, নাসাঈ,ইবনু মাজাহ)
কুরবানীর ফজিলত:
------------------------
(ক) কোরবানি দাতা নবী ইবরাহিম (আ:)ও রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন।
(খ) পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানি দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। 
(গ) পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান।
#হজরত আয়শা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোন আমল আল্লাহর কাছে নাই। ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জবেহকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর,পশম সমূহ ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। কুরবানীর রক্ত জমিনে পতিত হবার পুর্বেই তা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদায় পৌছে যায়। অতএব, তোমরা কুরবানির দ্বারা নিজেদের নফস কে পবিত্র কর।
কুরবানীর পশু:
------------------
এমন পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া,দুম্বা। এ গুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আনআম।’কুরবানীর পশু ভাল এবং হৃষ্টপুষ্ট হওয়াই উত্তম। শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু'বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের। যদি ছয় মাসের দুম্বা বা ভেড়া এরূপ মোটা-তাজা হয় যে,দেখতে এক বছরের মত মনে হয় তাহলে এর দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে।
কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্র“টি মুক্ত হতে হবে অন্ধ ;যার অন্ধত্ব স্পষ্ট,রোগাক্রান্ত ; যার রোগ স্পষ্ট,পঙ্গু ;যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত;যার কোন অংগ ভেংগে গেছে ইত্যাদি। যে পশুটি কোরবানি করা হবে তার উপর কোরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে।
কুরবানীর করার নিয়মাবলি:
---------------------------------- 
#হজরত মা আয়শা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শিংওয়ালা সুন্দর সাদা-কালো দুম্বা আনতে বললেন.অতঃপর নিম্নোক্ত দো‘আ পড়লেন,
بِسْمِ اللهِ أَللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِن مُّحَمَّدٍ وَّ آلِ مُحَمَّدٍ وَّ مِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ رواه مسلم-
‘আল্লাহ্র নামে (কুরবানী করছি),হে আল্লাহ! তুমি এটি কবুল কর মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে,তার পরিবারের পক্ষ হ’তে ও তার উম্মতের পক্ষ হ’তে’।এরপর উক্ত দুম্বা দ্বারা কুরবানী করলেন’।(মিশকাত১৪৫৪)
নিজের পশু নিজেই কুরবানী করা সর্বোত্তম। নিজে যবেহ করতে অপারগ হলে অন্যের দ্বারা কুরবানী দুরস্ত আছে।কুরবানী দাতা ধারালো ছুরি নিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দো‘আ পড়ে নিজ হাতে খুব জলদি যবহের কাজ সমাধা করবেন, যেন পশুর কষ্ট কম হয়।যবেহ করার সময় কুরবানী পশু কেবলামুখী থাকতে হবে।আর কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং রক্তনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়।যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলতে হবে। ইচ্ছাকৃত ভাবে বিসমিল্লাহ না বললে হালাল হবে না।আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মূখভাগে দু’টি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দু’টি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে।উট দাঁড়ানো অবস্থায় এর ‘হলক্বূম’ বা কণ্ঠনালীর গোড়ায় কুরবানীর নিয়তে ‘বিসমিল্লা-হি আল্লাহু আকবার’ বলে অস্ত্রাঘাতের মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত করে ‘নহর’ করতে হয় ।
❖ পরিশেষে, মনে রাখতে হবে কুরবানী হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত ও আল্লাহ রাববুল ‘আলামিনের নৈকট্য লাভের উপায়।কুরবানীর উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়,শুধু মানুষের উপকার করা নয় বা শুধু সদকা (দান) নয়। কুরবানীর উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ রাববুল ‘আলামীনের একটি মহান নিদর্শন তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা।করুণাময় রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা যেন কুরবানী করার সে তাউফিক আমাদের দেন।আমিন।